যাই হোক, তোমাকে আর নিনাকে সুড়ঙ্গে ঢুকতে দেখল কুকুরের মালিক। কাকতালীয়ভাবে কুকুরটাও ওই সময় ঢুকে বসেছিল সুড়ঙ্গে। তাড়া করল ওটা তোমাদের। ঘেউ ঘেউ করে সুড়ঙ্গের মধ্যে প্রচণ্ড শব্দ পাথর ধস নামিয়েছিল। এটা স্বাভাবিক। অনেক সুড়ঙ্গেই শব্দ ওভাবে ধস নামায়। তোমরা বেরিয়ে চলে এলে। কুকুরটা তোমাদের গাছ ঘিরে চক্কর দিতে থাকল। রাতের কোন এক সময়ে ওটাকে ডেকে নিয়ে গেল ওটার মালিক।
পরদিন শামানের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তোমরা। আমার ধারণা, শামানের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও তোমার কথা ওকে বলার সুযোগ পায়নি তখনও কুকুরের মালিক। শামান তাই তোমার গলায় কালো মালা দেখে চমকে উঠেছিল। সেও বুঝেছিল, তোমাকে দিয়ে দলিলগুলো বের করানো সম্ভব। সরাসরি ওগুলো এনে দেয়ার কথা বলার সাহস পায়নি। কারণ তখনও বিশ্বাস করতে পারেনি তোমাকে। তুমিও শ্বেতাঙ্গ। যদি বেঈমানী করো? তাই ভুতুড়ে কুকুরের ভয়টা ভাঙেনি। বলেছিল সেনিকাদের জিনিস ওদের ফিরিয়ে না দিলে কুকুরটা পিছু ছাড়বে না তোমার। সত্যি ছাড়ত না, যতদিন তুমি বের করে না আনতে। ব্রিফকেসটা শামানকে দিয়ে আসার পর কি আর ওটা তোমাদের বাড়িতে গিয়েছিল?
মাথা নাড়ল রবিন, না।
বললাম না। যাই হোক, তোমার সাহস দেখে আরও নিশ্চিত হলো কুকুরের মালিক, তুমি সত্যি বের করে আনতে পারবে ব্রিফকেসটা। তাই ঝড়ের রাতে। আবার গেল তোমাদের বাড়িতে। ডাকাডাকি করল। কিন্তু ভয় পেয়ে তুমি আর বেরোলে না। ঘরে ঢুকে কথা বলার সাহস হলো না ওরও। ফিরে গেল।
পরদিন সকালে বাড়ির আশেপাশে কোন পায়ের ছাপ দেখলে না তুমি। অত বৃষ্টি আর কাদাপানিতে ছাপ কি আর থাকে নাকি। নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
তারপর গিয়ে বের করে আনলে ব্রিফকেসটা। শামানকে দিয়ে দিলে। চলে গেল সে। ওটার জন্যে সেও কুকুরের,মালিকের মত অপেক্ষা করছিল ওই বনে। পাওয়ার পর দুজনেই চলে গেল নিজের লোকেদের হাতে তুলে দিতে। এই হলো মোটামুটি গল্প। এখনও কি মনে হচ্ছে এর মধ্যে ভূতুড়ে কিছু আছে?
চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল রবিন। আচ্ছা, কুকুরের মালিকটা কে বলো তো? সর্দারের ছেলে?
হাসল কিশোর, তাতে কি কোন সন্দেহ আছে? বাবা যেদিন মৃত্যুগুহায় চলে যায়, নিশ্চয় সেদিন বাড়ি ছিল না সে। সেবারের পর আর কখনও যাওনি হারলে ক্রীকে?
গেছি। বেশ কিছু ইনডিয়ান ফিরে এসেছে। বাড়ি করে বাস করছে। সর্দারের ছেলে কোনজন, জানতে পারিনি। কালো কুকুরটাকেও দেখিনি।
এমন হতে পারে, শামানের মতই আর হারলে ক্রীকে থাকতে আসেনি সর্দারের ছেলেও। ওদের একটা গোপন মিশন ছিল, দলিলগুলো উদ্ধার করা। তোমার সাহায্যে ওগুলো বের করে নিজের লোকের হাতে তুলে দিয়ে ওরা চলে গেছে অন্য কোনখানে। হতে পারে না এটা?
