মেটাতে, হেসে যোগ করল কিশোর।
বাধা পড়ায় বিরক্ত হলো চশমাওয়ালা লোকটা। ছেলেমেয়েদের দিকে ফিরেও তাকাল না। ডিককে বলল, ওদেরকে বাদ দিন না। যা, কোথায় যেন এসেছিলাম?
নতুন আর কি বলব, যা বলার তো বলেই দিয়েছি, ডিক বলল। চোরেরা আর কিছুই নেয়নি, শুধু…।
হ্যাঁ, জানি, শুধু রঙিন খেলনা ভালুকগুলো নিয়েছে, অধৈর্য ভঙ্গিতে বলল লোকটা। আমার কথার জবাব কিন্তু এখনও পাইনি। আমি জানতে চাইছি সবই কি নিয়ে গেছে? দোকানে যা ছিল…মানে, এসেছিল? কটা এসেছিল?
এসেছিল ছত্রিশটা, ডিক বলল। চশমাওয়ালা লোকটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। তার মনে হলো, সেলসম্যানের জবাব শুনে সামান্য যেন চমকে গেল লোকটা। তবে মুহূর্তে সামলে নিল সেটা। দ্রুত লিখে নিল নোটবুকে। বারোটা নিয়ে গেছেন ডক্টর মরিস। আর চব্বিশটা… রবিনের ওপর চোখ পড়তে থেমে গেল সে। না না, তেইশটা ছিল দোকানে। কারণ এই ছেলেটা একটা নিয়ে গিয়েছিল, রবিনকে দেখাল সে।
এতক্ষণ এমন ভাব করছিল লোকটা যে ছেলেমেয়েগুলো চলে গেলেই বাঁচে। হঠাৎ করেই তার আচরণ বদলে গেল। এখন যেন ওদের প্রতিই বেশি মনোযোগ। আন্তরিক হওয়ার জন্যে হাসল। তাই নাকি? রবিনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল সে। তাহলে তুমিও একটা নিয়েছ? আমি শুনলাম, চোরেরা নাকি সব চুরি করেছে, যতগুলো ভালুক এসেছিল।
হ্যাঁ, সবই নিয়েছে, আরেকবার বলল ডিক। ডক্টর মরিসের বারোটা, আর এই ছেলেটার একটা বাদে। তার মানে দোকান থেকে চুরি হয়েছে তেইশটা।
কিশোর বুঝল, পলিদের ভালুকগুলো চুরি হওয়ার খবরটা জানে না সেলসম্যান।
রবিনের দিকে তাকিয়েই রয়েছে চশমাওয়ালা। একটা তাহলে আছে তোমার কাছে? কেন জিজ্ঞেস করছি জানো? পত্রিকায় লেখার জন্যে।
অ, পকেটে হাত ঢোকাল রবিন। নীল ভালুকটা সঙ্গেই রয়েছে। সেটা বের করে দেখিয়ে বলল, এই যে এটাই। খুব মিষ্টি, না?
রবিনের হাত থেকে ভালুকটা নিয়ে দেখতে লাগল সাংবাদিক। বলল, হ্যাঁ, মিষ্টি! ফিরিয়ে দিল আবার। শোনো, খবরের কাগজে নাম আর ছবি ছায়া দেখতে। কেমন লাগবে? আমার প্রতিবেদনে তোমার নাম আমি উল্লেখ করতে পারি। হেডলাইনটাও বলে দিতে পারি এখনি। বড়দিনের অপরাধ: নীল ভালুকের রহস্য। খুব আকর্ষণীয় হবে, তাই না?
