ও, নিনা তাহলে জানে না ব্ল্যাকফায়ার চার্লি টাসকানির কথা। আগের রাতে বাবার কাছে যা যা শুনেছি সব বললাম ওকে।
মাথা দুলিয়ে নিনা বলল, তাহলে তো এখনই খুলে দেখতে হয় ব্রিফকেসটা।
এখানে না। বাড়ি গিয়ে।
আচ্ছা, ধরো, এটাতে দলিলই পাওয়া গেল। কি করবে?
নিয়ে যাব হার্ব গ্যাটলিঙের কাছে। ও-ই ভাল বলতে পারবে কি করতে হবে।
আমার সঙ্গে একমত হলো নিনা, তা ঠিক। সোজা ওর বাড়িতে চলে গেলেই পারি?
না। রাত হয়ে গেছে। রোজ রোজ এ ভাবে বাড়ি না ফিরলে মা বকা দেবে। তা ছাড়া ব্রিফকেসে দলিলগুলো নাও থাকতে পারে। বাড়ি গিয়ে আগে দেখব। যদি দলিলই থাকে, তাহলে কাল সকালে প্রথম কাজটাই হবে আমাদের গ্যাটলিঙের বাড়িতে চলে যাওয়া।
কিন্তু সকালে তো আমার স্কুল।
তাহলে দুপুরে কিংবা বিকেলে যাব। তুমি স্কুল থেকে ফিরে এলে। তোমাকে না নিয়ে যাব না।
কথা দিচ্ছ?
দিচ্ছি। হাজার হোক, তুমি আমার প্রাণ বাঁচিয়েছ। উফ, তুমি না গেলে আজ কি যে হতো…
আর কোন কথা হলো না আমাদের। দুজন দুদিকে চলে গেলাম। পাহাড়ী পথ বেয়ে নীরবে আমি নেমে চললাম আমাদের বাড়ির দিকে। বেশি দূরে নেই আর।
.
১৩.
গল্প শেষ করে একে একে সবার মুখের দিকে তাকাল রবিন। দম নিল। তারপর জিজ্ঞেস করল, কি বুঝলে?
মুসা বলল, এতে আর বোঝাবুঝির কি আছে? ভূত।
ফারিহা কিছু বলল না। নীরবে হাত বোলাচ্ছে টিটুর মাথায়।
কি বলতে গিয়ে আবার বোকা বনে যেতে হয় এই ভয়ে কোন মন্তব্য করল না। ফগ। বিড়বিড় করে শুধু বলল, ঝামেলা!
কিশোরের দিকে তাকাল রবিন। কিছু বলছ না?
নিচের ঠোঁটে ঘন ঘন দুবার চিমটি কাটল কিশোর। কি আর বলব? ভূতুড়ে কোন কিছুই আমি দেখছি না এর মধ্যে।
ভুরু কুঁচকে ফেলল রবিন। দেখছ না মানে? সমস্ত ব্যাপারটাই তো ভূতুড়ে!
মোটেও না, ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল কিশোর। বলতে পারো, অনেকগুলো প্রশ্ন জমা হয়েছে, যেগুলোর জবাব জানা দরকার। ঠিকমত জবাব পেলেই আর ভূতুড়ে থাকবে না একটা ঘটনাও। তাই না?
চুপ করে রইল রবিন।
ফগের দিকে তাকাল কিশোর। আপনি কিছু বুঝতে পারছেন না?
কোন্ ব্যাপারটা? অস্বস্তিতে পড়ে গেল ফগ।
এই যে এতগুলো ভূতুড়ে কাণ্ড ঘটল। কোনটা কেন, বলতে পারবেন না?
ঝামেলা! আমাকে আবার এর মধ্যে টানছ কেন? আমি কি ওখানে ছিলাম। নাকি?
এ সব বোঝার জন্যে ঘটনাস্থলে থাকা লাগে না।
তাহলে তুমিই বলো না, চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল ফগ।
গ্রহণ করল কিশোর। হাত নাড়ল, বেশ, তাই বলছি। তবে ঘটনা ব্যাখ্যা করার আগে একটা কথা জানা জরুরী, রবিনের দিকে তাকাল সে, রবিন, ব্রিফকেসটার মধ্যে দলিলই ছিল তো?
হ্যাঁ। ইনডিয়ানদের, জবাব দিল রবিন।
নিশ্চয় হার্ব গ্যাটলিঙের কাছে নিয়ে গিয়েছিলে। দেখে কি বলল ও?
অনেক ধন্যবাদ দিল আমাদের। কাগজগুলো বার বার মাথায় ছোঁয়াল। বলল, ব্রিফকেসটা ওর কাছেই থাক। জায়গামত পৌঁছে দেবে দলিলগুলো।
তারপর?
অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল আমাদের কাছে। চলে এলাম আমরা। তার পরদিন আবার গিয়ে দেখলাম বাড়িতে নেই ও। দরজায় তালা। কোথায় চলে গেছে কেউ জানে না। আর কখনও ওকে দেখা যায়নি ওই অঞ্চলে।
আবার মাথা ঝাঁকাল কিশোর। বুড়ো হয়েছিল তো, নিশ্চয় মারাটারা গেছে। হারলে ক্রীকে যাওয়ার আর সুযোগ পায়নি। ঠিক আছে, এখন রহস্যগুলোর জট ছাড়ানো যাক একে একে। প্রথমেই ধরা যাক, পায়ের ছাপের কথা। খোলা জায়গায় পায়ের ছাপ। শুধু কুকুরের। পাশে মাটিতে অদ্ভুত ঘষার দাগ। ঝোঁপের ডালপাতা ভাঙা। ওই ঘষা দাগ আর ঝোঁপঝাড় ভাঙা থেকেই নিশ্চিত বলে দেয়া যায়, ওগুলো ভূতের কাজ নয়। ভুত কখনও পায়ের ছাপ ফেলে না। ছায়ার মত যেখানে ইচ্ছে চলে যায়। এর একটাই ব্যাখ্যা, ঝোঁপঝাড় ভেঙে কুকুরটার সঙ্গে একজন মানুষও বেরিয়েছিল। আর সে ইনডিয়ান। কুকুরের পায়ের ছাপের পাশে তার নিজের পায়ের ছাপও পড়েছিল। ডাল ভেঙে পাতা দিয়ে ডলে সেগুলো মুছে দিয়েছিল। কেউ যাতে অনুসরণ করতে না পারে, সেজন্যে ওরকম করে নিজের চিহ্ন মুছে রেখে যায় ইনডিয়ান শিকারী।
ও, তাই তো! ওয়েস্টার্ন গল্পে পড়েছি এ সব কথা। কিন্তু আমাদের বাড়িটার দিকে নজর দিয়েছিল কেন সে?
এই প্রশ্নটার জবাবের ওপরই নির্ভর করছে পুরো রহস্যটার সমাধান। শোনো, হারলে ক্রীকে তোমরা যাওয়ার পরই নজর পড়েছিল লোকটার। কৌতূহলী হয়ে উঠেছিল। খোঁজ নিয়ে জেনেছিল, তোমার রক্তে সেনিকাদের রক্ত মেশানো আছে। নিজের জাতভাই ধরে নিয়েছিল তোমাকে সে। কোনভাবে গলার কালো মালাটা দেখেছিল। বুঝেছিল, দলিলগুলো যদি উদ্ধার করা কারও পক্ষে সম্ভব হয়, সে তুমি। তাই তোমার সঙ্গে কথা বলার জন্যে তোমাদের বাড়িতে গিয়েছিল। প্রথম দিনই কুকুরটা ঘটাল এক অঘটন। বনে থেকে শিকার করতে করতে নিশ্চয় ওর স্বভাব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কুনটাকে দেখে খুন করে বসল। চিৎকার শুনে তুমি বেরিয়ে পড়লে ঘর থেকে। ভয় পাচ্ছিলে। ওই সময় তোমার সঙ্গে কথা বলে সুবিধে হবে না। বুঝে ফিরে গেল লোকটা।
কোথায়?
তার গোপন আস্তানায়।
সেটা কোনখানে?
হবে মৃত্যুপুরীর আশপাশে কোনখানে। বনের মধ্যে।
গুহার ভেতর নয় কেন?
কারণ, সে ইনডিয়ান। ওদের সমাজের নিয়ম-কানুন কড়াকড়িভাবে মেনে চলেছে। প্রথমত, কোন বীর যোদ্ধা ছাড়া মৃত্যুপুরীতে ঢোকার নিয়ম নেই। দ্বিতীয়ত, একমাত্র মৃত্যুর সময় হলেই কেবল ওখানে ঢুকতে হয়, তার আগে কোনমতেই নয়। তাই দলিলগুলো গুহার ভেতরে আছে জানা থাকা সত্ত্বেও ওখানে ঢুকে বের করে আনতে পারেনি সে, আনার সাহস হয়নি। গুহার কাছাকাছি থেকেছে, কুকুরটাকে দিয়ে পাহারা দিয়েছে যাতে ওদের গোত্রের বাইরের কেউ ব্রিফকেসটা বের করে আনতে না পারে। সেই লোক জানত, গুহার ভেতর মরে পড়ে আছে সেনিকা সর্দার চার্লি টাসক্যানি। কোন কারণে ব্রিফকেসটা লোকটার হাতে দিয়ে যেতে পারেনি সর্দার। এমন হতে পারে, দলিলগুলো আনার পর লোকটা তার কাছাকাছি ছিল না। হঠাৎ করে সর্দার বুঝতে পারল, তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে। আর কোন। উপায় না দেখে, ব্রিফকেসটা তুলে দেয়ার মত বিশ্বস্ত কাউকে হাতের কাছে না পেয়ে ওটা নিয়েই মৃত্যুগুহায় মরতে চলে গেল সে। যেহেতু সর্দার, সেও নিশ্চয় সেনিকা বীর ছিল।