মনে হচ্ছে মার্শাল আর্টের ওস্তাদ! প্রশংসা করল মুসা।
নাচতে নাচতে শরীর বাকিয়ে, মুচড়ে, নানা রকম কায়দা-কসরৎ দেখাচ্ছে পিটার।
নাচ চলেছে, এই সময় একটা ঘড়ঘড় শব্দ শোনা গেল।
চোখ বড় বড় হয়ে গেল কিশোরের, টার্নটেবল ঘুরছে!
পর্দা কাঁপতে শুরু করল। মেঝেতে পড়ে গেল নাচিয়েরা। বিস্ময়ে চিৎকার করে উঠল কেউ কেউ।
লাফ দিয়ে শূন্যে উঠে পড়েছিল পিটার।পড়ল হাঁটু ভাজ করা অবস্থায়। ব্যথায় চিৎকার করে উঠল। মুখ থুবড়ে পড়ল মেঝেতে।
একলাফে সীট থেকে উঠে মঞ্চের দিকে দৌড় দিল কিশোর, মুসা আর জিনা। বাজনা থেমে গেছে। আলো জ্বলে উঠেছে। উত্তেজিত হয়ে পড়েছে দর্শক।
গোয়েন্দাদের মঞ্চে উঠতে বাধা দিল উল্কি আঁকা একটা হাত, কঠিন গলায় বলল, নামো! এখানে ওঠা বারণ।
নিরু। কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তিনজনের দিকে। চোখের আগুনটা বর্ষিত হচ্ছে মূলত কিশোরের ওপর।
আপনি তো আমাদের চেনেন! কিশোর বলল।
কি হবে চিনলে? থিয়েটারের লোক ছাড়া আর কাউকে উঠতে দেয়ার নিয়ম নেই। এখন তো আরও দেয়া যাবে না। কোন কিছু ঘটে গেলে দায়ী হবে কে?
অসহায় দৃষ্টিতে মঞ্চের দিকে তাকিয়ে রইল কিশোর। নিরু অন্যায় কিছু বলেনি।
তবু মুসা বলল, আমরা কোন সাহায্য করতে পারি নাকি দেখতাম।
কি ব্যাপার? সেট খসে পড়েছে নাকি?
পরিচিত কণ্ঠ শুনে চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরে তাকাল কিশোর। মুসা আর জিনাও ঘুরল।
তিনজনেই অবাক। পিটার দাঁড়িয়ে আছে। বলল, এমন করে তাকাচ্ছ যেন আমাকে চিনতে পারছ না! হয়েছেটা কি?
আ-আ-আপনি নন! তোতলাতে শুরু করল জিনা।
মঞ্চ থেকে একজন লোককে ধরাধরি করে তুললেন ভিনসি জাপা এবং আরেকজন শ্রমিক। যাকে তোলা হলো সে পিটারের সমান লম্বা, সোনালি চুল।
ছায়া দেখে কিন্তু অবিকল একই রকম লাগছিল! নিজেকে যেন বোঝাল কিশোর।
আমরা ভেবেছিলাম…আমরা..মানে… কথা সাজাতে পারছে না মুসা।
বিস্ময়টা দূর হয়ে গেল পিটারের চেহারা থেকে। এইবার বুঝেছি! টেরি হান্না। অক্সিডেন্ট করেছে। তোমরা মনে করেছ আমি।
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল জিনা।
অনেকটা আমার মতই দেখতে। লম্বা, চওড়া…ভাড়া করে আনা হয়েছে আমার জায়গায় চালানোর জন্যে। নাচটাচ তো জানি না ওরকম
চিৎকার করে জিজ্ঞেস করল একটা কণ্ঠ, ট্রট, টার্নটেবলটার কি হয়েছিল?
