.
আরও একঘণ্টা পর থিয়েটার থেকে বেরোল ওরা। পিটার বসল তার গাড়িতে, জিনা, কিশোর আর মুসা উঠল পিকআপে।
গাড়ি চালাতে চালাতে ভাবতে লাগল কিশোর, অনেক কথা বলেছে তাকে পিটার, কিন্তু তার মধ্যে থেকে কোন সূত্র উদ্ধার করতে পারেনি।
আগে আগে গাড়ি চালাল পিটার। পথে কোন দুর্ঘটনা হতে পারে ভেবে পেছনে থেকে তাকে পাহারা দিয়ে নিয়ে চলল গোয়েন্দারা। নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে ফিরল।
জিনাকে তাদের বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে ইয়ার্ডে ফিরে চলল মুসা আর কিশোর।
আমার মনে হয় জাপার কাজ, মুসা বলল। ফ্ল্যাশ-পট ফাটানো তার জন্যে কঠিন কিছু না।
হয়তো নয়, সামনের পথের দিকে তাকিয়ে বলল কিশোর, কিন্তু ববের বাড়িতে তিনি ছিলেন না। তাহলে আলো নিভিয়ে দিয়ে মূর্তি ফেলল কে? তাঁবুর কাছেও তাঁকে দেখা যায়নি। তাহলে সাইনবোর্ডই বা ফেলল কে?
ইয়ার্ডে ঢুকে ওঅর্কশপের সামনে গাড়ি রাখল কিশোর। নামার আগে বলল, আরও একটা ব্যাপার, পিটারের সঙ্গে কেন শত্রুতা করবেন ম্যানেজার? মোটিভটা কি?
কি জানি? হাত ওল্টাল মুসা। তাহলে কে করল এ কাজ? নিরু না তো?
সাইনবোর্ডটা পড়ার সময় অবশ্য ওখানে ছিল সে। স্টেজেও কাজ করেছে। কিন্তু পিটার বলেছে, তার কাজ সেট সাজানো, আর কিছুতে হাত দেয়া নিষেধ।
গাড়ি থেকে নেমে হেডকোয়ার্টারে ঢুকল ওরা। টেলিভিশনটা অন করে দিয়ে চেয়ারে বসল। নিউজ হচ্ছে। সেদিকে তাকিয়ে বলল, পিটারের ওপর কোন কারণে অবশ্য কড়া রাগ থাকতে পারে নিরুর। তবে কড়া রাগ তার সারা দুনিয়ার ওপরই থাকতে পারে, স্বভাবটাই ওরকম।
একটা টুলে বসল মুসা। ফ্ল্যাশ-পটটা ছিল অর্কেস্ট্রা পিটে। ফাটানোর কায়দাটা জানা থাকলে কোন মিউজিশিয়ানও কাজটা সেরে দিতে পারে।
জাহির বিলিয়ার্ডের মত কেউ?
মাথা ঝাঁকাল মুসা। ববকেও সন্দেহের তালিকায় ফেলা যায়। লোকটার মাথায় দোষ আছে। রলির ওপরও সন্দেহ হয়। ববের ঘরে ছিল মূর্তিটা পড়ার সময়। পিটারকে সরাতে পারলে নতুন স্টার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে তার।
আমার মনে হয় না রলি আছে এ সবে, কিশোর বলল। তার স্টার হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। পিটার সরলে সঙ্গে সঙ্গে আর্ট টিলারিকে খবর পাঠাবেন কলিন। বরং তাকেই সন্দেহ করা উচিত।
টিভির দিকে তাকাতেই পিঠ সোজা হয়ে গেল মুসার, খাইছে, দেখো!