লোকটার হাবভাব একটুও ভাল লাগল না কিশোরের। রবিনের হাত ধরে টান দিল, এসো। দেরি হয়ে যাচ্ছে। বেরোই। কিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে বুঝল না রবিন। তবে জিজ্ঞেসও করল না। যা বলছে করার জন্যে ঘুরতে গেল।
এক মিনিট, হাত তুলল লোকটা। আর দুএকটা কথার জবাব দিয়ে যাও, কাগজের জন্যে। আমার কলামটা পুরো করতে হবে তো… রবিনের নাম-ঠিকানা জিজ্ঞেস করল সে।
বাড়ি তো এখানে না, জবাব দিল রবিন। বেড়াতে এসেছি। ওদের বাড়িতে, জিনাকে দেখাল সে। বাড়ির নাম গোবেল ভিলা। আর আমার আংকেলের নাম জনাথন পারকার। তিনি বিজ্ঞানী।
পুরোপুরি অধৈর্য হয়ে গেছে কিশোর। লোকটা এখন রবিনকে ছেড়ে দিলেই খুশি হয় সে। চশমাওলাকে প্রথম থেকেই খারাপ লাগছে তার। আর এখন সন্দেহ ঢুকে গেছে মনে। লোকটার প্রশ্নগুলো বিশেষ পছন্দ হচ্ছে না, খটকা লাগছে। কি করে চুরি হয়েছে, সেটা নিয়ে মোটেও আগ্রহ নেই, যত আগ্রহ কটা চুরি হয়েছে সেটা নিয়ে। কেন?
কোন কাগজে কাজ করেন আপনি? আচমকা জিজ্ঞেস করে বসল কিশোর।
হঠাৎ করে নোটবুক বন্ধ করল লোকটা। দা নিউজ! যাই এখন। তাড়াতাড়ি গিয়ে প্রতিবেদনটা লিখে ছাপতে দিতে হবে…গুডবাই!
বেরিয়ে গেল সে। ব্যাপারটা মুসারও অবাক লাগল। ভুরু কুঁচকে বিড়বিড় করতে লাগল সে, দা নিউজ তো বুঝলাম, কিন্তু কোন নিউজ? ডেইলি নিউজ? ইভনিং নিউজ? গোবেল বীচ নিউজ? কাগজের পুরো নাম বলেনি লোকটা। ওর কথাবার্তা হাবভাব কিছুই ভাল লাগেনি আমার।
আমারও না, জিনা বলল।
এতক্ষণে সুযোগ পেয়েছে কিশোর। দেরি করল না আর। প্রশ্ন শুরু করল ডিককে। তবে নতুন কিছু তেমন জানতে পারল না। আগেই জেনেছে এ সব। গত রাতে দুটোর দিকে চোর ঢুকেছিল দোকানে। ওদের জানা ছিল কোথায় রয়েছে বার্গলার অ্যালার্ম। তারগুলো কেটে দিয়েছে ঢোকার আগে, যাতে ঘণ্টা বেজে ওদেরকে ধরিয়ে দিতে না পারে। বাক্সে যতগুলো ভালুক ছিল, সব নিয়েছে। শো কেসেরটাও নিয়ে গেছে। অন্য কোন জিনিসে হাত দেয়নি।
এটাই অবাক লাগে, ডিক বলছে। এত দামী দামী জিনিস থাকতেও কিছুই নিল না। নিল কিনা শুধু কয়েকটা সাধারণ খেলনা ভালুক! আরও আশ্চর্য, শো কেসেরটা পর্যন্ত বের করে নিয়ে গেছে। এতে পরিষ্কারই বোঝা যায়, ওরা এসেছিলই শুধু ওগুলো নিতে। আর কোন কিছুতে ইন্টারেস্টেড নয়। এই কাজ করতে ভেতরের কারও সাহায্য নিয়েছে। এই দোকানেরই কেউ! পুলিশের তাই ধারণা।
কেমন যেন লাগে! দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়াল কিশোর। স্বাভাবিক মনে হয় না। মাথা নাড়ল সে। বিড়বিড় করল, পলিদের বাড়ি থেকে গাছ নিয়ে যাওয়াটাও অদ্ভুত। ভাবছি, কি আছে এ সব চুরির পেছনে? কারণটা কি?
একজন খরিদ্দার এগিয়ে এল ডিকের দিকে। জিনিস চাইল। ব্যস্ত হয়ে পড়ল সেলসম্যান। আর কথা বলা যাবে না, বুঝতে পারল ছেলেমেয়েরা। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে এল দোকান থেকে।
আপাতত আর কিছু করার নেই। কাজেই ভালুক চুরির ব্যাপারটা মন থেকে দূর করে দিয়ে লোকের বাড়িতে দাওয়াত খাওয়ায় মন দিল। জিনাকে দাওয়াত করে গেছে.তার অনেক বন্ধু। একলা গেল না কোথাও সে, মুসা, কিশোর আর রবিনকে নিয়েই গেল।