কিশোরের পরামর্শ কেউ শুনল, কেউ শুনল না ত চেঁচামেচি কমে এল। অনেকখানি। শোনা গেল ডক্টর মরিসের ভারী গমগমে কণ্ঠ, সমস্ত কোলাহল। ছাপিয়ে, শোনো, গোলমাল কোরো না কেউ। চুপ করে থাকো আমি সেলারে যাচ্ছি, ফিউজটা লাগিয়ে দেব।
তার কথাও অনেকেই শুনল না। কথা বলতে লাগল কেউ কেউ নড়তে শুরু করল অন্ধকারের মধ্যেই। দরজার কাছে রয়েছে মুসা। বাতাস লাগল গায়ে। ফিরে তাকিয়ে দেখে, কে যেন বেরিয়ে যাচ্ছে। কাপড়ের ঘষা লাগল তার মুখে। এক পা বাড়াল সে, কে দেখার জন্যে। জোরে একটা ধাক্কা দিয়ে ঘরের মধ্যে ঠেলে দিল আবার তাকে মূর্তিটা।
এই, শুনুন, শুনুন! চিৎকার করে বলল মুসা। কি করছেন?
তার কাছেই দাঁড়িয়ে রয়েছে কিশোর আর রাফি ছুটে বেরিয়ে গেল কুকুরটা একটু পরেই বাগানে শোনা গেল তার উত্তেজিত চিৎকার।
ব্যাপার কি? অবাক হলো কিশোর। কে বেরোল? দরজা খোলা ফেলে। রেখে?।
কাউ করে উঠল রাফি ব্যথায়। কেউ মেরেছে মনে হয় তাকে।
রাফি! ডাকল কিশোর। কি করছিস ওখানে?
বেরোতে যাবে সে, এই সময় আলো জ্বলে উঠল। হাসিমুখে ফিরে এলেন ডক্টর মরিস। কিছু বলার জন্যে মুখ খুলতে গিয়েই থমকে গেলেন ছেলেমেয়েদের মাথার ওপর দিয়ে তাকিয়ে রয়েছেন। চোখে বিস্ময়। তাঁর এই অবস্থা ওদেরকেও অবাক করল। মাথা ঘুরিয়ে তাকাল তার দৃষ্টি অনুসরণ করে। বিস্ময়ে চিৎকার করে উঠল ওরাও।
আরে, ক্রিসমাস ট্রিটা কই!
নেই তো!
হলো কি!
চুরি করেছে।
হ্যাঁ হ্যাঁ, চুরি করে নিয়ে গেল কে যেন!
.
০২.
অবাক কাণ্ড! ক্রিসমাস ট্রি চুরি করার কথা কে কবে শুনেছে? তবে সেটা মেনে না। নিয়েও উপায় নেই জায়গামত নেই ওটা। ঘরের কোথাও নেই ডক্টর মরিস আর মিসেস মরিস স্বীকার করতে বাধ্য হলেন যে চুরিই হয়েছে ওটা আর কোন ব্যাখ্যা নেই বাতাসে তো মিলিয়ে যেতে পারে না।
আরেকটা ব্যাপার দেখে এসেছেন ডক্টর মরিস। ফিউজ কাটেনি। মেইন সুইচ অফ করে দেয়া হয়েছিল। তারমানে ওটা অফ করে আলো নিভিয়েছে চোর গাছটা চুরি করার জন্যে। কিন্তু কে করল?
শুনছেন, আংকেল? কিশোর বলল। আমার কুকুরটা এখনও ঘেউ ঘেউ করছে। বাগানে। নিশ্চয় চোরের পিছু নিয়েছিল।
দরজার দিকে দৌড় দিল সবাই। হুড়াহুড়ি শুরু করে দিল। আগে গেছেন ডক্টর মরিস। একই জায়গায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে চলেছে রাফি। বাগানের গেট বন্ধ থাকায় বেরোতেও পারছে না, ফলে রেগে গেছে আরও। রাস্তায় একটা গাড়ির ইঞ্জিন স্টার্ট নেয়ার শব্দ হলো, একটা ভ্যান চাঁদ উঠেছে। সেই আলোয় মুসা আর কিশোর দেখতে পেল গাড়িটার পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে রয়েছে ক্রিসমাস ট্রির দুটো ডাল।
ওই যে যাচ্ছে! চেঁচিয়ে উঠল কিশোর। চোর! চোর!
