তাজ্জব ব্যাপার, বুঝলি জিনা, আন্টি বললেন। এত কষ্ট করে ঢুকল চোর। কিন্তু কিছুই নিল না। শুধু কিছু খেলনা ভালুক ছাড়া। বাক্সে ভরা ছিল, নিয়ে চলে। গেছে। শো-কেসে ছিল একটা না দুটো, তা-ও নিয়ে গেছে। মিস্টার ফোকসন বললেন, পুলিশও নাকি অবাক হয়েছে। কি ব্যাপার, বুঝতে পারছে না। ওদের ধারণা। হয় চোরটা পাগল, নয়তো বড়দিনে রসিকতা করেছে।
আজব ব্যাপার! কিশোর বলল।
হ্যাঁ। সে-রকমই লাগছে, বলল মুসা।
কয়েকটা খেলনা ভালুক শুধু? জিনা বলল। আর কিছুই নেয়নি? কোন মানেই হয় না এর।
নাহ! মাথা নাড়ল মুসা।
পলির গাছ চুরির চেয়ে আজব কিন্তু নয় ব্যাপারটা, বলল কিশোর।
কি যেন ভাবছে রবিন। মোলায়েম গলায় বলল, মনে আছে, গাছটা থেকে সমস্ত উপহার খুলে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ভালুকগুলো সব রয়ে গিয়েছিল। গাছের সঙ্গে ওগুলোও নিয়ে গেছে চোর।
রবিনের মত একই খাতে বইতে শুরু করল মুসা, জিনা আর কিশোরের ভাবনাও।
ঠিকই বলেছ, কিশোর বলল। লোকটা পাগলই হবে। খেলনা ভালুকের ওপর তার লোভ। যেখানেই দেখেছে, লোভ সামলাতে না পেরে তুলে নিয়ে গেছে।
তবে আইডিয়াটা এতই হাস্যকর মনে হলো, হাসির পাত্র হওয়ার ভয়ে কারও কাছে কথাটা বলল না ওরা। বলার মত আর কেউ তখন অবশ্য নেইও ওখানে। আন্টি চলে গেছেন রান্নাঘরে। হাঁড়িপাতিলের খুটখাট শব্দ হচ্ছে। লোভনীয় গন্ধ আসছে। কোথায় কার গাছ চুরি হলো, ভালুক চুরি হলো, পারকার আংকেলের এ সব ব্যাপারে কোন মাথাব্যথা নেই। তিনি গিয়ে ঢুকেছেন তার পড়ার ঘরে। নিশ্চয় জটিল কোন বৈজ্ঞানিক থিউরি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন এখন।
কি আলোচনা হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছে না রাফি। যেন সেটাই জিজ্ঞেস করল, ঘাউ! অর্থাৎ ব্যাপার কি? কি নিয়ে অমন মাথা গরম করছ তোমরা?
রাফি, তুই কি ভাবছিস বল তো? জিজ্ঞেস করল কিশোর, আসলে নিজেকেই করল প্রশ্নটা। বলছি বটে পাগল, কিন্তু সে-রকম ভাবতে পারছি না লোকটাকে। এর অন্য কোন ব্যাখ্যা আছে…
খেলনা ভালুক সংগ্রহ করে না তো? বাধা দিয়ে বলল মুসা।
না, মাথা নাড়ল জিনা। সংগ্রাহক হলে একজন হত। ভেবে দেখো, ক্রিসমাস ট্রিটা যথেষ্ট ভারী। সেটাকে নিয়ে ভ্যানে তুলে ওরকম তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া একজনের পক্ষে সম্ভব না। কমপক্ষে দুজন। পাগল হলেও একজন হত। তারমানে সগ্রহ কিংবা পাগলামি কোনটাই নয়।
ঠিকই বলেছ, একমত হলো কিশোর। কয়েকটা খেলনা ভালুক জোগাড়ের জন্যে শুধু এতসব করেনি লোকগুলো।
কি মনে হয় তোমার? ওই ভালুকগুলোর কোন বিশেষত্ব আছে?
