টিটুকে প্রচণ্ড ধমক লাগাল কিশোর। কান ধরে হিড়হিড় করে টেনে আনল। এক চড় লাগাব ধরে! কখন কোন শয়তানিটা করতে হবে তাও বোঝে না। সব সময় এক। জলদি গিয়ে ফারিহার কাছে চুপ করে বোস!
আর কোন গণ্ডগোল করল না দিই। লেজ টিয়ে চুপচাপ গিয়ে ফারিহার বিছানায় উঠল।
একটা চেয়ার টেনে বসল ফগ। মুখের ঘাম মুছল।
দরজা লাগিয়ে আগের জায়গায় ফিরে এল রবিন।
ঝামেলা! রবিনের দিকে তাকাল ফগ। নাও, এবার শুরু করতে পারো। আগে একটা প্রশ্নের জবাব দাও। যে গল্পটা বলবে, সেটা কি বানানো, না সত্যি?
বলাই তো হলো বাস্তব অভিজ্ঞতার গল্প। বানানো হবে কেন?
ঠিক আছে। আর কোন প্রশ্ন নেই আমার।
গল্প শুরু করল রবিন।
.
০২.
অনেক বড় পায়ের ছাপ। কোন বিশাল জানোয়ারের। চেপে বসেছে। কারণ মাটি নরম। আগের রাতে বৃষ্টি হয়েছিল।
হান্টার রিজে যাচ্ছিলাম। ছাপগুলো চোখে পড়তে থমকে দাঁড়ালাম। চোখ বোলালাম চারপাশে।
পাহাড়ের ঢালে দাঁড়িয়ে আছি আমি। কোথাও কোন শব্দ নেই। নিচে হারলে ক্রীকের নীল জল। মাথার ওপরে হান্টার রিজের ঘন গাছপালায় ছাওয়া বন!!
আবার তাকালাম মাটির দিকে। কিসের পায়ের ছাপ ওগুলো? কোন জন্তুর? একপাশের ঝোঁপঝাড়ের ভেতর দিয়ে বেরিয়েছে বোঝা যায়। পায়ের চাপে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে ঘাস। ঝোঁপের ডাল ভাঙা। ওপরের বন থেকে নেমেছিল ওটা। কিছুক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে থেকে আবার ফিরে গেছে যেদিক থেকে এসেছিল সেদিকে।
আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেখান থেকে নিচে আমাদের বাড়িটা স্পষ্ট চোখে পড়ে। ধূসর পাথরে তৈরি পুরানো একটা বড় বাড়ি। বহুকাল আগে ইনডিয়ানদের বানানো।
আবার তাকালাম ছাপগুলোর দিকে। আমি জানি বনের মধ্যে হরিণ আছে। কিন্তু হরিণের পায়ের ছাপ নয় ওগুলো অন্য কিছু কুকুর জাতীয় কোন প্রাণীর। এখানে নেকড়ে আছে নাকি? না কায়োট?
ভালমত দেখতে গিয়ে আরেকটা অদ্ভুত জিনিস চোখে পড়ল, কুকুরটার পায়ের ছাপের পাশে কোথাও কোথাও একধরনের ঘষার দাগ। খুবই অস্পষ্ট।
পেছনে শব্দ হলো। চমকে উঠলাম ফিরে তাকিয়ে দেখি বনমোরগের একটা পরিবার হেলেদুলে নেমে আসছে খোলা জায়গাটার দিকে আমাকে দেখে থমকে গেল। প্রায় মিনিটখানেক অপেক্ষা করল আমি কিছু করছি না দেখে পাশ কেটে চলে যেতে শুরু করল নিচে ক্রীকের দিকে, বোধহয় পানি খেতে
এত কাছে থেকে বনমোরগ আর কখনও দেখিনি বেশ বড় আকারের লাল আর ধূসরে মেশানো পালক। লাল লাল চোখ দেখে মনে হয় রেগে আছে। পায়ের। দিকে তাকালাম। একেবারেই খুদে। যে ছাপ আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, ওগুলো বনমোরগের হতেই পারে না।
ঠক করে মাটিতে এসে পড়ল কি যেন আমার সামনে মাত্র দুই হাত দূরে। তাকিয়ে দেখি ছোট একটা পাথর। ঢালে ঠোকর খেতে খেতে লাফিয়ে নেমে গেল কিছুদূর।
চমকে গেল পাখিগুলো। কক কক করে ওড়াল দিল।
পেছনের বন থেকে হুড়মুড় করে দৌড়ে বেরিয়ে এল একটা মেয়ে। উত্তেজিত জিজ্ঞেস করল, লেগেছে?
