পিটারের দর্জি, মুসাকে বলল কিশোর।
দর্জি?
থিয়েটারে নানা রকম পোশাক লাগে, কস্টিউম। সব সময় রেডি রাখতে হয়। কোথাও ছিঁড়ল-ফাটল কিনা দেখে রাখে দর্জি। মেরামত দরকার হলে সঙ্গে সঙ্গে সেটা সেরে রাখে।
বাপরে, থিয়েটারে অনেক ঝামেলা!
কাছে একটা টুলে পড়ে থাকা খবরের কাগজের হেডিঙে চোখ পড়ল কিশোরের:
দুর্ভাগ্যের শিকার তরুণ অভিনেতা
শেকসপীয়ারের প্রতিশোধ!
কাগজটা হাতে নিল সে। হেডলাইনের নিচে পিটারের একটা ছবি। কপালের ফোলাটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তার নিচে ক্যাপশন:
ওয়াইন্ড! ওয়াইল্ড! ওয়াইল্ড-এর স্টার পিটার হাইয়েম
এই হপ্তায় অনেকগুলো দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।
ছবিটা দেখতে দেখতে মুসা বলল, আসলে যতটা ফুলেছিল তার চেয়ে বেশি ফোলা লাগছে ছবিতে।
হ্যাঁ, চোখের পাতা সরু হয়ে এল কিশোরের। ইচ্ছে করেই হয়তো ছবিটায় এ রকম করেছে। দ্রুত পাতা উল্টে শো-বিজের গসিপ পাতায় চলে এল সে।
এটা দেখো, কিশোরের কাঁধের ওপর দিয়ে দেখতে দেখতে বলল মুসা, আর্ট টিলারি একটা বিদেশী ফিল্মে কাজ করার কন্ট্রাক্ট সই করেছে। পিটারকে ছাড়া কলিনের আর কোন পথ নেই, তাকে পছন্দ করুন আর না-ই করুন।
তীক্ষ একটা চিৎকার ভেসে এল পিটারের ড্রেসিং রুম থেকে।
চোখের পলকে ঘুরে দাঁড়িয়ে সেদিকে দৌড় দিল মুসা। কাগজটা হাত থেকে ফেলে তার পেছনে ছুটল কিশোর। ওদের পেছনে আরও কয়েকজন।
ঘরে ঢুকে দেখা গেল পাগলের মত ডান হাত চুলকাচ্ছে পিটারের দর্জি। চামড়া লাল হয়ে উঠেছে।
কি হয়েছে? জানতে চাইল কিশোর।
কোণের সিঙ্কের কাছে দৌড়ে গেল দর্জি। কল ছেড়ে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে হাত ভেজাতে ভেজাতে বলল, উফ, জ্বলে গেল! পুড়ে যাচ্ছে যেন!
এই, ডাক্তার ডাকুন! দরজার কাছে উঁকি মারছে অনেক লোক, তাদের উদ্দেশে বলল কিশোর। দর্জির দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করল, হয়েছে কি?
আঙুলের কাছ থেকে বাহুর মাঝামাঝি পর্যন্ত এখন লাল অনেকগুলো দাগ দেখা যাচ্ছে দর্জির। কি জানি, বলতে পারব না! ওটা কেবল ছুঁয়েছি, অমনি এই অবস্থা!
কাঁপা হাতে পিটারের নতুন পোশাকটা দেখাল সে।
.
১২.
আর আধ ঘন্টা বাকি। প্লীজ, যার যার জায়গায় যান, স্টেজের স্পীকারে বেজে উঠল জাপার কণ্ঠ।
আমি যাই, মুসা আর কিশোরকে বলল পিটার। রেডি হতে হবে।…ও, ডাক্তার বুঝেছেন কি জিনিস লাগানো ছিল পোশাকে। অ্যানটিভোট দিয়ে দিয়েছেন ফক্সিকে, ঠিক হয়ে যাবে।
গুড, কিশোর বলল। দর্জির জন্যে উদ্বিগ্ন হয়ে ছিল সে। তোমার পোশাকের কি হবে? ওটা তো আর পরতে পারবে না।
মুখে ছায়া নামল পিটারের। বলতে কষ্টই হলো যেন, আজ রাতের জন্যে অন্য আরেকটা দেয়া হবে আমাকে। দেখেটেখে দেবে, যাতে ক্ষতিকর কিছু লাগানো না থাকে।
আজ রাতে পারবেন কাজ করতে? মুসার প্রশ্ন।
পারব। তবে মনের জোর আর রাখতে পারছি না। ভয়ই লাগছে। ভাগ্যিস পরিনি পোশাকটা! ফক্সি বেচারার জন্যেই বেঁচে গেলাম। আমার যন্ত্রণাটা গেল তার ওপর দিয়ে।
বাঁচলে তো বটেই, কিশোর বলল। স্টেজে যাওয়ার আগে গায়ে দিলে আর অভিনয় করতে হতো না। যে লাগিয়েছে সে এটাই চাইছিল, যাতে মঞ্চে যেতে না পারো। এখন মনে করার চেষ্টা করো তো পোশাকটা কে কে ধরেছিল আজকে?
