কুঁচকে গেল কিশোরের ভুরু, মানে?
আমাকে..আমাকে বয়ে নিয়ে যেতে হবে…অর্কেস্ট্রাটা কোথায়?
পিটার! আমি কিশোর, কিশোর পাশা। তোমার কি হয়েছে?
বার কয়েক মিটমিট করে খুলে গেল পিটারের চোখের পাতা। ক্কি কিশোর!..মনে হচ্ছে ওয়েস্ট সাইড স্টোরির মৃত্যুর দৃশ্যটা অভিনয় করছিলাম!।
হাসি এবং স্বস্তি একসঙ্গে ফুটল অনেকের মুখে। কিন্তু কিশোর আরও গম্ভীর হয়ে গেল। তাকিয়ে আছে পিটারের মুখের দিকে।
স্টেজ ম্যানেজার জাপা আর একজন লম্বা ড্যাসার দাঁড়াতে সাহায্য করল পিটারকে।
ধরা লাগবে না, আমি ঠিকই আছি, টলতে টলতে মঞ্চ থেকে নামার জন্যে এগোল সে।
আবার প্রশংসার হাততালি দিল দর্শকরা। ভাবল, আরেকটা অভিনয় করছে পিটার! বেরোনোর দরজার দিকে সারি দিয়ে এগোতে শুরু করল ওরা
মঞ্চের কিনারে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকাল কিশোর।
অর্কেস্ট্রা পিটে দু-জন ইলেকট্রিশিয়ান তার পরীক্ষা করছেrমঞ্চের কিনারে অনেকটা টর্চের ব্যাটারির মত দেখতে একটা ধাতব যন্ত্রের মধ্যে গিয়ে ঢুকেছে তারগুলো। জাহির বিলিয়ার্ড আর আরেকজন মিউজিশিয়ান পঁড়িয়ে ওদের কাজ দেখছে।
কিশোর জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে?
হাত নাড়ল জাহির, কি জানি? আমার মাথাটাই উড়িয়ে নিত আরেকটু হলে।
ধাতব যন্ত্রটা দেখিয়ে গোমড়ামুখো এক ইলেকট্রিশিয়ান বলল; ফ্ল্যাশ-পাষ্টেলুজ কানেকশন। এর মধ্যে খুব কম শক্তির একধরনের বিস্ফোরক রাখা থাকে ইলেকট্রিক সিগন্যাল পেলেই ফেটে যায়। কালো হয়ে যাওয়া যন্ত্রটার দিকে আবার হাত তুলল সে, পাওয়ারের গণ্ডগোলে মনে হয় কোন ধবনের সিগন্যাল পাঠিয়েছে। ব্যস, গেছে ফেটে।
মাঝে মাঝেই ঘটে নাকি এ রকম? জানতে চাইল কিশোর।
ঘটে না, তবে ঘটতে পারে। এখানে এই প্রথমবার ঘটল।
হুঁ-ভাবল কিশোর, ব্যাপারটা স্বাভাবিক ধরে নিতে ইচ্ছে করল না তার।
আরও কয়েক সেকেন্ড ইলেকট্রিশিয়ানদের কাজ দেখল সে আর মুসা, তারপর চলে এল পিটারের ড্রেসিং রূমে। জিনা আগেই এসে বসে আছে। আরও কয়েকজন অভিনেতা কথা বলছে। ইলেকট্রিক হট পটে চা বানাচ্ছে একজন। মেকআপ টেবিলের সামনে বসেছে পিটার, ফোনে কথা বলছে, কি করে ফ্ল্যাশ-পটটা ফাটল বলতে পারব না।…কেমন আছি জিজ্ঞেস করলে না?…হ্যাঁ, ভালই আছি।…ঠিক আছে, রুথ, পরে দেখা হবে।
রিসিভার নামিয়ে রেখে চেয়ারে হেলান দিল সে। কিশোরকে দেখে বলল, এসেছ। অন্য অভিনেতাদের বলল, এই, তোমরা এখন যাও, মেহমান আছে। আমি ঠিক হয়ে গেছি। অনেক ধন্যবাদ।
হাসিমুখে মাথা ঝাঁকিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল অভিনেতারা। গায়ে কাঁটা দিল একবার পিটারের। শূন্য দৃষ্টি ফুটল চোখে। এক সন্ধ্যায় তিন-তিনবার দুর্ঘটনা! আনমনে কপালের জখমে হাত বোলাল। আরও কতবার হবে কে জানে…
সামনে ঝুঁকল কিশোর। এই শো-তে যারা কাজ করছে, তাদের কথা কিছু বলো তো আমাকে। জানা দরকার।
ভুরু সামান্য উঠে যেতে দেখল পিটারের। তার দৃষ্টি অনুসরণ করে পেছনে তাকাল কিলোর। দরজায় দাঁড়িয়ে আছে বব রডম্যান।
যাক, ভালই আছ, স্বস্তিভরা কণ্ঠে বলল বব।
কেন, খুব খারাপ থাকব ভেবেছিলে নাকি? মনে করেছ পুরানো অভিশাপে আমাকেও ধরেছে। ম্যাকবেথ আর না বলার অনুরোধ করতে এসেছ?
