চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়াল সে। বব রডম্যান এখন বাড়ি থাকলেই হয়।
০৯.
প্রথম যেতে হবে রকি বীচ হাই স্কুলে, মুসাকে তুলে নেয়ার জন্যে।
ওকে খুঁজে বের করতে দেরি হলো না। জিনাকেও পাওয়া গেল ওখানে। মেয়েদেরও বাস্কেটবল প্রতিযোগিতা আছে।
কিশোরকে দেখে দু-জনেই অবাক হলো। বাস্কেটবলের প্র্যাকটিস দেখতে এসেছ? জিজ্ঞেস করল জিনা।
না, মুসাকে নিয়ে যেতে। তোমাকে পেয়ে গিয়ে ভালই হলো। কাল ববের বাড়িতে শেকসপীয়ারের মূর্তিটা তুলে রেখেছিলে তুমি। কেমন লেগেছিল?
দ্বিধা করল জিনা। মার্বেলের মত ঠাণ্ডা, মসৃণ…
আর কিছু?
ভাবল জিনা, আঠা আঠা!
কি ধরনের আঠা? তেলতেলে খাবারের ওপর যেমন থাকে, বার্গারের ওপর?
আবার দ্বিধা করল জিনা। কি জানি, হবে হয়তো।
এতেই চলবে। মুসার দিকে তাকাল কিশোর, যাবে না?
কাজ শেষ হয়নি তো এখনও।
ঘড়ি দেখল কিশোর। ১টা বেজে ৫ মিনিট। থিয়েটারে যাওয়ার কথা দুটোর সময়। এক ঘণ্টা সময় নেই হাতে। ববের ওখানে গেলে এক্ষুণি যেতে হবে। ঠিক আছে, তুমি থাকো। আমি একাই সেরে আসি। দুপুর দুটোয় থিয়েটারে হাজির থেকো।
প্রায় ছুটে পার্কিং লটে ফিরে এল কিশোর। পিকআপে চড়ে স্টার্ট দিল। ফ্রিওয়েতে বেরিয়ে এসে রওনা হলো পশ্চিম হলিউডে।
কাজটা সহজ হবে না–চালাতে চালাতে ভাবছে সে-ববের কাছ থেকে তথ্য আদায় করাটা সহজ না।
ববের বাড়ির সামনে যখন গাড়ি রাখল সে, ঘড়িতে ঠিক দেড়টা বাজে। সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে উঠল ওপরে। দরজার ঘণ্টা বাজাল।
কে? ভেতর থেকে সাড়া এল।
কিশোর পাশা।
নীরব হয়ে রইল ওপাশ।
পিটার হাইয়েমের বন্ধু, আবার বলল কিশোর।
দরজা খুলল। চোখের পাতা সরু হয়ে এল ববের, তোমার নাম যে কিশোর, জানতাম না। তোমার নামের মধ্যে একটা অনুসন্ধানের গন্ধ পাচ্ছি। জানার ইচ্ছে বড় প্রবল।
সত্যি বলতে কি, অস্বস্তিতে পড়ে গেল কিশোর, আসলে কয়েকটা প্রশ্নই করতে এসেছি আপনাকে। ভেতরে আসব?
ঘড়ি দেখল বব। কয়েক মিনিটের মধ্যেই বেরোব, থিয়েটারে যেতে হবে। কি প্রশ্ন তোমার?
আমার বন্ধু পিটারের ব্যাপারে। ভয়ই লাগছে। অভিশাপ নিয়ে তার এমন হাসিঠাট্টা ভাল লাগছে না আমার। তার শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে আপনি কি পরামর্শ দিতে পারেন, কি করা যায়?
মাথা ঝাঁকিয়ে দরজা থেকে সরে দাঁড়াল বব, এসো।
লোকটার চোখে আলোর ঝিলিক চোখ এড়াল না কিশোরের। করিডরের শেষ মাথায় ঘরের দিকে এগোতে এগোতে বব বলল, আমার অনুষ্ঠান তাহলে ভাল লেগেছে তোমার?