মুসার মনে পড়ল, অন্ধকারে ঘষা লেগেছিল তার মুখে। অবশ্যই গাছের ডালের, কোন ভুল নেই তাতে। কিন্তু কে এই কাজটা করল? একটা ক্রিসমাস ট্রি চুরি করে কি লাভ? এমন কোন দামী বস্তু নয় ওটা, অবশ্যই টাকার হিসেবে। বিক্রি করতে পারবে না। তাহলে এত কষ্ট করে এ রকম একটা জিনিস চুরি করতে এল কেন?
ডক্টর মরিস আর তার স্ত্রীও একই কথা বলাবলি করতে লাগলেন, কে চুরি করল? কেন? পাগল-টাগল নাকি?
ছেলেমেয়েদেরকে আবার ঘরে যেতে বললেন তারা। বাইরে থাকলে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। ঘরে এসে পুলিশকে ফোন করলেন ডক্টর মরিস, চুরির খবর দিলেন। দেরি হলো না। খানিক পরেই দুজন পুলিশম্যান এসে হাজির। সবাইকে অনেক অনেক প্রশ্ন করল তারা। নোটবুকে লিখে নিয়ে চলে গেল। ওরাও অবাক হয়েছে। কিছুতেই আন্দাজ করতে পারছে না কেউ, এ রকম জিনিস চুরির জন্যে এতটা ঝামেলা কেন করতে গেল চোর!
জিনাদের বাড়িতে ফিরে এল জিনা আর তার বন্ধুরা। চারজনের মুখে কেবল একই কথা, ক্রিসমাস ট্রি চুরি। ভাবছে, আলোচনা করছে। যতই করছে, ততই অবাক হচ্ছে। মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছে না।
চোরেরা গাছটা নয়, অনুমানে বলল রবিন, উপহারগুলোই চেয়েছে। খুলে নিতে অনেক সময় লাগত। তাই গাছটাই তুলে নিয়ে গেছে।
আমার তা মনে হয় না, জিনা বলল। উপহারগুলো ভাল, সন্দেহ নেই। তবে তেমন দামী নয় যে চুরি করতে আসবে। না, গাছটাই ওদের দরকার ছিল। প্ল্যানট্যান করেই এসেছে।
কিন্তু ক্রিসমাস ট্রি একটা সাধারণ ফার গাছ, মুসা বলল। এটা দিয়ে কার কি কাজ হবে? ক্রিসমাসের পরে এটার কোন প্রয়োজনই নেই।
কি জানি, চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল কিশোর। এই বিশেষ গাছটা দিয়ে হয়তো হবে। কি হবে সেটা যদি বুঝতে পারতাম!
রাত হলে শুতে গেল সবাই। চারজনেরই মাথায় ঘুরছে শুধু গাছটার ভাবনা। অনেক প্রশ্ন ভিড় করে আসছে মনে। জবাব মিলছে না কোনটারই।
কিশোর ভাবছে আরেকটা কথা। ক্রিসমাস ট্রি চুরি হয়েছে যখন, নিশ্চয় এর পেছনে কোন রহস্য রয়েছে। তবে কি আরেকটা রহস্য এসে হাজির হয়েছে ওদের কাছে? সমাধানের জন্যে? এলে ভালই হত। রহস্য পেলে ভাল লাগে। আর এ রকম জটিল আর আশ্চর্য হলে তো কথাই নেই।
*
পরদিন সকালে আরেকটা রহস্য পাওয়া গেল। রাতে ঘুমাতে দেরি করে ফেলেছে, পরদিন তাই ঘুম ভাঙতেও বেলা হয়ে গেল। নাস্তার টেবিলে এসে বসল গোয়েন্দারা। খাবার ঢাকা দিয়ে রেখে বাজারে গিয়েছিলেন কেরিআন্টি। ওরাও বসল, তিনিও ফিরলেন। সাথে করে নিয়ে এসেছেন কিছু চমৎকার কেক, আর একটা দারুণ খবর। আগের দিন রাত দুটোয় নাকি গোবেল বীচ স্টোরে চোর। ঢুকেছিল।