আর না বললে, কিশোর বলল, আবার কুত্তা লেলিয়ে দেব। রাফিকে যে পিটিয়েছেন সেই জেদ এখনও যায়নি…
এমনিতে যত বাহাদুরিই দেখাক, ডন খুব ভীতু! কুকুরের কামড় খাওয়ার ঝুঁকি নিতে চাইল না। তা ছাড়া ধরা যখন পড়েই গেছে, বললে যদি কিছু সুবিধে হয়, সেটা নেয়াই উচিত। আর দ্বিধা করল না সে। বলল, মারভিনের বৌ ইসাবেল। মোটর বোটে রয়েছে দুজনে। আমার জন্যে বসে আছে। জেটির শেষ মাথায় ছোট একটা খাড়িতে আছে বোটটা। আমি যখন বেরোচ্ছি, তখন ক্যানভাসে মোড়াচ্ছিল ছবিগুলো। ফুয়েল ট্যাংক একেবারে খালি। তাই আমাকে পাঠিয়েছে তেল নিয়ে যেতে।
গুড। খুশি হলো কিশোর। তারমানে আটকা পড়েছে ওরা!
মোটর বোট! অবাক লাগল মুসার। তারমানে বেশি দূরে যেতেন না আপনারা?
না। কাছেই একটা বড় বন্দর আছে। সেখানে যাবে ঠিক করেছিল মারভিন। ওখানকার অনেককে চেনে সে। বড় একটা বোটের মালিক আছে, যে তার বন্ধু। তার বোটে করে দূরে কোথাও চলে যেতাম…
ওই যে, আংকেল এসে গেছেন! আনন্দে চিৎকার করে উঠল রবিন।
পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে ছুটে আসছেন তিনি। কি, হচ্ছেটা কি? কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন তিনি। ও, তাহলে আমার কথা শোনোনি! গাড়ি থেকে নেমে গিয়েছিলে! ডনের ওপর চোখ পড়তে জিজ্ঞেস করলেন, এই লোক কে?
ওর নাম ডন হারভে, আব্বা, জিনা জানাল। রাফি ধরেছে।
একটা মুহূর্ত দেরি করল না দুই পুলিশ অফিসার। লোকটাকে প্রশ্ন শুরু করল। করে গেল একনাগাড়ে। জবাব দিতে দিতে হাঁপিয়ে গেল ডন। ছেলেমেয়েদের যা বলেছিল, সেই একই কথা বলতে হলো আরেকবার। জানাল, কোথায় মোটরবোট নিয়ে অপেক্ষা করছে মারভিন আর তার স্ত্রী। এই উত্তেজনার মুহূর্তে ছেলেমেয়েদেরকে বকতে ভুলে গেলেন পারকার আংকেল। ওদের সঙ্গে আসার কথা বারণ করতেও মনে রইল না। কাজেই ওরাও চলল পুলিশের সাথে।
এই সময় পৌঁছে গেল বাড়তি ফোর্স। বড় কালো একটা গাড়ি এসে থামল। নামল ছয়জন পুলিশম্যান। তারাও চলল সঙ্গে।
নীরবে চলল দলটা। কিছুদূর এগোনোর পর হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল ডন। হাত তুলে দেখাল একদিকে। ওই যে, ওখানে। …ওই তো, বোটটা, সাদা।
ম্লান জ্যোৎস্না। তার ওপর বোটটা সাদা হওয়ায় ভালমতই দেখা যাচ্ছে ওটা। সাগরের পানির রঙ এখন কালচে।
ঠিক এই সময় চালু হয়ে গেল বোটের ইঞ্জিন। বেড়ে গেল গর্জন। খোলা সাগরের দিকে রওনা হয়ে গেল বোট। নিশ্চয় পুলিশকে দেখে ফেলেছে মারভিন আর ইসাবেল। পালাতে চাইছে। উন ধরা পড়েছে কিনা জানার কথা নয় ওদের। ওর জন্যে নিশ্চয় একটুও ভাবেনি, তাহলে এ ভাবে রওনা দিত না। আরও একটা ব্যাপার, জানে, ট্যাংকে তেল খুব কম। সাগরে গিয়ে যে কোন মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে ইঞ্জিন। সেই পরোয়াও করেনি। তবে তাদের এই আচরণে অবাক হয়নি কেউ ও রকম চোরের কাছে এর চেয়ে বেশি আর কি আশা করা যায়?