মাথা হেলিয়ে ভাবল পিটার। ফক্সি ধরেনি এটা ঠিক…
সে তো জানা কথাই, মুসা বলল। নিজে আজেবাজে জিনিস লাগিয়ে আবার নিজেই ধরতে যেত নাকি?
কে লাগিয়েছে কার কথা বলি? নিজের থুতনিতে টোকা দিল পিটার। নিচের ওয়ারড়ো ডিপার্টমেন্টের কেউ হতে পারে, ডিজাইনারদের কেউ হতে পারে। কজনকে সন্দেহ করব?
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। আমার ধারণা, তোমার ঘরে এসে ঝোলানোর পর পোশাকটাতে ওই জিনিস লাগানো হয়েছে। নইলে যে নিয়ে আসত তারও হাতে লাগত; চুলকাত। পুরো কাপড়ে না লাগিয়ে সামান্য একটু জায়গায় লাগালৈ অবশ্য আলাদা কথা।
ওটা আনার পর ড্রেসিং রূমে অনেক লোক ঢুকেছে। ভিনসি জাপা, হেফটি ভাগনার, রলি ওয়ারনার, কয়েকজন অভিনেতা। ওদের যে কেউ লাগিয়ে থাকতে পারে।
রলি ওয়ারনারের নামটা লাফ দিয়ে উঠে এল কিশোরের মনে। রলি-পিটারের সহকারী। বব রডম্যানের বাড়িতে দুর্ঘটনার সবচেয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তি। পিটারকে বসিয়ে দিয়ে নিজেকে তার জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে করছে এ সব?
দরজায় উঁকি দিলেন জাপা। কিশোর আর মুসাকে বললেন, দেরি করছ কেন তোমরা? টিকিট বিক্রি শেষ। একটা সীটও পড়ে নেই। তোমাদেরকে বসার জায়গা দেখিয়ে দেব, এসো।
ড্রেসিং রুম থেকে প্রায় ছুটে বেরোল দুই গোয়েন্দা। দরজা দিয়ে দর্শকরা ঢুকলে সীট নম্বর দেখে তাদের বসানোর ব্যবস্থা করছে একজন লোক। সেই লোকই কিশোর আর মুসাকে বারের কাছাকাছি একটা জায়গা দেখিয়ে দিল। জিনা দাঁড়িয়ে আছে ওখানে। হাত নেড়ে ওদের ডাকল। বক্স অফিসের কি অবস্থা দেখার জন্যে উঁকি দিল কিশোর। টিকেট কাউন্টারের সামনে এখনও লম্বা লাইন। আশায় আছে লোকগুলো, যদি কোনমতে একটা টিকিট পেয়ে যায়!
সাংঘাতিক ব্যবসা হবে মনে হচ্ছে, যে লোকটা ওদের সীট দেখিয়ে দিয়েছে। তাকে বলল কিশোর। ঘরভর্তি লোকের সামনে মঞ্চে উঠে অভিনয় করতে কেমন লাগবে, ভাবতেই রোমাঞ্চিত হলো সে।
তিন মাসের জন্যে বুকড হয়ে গেছে শো, জবাব দিল লোকটা। অথচ এখনও প্রিভিউ চলছে, আসল শো শুরুই হয়নি। অর্ডারের পর অর্ডার আসছে। কে ভেবেছিল এই কাণ্ড হবে এ হপ্তায়? আগে তো মরেই ছিল।