চলে গেল লোকটা।
জিনা বলল, দরজার পাশে দাঁড়িয়ে অনেকের কথা শুনছিলাম। পিটারের অ্যাক্সিডেন্টের কথাই বলাবলি করছে সবাই। যেন শো দেখতে নয়, দুর্ঘটনা দেখতে এসেছে। ঘটলে খুশি হবে। কখন ঘটবে তার অপেক্ষা করবে। হায়রে মানুষ।
মুসা বলল, যে কোন ধরনের বিজ্ঞাপন শো-র জন্যে ভাল।
একটা লোকের ওপর বার বার আঘাত আসছে, মরেও যেতে পারে, এটাকে বিজ্ঞাপন বলো! তুমিও তো মনে হচ্ছে মনে মনে চাইছ অ্যাক্সিডেন্ট থোক!
কমতে শুরু করল আলো। চুপ হয়ে গেল দর্শকরা। অর্কেস্ট্রা বাজতে শুরু করল।
অভিনয় দেখতে দেখতে যেন অন্য এক জগতে চলে গেল কিশোর। ভুলে গেল সে গোয়েন্দা, অভিনয় নয়, তদন্ত করতে এসেছে এই থিয়েটারে।
.
মধ্যবিরতির পর স্টেজের পেছনে এসে উঠল সে, জিনা আর মুসা।
পিটারকে দেখে জিনা বলল, আপনি সত্যি ভাল অভিনয় করেন, পিটার।
মুখ তুলে হাসল পিটার, থ্যাংকস। বাধাটা যে পুরোপুরি ভেঙে দিলাম সেটা কেমন লাগল?
বাধা…
মুসা কথাটা শেষ করার আগেই মাথার ওপর কি যেন নড়ে উঠল। ঝট করে মুখ তুলে তাকাল কিশোর। পরক্ষণেই এক হ্যাঁচকা টানে সরিয়ে নিল পিটারকে।
ফ্লাই এরিয়া থেকে ভারি একটা কাঠের দরজা খসে পড়ল। আরেকটু হলেই লাগত পিটারের গায়ে। মেঝেতে পড়ার আগেই আটকে গেল, ওপরের অংশটা দুটো দড়ি দিয়ে বাঁধা।
স্টেজে ছুটে এল জাপা। চিৎকার করে ডাকল নিরুকে।
পর্দার আড়াল থেকে মাথা বের করল নিরু।
এটা কি! দরজাটা দেখিয়ে বললেন জাপা।
আমি কি করে বলব?
কি করে বলবে মানে?
কিউটা তো আপনিই দিলেন। আপনার কথামতই কাজ হয়েছে।
ক্ষণিকের জন্যে স্তব্ধ হয়ে গেল যেন সবাই। জাপাকে দেখে মনে হচ্ছে ফেটে পড়বেন। এমন ভঙ্গিতে এগোলেন নিরুর দিকে, যেন কথা বললেই মেরে বসবেন। চোখের মাথা খেয়ে বসেছিলে? আমি তো ছিলাম পর্দার আড়ালে, দেখেছি নাকি কি ঘটছে? তুমি তো দেখেছ। আমি বললেই তুমি শুনবে কেন? উফ্, আর কত! বিরক্ত হয়ে গেছি এ সব অ্যাক্সিডেন্ট নিয়ে!
আমাকে দোষ দিচ্ছেন কেন? কিউ দেয়ার মালিক আপনি, আমরা আপনার কথামত কাজ করি। ইচ্ছে করে কি আর ফেলেছি? না পারলে আপনি বরং চলে যান, অন্য কেউ আসুক। অ্যাক্সিডেন্টগুলো আপনার জন্যেই হচ্ছে।
চড় মারার জন্যে হাত তুললেন ম্যানেজার।
তাড়াতাড়ি তাঁকে ধরে ফেলল চারজন শ্রমিক। শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগল।
নিরুর দিকে তাকিয়ে ফুঁসতে লাগলেন জাপা, তুমি কি করে চাকরি করো এখানে দেখে নেব! সব শয়তানি তোমার! সমস্ত শয়তানির মূলে তুমি!
