নিয়ে গিয়েছিল আরেকটু হলেই! জিনা বলল। কিশোর বাধা না দিলে তো যেতই।
চিন্তিত লাগছে কিশোরকে। বলল, এবার পারল না বটে, তবে আমার বিশ্বাস, আবার চেষ্টা করবে ওরা।
অতি কল্পনা হয়ে যাচ্ছে না তো? মুসা বলল। হয়তো বেশি বেশিই ভেবে ফেলছি আমরা। দোকানে চুরি হয়েছে, ঠিক। পলিদের বাড়িতেও হয়েছে। কিন্তু তাতেই কি মনে হয় ঘটনাগুলোর মধ্যে কোন যোগসূত্র আছে? খেলনা ভালুকগুলোর পিছেই লেগেছে চোর, এমন তো না-ও হতে পারে। আর ওই মহিলা সত্যি কথাও বলে থাকতে পারে। হয়তো তার বাচ্চার সত্যিই অসুখ।
তার দিকে তাকিয়ে অধৈর্য ভঙ্গিতে হাত নাড়ল কিশোর। দূর! একেবারেই মিছে কথা বাড়ি চলো। ভালুকটা খুলে দেখব ভেতরে কি আছে।
ভেতরে? ভুরু কুঁচকে ফেলল রবিন।
হ্যাঁ। আমি কি ভাবছি বলছি। আমার ধারণা, ওই ভালুকগুলোর কোনটার মধ্যে রয়েছে মূল্যবান কিছু। চোরেরা ছত্রিশটার মধ্যে পয়তিরিশটাই নিয়ে গেছে। ওগুলোতে যদি থাকত এই একটা নেয়ার জন্যে আর অত চেষ্টা করত না। তারমানে রবিনের ভালুকটার মধ্যেই রয়েছে সেই জিনিস, তুড়ি বাজাল সে। গোপন কথা বলতে আমরা বাধ্য করব নীল ভালুককে!
তাড়াতাড়ি বাজার শেষ করল ওরা। তারপর বাড়ির পথ ধরল। অস্বস্তি বোধ। করছে। বার বার পেছন ফিরে তাকাচ্ছে। কেউ অনুসরণ করছে কিনা দেখছে। কিন্তু সন্দেহজনক কোন গাড়িকে পিছু নিতে দেখল না।
দুশ্চিন্তা গেল না তবুও। গোবেল ভিলার বাগানে ঢোকার আগে আর নিশ্চিন্ত হতে পারল না। ঢুকে, তারপর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। যাক! এবারে শান্তি!
জিনিসপত্রগুলো রান্নাঘরে নিয়ে এল ওরা। সেখানে ওগুলো রেখে রওনা হলো একটা পুরানো স্টোর রূমে। পারকার আংকেলের স্টাডি থেকে দূরে ঘরটা। ওখানে চেঁচামেচি করলেও তার কানে পৌঁছবে না। বিরক্ত হবেন না তিনি। কাজে বিঘ্ন ঘটবে না। গোলমাল একেবারেই সইতে পারেন না তিনি।
স্টোর রূমে ঢুকে পকেট থেকে ভালুকটা বের করল কিশোর।
ঘাউ! আগ্রহী মনে হলো রাফিকে।
দেখি তো, কিশোরের হাত থেকে ভালুকটা নিল মুসা। ছোট। খেলনা। এর ভেতরে কি থাকতে পারে বুঝতে পারছি না।
হীরাটীরা কিছু? রবিনের অনুমান।
কিংবা হয়তো এক টুকরো কাগজ, আবার মুসার হাত থেকে ভালুকটা নিয়ে ওটার পেট টিপেটুপে দেখতে শুরু করল কিশোর। দাঁড়াও! জোরে টিপলে কি যেন লাগছে!
