গুলি না চালিয়ে বসে! ছেলেমেয়েদের জন্যে শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন পারকার আংকেল। ওদেরকে ছোট কেবিনটায় ঢুকে পড়তে বললেন তিনি। গোলাগুলি চললে ভেতরে কিছুটা অন্তত নিরাপদ।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও আদেশ পালন করল ওরা।
সাদা বোটের কাছাকাছি চলে এল পুলিশের বোট। মুখে হাত জড়ো করে চেঁচিয়ে বলল ইন্সপেক্টর, অ্যাই, সারেন্ডার করো! তোমাদেরকে গ্রেপ্তার করা হলো। কোন গোলমাল করবে না! হাত তুলে উঠে এসো!
গুলি হওয়ার আশঙ্কায় রইল ইন্সপেক্টর আর সার্জেন্ট। তৈরি হয়ে আছে দুজগেই। তবে তেমন কিছু ঘটল না। বোট দুটো গায়ে গায়ে লাগতেই নীরবে পুলিশের বোটে উঠে এল মারভিন। তারপর ইসাবেল। সঙ্গে সঙ্গে হাতকড়া পরিয়ে দিল সার্জেন্ট।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন পারকার আংকেল।
কেবিন থেকে সবই দেখল গোয়েন্দারা। হুড়াহুড়ি করে আবার ডেকে বেরিয়ে এল। হাসি ফুটেছে মুখে। ধরা পড়েছে চোরগুলো, আর পালাতে পারবে না।
ইন্সপেক্টর জিজ্ঞেস করল মারভিনকে, ছবিগুলো কোথায়?
নিরীহ কণ্ঠে জবাব দিল মারভিন, ছবি! কিসের ছবি? যেন কিছুই জানে না। কি বলছেন বুঝতে পারছি না। আমরা তো সাগরে হাওয়া খেতে বেরিয়েছি। নিউ ইয়ারস…
ধানাই-পানাই রাখো! ধমক দিয়ে বলল ইন্সপেক্টর। ভেবেছ কিছু দেখিনি? পানিতে তখন ওটা কি ছুঁড়ে ফেললে?
ও, ওটা? একটা পোটলা। পুরানো কাপড়ের। বাতিল জিনিস। বোঝ না বাড়িয়ে ফেলে দিলাম।
চট করে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে নিল দুই পুলিশ অফিসার। তবে কি এত দামী জিনিসগুলো পানিতে ফেলে নষ্টই করে ফেলল মারভিন। তার পুরানো কাপড়ের। গল্প এক বর্ণ বিশ্বাস করেনি তারা। ফেলে দেয়ার আরেকটা খারাপ দিক হবে, ওদেরকে আর আটকাতে পারবে না। কারণ কোন অপরাধ প্রমাণ করা যাবে না। বোট নিয়ে রাতের বেলা খোলা সাগরে হাওয়া খেতে বেরোনো কোন অপরাধ নয়।
যেন সেটা বুঝেই জোর দিয়ে বলল মারভিন, ইচ্ছে হলে বোটে খুঁজে দেখতে পারেন।
খুঁজে দেখা হলো। জানে পাবে না, তবু না পেয়ে হতাশই হলো দুই অফিসার। ছবিগুলো বোটে নেই।
রাগে, ক্ষোভে পারলে কেঁদে ফেলে কিশোর। এত কষ্ট করে এসে শেষে এ ভাবে বিফল হবে! কিছুতেই মেনে নিতে পারল না সে। বলল, আমরা একবার খুঁজে দেখি!
খুব বেশি আত্মবিশ্বাস, তাই না? ইন্সপেক্টর বলল ওদেরকে। তবে রাজি হলো, বেশ, দেখো।
মারভিনের বোটে উঠে গেল গোয়েন্দারা। আতিপাতি করে খুঁজেও কিছু পেল না। কোন চিহ্নই নেই ছবিগুলোর।
ভাবছে কিশোর। এ হতে পারে না। কিছুতেই না! জীবন থাকতে এত দামী জিনিস হাতছাড়া করতে পারবে না মারভিনের মত চোর! তাহলে? নিশ্চয় বোটেই লুকিয়ে রেখেছে কোথাও কোথায়?
