বাঁ দিক থেকে আসছে। চলো, দেখি?
জাপার কম্পিউটারের দিক থেকে আসছে শব্দটা। দৌড়ে এল দু-জনে। মনিটরের জ্বলন্ত পর্দা ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ল না। টর্চ জ্বালল মুসা।
জলদি নেভাও! ধমক এল পেছন থেকে।
ফিরে তাকাল দুই গোয়েন্দা।
মনিটরের পর্দার হালকা আভায় পিস্তলের চকচকে নলটা চিনতে ভুল হলো না ওদের।
.
১৩.
হাত তোলো! সাবধান, কোন চালাকি নয়। আদেশ এল কঠোর কণ্ঠে।
ধীরে ধীরে এগিয়ে এল কিশোর আর মুসা। ওদের সামনে পিটারের ড্রেসিং রূম। সামান্য ফাঁক হয়ে আছে।
ওই দরজা দিয়ে ঢোকো! আবার আদেশ।
পা দিয়ে ঠেলে পাল্লা খুলল কিশোর। নিয়ন আলোয় আলোকিত একটা ছোট ঘড়ি রাখা পিটারের ড্রেসিং টেবিলে, গোলাপী আভা ছড়িয়ে পড়েছে ঘরে।
সুইচ টেপার শব্দ হলো। উজ্জ্বল আলো জ্বলে উঠল।
গলা শুনেই লোকটাকে চিনেছে কিশোর। হাতে ৩৮ ক্যালিবারের রিভলভার। নুরিখ টোপাজ।
হাতের চুলকানি বন্ধ হয়নি কিশোরের।
তাহলে তোমরাই! টোপাজ বলল।
চট করে কিশোরের দিকে তাকিয়ে নিল মুসা। আমরা মানে? বুঝতে পারল না।
রিভলভারে শক্ত হলো টোপাজের আঙুল। বলেছি না আমার সঙ্গে চালাকি। করবে না। কম্পিউটারটাতে তোমরাই গোলমাল করে রেখেছ। হাত দিতে দেখেছি।
আমরা নই!
পুলিশকে বোলো, এ কথা। রিভলভারটা তাক করে ধরে রেখে ফোনের দিকে হাত বাড়াল টোপাজ।
পুলিশকে বোঝানো মোটেও কঠিন হবে না, শান্তকণ্ঠে বলল কিশোর। সমস্যা আপনারই বেশি হবে। থানায় যে অফিসারের কাছে হাজিরা দিতে যান, তিনি যদি শোনেন আপনার কাছে একটা বেআইনী অস্ত্র আছে, খুশি হবেন না নিশ্চয়।
অন্ধকারে আন্দাজে ঢিল ছুঁড়েছিল কিশোর, লেগে গেল। চমকে যেতে দেখল টোপাজকে। রিভলভারের ভয় আর করল না, সিংকের কাছে এগিয়ে গিয়ে কলের মুখ ছেড়ে ঠাণ্ডা পানি দিতে লাগল হাতে।
ফোনের ওপর স্থির হয়ে গেছে টোপাজের হাত। তুমি জানলে কি করে?
রিভলভারটার কথা অনুমান করেছি, হাসল কিশোর। তবে অপরাধ যে একটা করেছেন, এটা জানি।
রিভলভার নামাল টোপাজ। যাও, ভাগো! এবারের মত ছেড়ে দিলাম।
কিন্তু আমরা ছাড়লে তো? সুযোগ পেয়ে গেল মুসা। কম্পিউটারের কাছে আপনি কি করছিলেন?
আমি এখানে গার্ডের চাকরি করি। যেখানে খুশি যাওয়ার অধিকার আমার আছে। স্টেজের ডানে চেয়ারে বসে বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, হঠাৎ জেগে গেলাম। দেখি কম্পিউটারের সামনে একটা ছায়া নড়াচড়া করছে। তোমাদের টর্চের আলো দেখে দিল দৌড়…
কি ধরনের ছায়া? জানতে চাইল কিশোর।
দুজনের দিকে একবার করে তাকিয়ে নিল টোপাজ। খাটো, তোমাদের মত নয়। রোগা, সেটাও তোমাদের মত নয়।
তার মানে আমরা নই, মুসা বলল, বুঝলেনই তো। আর কিছু বলার আছে?
