বলেছে যে এ কথা আমাদের জানানো উচিত ছিল।
হয়তো জানাতে চায়নি। এ সবে সে-ও জড়িত থাকতে পারে। দুর্ঘটনায় যদি আহত হয়ে বসেও থাকে, তাহলেও ক্ষতি নেই তার। অভিনয় বন্ধ থাকলেও বেতন দিতে হবে তাকে, সেরকমই চুক্তি হয়েছে।
ভেবে বলল মুসা, কিন্তু বসে থাকার মত লোক মনে হয় না পিটারকে। কাজ করতেই ভালবাসে সে।
আমি ভাবছি কম্পিউটারটাকে স্যাবটাজ করল কে?
ভিনসি জাপা নন তো?
কিন্তু তিনি হলে রাতের বেলা চুরি করে ঢুকে করতে যাওয়ার দরকার কি? দিনের বেলা সবার সামনেই পারেন, কম্পিউটারে তিনি হাত দিলে কেউ সন্দেহ করবে না। তা ছাড়া আমাদের কাছে বলেছেন, প্রোগ্রামিং করতে জানেন না।
আরও একটা ব্যাপার, মোটেও খাটো কিংবা রোগা নন তিনি।
ঠিক, মাথা ঝাঁকাল কিশোর, ও রকম লোক কে আছে থিয়েটারে? কাকে কাকে চিনি আমরা?
এক মুহূর্ত চুপ করে ভাবল মুসা। তারপর বলল, শুধু শরীর স্বাস্থ্যে মিললেই হবে না, তাকে প্রোগ্রামিংও জানতে হবে, তাই না? কোন ধরনের পেশাজীবী কম্পিউটার বেশি ব্যবহার করে? গবেষক, লেখক
ছাত্র, বাদক…
থমকে দাঁড়াল কিশোর, বাদক!
রবিনকে প্রায়ই বলতে শুনি, কম্পিউটারে ড্রাম ট্র্যাকস প্রোগ্রাম করে ড্রামাররা, নানা রকম বাদ্যযন্ত্র…
জানি। থিয়েটারে ও রকম একটা লোককেই চিনি। ফ্ল্যাশ-পটের খুব কাছাকাছি ছিল, অথচ বিস্ফোরণে গায়ে একটা আঁচড়ও লাগেনি।
খাইছে! তাই তো! জাহির বিলিয়ার্ড!
তাহলে বুঝলে তো, শেকসপীয়ারের ভূত ঘটাচ্ছে না এ সব অঘটন!
.
১৪.
গারবার থিয়েটারের পার্কিং লটে যখন গাড়ি রাখল কিশোর, সকালের রোদ ঢুকছে তখন জানালা দিয়ে।
আমার মনে হয় না কাজটা করতে পারব, মুসা বলল। যতই প্র্যাকটিস করাক।
পারবে, হাই তুলতে তুলতে বলল কিশোর। অনেক রাতে ঘুমিয়েছে। তারপর তোরে উঠেছে আবার। থিয়েটারে এসেছে প্র্যাকটিস করতে। ওরা নতুন লোক। সেজন্যে বেশি প্র্যাকটিস করতে হচ্ছে। জোর রিহার্সাল চলছে।
গাড়ি থেকে নেমে থিয়েটারের দিকে এগোল দুজনে।
কিন্তু এ ভাবে না ঘুমিয়ে আর কতদিন চালাব? মুসার প্রশ্ন।
কে যায় চালাতে? তুমি কি ভাবছ স্টেজে গিয়ে বীচবল খেলতে ভাল লাগবে আমার? একটুও না। কেসটার একটা কিনারা করতে পারলেই পালাব। তোমার আগে ঘুম থেকে উঠেছি আমি আজ। রবিনকে ফোন করেছি। ওকে টেনে তুলেছি বিছানা থেকে।
গালাগাল করেনি?
