কিশোরের অবস্থা আরও খারাপ। তার সঙ্গে দেখা হতেই মুসা বলল, এ নাচিয়েগুলো মানুষ না, কিশোর! আন্না ওদের শরীরে কি দিয়েছে আল্লাই জানেন?
হেসে বলল কিশোর, ওদেরকে বাস্কেটবল খেলতে দিলে বলবে, বাস্কেটব খেলোয়াড়েরা মানুষ নয়:…সব কাজেই প্র্যাকটিস দরকার। একেক কাজে একে রকম প্র্যাকটিস। একজনের কাজ আরেকজনকে করতে দিলে এবং সেটা তা জানা না থাকলে সাংঘাতিক কঠিন মনে হবে।
কিন্তু কিশোর, স্টেজে গিয়ে দর্শকদের সামনে যদি না পারি? পচা ডিম মেরে শেষ করে দেবে। কয়েক মন সাবান দিয়ে ধুয়েও গন্ধ দূর করতে পারব না!
আরে অত ঘাবড়িও না, পারবে ঠিকই। আমরা তো আর হিরো হতে যাচ্ছি, কোনমতে কাজ চালিয়ে দিতে পারলেই হলো। আমাদের আসল কাজ হলো গোয়েন্দাগিরি করা, পিটারকে বাঁচানো।
কিন্তু মঞ্চে উঠলেই তো আমার হাত-পা সিঁটিয়ে যাবে। অভিনয়ের আমি কি বুঝি? আমি পারব না, কিশোর, ভাই, আমাকে মাপ করো…
আরে দূর, অত ঘাবড়াও কেন? পারবে, খুব পারবে। না পারলে আমি শিখিয়ে দেব। আসল কাজটা হলো চেষ্টা করা। চেষ্টায় সব হয়।
নাচ শেখান যে ভদ্রলোক, তার নাম হেফটি ভাগনার। মুসার ভয় দেখে হাসলেন। সান্ত্বনা দিলেন, তোমার চেয়ে অনেক আনাড়িকে নাচের ওস্তাদ বানিয়ে দিয়েছি আমি। তোমার তো রীতিমত ট্যালেন্ট আছে। ভাল লাফ দিতে পারো…বাস্কেটবল এই একটা সুবিধা করে দিয়েছে তোমার। ভয় নেই, কোন ভয় নেই, দর্শকরা তোমার প্রশংসাই করবে, আমি হেফটি ভাগনার বলছি।
ওস্তাদের কথায় ভয় অনেক কাটল মুসার, আত্মবিশ্বাস বাড়ল।
.
অবশেষে মুসাকে ছাড়পত্র দিয়ে দিলেন ভাগনার। কোন পার্ট করতে হবে তা-ও বুঝিয়ে দিলেন, পিটার আর তার হিরোইন নেলি গুহার ভেতর থেকে পালানোর চেষ্টা করবে। সৈকতে বেরিয়ে গিয়ে পড়বে জাপানীদের খপ্পরে। ওই দৃশ্যটাতে ওদের সঙ্গে থাকবে তুমি।
আমি এটা ভাল পারতাম।
তুমি সবই ভাল পারবে, জাত অভিনেতা, বুঝে গেছি আমি। তোমাকে আরও কঠিন একটা পার্ট দেয়া হবে। ঘোরের মধ্যে স্বপ্ন দেখবে পিটার-ক্যালিফোর্নিয়ায় বাড়ি পৌঁছে গেছে, সৈকতে বেড়াতে বেরিয়েছে। গান গাইবে ওখানে, নাচবে, নানা রকম খেলা খেলবে, সেখানে তুমিও থাকবে তার সঙ্গে…
হু, মন্দ না। তারপর?
বীচবল খেলতে হবে তার সঙ্গে তোমাকে…
বীচবল!
