আমাদের অনুমানই ঠিক! বেশ সন্তুষ্ট লাগছে কিশোরকে। মুসা, এখন তো বিশ্বাস করবে? নীল ভালুকটার পেছনেই লেগেছিল চোরেরা।
হায়রে আমার নীল- ভালুক! ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল রবিন। কি নিষ্ঠুর ভাবেই না খুন করা হলো তোকে!
কিশোর বলল, ঠিক করে ফেলা যাবে। নষ্ট হয়নি। ভাল করে দেখো, শুধু জোড়াটা ছুটেছে। তুলা ভরে আবার সেলাই করে নিলেই হয়ে যাবে।
কাজে বসে গেল রবিন। ও যখন খেলনা মেরামতে ব্যস্ত, অন্য তিনজন তখন নকশাটা নিয়ে বসল। মানে বোঝার চেষ্টা করতে লাগল।
নকশা, তাতে কোন সন্দেহ নেই, মুসা বলল। কিন্তু কিসের নকশা? হাতমাথা তো কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।
এত সহজে হাল ছাড়ছি না, জিনা বলল। হয়তো কোন বাড়ির নকশা…
কিংবা গুপ্তধনের! বলে উঠল কিশোর। কোন নির্জন দ্বীপে লুকানো থাকলেও অবাক হব না। সব সময়েই কল্পনার বন্ধু ছেড়ে দেয় সে। তাতে ক্ষতি বিশেষ হয় না। রহস্য সমাধানের ক্ষেত্রে বরং লাভই হয়েছে এতে, বহুবার দেখেছে।
রান্নাঘর থেকে কেরিআন্টির ডাক শোনা গেল। এই জিনা, তোরা কোথায় গেলি? খাবার রেডি।
দাঁত দিয়ে কামড়ে সুতো কাটল রবিন। হয়েছে! ভালুকটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে হাতের কাজ দেখতে দেখতে বলল, একেবারে নতুনের মত। হ্যাঁ রে নীল ভালুক, আর কোন দুঃখ নেই তো তোর?
এটা আর আন্টিকে দেয়া যাবে না, মুসা বলল।
খাওয়ার পর আবার নকশাটা নিয়ে বসব, বলল কিশোর। এখন লুকিয়ে রাখি। কোথায় রাখব?
ঘাউ! জবাব দিল রাফি।
বাহ, ভাল জায়গার কথা বলেছিস তো, হেসে বলল কিশোর। ও বলছে, কুকুরের ঘরে রেখে দিতে। তারমানে ওর ঘুমানোর জায়গায়। ভালই হবে, কি বলো?
রাফির কথা বললেও তার বন্ধুরা জানে বুদ্ধিটা কিশোরের মাথা থেকেই বেরিয়েছে। একটা খাম খুঁজে বের করল সে। ভাজ করে কাগজটা তাতে ভরে টেপ দিয়ে মুখ আটকে দিল। খামটা নিয়ে গিয়ে আটকাল কুকুরের ঘরে ছাতের ভেতর। দিকটায়।
চলো, জলদি চলো, জিনা বলল। টেবিলে বেশিক্ষণ বসিয়ে রাখলে রেগে যায় আব্বা।
বকা খেতেই হবে, ধরে নিল সে। তবে খেতে হলো না। একটা জরুরী কাজে এতই মগ্ন হয়ে গিয়েছিলেন পারকার আংকেল, কয়েকবার করে ডেকে তারপর বের। করে আনতে হলো তাকে। টেবিলে আসতে বরং তিনিই দেরি করে ফেললেন।
খুশি মনে খেতে বসল ছেলেমেয়েরা। একটা রহস্যের কিনারা করতে না করতেই এসে হাজির হয়েছে আরেকটা রহস্য।
নকশা!
.
০৫.