টার্নটেবলের উচ্চারণটা শোনাল টয়টেবল। ভিনসি জাপার নিউ ইয়র্ক টান।
স্টেজ থেকে জবাব এল, আপনি কিউ দিয়েছেন সেভেনটি সেভেন। ওটা টার্নটেবলের কিউ।
কী! ঝট করে কম্পিউটারের দিকে ফিরে তাকালেন ম্যানেজার। কিন্তু একটা লোককে তুলে ধরে রাখায় দৌড়ে যেতে পারলেন না।
কম্পিউটারে কোন গোলমাল হয়নি তো? টার্নটেবল অপারেটর জিজ্ঞেস করল।
হতে পারে! বিড়বিড় করলেন ম্যানেজার, কিন্তু কথাটা কিশোরের কান এড়াল না। টেরি হান্নাকে স্টেজের ধারে একটা কটে নামিয়ে রেখে ফোনের দিকে দৌড় দিলেন।
টেরির কাছে গিয়ে জানতে চাইল পিটার, কি অবস্থা তোমার?
ব্যথায় ককাতে ককাতে জবাব দিল টেরি, মনে হয় গোড়ালিটা গেছে।
কিশোর আর জিনার দিকে ফিরল মুসা, গোড়ালি ভেঙে থাকলে কয়েক মাসের জন্যে বাতিল। নাচানাচি বাদ।
ব্যাপারটা পিটারের বেলায়ও ঘটতে পারত, চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল কিশোর। কিন্তু তদন্ত করারও কোন উপায় দেখছি না। আমাদের উঠতে দেবে না। জোর করে কিছু করতে গেলে পুলিশের কাছে দিয়ে দেবে।
তাহলে কি করব? আমরা শ্রমিক নই, অভিনেতা নই, থিয়েটারের কেউ নই। এখানকার লোকেরাও পিটারের বন্ধু হিসেবে আমাদের চিনে ফেলেছে। ফাঁকি দিতে পারব না। তাহলে? নিরাশ ভঙ্গিতে হাত নাড়ল মুসা।
একটা উপায় অবশ্য আছে… চোখ চকচক করছে জিনার।
তার দৃষ্টি অনুসরণ করে আউটার করিডরের দিকে তাকাল মুসা ও কিশোর।
আধখোলা দরজা দিয়ে অডিশন নোটিশটা চোখে পড়ছে। বাইরে থেকে আ বাতাস লাগলেই নড়ে উঠছে কাগজটা।
ওখানে ঢোকার কথা বলছ নাকি? মুসার প্রশ্ন।
মাথা নাড়ল জিনা।
কিশোর আগেই বুঝেছে। মুসার কথার জবাব দিল, না। তবে নোটিশটা বলেছে একজন পুরুষ আর একজন মহিলা প্রয়োজন।
তাকে শুধরে দিল জিনা, এখন একজন পুরুষে আর হবে না, দু-জন লাগবে টেরির সমান লম্বা, মার্শাল আর্ট জানা…
এতক্ষণে বুঝেছে মুসা, আমি আমার কথা বলছ! কিন্তু নাচের ন-ও তে জানি না আমি। জীবনে কখনও স্টেজে উঠিনি…
তাতে কি? কিশোর বলল, মার্শাল আর্ট তো জানো। ঠিকমত অঙ্গভা করতে পারলে, জড়তা এড়াতে পারলে ওটাই নাচ হয়ে যাবে। তা ছাড়া আমি তে থাকবই আশেপাশে। ভয় কি?
কিন্তু আমাদের নেবে কেন?
এখন ওদের লোক প্রয়োজন। আমাকে নেবেই ওরা, কারণ অভিনেতা হিসে ছোটবেলায়ই সুনাম করে ফেলেছি। জিনাকে নেবে পিটারের সুপারিশে। আ আমাদের তিনজনের সুপারিশ তোমাকে নেয়ার জন্যে যথেষ্ট।
.
১১.
দরদর করে ঘামছে মুসা। কিশোরের কথাই ঠিক হয়েছে। ঢুকতে কোন অসুবি হয়নি ওদের। নিয়ে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নাচ শিখতে শিখতে এখন প্রাণ বেরোনো জোগাড় মুসার। বাস্কেটবল প্র্যাকটিসের চেয়ে অনেক কঠিন লাগছে তার কাছে।
কিশোরকেও নাচতে হচ্ছে। মুসার চেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে তার। কারণ অ ফিট নয় তার শরীরটা।
পরদিন সকালে বিছানা থেকে নামার সময় মুসার মনে হলো একটা ট্রাক যে চলে গিয়েছিল তার শরীরের ওপর দিয়ে। পেশীতে ব্যথা। এই শরীর নিয়েই আবা যেতে হবে প্র্যাকটিস করতে।