নিরাশ হয়ে মাথায় হাত দিয়ে একটা সীটের ওপর বসে পড়ল মুসা। প্ল্যাস্টিকে মোড়া গদি। ওটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল কিশোর, এই মুসা, সরো তো!
কী?
সরো!
উঠে দাঁড়াল মুসা।
প্রায় হুমড়ি খেয়ে এসে সীটের ওপর পড়ল কিশোর। হাত বোলাল প্ল্যাস্টিকের কভারে। যে রকম মসৃণ আর সমান হওয়ার কথা তেমন নয়। কিছু যেন রয়েছে। ভেতরে।
ঝুঁকে নিচে দিয়ে তাকাল সে। অ, এই ব্যাপার! কভারটা চিরে ফেলা হয়েছে। তারপর সেলাই করে দিয়েছে। আঙুল ঢুকিয়ে হ্যাঁচকা টানে সেলাইয়ের জায়গাটা ছিঁড়ে খুলে ফেলল সে। হাত ঢুকিয়ে দিল ভেতরে।
হ্যাঁ, আছে! বেশ কায়দা করে লুকিয়ে রাখা হয়েছে ছবিগুলো! সহজে বোঝার উপায় নেই যে ওখানে রেখেছে।
ছবিগুলো নিয়ে হাসিমুখে কেবিন থেকে বেরোল কিশোর। পেছনে তার দলবল।
হাঁ হয়ে গেল দুই পুলিশ অফিসার। ছেলেমেয়েগুলোর তারিফ করল উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে। হাত মেলাল ওদের সঙ্গে। দুর্ব্যবহার করে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্যে দুঃখ প্রকাশ করল।
হুঁ, সবশেষে বলল, বুঝেছি। জিনিস ঠিকই ফেলেছে পানিতে। সাধারণ ক্যানভাস গুটিয়ে নিয়ে আমাদের দেখিয়ে দেখিয়ে ফেলে বোঝাতে চেয়েছে ছবিগুলোই ফেলেছে, ধোঁকা দেয়ার জন্যে। পড়েও গিয়েছিলাম ধোকাতে। কিশোরের কাঁধে হাত রাখল সে। আমাদের ইয়াং শার্লক হোমস না থাকলে পার পেয়ে গেছিল চোরগুলো আরেকটু হলেই।
.
খুব ধুমধাম করে নিউ ইয়ারস ডে পালন করা হলো সেবার গোবেল বীচ গাঁয়ে। আবার দাওয়াত এল পলিদের বাড়ি থেকে। পার্টির আয়োজন পলিই করেছে। ক্রিসমাস ডে-র পার্টিতে যারা যারা উপস্থিত ছিল, তাদের সবাইকে দাওয়াত করেছে। সে। আসল উদ্দেশ্য, গোয়েন্দাদের মুখ থেকে চোর ধরার রোমাঞ্চকর গল্প শোনা। খবরটা সকাল বেলায়ই মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে গোবেল বীচ আর আশপাশের গাঁয়ে।
দুপুর বারোটায় রেডিওর স্থানীয় খবরেও প্রচার করা হলো সংবাদটা। জানানো হলো, হোরেস ট্রিমেইনির দল ধরা পড়েছে, ছবিগুলোও উদ্ধার করা হয়েছে। কিশোরদের নাম বলা হলো। এমনকি রাফিও বাদ পড়ল না।
বাহ, চমৎকার! হেসে বলল পলির বাবা ডক্টর মরিস। পেপারেও বেরোবে সংবাদটা। ছবি সহ। কেমন লাগছে তোমাদের?
ভালই, জবাব দিল জিনা। তবে তারচেয়ে ভাল লাগছে চোরগুলোকে ধরতে পেরে, আর ছবিগুলো উদ্ধার করতে পেরে।
আর দারুণ একটা অ্যাডভেঞ্চারও করতে পারলাম, মুসা বলল। সেটাও মস্ত বড় পাওয়া।
ঠিক, একমত হলো কিশোর। মাঝে মাঝে এ রকম অ্যাডভেঞ্চার ভালই লাগে। ছুটি শেষ হতে হতে আরেকটা যদি পেয়ে যেতাম!