অ্যাই, রবিন! বাইরে থেকে ডাক শোনা গেল, আছ নাকি?
ওই যে, জাহির এসে গেছে।
তাকে ওঅর্কশপের ভেতর নিয়ে এল রবিন।
কাঁধে ক্যানভাসের ব্যাগ। ঘরের ভেতর চোখ বোলাল জাহির। চওড়া হাসি ফুটল। চমৎকার! এই ক্লাবের সদস্য হতে হলে কি করতে হবে আমাকে?
হাসল রবিন। কি ধরনের ক্যাসেট এনেছেন দেখি আগে, তারপর বলব।
ব্যাগটা টেবিলে রাখল জাহির। দেখো।
ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দিল রবিন। বের করে আনল একমুঠো ক্যাসেট। বাহ, কি সব জিনিস! দা মোস্ট হ্যাপি ফেলা, ওয়েস্ট সাইড স্টোরি, ক্যানডিড, সুইনি টোড–সব তো শো মিউজিক। কোত্থেকে জোগাড় করলেন? বাপের কালেকশন মেরে দিয়েছেন?
না, মাথা নাড়ল জাহির, ইদানীং আমার এগুলোই ভাল লাগতে আরম্ভ করেছে। হোক না পুরানো আমলের।
আমি ভেবেছিলাম আপনি রক মিউজিশিয়ান। কিন্তু যা দেখছি…আজকালকার ভাল জিনিসের তুলনায় এগুলো তো একেবারে…
কি বলছ বুঝতে পারছি। পিটারের সঙ্গে খাতির না হলে আমিও ঢুকতাম না। এর মধ্যে। যাই বলো, লোকটা জিনিয়াস। এ যাবৎ যত মিউজিক্যাল লেখা হয়েছে, সবগুলোর সব গান তার জানা। বেশির ভাগই আবর্জনা, কিন্তু কিছু আছে শুনলে চমকে যেতে হয়।
একটা মুহূর্ত জাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকল রবিন। আমি ভেবেছিলাম টাকার জন্যে ওয়াইল্ড ওয়াইন্ডে কাজ নিয়েছেন আপনি। কিন্তু যা সব দেখছি…
টাকার জন্যেই। অনেক দিন ধরে চলে এ রকম একটা শো-তে কাজ নিতে পারলে টাকার ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকা যায়। তা এত হেলাফেলা না করে বাজিয়েই দেখো না, খারাপ লাগবে না।
জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে চেয়ারে হেলান দিল রবিন। বেশ, শুনব। একটা কথা, শুনেছি, রক সিনের চেয়ে শো-বিজ লাইফ খুব একটা ভাল না। শো বন্ধ হয়ে গেলে কাজও চলে যাবে আপনার। কিন্তু রক কখনও হুট করে বন্ধ হয় না, টাকাও অনেক বেশি…
জানি। কাদের জন্যে বেশি? হাতে গোণা কয়েকজনের জন্যে, যাদের গান হিট হয়ে গেছে। আমার মত মড়াদের জন্যে নয়। এগিয়ে গিয়ে সুইনি টোডের ক্যাসেটটা ক্যাসেট প্লেয়ারে চাপিয়ে দিল জাহির। শোনো, কেমন লাগে?
ওয়র্কশপে ছড়িয়ে পড়ল বিষঃ মিউজিক। কিশোরের ভাল লাগল। ম্যাকবেথের অভিশাপ সম্পর্কে তথ্য খোঁজার পরিবেশ তৈরি করে দিল তাকে। কীবোর্ডে উড়ে চলল ওর আঙুল। পর্দায় শব্দ ফুটতে থাকল:
থিয়েটার
কুসংস্কার
অভিশাপ
প্রতিটি ফাইল খুঁজে দেখল সে। কিছুই পেল না।
বের করল, ম্যাকবেথ
সংক্ষেপে কাহিনী বলা হয়েছে নাটকের। রাজা হওয়ার জন্যে একজনকে খুন করেছিল ম্যাকবেথ নামে একজন। ডাইনীরা তাকে সাবধান করে দিয়েছিল, দুর্গের চারপাশ ঘিরে যখন এগিয়ে আসবে বন তখন তার মৃত্যু হবে। ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয়েছিল। কিন্তু বনটা আসল বন নয়, পাতাসহ ডাল কেটে ক্যামোফ্লেজ তৈরি করে তার আড়ালে আড়ালে এগিয়ে এসেছে সৈন্যরা। রক্তাক্ত এক বিদ্রোহে মারা পড়ল ম্যাকবেথ।
ঐতিহাসিক তথ্য খুঁজতে লাগল কিশোর। চারটে সিনেমার নাম পাওয়া গেল…
হঠাৎ থেমে গেল সে। চারপাশ ঘিরে যখন এগিয়ে আসবে বন–পরিচিত না বাক্যটা?