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। করেছে। গাড়িতে করে রাত তিনটেয় ফিরেছে সান ফ্রানসিসকো থেকে। প্রথমে তো ঘুম জড়ানো স্বরে বকাবকি শুরু করল। কিন্তু জাহিরের কথা যেই বললাম, পুরো সজাগ হয়ে গেল। বলল, আজকে রিহার্সালের পর ওর সঙ্গে লেগে থেকে কিছু বের করার চেষ্টা করবে।
স্টেজ ডোর দিয়ে স্টেজে ঢুকল ওরা। কালো পর্দার আড়ালে জাপার কন্ট্রোল চেম্বারের ভেতর থেকে আসছে কম্পিউটারের কী-র একটানা খটাখট।
মিস্টার জাপা, ডেকে বলল মুসা, আমরা এসে গেছি। তাড়াতাড়িই এলাম, কি বলেন?
খটাখট বন্ধ হয়ে গেল। জবাব নেই।
মিস্টার জাপা? পর্দা সরাল কিশোর।
মনিটরের সামনে বসা পিটার ঘুরে তাকাল। ঠোঁটে আঙুল রেখে কথা বলতে নিষেধ করল ওদের। ফিসফিস করে বলল, চুরি করে এখানে বসেছি, দেখলে আমাকে মেরে ফেলবে!
কণ্ঠস্বর নামিয়ে জিজ্ঞেস করল কিশোর, কি করছ?
কম্পিউটার স্ট্যান্ডে রাখা একটা মোটা ফাইল দেখিয়ে বলল পিটার, কিউর হার্ড কপি এটা। কম্পিউটারের নিচের তাকে রেখে দেয় জাপা। কয়েক হপ্তা আগে বানিয়েছে। কোন পরিবর্তন করতে হলে নিজের হাতে করে। ডানে-বাঁয়ে তাকিয়ে দেখে নিল সে, অন্য কেউ শুনছে কিনা। তারপর স্বর আরও নামিয়ে বলল, কম্পিউটারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখছি, কোন গোলমাল করা হয়েছে নাকি। সত্যি বলতে কি, জাপাকে এখন সন্দেহ হচ্ছে আমার।
রাগ ফুটল মুসার কণ্ঠে, নিজেই যদি করবেন, তাহলে আমাদের ডেকে আনলেন কেন…
ঠিক আছে, ঠিক আছে, হাত তুলল কিশোর, সন্দেহ যখন হয়েছে, দেখুক। আমাদের না জানলেই কি? পিটার, তুমি কিন্তু ভুল করেছ। আমাদের ওপর যখন তদন্তের দায়িত্বই দিলে, কথা গোপন করা ঠিক হয়নি তোমার। এই বইটার কথা বলা উচিত ছিল।
মাথা কাত করে পিটার বলল, বলেছি তো। কাল রাতে মাথায় এল কথাটা। তোমাদের অ্যানসারিং মেশিনকে মেসেজ দিয়ে রেখেছি। পাওনি?
জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলল কিশোর, না। ভাবল, মেশিনটা কি খারাপ হয়ে গেল?
যাই হোক, কথাটা মনের মধ্যে খোঁচাতে থাকল, পিটার বলল। সকালে উঠেই চলে এলাম দেখার জন্যে। হাসল সে। কিছু মনে কোরো না, তোমাদের সাহায্যই করতে চেয়েছি।
কিছু পেলে?
দ্বিধা করল পিটার, না…এখনও পাইনি। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বিশ্বাস করতে পারল না কিশোর। পিটারের আচরণ সন্দেহজনক মনে হলো ওর। নার্ভাস হয়ে আছে। কিছু যেন লুকানোর চেষ্টা করছে। কেন? অসুবিধেটা কি?
করিডরে গলার স্বর শুনে তাড়াতাড়ি কম্পিউটার বন্ধ করে দিল পিটার। বইটা রেখে দিল নিচের তাকে।
জাপা ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, এই, তোমরা এসেছে নাকি?
ভেতরে ঢুকলেন তিনি। সঙ্গে এসেছেন হেফটি ভাগনার, আর চারজন অভিনেতা।
এসেছি, হেসে জবাব দিল কিশোর। জিনা একটু পরে আসবে।
আচ্ছা। আসুক। আজ সারাদিন রিহার্সাল চলবে তোমাদের। রাতে স্টেজে উঠতে হবে।
নার্ভাস ভঙ্গিতে কিশোরের দিকে তাকাল মুসা।
মাথা ঝাঁকিয়ে, হেসে অভয় দিল তাকে কিশোর।