কেটে ফেলো, মুসা বলল।
ঠিক। পকেট থেকে বহু ফলাওয়ালা ছুরিটা বের করল কিশোর, যেটা পলির কাছ থেকে উপহার পেয়েছে।
আমার কাছে দাও! উত্তেজনায় কাঁপছে মুসা।
বন্ধুর দিকে তাকাল কিশোর। কি ভাবল। তারপর হেসে ভালুক আর ছুরিটা বাড়িয়ে দিল। নাও, কাটো।
হাত কাঁপছে মুসার। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে দিল ছেড়ে। একসাথে ধরতে গেল জিনা আর কিশোর। ঠোকাঠুকি হয়ে গেল হাতে হাতে। ভালুকটার গায়ে লেগে লাফ দিয়ে ওপরে উঠে গেল ওটা। পড়তে লাগল আবার। রাফি ভাবল, এটা এক ধরনের মজার লোফালুফি খেলা। সে-ও অংশ নিল তাতে। ভালুকটা মাটিতে পড়ার আগেই লুফে নিল, দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরল জোরে, যাতে না ফসকাতে পারে।
এই, এই! চিৎকার করে উঠল রবিন।
ফেল! ছাড়, জলদি! রাফির কলার ধরে ঝাঁকি দিল কিশোর।
কুকুরটার মুখ থেকে ভালুকটা বের করে নিতে গেল মুসা। কিন্তু এটাও খেলা ভেবে ছাড়ল না রাফি। আরও জোরে কামড়ে ধরল। গরগর শব্দ বেরোচ্ছে গলার ভেতর থেকে। যেন চ্যালেঞ্জ করছে, দেখি বের করো তো, কেমন পারো!
হয়েছে, রাফি! ধমক দিয়ে বলল কিশোর। ফেল ওটা! ছাড়! দেখি, দে আমাকে!
মুসাও হাত বাড়িয়েছে। দুজনে দুদিকে ধরে টান মারল। প্রচণ্ড টান, সইতে পারল না সামান্য একটা খেলনা। ছিঁড়ে গেল ওটা।
অবাক হয়ে অবশেষে কামড় ছেড়ে দিল রাফি। ছেঁড়া ভালুকটা তুলে নিল মুসা। দেখার জন্যে এত দ্রুত ঝুঁকে এল চারজনে, ঠোকাঠুকি হয়ে গেল মাথায়। ভেতরে আর কিছুই চোখে পড়ল না, তুলা ছাড়া। শেষে ফুটোর ভেতরে আঙুল ঢুকিয়ে দিল রবিন।
এই, আছে তো! কি যেন রয়েছে!
ভালুকটা নিয়ে ফুটোটা টেনে আরও বড় করল জিনা। কিছু তুলা টেনে টেনে বের করে ফেলল। তারপর ফুটোটা নিচের দিকে করে ঝাঁকি দিল জোরে। নিচে বাড়িয়ে রাখল আরেক:হাত। শক্ত করে পাকানো এক টুকরো কাগজ পড়ল তার ছড়ানো তালুতে।
একটা মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে রইল সকলেই। নীরবে তাকিয়ে রয়েছে জিনার হাতের কাগজটার দিকে। তাহলে নীল ভালুক মুখ খুলল অবশেষে, বলতে যাচ্ছে তার। গোপন কথা!!
ভাল, কথা বলল কিশোর। লুকানোর চমৎকার জায়গা! এখন দেখা যাক কাগজে কি রয়েছে!
খুলতে আরম্ভ করে দিয়েছে জিনা। চুপ করে সেদিকে তাকিয়ে রইল অন্য তিনজনে। উত্তেজনায় এখন সবাই কাঁপছে। ভাজ খুলে হাতের তালুতে বিছিয়ে ডলে। কাগজটা সমান করল জিনা। কি আছে পড়ার জন্যে ঝুঁকে এল সকলেই।
কালো কালিতে নিখুঁত করে আঁকা রয়েছে কতগুলো আয়তাকার চিহ্ন। তার মধ্যে থেকে গজিয়ে উঠেছে কিছু নকশা, কিংবা জ্যামিতিক চিহ্ন। আর কিছু লেখা রয়েছে ভেতরে।
নকশা! চেঁচিয়ে উঠল মুসা।
হু! চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা দোলাল জিনা। তাহলে এর পেছনেই লেগেছিল ওরা!
কারা সে-কথাটা জিজ্ঞেস করল না কেউ। জানাই তো আছে। চোরের কথা বলছে জিনা। ক্রিসমাস ট্রি আর দোকানে ঢুকে খেলনা ভালুক চুরির রহস্যের একটা জবাব এখন পরিষ্কার।