এই সময় বাজল ফোন। রবিন ধরল।
সেদিকে একবার তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিল কিশোর। ড্রয়ার খুলে একটা ফাইল বের করল। তাতে কিছু নোট আছে। লিখে রেখেছে:
*কথায় ব্রিটিশ টান। বুড়ো মানুষের কণ্ঠ; বলেছে, সাবধান! থেসপিয়ান!
*চিঠিতে লেখা–রক্তেভরা সিংহাসনে মারা যাবে সে।
*চিঠিতে লেখা–বন এগিয়ে এসে গিলে ফেলবে তাকে।
চেয়ারে হেলান দিল কিশোর। পিটারের মত ঠিক একই ধরনের হুমকি ম্যাকবেথকেও দেয়া হয়েছে। যোগাযোগটা কোথায়?
ভাবতে লাগল সে। কে ফোন করেছে পিটারকে? বব রডম্যান? চিঠিগুলোও কি তারই লেখা? কেন করছে এ সব? অভিশাপটা যে সত্যি এটা বোঝানোর জন্যে? দুর্ঘটনাগুলোও তারই সৃষ্টি? কিন্তু এতসব করে লাভটা কি তার?
অন্য কেউও হতে পারে। এমন ভাবে করছে, যাতে সন্দেহটা ববের ওপর পড়ে। কারণ অভিশাপ নিয়ে বড় বেশি মাথা ঘামাচ্ছে বব।
হঠাৎ করেই পেটের মধ্যে অদ্ভুত এক শূন্য অনুভূতি হলো কিশোরের। অভিশাপটাতে কি আসলেই কিছু আছে?
মনে মনে হেসে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করল। এ সব সে বিশ্বাস করে না।
কিন্তু তবু…
ভাবনায় বাধা পড়ল রবিনের কথায়, মুসা করেছে, কিশোর। তোমাকে বলতে বলেছে, স্কুলে যাচ্ছে। বাস্কেটবল প্র্যাকটিসের ব্যাপারে নাকি কি কাজ আছে ওখানে। বেশিক্ষণ লাগবে না।
আচ্ছা, অন্যমনস্ক হয়ে বলল কিশোর। আবার ভাবনায় ডুবে গেল সে।
জাহিরের টেপ বাজানো শেষ হলো। রবিন বলল, খিদে পেয়েছে। কোথাও গিয়ে কিছু খেয়ে এলে কেমন হয়?
খুব ভাল হয়।
কিশোর, তুমি কি বলো?
তোমরা যাও। আমার কাজ আছে। শেষ করতে হবে। মুসার জন্যেও অপেক্ষা করতে হবে। ও এলে ওকে নিয়ে বেরোব। পিটারের ওখানে যেতে হবে।
ঠিক আছে। পরে দেখা হবে।
জাহিরকে নিয়ে বেরিয়ে গেল রবিন।
মনিটরের পর্দার দিকে তাকিয়ে ভাবার চেষ্টা করল কিশোর। কিন্তু মাথায় ঘুরছে খাবারের ভাবনা। ডায়েট কন্ট্রোল করতে গিয়ে ভাল খাবার আর পেটে পড়ছে না অনেক দিন। মনে পড়ল রলির বের করে দেয়া বার্গারের কথা-কামড় বসাচ্ছে রলি আর পিটার, ববের বাড়িতে যাওয়ার আগে…
ববের বাড়ি!
হুম! আনমনেই মাথা দোলাল কিশোর। একটা জরুরী কাজ বাকি রয়ে গেছে। কাজটা আগের দিনই করার কথা ছিল, করতে পারেনি।