যান যান, যা করতে পারেন করুনগে! নিরুও জাপার হুমকির তোয়াক্কা করল না। •
ঠেলতে ঠেলতে স্টেজের দরজা দিয়ে ম্যানেজারকে বের করে নিয়ে গেল লোকেরা।
তার পেছনে চলল কিশোর, মুসা আর জিনা। যে পরিমাণ খেপেছেন জাপা, তাঁকে দিয়ে আপাতত আর কাজ হবে না, বাকি নাটকটা চালানোর দায়িত্ব অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হলো।
কিশোর দেখল, দরজায় লাগানো পেগবার্ড পরীক্ষা করছে টোপাজ। খুব ভাল। অফিসের চাবি ফেরত দিয়ে যেতে ভুলে গেছে ম্যানেজার। বিড়বিড় করল সে।
মুসা আর জিনাকে টেনে সরিয়ে আনল কিশোর। ফিসফিস করে বলল, ভুলে যায়নি।
মানে? দুজনেই হাঁ।
পকেট থেকে খাটো একটা চেনসহ চাবি বের করে দেখাল কিশোর, রেখেছিলেন ঠিকই। গোলমালের সুযোগে আমি সরিয়ে ফেলেছি। জাপার অফিস খুঁজে দেখব। জানার চেষ্টা করব অ্যাক্সিডেন্টগুলোর মূলে তিনিই কিনা।
.
মুসার টর্চের আলো ঘুরে বেড়াতে লাগল অফিসঘরে। মাঝরাত পেরিয়ে গেছে। চুরি করে থিয়েটারে ঢোকার আগে কাউকে চোখে পড়েনি তার।
হঠাৎ বলল ফিসফিস করে, শুনছ?
শুনছি, জবাব দিল কিশোর। তোমার হৃৎপিণ্ডের শব্দ। দেখি, আলোটা আরেকটু ফেরাও তো এদিকে।
কিশোরের হাতের ফোল্ডারটার ওপর আলো ফেলল মুসা। কভারে লেখা: পারসোনাল।
নিরু ওয়ারনারের ফাইল।
কি লেখা? জানতে চাইল মুসা।
বারের মধ্যে গোলমাল করার অপরাধে একবার অ্যারেস্ট হয়েছিল। আরও খানিকক্ষণ দেখে ফাইলটা বন্ধ করে ফেলল কিলোর। আর কিছু নেই। তিনসি জাপার ফাইলে সন্দেহ করার মত কোন তথ্য নেই। তবে টোপাজের ফাইলে আছে। একটা অপরাধে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল তাকে। জামিনে মুক্তি দিয়েছে। নিয়মিত হাজিরা দিতে হয় থানায়।
আর কিছু?
নাহ্, মাথা নাড়ল কিশোর। চলো, বেরোই। ফাইলটা ফোল্ডার কেবিনেটে রেখে দিল সে।
বেরোনোর সময় বা হাতে দরজার হাতল ধরে টানল।
গ্রাউন্ড ফ্লোরের নিচের তলায় অর্থাৎ মাটির নিচে রয়েছে ওরা। পা টিপে টিপে এগোচ্ছে। সিঁড়ির রেলিঙ ধরতেই উহ্ করে উঠল। বাঁ হাত চুলকাতে শুরু করল।
কি হলো? জানতে চাইল মুসা।
চুলকানি। দুটো ধাপ উঠল কিশোর। আরও বাড়ল চুলকানি। আরি, বাড়ছেই তো! অসহ্য!
আশ্চর্য! বিশ্বাস করতে পারছে না মুসা। এখানে চুলকানির বিষ এল কোত্থেকে? বিছুটির ব-ও তো নেই কোথাও।
এই জিনিসই যে পিটারের কাপড়ে লাগিয়ে রাখা হয়েছিল, সন্দেহ রইল না কিশোরের। মনে হচ্ছে জাপার পপকর্নের ঠোঙায়…
…ছিল এই বিষ! বাক্যটা শেষ করল মুসা।
সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে তাকে জিজ্ঞেস করল কিশোর, তোমার চুলকাচ্ছে?
না।
তাহলে দরজার হাতলে লেগে ছিল, রেলিঙে নয়। কোন ভাবে লাগিয়ে ফেলেছেন জাপা…।
ভোঁতা একটা শব্দ হলো।
এটা কিন্তু আমার হার্টের নয়! কান পাতল মুসা।