থাকতে পারে। সে-কথাই ভাবছি আমি।
সে-কারণেই যেখানে যত ভালুক পেয়েছে সব তুলে নিয়ে গেছে ওরা। গাছটা নিয়েছে, দোকানের বাক্সগুলো নিয়েছে, এমনকি শো-কেসে একটা যে ছিল, সেটাও নিয়ে গেছে। তার মানে জানত কোথায় ওগুলো পাওয়া যাবে।
হ্যাঁ, একেবারে ঝেড়েপুছে নিয়ে গেছে, কিশোর বলল। একটাও রাখেনি।
এখন কি করবে ওরা? মুসার প্রশ্ন। সব তো নিল…
না, সব নিতে পারেনি, হাত নাড়ল রবিন। একটা রয়ে গেছে আমার কাছে। যেটা আন্টিকে উপহার দিতে কিনেছি।
তাই তো!
রবিন, উত্তেজিত কণ্ঠে কিশোর বলল। জলদি যাও! নিয়ে এসো!
ছুটে ওপরতলায় চলে গেল রবিন। একটু পরেই ফিরে এল নীল ভালুকটা নিয়ে।
কৌতূহলে ফেটে পড়ছে চারজনেই। গাঁ ঘেঁষাঘেঁষি করে এল দেখার জন্যে। কিছুই অস্বাভাবিক লাগছে না খেলনাটার। সাধারণ, ছোট, নরম একটা জিনিস, যেটার কোন বিশেষত্বই চোখে পড়ল না।
নাহ! মাথা নাড়তে লাগল মুসা। কিছু নেই। বাকিগুলোও, যেগুলো দেখেছিলাম, একই রকম দেখতে। ছোট ছোট, সুন্দর। তবে অস্বাভাবিক কিছুই নেই।
ব্যাপারটা বেশ রহস্যময়, কিশোর বলল। আমার মনে হচ্ছে দুটো চুরিরই কোন একটা সম্পর্ক আছে। আচ্ছা, রহস্যটা কি তা বের করলেই তো পারি আমরা? অন্তত করার চেষ্টা তো করতে পারি?
অন্য তিনজনও ভেবে দেখতে লাগল কথাটা।
হ্যাঁ, তা করতে পারি, মাথা দোলাল মুসা। শুরুটা করা যায় গোবেল বীচ স্টোর থেকেই। ওখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারি আমরা। কিভাবে কি হয়েছে তদন্ত করে আসতে পারি।
হ্যাঁ, তা পারি, জিনা বলল। এখন নিশ্চয় খোলাই আছে দোকান। এ সময়ে থাকে।
ওঠো তাহলে, উঠে দাঁড়াল কিলোর। চলো, যাই।
যত তাড়াতাড়ি পারল বাইরে বেরিয়ে এল ওরা। মিনিটখানেক পরেই গোবেল বীচ কটেজের দিকে চলল চারটে সাইকেল আর একটা কুকুরের মিছিল।
.
০৩.
দোকানে পৌঁছে দেখল আরও অনেক লোক রয়েছে ভেতরে। কেউ কেউ সত্যি এসেছে জিনিস কিনতে, কেউ এসেছে কৌতূহল মেটাতে। কাউন্টারে কাউন্টারে লোক ঘুরছে। যারা কিনতে এসেছে তারাও কম কৌতূহলী নয়। প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে চলেছে। তাদের মাল প্যাকেট করতে আর প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে দোকানের তিনজন কর্মচারী। প্রসঙ্গ একটাই, গতরাতের চুরি।
কিশোর দেখল, বেঁটে, গাট্টাগোট্টা এক লোকের সঙ্গে কথা বলছে ডিক। লোকটার বয়েস চল্লিশ-টল্লিশ হবে। চোখে কালো কাঁচের সানগ্লাস। সাংবাদিক বলে পরিচয় দিয়েছে। এক কোণে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। আর ডিক যা বলছে সব লিখে নিচ্ছে নোটবুকে। কাছে গিয়ে দাঁড়াল ছেলেমেয়েরা। ওদেরকে একটা আন্তরিক হাসি উপহার দিল ডিক।
হাল্লো, বলল সে। কি চাই? আরও খেলনা?
না, এমনি এলাম, হেসে বলল জিনা। জাস্ট কৌতূহল।