লেগেছে। তবে খিদে না থাকলে আরও লাগত।
হাসল বব। আসলে খালি পেটেই এ সব কাজ করা ভাল। আমি তো কাল সারাদিনই কিছু খাইনি।
যা ভাবার ভেবে ফেলল কিশোর–বর কিছু না খেয়ে থাকলে তার হাতে বনরুটির তেল লাগার কথা নয়। কাল বিকেলে রলি আর পিটার বার্গার খেয়েছে। তার আঙুলে লেগে থাকাটা স্বাভাবিক।
সুইচ টিপে আলো জ্বালল বব। দরজার ডান পাশে সুইচটা। আরেকটু ডানে সরে দেয়ালের গায়ে সকেট, তাতে প্লাগ ঢুকিয়ে টেবিল ল্যাম্পের লম্বা তার বের করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মেঝেতে পড়ে থাকা তারটার মাঝামাঝি জায়গায় কয়েকটা প্যাঁচ খেয়ে আছে। টেবিলেই রয়েছে ল্যাম্পটা। উল্টোদিকের টেবিলে রাখা শেকসপীয়ারের মূর্তিটা, গম্ভীর, সার্বক্ষণিক কুটি করে আছে।
মনে মনে হিসেব করল কিশোর, সকেট থেকে ল্যাম্পের দূরত্ব পনেরো ফুট। মনে করার চেষ্টা করল অনুষ্ঠানের সময় কে কোথায় বসেছিল। দরজার কাছে বব, তার ডান পাশে চশমা পরা একটা মেয়ে, তার পাশে কোকড়া-চুল এক লোক, তারপর রলি, এবং তারপর তিনজন অভিনেতা। তাদের শেষজনের পাশে পিটার, মূর্তিটার কাছাকাছি, তারপর আরও দু-তিনজন অভিনেত্রী। চক্রের বাকি অংশটা। পুরণ করেছে সে নিজে, মুসা আর জিনা।
লোকটার কাছ থেকে কি ভাবে কথা আদায় করবে ভাবছে সে। আসলে, যত যা-ই বলুন, আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে ব্যাপারটা আধিভৌতিক কিছু। বরং…
মানুষের শয়তানি বলতে চাইছ? মুচকি হাসল বব। প্রথম প্রথম এলে আর এ রকম কিছু ঘটলে সবাই তাই ভাবে। পরে ঠিক হয়ে যায়। বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়। বেশ, তুমি আমাকে বলো, বাতিটা আপনাআপনি নিভল কি করে?
টাইমার লাগানো থাকতে পারে, জবাব দিল কিশোর।
আবার হাসল বব। হ্যাঁ, ওভাবে বাতি নিভিয়ে, অন্ধকারে এতগুলো মানুষকে ডিঙিয়ে, কারও গায়ে সামান্যতম ছোঁয়া না লাগিয়ে গিয়ে মৃতিটা ফেলে, আবার সবাইকে ডিঙিয়ে এসে আগের জায়গায় বসে পড়লাম; তারপর জ্বেলে দিলাম মাথার ওপরের বাতিটা! এতই সহজ!
ল্যাম্পের বাল্বটা কেটে গিয়ে থাকতে পারে।
কাটেনি। দেখেছি। সকেট থেকে প্লাগটা খুলে গিয়েছিল।
তাই নাকি? আমি গাধা তাহলে লক্ষ করলাম না কেন কাল? ভাবল কিলোর। পিটারের জন্যে বেশি উদ্বিগ্ন ছিলাম আর তার দিকে খেয়াল ছিল বলেই বোধহয় দেখিনি। বলল, তাহলে কেউ টেনে খুলে ফেলেছে।
কেউ নয়, কিছু, শুধরে দিল বব।
ঠোঁট গোল করে নীরবে শিস দেয়ার ভঙ্গি করল কিশোর। তাজ্জব ব্যাপার…
তার কাঁধে হাত রাখল বব। ইয়াং ম্যান, তোমার বন্ধুর জন্যে নিশ্চয় একটা দায়িত্ব আছে তোমার। আমার চেয়ে তোমার কথা বেশি গুরুত্ব দেবে সে, জানি। তাকে বোঝাওগে। ঘড়ি দেখল বব, আর সময় নেই, থিয়েটারে যেতে হবে। তোমাকে আর সময় দিতে পারছি না, সরি।