মাথা ঝাঁকাল রবিন। পারে। আর মাত্র দুটো প্রশ্নের জবাব দরকার। এক নম্বর প্রশ্ন–কেন মনে হয়েছিল আড়ালে থেকে কেউ নজর রাখছে আমার ওপর?
মনে হয়েছিল, তার কারণ সত্যি রাখা হচ্ছিল। সতর্ক থাকলে মানুষের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় এ সব টের পায়। সর্দারের ছেলে লুকিয়ে থেকে নজর রাখছিল তোমার ওপর। শত শত বছর ধরে বনে-জঙ্গলে, পাহাড়ে বাস করে লুকিয়ে থাকার এক অসাধারণ ক্ষমতা অর্জন করেছে ওরা। ওরা লুকালে বনের জন্তু-জানোয়ারেই দেখতে পায় না, তুমি দেখবে কি?
আস্তে আস্তে মাথা দোলাল রবিন, হু। আমিও শুনেছি এ সব কথা। ঠিক আছে, মেনে নিলাম। এখন আমার দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাব দাও। পাহাড়ের মধ্যে আমার নাম ধরে কে ডাকছিল?
ওটা, আমার বিশ্বাস, বাতাসের কারসাজি। পাহাড়টাতে অনেক ফাটল আছে, তোমার কথাতেই বোঝা গেছে। নানা জায়গায় ওপর থেকে পানি পড়তে দেখেছ। ওরকমই কোন একটা ফাটল দিয়ে বাতাস বয়ে যাওয়ার সময় বিচিত্র শব্দ হয়, তোমার মনে হচ্ছিল তোমার নাম ধরেই ডাকছে।
তাই?
হ্যাঁ। কেন, প্রমাণ করতে যেতে চাও?
না বাবা, দুহাত নেড়ে বলল রবিন, ভূত থাকুক বা না থাকুক, আমি ওই মৃত্যুপুরীর ধারেকাছে নেই আর! একবারই যথেষ্ট। যত খুশি শব্দ করুকগে গুহাটা, আমার তাতে কি?
ফগের দিকে তাকাল কিশোর। চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে শুনছে পুলিশ। কনস্টেবল। ও তাকাতেই চঞ্চল হয়ে গেল চোখের তারা। ফগকে খোঁচানোর জন্যে কিশোর বলল, মিস্টার ফগর্যাম্পারকট, যাবেন নাকি ওই পাহাড়ে? চলুন না গিয়ে দেখে আসি কিসে শব্দ করে? খানিক আগে না বললেন রহস্য খুঁজে বেড়াচ্ছেন?
গলা খাকারি দিল ফগ। অহেতুক কাশল। বিড়বিড় করে বলল, ঝামেলা! আমাকে নিয়ে আবার টানাটানি কেন?
মুচকি হাসল কিশোর, ভয় পেলেন নাকি?
ভূতকে ভয় পাব আমি? আর লোক পেলে না, আবার কোন বেকায়দা প্রশ্নে ফেঁসে যায় এই ভয়ে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াল ফগ। ইস, অন্ধকার হয়ে গেল যে। ওদিকে কত কাজ পড়ে আছে। দরজার দিকে রওনা হলো সে।
পেছন থেকে ডেকে বলল মুসা, চলে যাচ্ছেন যে? আপনার অভিজ্ঞতার কথা শোনাবেন না?
ফিরল না ফগ। দরজার কাছে গিয়ে জবাব দিল, আহ, ঝামেলা! আজ না, আরেকদিন।
বেরিয়ে গেল সে।
মুখ বাঁকিয়ে ফারিহা বলল, ওর অভিজ্ঞতা না কচু। ও কোত্থেকে ভূত দেখবে? নিজেই তো ভূত হয়ে বসে ছিল একবার। আসলে জানতে এসেছিল, কোনও কেসের তদন্ত করছি কিনা আমরা। মাঝখান থেকে বিনে পয়সায় গল্পটা শুনে গেল।