কোস্টগার্ডকে সতর্ক করে দেয়া দরকার! বলল সার্জেন্ট।
কিন্তু তাতে সময় লাগবে, ইন্সপেক্টর বলল ওরা কিছু করার আগেই পালিয়ে যাবে চোরগুলো। কি একখান জোড়া, আহা! স্বামীও চোর, বৌটাও চোর! মিলেছে!
আরেকটা বুদ্ধি এসে গেল কিশোরের মাথায়। এ রকম জরুরী অবস্থায় একের পর এক আইডিয়া খেলে যায় তার মাথায়। ওই যে দেখুন, আরেকটা বোট! তেরপল নেই। ওটাতে উঠে যেতে পারব। ইঞ্জিনটা কোনমতে স্টার্ট নেয়াতে পারলেই পিছু নিতে পারব ব্যাটাদের!
কথাটা পছন্দ হলো ইন্সপেক্টরের। দেরি করল না। গিয়ে লাফিয়ে উঠে পড়ল বোটে। তার পর পরই উঠল সার্জেন্ট আর পারকার আংকেল। গোয়েন্দারাও দাঁড়িয়ে রইল না, কিংবা কারও অনুমতির অপেক্ষায় রইল না। সোজা গিয়ে উঠে পড়ল।
তীরে দাঁড়ানো পুলিশম্যানদের ডেকে বলল সার্জেন্ট, তোমরা যাও! কোস্টগার্ড স্টেশনে গিয়ে জানাও ওদের। জলদি!
ইগনিশন কী নেই। চাবি ছাড়াই ইঞ্জিন স্টার্ট দেয়ার কায়দা জানে সার্জেন্ট। হুইল ধরল ইন্সপেক্টর। রাতের ঠাণ্ডা বাতাস এসে লাগছে মুখে। কান খাড়া করে ফেলল রাফি ঢেউয়ের ছিটে এসে লাগছে, যেখানটায় লাগছে লবণ লেগে গিয়ে মোনতা হয়ে যাচ্ছে। চড়চড় করে চামড়া! কেয়ারও করল না গোয়েন্দারা। তাকিয়ে রয়েছে সাদা বোটটার দিকে। একটাই ভাবনা, কিছুতেই চোরগুলোকে পালাতে দেয়া চলবে না।
কিন্তু দুটো বোটের মাঝের দূরত্ব বাড়ছেই। ধরা কি যাবে না? পালিয়ে যাবে মারভিন আর ইসাবেল?
ভাবনাটাই গায়ে জ্বালা ধরায়। ইসি, রাফিরে! মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে কিশোরের। এত কষ্ট খামোকাই করলাম রে!
ভাবছ কেন? মনে করিয়ে দিল রবিন, ভুলে গেছ, ওদের পেট্রোল কম?
তাই তো! বলে উঠল মুসা। এ কথাটা তো মনে ছিল না!
এই দেখো, দেখো! চিৎকার করে বলল জিনা।
দেখার জন্যে চোখ বড় বড় করে ফেলল গোয়েন্দারা! সত্যিই তো! সাদা জিনিসটা বড় হচ্ছে!
ধরা যাবে! ধরা যাবে! চেঁচিয়ে উঠল রবিন, বলেছিলাম না, ধরা যাবে…
গেছে! কিশোর বলল, ব্যাটাদের পেট্রোল ফুরিয়ে গেছে! আর নড়তে পারবে না!
ঘটেছেও তা-ই। মোটর বোটের ট্যাংকে তেল শেষ। কিছুই করার নেই আর মারভিন এবং ইসাবেলের। চুপ করে হাত গুটিয়ে বসে থেকে পুলিশের হাতে ধরা দেয়া ছাড়া। আরেক কাজ করতে পারে। সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাতরে পালানোর। চেষ্টা করতে পারে। তবে এই ঠাণ্ডার মধ্যে সেটা হবে আত্মহত্যার সামিল। মরার চেয়ে জেলে গিয়ে বেচে থাকাও ভাল, কাজেই সেটা করতে গেল না ওরা।