শক্ত হয়ে গেল বব। তোমার আর শিক্ষা হবে না, পিটার!
কিশোরদের দিকে তাকাল অভিনেতা। বলল, বুঝতে পারছ না তো? দাঁড়াও, বুঝিয়ে দিই। ম্যাকবেথ নামটা বলা আমার জন্যে বারণ। বললেই ম্যাকবেথের অভিশাপে পড়তে হবে।
থমথমে হয়ে গেছে ববের মুখ। দোহাই তোমার, এবার বন্ধ করো, পিটার?
ব্যাপারটা কি বলুন তো? জানতে চাইল মুসা।
বিষণ্ণ ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে লাগল বব। থিয়েটারের জগতের সবচেয়ে প্রাচীনতম অভিশাপ এই শব্দটা। উইলিয়াম শেকসপীয়ারের এই বিখত নাটকের নামটা মঞ্চে বলা অভিনেতাদের জন্যে বারণ। যে বলবে, তারই দুর্ভাগ্য শুরু হবে, নানা ভাবে…
কচু হবে, পিটার বলল।
নাকের ফুটো বড় হয়ে গেল ববের। দেখো, পিটার, পুরানো অনেক অভিশাপকে পাত্তা না দিয়ে বহুলোক অপঘাতে মরেছে। তোমাকে ভালবাসি বলেই সাবধান করছি, বিশ্বাস করো আর না করো, রসিকতা কোরো না ওসব নিয়ে। চুপ করে থাকলেই হয়। এই যে একের পর এক অ্যাক্সিডেন্ট হচ্ছে, আঘাত আসছে তোমার ওপর এর কি ব্যাখ্যা দেবে? যাওয়ার জন্যে ঘুরল সে। আবার ফিরে তাকাল কাঁধের ওপর দিয়ে। আবারও বলছি, তোমাকে ভালবাসি বলেই এত কথা, নইলে আমার কি ঠেকা ছিল? এখনও সাবধান হও। উইলিয়াম শেকসপীয়ারের আত্মাকে নিয়ে অনেক বদনাম আছে, কাউকে কখনও ওটা ক্ষমা করেছে বলে শোনা যায়নি।
বেরিয়ে গেল বব।
কিশোরের দিকে তাকাল মুসা। চোখে অস্বস্তি।
লোকটা ভাল, পিটার বলল, তবে বোকা। নইলে এ সব বিশ্বাস করে?
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর। চিন্তায় ডুবে গেছে। পিটারের কথায় কান আছে বলে মনে হলো না।
মুসা বলল, এ সব ব্যাপার একেবারে উড়িয়ে দেয়া কিন্তু ঠিক না।
কৃত্রিম বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে ফেলল পিটার, আরি, আরও একজন দেখি পাওয়া গেছে। মুসাকে আরও গম্ভীর হয়ে যেতে দেখে গাল চুলকাল, ভাবল, তারপর বলল, আচ্ছা, ঠিক আছে, না বললে যদি খুশি হও তোমরা, নাহয় না-ই বললাম।
হ্যাঁ, যা বলছিলাম, বাস্তবে ফিরে এল যেন কিশোর, এই শো-তে যারা কাজ করছে, তাদের ব্যাপারে কিছু বলো।