দেখো, আমাকে যা-ই ভাব তোমরা, একটা কথা বিশ্বাস করো, এই থিয়েটারটাকে সত্যি ভালবাসি আমি। এর কোন ক্ষতি চাই না। দয়া করে যদি এখন বলো, এত রাতে এখানে কি করছিলে, খুশি হব। পিটারের বন্ধু সেজে আসলে কি করছ বলো তো?
কিশোরের দিকে তাকাল মুসা। জবাব দিতে দ্বিধা করছে।
একটা মুহূর্ত ভাবল কিশোর। মাথা ঝাঁকাল। মিস্টার টোপাজ, আপনাকে বলতে রাজি আছি। তবে কথা দিতে হবে গোপন রাখবেন…
চোখ উজ্জ্বল হলো টোপাজের, তারমানে তোমরাই সেই গোয়েন্দা!
অবাক হবার পালা কিশোরের। হাত চুলকানি বন্ধ করল।
মুসা জানতে চাইল, আপনি জানলেন কি করে?
কেউ বলেনি। পত্রিকায় পড়েছি।
অসম্ভব! বলে উঠল কিশোর।
তাহলে নিজের চোখেই দেখো। ভাঁজ করা একটা পত্রিকার পাতা প্যান্টের পেছনের পকেট থেকে টেনে বের করল টোপাজ। দেখো, লিখেছে; গোপন সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে দুজন গোয়েন্দা গোপনে দুর্ঘটনার কারণ খুঁজছে, তদন্ত চালাচ্ছে থিয়েটারে। মুখ তুলল ডোরম্যান, খবরটা পড়ে অবাক হয়েছি। ভাবছিলাম, কে হতে পারে?
এখন তো জেনে গেলেন। কাউকে বলবেন না আশা করি।
না, বলব না। তোমরা যে তদন্ত করছ, তাতে খুশিই হয়েছি। বললাম না, থিয়েটারটাকে ভালবাসি।
থ্যাংক ইউ। কিছু মনে না করলে একটা সাহায্য করুন আমাদের।
কি সাহায্য?
প্যান্টের পেছনে ডলে ভেজা হাত মুছল কিশোর। আসুন আমার সঙ্গে।
ড্রেসিং রূম থেকে বেরিয়ে কম্পিউটারের দিকে এগোল সে। টোপাজকে বলল, ওটা একবার দেখব।
দেখো।
মুসা এগোল কিশোরের পেছনে। অফিসের দিকে চলে গেল টোপাজ।
কিউর একটা তালিকা দেখা গেল মনিটরের পর্দায়। ওপরে লেখা: এডিট মোর।
এ তো গ্রীক ভাষা মনে হচ্ছে আমার কাছে, মুসা বলল।
কিংবা বলো গ্রীক বিয়োগান্তক নাটক।
নাকি শেকসপীয়ারের ট্র্যাজেডি?
এই কুসংস্কারের আলোচনা বাদ দাও তো, মুসা। বাস্তব কথা বলো। প্রমাণ দরকার এখন আমাদের।
নম্বর আর কোডগুলো তো পাগলের পাগলামি মনে হচ্ছে আমার কাছে। কি করে বুঝবে এ সবের মানে?
বোঝার দরকার নেই এগুলো। আমি দেখতে চাইছি অন্য জিনিস।
কয়েক মিনিট পর উঠে দাঁড়িয়ে কিশোর বলল, গণ্ডগোল করে রাখা হয়েছে এখানে।
টোপাজকে বলে থিয়েটার থেকে বেরিয়ে এল দুই গোয়েন্দা। গার্ডের সন্দেহ জাগতে পারে এই ভয়ে পার্কিং লট থেকে দুরে রাস্তার ধারে পিকআপ রেখেছে কিশোর। সেদিকে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ টের পেল, হাতের চুলকানি চলে গেছে। পানিতে সেরেছে বোধহয়।
খবরের কাগজওলারা আমাদের কথা জানল কি করে? প্রশ্ন করল মুসা।
মুখ ফসকে বলে দিয়েছে হয়তো পিটার।