ভাবলাম, আমার গায়ে লেগেছে কিনা জিজ্ঞেস করছে বুঝি। মাথা নেড়ে বললাম, না লাগেনি অল্পের জন্যে বেঁচেছি।
তোমার কথা কে বলছে, গাধা কোথাকার। পাখিগুলোর দিকে নজর মেয়েটার। কোনটা গিয়ে ঝাঁপ দিল ঝোঁপের মধ্যে, কোনটা বসল গাছের ডালে। বেশি ভীতুগুলো আরও দূরে উড়ে গেল গাছপালার মাথার ওপর দিয়ে। আমার দিকে ফিরল আবার মেয়েটা। হতাশ কণ্ঠে যেন নিজেকেই প্রশ্ন করল, একটার গায়েও লাগেনি?
লাগলে তো তড়পাত দেখতেই পেতে।
এগিয়ে এসে আমার সামনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়াল মেয়েটা। পরনে শর্টস, গায়ে টি শার্ট, মাথায় লাল-সাদা একটা লস অ্যাঞ্জেলেস ডজারস বেজবল ক্যাপ, চোখে লাল কাঁচের সানগ্লাস আবার জিজ্ঞেস করল, সত্যি লাগেনি কোনটার গায়ে?
লাগলে মরে পড়ে থাকত।
অনেক সময় জখম হলেও উড়ে যায় বনমোরগ অন্যখানে গিয়ে মরে।
তাহলে খোজোগে ঝোঁপের মধ্যে, হাত তুলে দেখিয়ে দিলাম। পাথর ছুঁড়তে হলে একটু সাবধানে ছুঁড়ো। আশেপাশে কেউ আছে কিনা দেখে নিয়ে। আমার মাথাটাই ফাটিয়ে দিয়েছিলে আরেকটু হলে।
লাল কাঁচের ভেতর দিয়ে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখল মেয়েটা। বড়দের মত কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, বোকার মত ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে যে কারও গায়ে লাগতে পারে।
রাগ লাগল মেয়েটার পাকামো দেখে। বললাম, আমি বোকাও নই, যে কারোও নই, আমার একটা নাম আছে-রবিন মিলফোর্ড।
হেসে ফেলল মেয়েটা, তুমি রেগে যাচ্ছ।
রাগিয়ে দেয়ার মত করেই তো কথা বলছ।
হাত তুলল ও, আচ্ছা ঠিক আছে, আর বলব না, সরি। তোমরা নতুন এসেছ এখানে, না?
হ্যাঁ। বেড়াতে।
ঢালের নিচের ওই বড় বাড়িটাতে উঠেছ?
হ্যাঁ, হাত বাড়িয়ে দিলাম। ওটা আমাদেরই। আমার মায়ের।
সেও তার হাত বাড়াল। আমি নিনা হাওয়ার্ডস কিন্তু সবাই ডাকে গগলস। সারাক্ষণ সানগ্লাস পরে থাকি তো, তাই।
হাত মেলালাম আমরা। ওর কনুইয়ের দিকে চোখ পড়ল। গোটা দুই গভীর আঁচড়ের দাগ। ঘষা লেগে কেটেছে। জিজ্ঞেস করলাম, ফুটবল খেল নাকি? গোলকীপার?
হাসল ও। বলল, আমাকে নিনা ডাকলেই খুশি হব। গগলস শুনতে ভাল্লাগে না। ফুটবল খেলি না, শুধু বেজবল। এই দাগগুলো দেখে বলছ তো? এগুলো খেলার সময় পড়ে গিয়ে নয়, পাথরে ঘষা লেগে কেটেছে। ওপরের শৈলশিরাটা দেখিয়ে বলল, বেশির ভাগ সময় ওখানে কাটাই আমি। রাতে যখন অন্ধকারে আর কিছু দেখা যায় না তখন নামি একটা ঘাসের ডগা ছিঁড়ে নিয়ে দাতে কাটতে লাগল সে।