ক্ষণিকের জন্যে পিটারের চোখের তারায় ভয় ফুটতে দেখল কিশোর। জোর করে হাসার চেষ্টা করল অভিনেতা, চোখ সরিয়ে নিল আরেক দিকে।
আরেকজন অভিনেতা জিজ্ঞেস করল, কিসের কথা বলছ, বব?
হ্যাঁ, কিসের কথা বলছে?-কিশোরও ভেবে অবাক হলো। একা পেলে জিজ্ঞেস করতে হবে পিটারকে।
ঘড়ি দেখল বব। আজ আর সময় নেই। অনুষ্ঠানটা আরেক দিন করা যাবে।
হ্যাঁ, উঠে দাঁড়াল পিটার। অন্তত আধডজন বন্ধু আর সহকর্মী তাকে সাহায্য করতে চাইল। কিন্তু কারও সাহায্য না নিয়ে একাই ধীরে ধীরে এগোল দরজার দিকে।
থিয়েটারের লোকেরা পিছু নিল তার। মুসা আর জিনাকে নিয়ে রয়ে গেল কিশোর। ববকে অনুরোধ করল, একটু পরীক্ষা করে দেখি ঘরটা?
কাঁধে ভারি ব্যাগ তুলে নিল বব। বাতির সুইচের কাছে দাঁড়িয়ে বলল, নাহ্, এখনি বেরিয়ে যেতে হবে। খুব শক্তিশালী অদৃশ্য উপস্থিতি টের পাচ্ছি আমি। এটাকে এভাবেই থাকতে দেয়া উচিত।
কিন্তু…
কিশোর কথা শেষ করার আগেই কিট করে সুইচ টিপে আলো নিভিয়ে দিল বব।
অন্ধকারে মাথা নাড়ল কিশোর। তদন্তটা করতে দেয়া হলো না বলে নিরাশ হয়েছে।
.
সাড়ে সাতটায় স্টেজের দরজা দিয়ে যখন ঢুকছে কিশোর, খিদেয় পেটের মধ্যে পাক খাচ্ছে নাড়িভূঁড়ি। কিন্তু খেতে যাওয়ার সময় নেই এখন আর।
দেয়ালের একটা সাইন-ইন শীটের সামনে দাঁড়াল পিটার।
গোয়েন্দাদের দিকে তাকিয়ে বলল সে, শো শুরু হওয়ার আধঘন্টা আগে এখানে সই করতে হয় আমাদের। সময়মত এই সই না দেখলে অন্য ব্যবস্থা করবে ভিনসি জাপা।
মেসেজ বোর্ডে নতুন একটা নোটিশ দেখতে পেল জিনা। পিটারকে বলল, আরি, এটার কথা তো বলেননি আমাদের!
সাইনে লেখা
খবরের কাগজে বিজ্ঞাপনের জন্যে বলা হচ্ছে:
ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড! ওয়াইল্ড! কোরাস অডিশন
মেইন স্টেজ, গারবার থিয়েটার
বৃহস্পতিবার, সকাল ১১.০০ টা
দুটো পার্টে অভিনয়ের জন্যে জরুরী ভিত্তিতে
একজন অভিনেতা ও একজন অভিনেত্রী লাগবে।
কেন? পিটার জিজ্ঞেস করল, তোমার আগ্রহ আছে?
ইয়ে…হলে মন্দ কি? নাচ তো শিখছিই আমি।
বেশ! এখনও দু-দিন সময় আছে হাতে। তৈরি হতে থাকো। কাজটা পেয়ে
গোয়েন্দাদের নিয়ে করিডরে বেরিয়ে এল পিটার, টোপাজকে অফিসে বসে থাকতে দেখে হাত নাড়ল।
এবার আর ড্রেসিং রুমে ঢুকতে কিশোরদের বাধা দিল না ডোরম্যান। একটা খাম তুলে নিয়ে কিশোরের দিকে বাড়িয়ে ধরল পিটার, নাও, তিনটে ফ্রী টিকেট আছে এতে। সবচেয়ে ভালগুলোর তিনটে। পঞ্চম সারির মাঝখানে। এখন যাও, আমার কাজ আছে। তৈরি হতে হবে।
বাইরে বেরিয়ে জিনা বলল, লোকটার এনার্জি আছে। বিকেলে আমরা আসার পর থেকে কতগুলো ঘটনা ঘটে গেল। মাথায় এমন একটা বাড়ি খেল। তারপরও কিছু হয়নি। এখনও একেবারে স্বাভাবিক।
মাথা ঝাঁকাল মুসা। থিয়েটারের মধ্যে এ ভাবে আর কখনও ঢুকিনি। ভালই লাগে কিন্তু। স্টেজে ওঠাটা দারুণ রোমাঞ্চকর নিশ্চয়। এত লোকের চোখ সব তোমার ওপর থাকবে, হাসবে, প্রশংসা করবে, হাততালি দেবে…খুব ভাল, তাই না?