পর্দায় দেখা যাচ্ছে গারবার থিয়েটার। আস্তে আস্তে সরে গেল ক্যামেরা, নিতা নিউমারকে দেখা গেল, পিটারের সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় যে দুর্ঘটনা ঘটেছে সবিস্তারে সেটার বর্ণনা শুরু করল।
আতঙ্কিত নিরুকে দেখা গেল, চিৎকার করে সাবধান করছে। তারপর দেখা গেল, সাইনবোর্ডটা পড়ছে। স্লো-মোশনে দেখানো হলো দৃশ্যটা। নিচে এদিক ওদিক ছুটে পালাচ্ছে লোকে।
সাইনবোর্ডটা পড়ে ভাঙল। নিজের অজান্তেই টুলে বসেও কুঁকড়ে গেল মুসা। এরপর পর্দায় বড় হয়ে ফুটল পিটারের চেহারা। ঘাম-চকচকে, বিধ্বস্ত।
মঞ্চে শো শেষে ফ্ল্যাশ-পট বিস্ফোরিত হওয়ার কথাও বাদ গেল না সংবাদে।
খবরটা জানল কি করে ওরা
কিশোরের প্রশ্নের জবাবেই যেন বলল সংবাদ-পাঠক, ওগুলো আসলে দুর্ঘটনা না অস্বাভাবিক কিছু এ ব্যাপারে আমাদের লেট-নাইট নিউজ অনেকের সঙ্গে কথা বলেছে। একজন জবাব দিয়েছে, এর মধ্যে অনেক বেশি শক্তিশালী আর বিপজ্জনক কিছুর অদৃশ্য হাত রয়েছে।
বব রডম্যানকে হাজির করা হলো। থিয়েটারের বাইরে ক্যামেরার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নার্ভাস ভঙ্গিতে ম্যাকবেথের অভিশাপের কথা বলল।
ববের কথা শেষ হলে ক্যামেরার দিকে ফিরল রিপোর্টার। নাটকীয় বিষণ্ণ ভঙ্গিতে বলল, থিয়েটারের জগতে স্কটিশ ওই নাটকটা নিয়ে একটা সাংঘাতিক ভীতি আছে। নামটা কেউ উচ্চারণ করতে চায় না। এটা কি কুসংস্কার? কেউ বলে, হ্যাঁ, কিন্তু তারাও বলে ভয়ে ভয়ে। নাম উচ্চারণ করার সময় থমকে যায়। সাড়ে তিনশোরও বেশি বছর আগে বার্ড অভ অ্যাভনের মৃত্যুর পর হয়তো জানতে পারব আমরা কেন এই বিশ্বাস আজও এত জোরাল।
কিশোরের দিকে ফিরল মুসা, এই বার্ড অভ অ্যাভনটি কে?
শেকসপীয়ারের ডাকনাম।
অস্বস্তি দেখা দিল মুসার চোখে। কিশোর, তুমি হয়তো বিশ্বাস করতে চাইবে না, কিন্তু জবাবটা তো এখানেই!
কিসের জবাব?
পিটারকে খুনের চেষ্টা জাহির কিংবা বব কিংবা অন্য কেউ করেনি। কাজটা শেকসপীয়ারের ভূতের!
.
০৮.
পরদিন সকালে চোখ বড় বড় করে কিশোরের মুখে সব কথা শুনল রবিন। ইস, কাল বিকেলে তোমাদের সঙ্গে যেতে পারলে খুব ভাল হত। কিন্তু অফিসে এত কাজ…
কম্পিউটার অন করল কিশোর। জানি, পুরো হপ্তাটাই ব্যস্ত থাকবে। তবু এরই মধ্যে সূত্রের খোঁজ কোরো।
জাহিরের সঙ্গে কথা বলব। যে কোন সময় চলে আসবে।
ঝট করে ঘুরে তাকাল কিশোর, জাহির এখানে আসবে?
হ্যাঁ। সাউন্ড সিসটেমের ব্যাপারে ফ্যানাটিক বলতে পারো। যখন বললাম আমাদের কাছে কোয়াড্রোফোনিক স্পীকার আছে, কিছু টেপ নিয়ে এসে বাজিয়ে শুনতে চাইল।
আমরা কে বলেছ নাকি?
না। আমি কেবল বলেছি এখানে আড্ডা মারি আমরা। ক্ষতি করে দিলাম নাকি?
নাহ। আমরা যে গোয়েন্দা এ কথাটা গোপন রাখলেই চলবে। কেস শেষ হওয়ার আগে কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না। জাহিরকেও না।
কম্পিউটারে মন দিল কিশোর। আঙুলের কয়েকটা দ্রুত টোকায় ডাটাসার্ভ নেটওঅর্কের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফেলল। এটা একটা ইনফর্মেশন সার্ভিস, কম্পিউটার এনসাইক্লোপিডিয়া, সদস্য হলেই ব্যবহার করা যায়।