সেদিন বিকেলেও আবহাওয়া ভাল রইল। তুষার পড়লেও অবশ্য ক্ষতি ছিল না। এই সময়টায় ভালই লাগে তুষার। ঘরে বসে লুডু-কেরম খেলা যায়। তবে পড়ল না। পরিষ্কার দিন। শুকনো। উজ্জ্বল। বাইরে বেরোনোর সুযোগটা হাতছাড়া করল না ওরা।
চলো, সাইকেল নিয়ে বেরোই, প্রস্তাব দিল জিনা।
চলো, রাজি হলো কিশোর। নকশা নিয়ে বিকেলেও বসা যাবে। এত তাড়াহুড়ো নেই।
কিশোরের পরামর্শে নীল ভালুকটা সাইকেলের স্যাডল ব্যাগে ভরে নিল রবিন।
নিচ্ছ যে, মুসা হাসল। ভয় লাগছে না? কেড়ে নিতে পারে ওরা…
খুব ভাল হয় তাহলে, কথাটা ধরল কিশোর। ব্যাটাদের ওপর নজর রাখার একটা ব্যবস্থা হয় নিতে এলে। চোরাই মাল সহ হাতেনাতে ধরেও ফেলা যেতে পারে। জানা যাবে ওরা কারা।
ঠিক, জিনা বলল। কড়া নজর রাখব আমরা। তবে রাখছি যে সেটা বুঝতে দেয়া চলবে না।
টোপ একবার গিললেই হয়, মুসা বলল। চোরগুলোর পিছু নিয়ে গিয়ে ব্যাটাদের গোপন আস্তানা বের করে ফেলব। গিয়ে বলব পুলিশকে। পুলিশ গিয়ে ধরবে…
হয়েছে, বকবক থামাও এখন, বাধা দিয়ে বলল কিশোর। সাইকেলের হ্যান্ডেল ধরে সোজা করল, উঠে বসার জন্যে। কোথায় যাওয়া যায়? চলো, বনের দিকেই চলে যাই।
কেউ অরাজি নয়।
গোবেল বীচের একধারে ছোট বন। সেখানে পৌঁছে সাইকেল রেখে একটা গাছের গায়ে হেলান দিয়ে জিরাতে লাগল কিশোর। দেখাদেখি অন্যেরাও তাই করল। তবে এ সময়টায় ঠাণ্ডা এত বেশি, বনের ভেতর ভাল লাগে না। বেশিক্ষণ থাকল না ওখানে ওরা। আবার সাইকেলে চেপে বসল।
ফেরার পথে ছোট একটা দোকান দেখে কিছু কেনাকাটার ইচ্ছে হলো রবিনের। দোকানটা নতুন খুলেছে। কাঠ কুঁদে নানা রকম খেলনা আর ঘর সাজানোর জিনিস বানিয়ে বিক্রি করে দোকানদার। চালাক-চতুর লোক।
দোকানের দেয়ালে সাইকেল ঠেস দিয়ে রেখে ভেতরে ঢুকল ছেলেমেয়েরা। রাফিও ঢুকল। লোকটার তৈরি জিনিসপত্র দেখতে লাগল প্রশংসার দৃষ্টিতে। সালাদের বাটি, চামচ, কাটাচামচ, খেলনা, জীবজন্তুর মডেল, সবই কাঠের তৈরি। পুঁতির মালাও আছে অনেক রকমের। কেরিআন্টিকে উপহার দেয়ার জন্যে একটা। সালাদের বাটি কিনল কিশোর।
রবিনের কিছু পছন্দ হলো না। কেনার মত জিনিস পেল না
। উপহার দেয়ার জন্যে মুসা কিনল একটা কাঠের অ্যান্টিক।
ঠাট্টা করে রবিন বলল, দেখো, এর ভেতর থেকে আবার কি বেরোয়।
দোকান থেকে বেরিয়ে এল ওরা। বেরোতেই রবিনের চোখে পড়ল, সাইকেলের স্যাডল ব্যাগ খোলা। দৌড়ে গেল কাছে।
হায় হায়, চিৎকার করে উঠল সে। আমার ভালুক!
তন্ন তন্ন করে খুঁজল ব্যাগটা, যদিও এত খোঁজার প্রয়োজন ছিল না। নেই তো নেইই। গায়েব হয়ে গেছে খেলনাটা।
ঠোঁট কামড়াল রবিন। আ-আমারই দোষ! আগেই তো আলোচনা হয়েছে, চুরি হতে পারে। তার পরেও মনে রাখলাম না কেন? ভুলে গেলাম কেন? নিশ্চয় কেউ নজর রেখেছে আমাদের ওপর। হয়তো বাড়ি থেকেই অনুসরণ করে এসেছে। তারপর যেই সুযোগ পেয়েছে, নিয়ে চলে গেছে। ইস, রাফিকে পাহারায় রাখলেও হত।