কিশোরও একমত হলো। শো-বিজনেস থেকে সরে আসার জন্যে জীবনে এই প্রথমবার দুঃখ হলো কিশোরের।
.
শো শেষ হওয়ার পর স্টেজের আলো নিভে এল, স্তব্ধ নীরবতা বিরাজ করতে লাগল হলের মধ্যে। সবাইকে থ করে দিয়েছে পিটার। তার জোরাল কণ্ঠের শেষ। কথাগুলো যেন এখনও ঘরের বাতাসে ভাসছে।
প্রথমে একটা-দুটো হাততালি পড়ল। তারপর যেন ফেটে পড়ল দর্শকরা। অনৈকে উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে, শিস দিয়ে প্রশংসা করতে লাগল পিটারের।
সাংঘাতিক। মুসা বলল। দুই আঙুল মুখে পুরে তীক্ষ্ণ শিস দিয়ে উঠল।
আলো জ্বলে উঠল হলে। স্টেজের পর্দা পড়ল। আবার যখন সরল, স্টেজেও উজ্জ্বল আলো জ্বলছে তখন। কয়েক সারিতে দাঁড়িয়েছে অভিনেতারা। মূল অভিনেতারা রয়েছে সামনের সারিতে।
দর্শকদের অভিবাদন জানাতে সবার শেষে মঞ্চের একপাশ থেকে বেরিয়ে এল। পিটার। হাততালি আর চিৎকারে কানে তালা লেগে যাওয়ার জোগাড়।
হাসল পিটার। মাথা নুইয়ে অভিবাদন জানাল দর্শকদের। মেকআপে ঢাকা পড়েছে তার কপালের দাগটা। কিশোর, মুসা আর জিনার দিকে তাকিয়ে আলতো চোখ টিপল। স্টেজের কিনারে এসে দাঁড়াল অনেক আগ্রহী দর্শকের সঙ্গে হাত মেলানোর জন্যে।
কি যেন বলতে যাচ্ছিল মুসা, থেমে গেল বিস্ফোরণের শব্দে। সেই সঙ্গে তীব্র আলোর ঝিলিক। থতমত খেয়ে গেল দর্শকরা। চিৎকার করে উঠল কেউ কেউ।
হাঁ করে তাকিয়ে আছে কিশোর।
মুহূর্ত আগেও পিটার যেখানে দাঁড়িয়েছিল সেখানে এখন ঘন ধোঁয়ার কুণ্ডলী!
.
০৭.
সীটের মাঝের গলিপথ ধরে ছুটল কিশোর, মুসা আর জিনা। হই-চই করছে। দর্শকরা। যারা সীটে বসা ছিল, তাদের অনেকেই উঠে পড়েছে।
ধাক্কা দিয়ে সামনের লোক সরিয়ে পথ করে এগোচ্ছে মুসা! পেছনে অন্য দু জন। অর্কেস্ট্রা রাখার জায়গাটা, অর্থাৎ অর্কেস্ট্রা পিট পেরিয়ে লাফিয়ে উঠল মঞ্চে।
ধোঁয়া সরে গেছে। নিথর হয়ে পড়ে আছে পিটার। কনুই দিয়ে লোক সরিয়ে তার কাছে পৌঁছল মুসা আর কিশোর।
পিটারের মাথাটা তুলে ধরেছে একজন অভিনেত্রী।
ঠিক আছে তো? জানতে চাইল কিশোর। হাটু গেড়ে বসে পড়ল পিটারের পাশে।
কপালে হালকা একটা লাল দাগ দেখা যাচ্ছে, বেরিয়ে পড়েছে কড়া মেকআপ ভেদ করে।
চুমু খাও আমার কপালে, ফিসফিস করল পিটার