মুচকি হাসল জিনা। কিশোরের দিকে তাকিয়ে কৃত্রিম সমবেদনায় জিভ দিয়ে চুক চুক শব্দ করল।
আঁতকে উঠলে যে? পারবে না নাকি? জিজ্ঞেস করলেন ভাগনার।
পারব না, কারণ যে কোন আউটডোর গেম আমার অপছন্দ-বললে কাজ হারানোর ভয় আছে, চুপ করে রইল কিশোর।
হেসে বলল মুসা। আরে দূর, অত ঘাবড়াও কেন? পারবে, খুব পারবে। না পারলে আমি শিখিয়ে দেব। আসল কাজটা হলো চেষ্টা করা। চেষ্টায় সব হয়। কিশোরের দিকে চেয়ে ভাগনারের অলক্ষে চোখ টিপল। বোঝাতে চাইল–কেমন মজা! আমার সময় তো খুব বলেছিলে, চেষ্টায় সব হয়। অন্যকে পরামর্শ দেয়া খুব সহজ!
তাহলে আর কি? ভাগনার বললেন, ঠিক আছে, যাও এখন। তিনটায় আবার দেখা কোরো।
.
পিটারের ড্রেসিং রুমের দরজা খুলে ভেতরে উঁকি দিল কিলোর, পিটার, ভাল খবর আছে। ওর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে মুসা আর জিনা।
হাসিমুখে ওদের স্বাগত জানাল পিটার আর ভিনসি জাপা।
পিটার বলল, দাঁড়াও, দাঁড়াও, বোলো না! দেখি আন্দাজ করতে পারি কিনা? চোখ বন্ধ করে কপালে হাত রাখল সে। শেকসপীয়ারের ভূতকে তাড়া করে ধরে ফেলে এখন শেকল দিয়ে বেঁধে রেখেছ। চোখ মেলে হাসল। এমনি, দুষ্টুমি করছিলাম। খবরটা আমি জানি। আরও জানি, ভালই করবে তোমরা।
থিয়েটারে স্বাগতম, মুসা আর কিশোরের সঙ্গে হাত মেলালেন জাপা। এখানে ঢুকতে আর কোন বাধা থাকল না এখন তোমাদের। সেই সুবাদে খানিকটা পপকর্ন হয়ে যাক? মাঝারি আকারের একটা কাগজের ঠোঙা বের করে আনলেন যে চেয়ারে বসেছেন সেটার পেছন থেকে। একেবারে তাজা দিয়েছে।
ডায়েট কন্ট্রোল করার ফলে পেট প্রায় খালিই থাকে কিশোরের। জিভে জল এসে গেল তার। কিন্তু সে কথা বলার আগেই জিনা বলে উঠল, বাহ, পোশাকটা তো সুন্দর! নতুন?।
পিটারের কস্টিউম র্যাকের দিকে এগিয়ে গেল সে। সিল্কের একটা আলখেল্লার মত ঢোলা পোশাক, তাতে নানা রঙের ফিতার বন্ধনী লাগানো। ধরার জন্যে হাত বাড়াল।
ঝনঝন করে কাঁচ ভাঙল। চিৎকার করে উঠল পিটার, আহহা, গেল তো পড়ে!
ফিরে তাকাল জিনা।
ভাঙা কাঁচ কুড়ানোর জন্যে নিচু হলো মুসা, ভাঙা আয়না মানে ব্যাড লাক!
তুমিও দেখি ববের মত কথা বলো, পিটার বলল।
কাঁচ কুঁড়াতে মুসাকে সাহায্য করল কিশোর আর জিনা।
দরজার দিকে এগোতে এগোতে জাপা বললেন, কম্পিউটারে নাম্বার সাজাতে বলিগে। কান খাড়া রাখবে কিন্তু। কিউ ভুল কোরো না। রিহার্সালের সময় যা বলেছি, অক্ষরে অক্ষরে মনে রাখবে। শেষ কথাগুলো নতুন অভিনেতাদের উদ্দেশে বললেন তিনি।
আসছি, পিটার বলল। কাঁচগুলো তুলেই চলে আসব।
ড্রেসিং রুম থেকে বেরোনোর আগে পপকর্নের ঠোঙাটার দিকে লোভীর মত তাকাল কিশোর। স্টেজের ডানে চলে গেল পিটার, ওদিক দিয়েই তার ঢোকার কথা। জিনা বসল দর্শকদের মাঝে। কিশোর আর মুসা স্টেজে রয়ে গেল ঢোকার অপেক্ষায়।
কিশোর দেখল, সুতো আর কঁচি হাতে পিটারের ড্রেসিং রুমের দিকে যাচ্ছে। একজন লোক। গলায় ঝোলানো দর্জির ফিতে।