অবাক হলেও সময় নেই বলে আর কোন প্রশ্ন করল না হ্যারি। বলল, হাই স্ট্রীটের গ্র্যান্ড কাফে চেনো? আচ্ছা। ওখানে গিয়ে বয়ের প্রথম গলিটায় ঢুকবে। চলে যাবে শেষ মাথায়। একেবারে শেষ বাড়িটাই। ওটা তার ভাইয়ের বাড়ি। ওখানেই থাকে ডন।
অনেক ধন্যবাদ তোমাকে, হ্যারি!
বেরিয়ে এসে পুলিশকে ঠিকানা জানাল মুসা। আবার চলল দুটো গাড়ি। বাড়িটায় পৌঁছে দেখা গেল, একটা জানালায়ও আলো নেই। দরজায় থাবা দিল। সার্জেন্ট। একটা জানালায় আলো জ্বলল। খুলে গেল দরজা।
খুলে দিয়েছে লম্বা, স্বাস্থ্যবান এক যুবক। অন্ধকারে পুলিশের পোশাক ঠিকমত দেখা যায় না। চিনতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, কি চাই? কে আপনারা?
পুলিশ। ডন হারভে এখানে থাকে? এগোল ইন্সপেক্টর।
চমকে গেল লোকটা। আবার তাহলে বাধিয়েছে! হ্যাঁ, এখানেই থাকে…
ঘরে আছে?
নেই।
কখন গেল?
এই তো, ঘণ্টা দুই আগে এসে জিনিসপত্র ব্যাগে গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে গেল। জিজ্ঞেস করলাম। বলল, বাইরে কোথায় নাকি একটা চাকরি পেয়েছে। ও এ রকম মাঝে মাঝেই আসে যায়। অবাক হইনি। তবে মনে হলো, এবার বেশ কিছুদিনের জন্যেই যাচ্ছে। জলপথেই যাবে মনে হলো। ওর কথায় বুঝলাম।
জিজ্ঞেস করেননি কোথায় যাচ্ছে?
না। এখন আর করি না। করলে সত্য জবাব দেয় না, খামোকা কি লাভ। তবে বেশ খুশি খুশি মনে হলো আজ। কি করেছে?
এখন বলা যাবে না। তবে সত্যি কথা বললেন, সেজন্যে ধন্যবাদ। বিরক্ত করলাম। গুড নাইট।
দরজা বন্ধ হয়ে গেল।
পারকার আংকেলের সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করে নিল ইন্সপেক্টর আর সার্জেন্ট।
গোবেল বীচ বড় বন্দর নয়। দেশের ভেতরে বেশিদূর যাওয়ার মত ইন্টারনাল ফেরি যোগাযোগ নেই। সে-কথাই বলল ইনসপেক্টর, যেতে হলে ফিশিং বোটে করে যেতে হবে। কিংবা মোটর লঞ্চ। বলেই তো দিয়েছে, দেশের বাইরে চলে যাবে। ছেলেমেয়েরা শুনেছে সে-কথা। নিয়ে গিয়ে ছবিগুলো বিক্রি করে টাকা ভাগাভাগি করে নেবে।
হয়তো চলেই গেছে এতক্ষণে, নিজের ওপরই রাগ হচ্ছে সার্জেন্টের।
না, তা বোধহয় যেতে পারেনি, কিশোর বলল। এতটা তাড়াহুড়ো তো দেখলাম না। ওরা নিশ্চয় ভাবছে আমরা এখনও সেলারেই আটকে রয়েছি। কাজেই ততটা সতর্ক হবে না।
আরও একটা ব্যাপার। এক মুহূর্ত চুপ থেকে, বলল সে, আমাদের জন্যে ওদের প্ল্যান বদলাতে হয়েছে। আজ রাতে যাওয়ার কথা ছিল না, আমরা বাদ। সাধলাম বলেই যেতে হচ্ছে। ধরা যাক, বোট আছে ওদের। তবে তাতে দুরে পাড়ি দেয়ার মত রসদ, নেই। সে-সব জোগাড় করে রওনা হতে সময় লাগবে। ট্যাংকে তেল ভরারও ব্যাপার আছে। আজ ছুটির দিন। সব কিছু বন্ধ। তেল জোগাড় করতেও অসুবিধে হবে ওদের, সময় লাগবে।
অবাক হয়ে কিশোরের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে ইন্সপেক্টর। শার্লক হোমসই তুমি। তখন ওভাবে তোমাকে টিটকারি দেয়াটা উচিত হয়নি। মাথায় ঘিল আছে তোমার, সত্যি!
.
১৩.
আবার এসে গাড়িতে উঠল সবাই। পুলিশেরা পুলিশের গাড়িতে, ছেলেমেয়েরা পারকার আংকেলের গাড়িতে। দ্রুত ছুটল গোবেল বীচের উদ্দেশে। পিংক হাউসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সেটা দেখিয়ে জিনা বলল তার আব্বাকে, চোরাই ছবিগুলো ওখানেই পেয়েছি। রাফি না থাকলে আর বেরোতে হত না আজকে আমাদের। এখনও ওখানেই আটকে থাকতাম।
গোবেল বীচে পৌঁছল ওরা। মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল চাঁদ। কোমল আলোয় ভাসিয়ে দিল পুরো বন্দর এলাকা। নানা রকম বোট রয়েছে জেটিতে। মোটর বোট, ফিশিং বোট, লঞ্চ গা ঘেঁষাঘেঁষি করে ভাসছে পানিতে। শান্ত পরিবেশ। সব কিছু চুপচাপ, শুধু ঢেউয়ের মৃদু ছলাৎছল ছাড়া। মাঝেসাঝে একআধটা বোট গায়ে গায়ে ঘষা লেগে ক্যাচকোচ করে উঠছে।
কোনখান থেকে শুরু করব? সার্জেন্ট জিজ্ঞেস করল।
জেটিতে দাঁড়িয়ে দুজন পুলিশ অফিসার, পারকার আংকেল আর ছেলেমেয়েরা ঘুরে ঘুরে তাকাতে লাগল। কিন্তু অস্বাভাবিক কিছুই চোখে পড়ল না।
তীর ধরে হেঁটে যাই, ইন্সপেক্টর বলল। কিছু চোখে পড়তে পারে।
আমরাও আসি, বললেন পারকার আঙ্কেল। ছেলেমেয়েদেরকে বললেন, শোনো, তোমরা গিয়ে গাড়িতে বসে থাকো।
আব্বা! আবদার ধরল জিনা। আমরাও আসি না! কি হবে?
না, জিনা, যা বলছি শোনো। তোমাদের আসা লাগবে না। বসে থাকো। আমরা আসছি।
পেনডল সেইন্ট জন থানায় রেডিওতে মেসেজ পাঠাল ইন্সপেক্টর। পুলিশ ফোর্স এসেছে কিনা জানতে চাইল। আসেনি শুনে বলল, এলে যেন তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয় গোবেল বীচ বন্দরে। তারপর হাঁটতে শুরু করল।
অন্ধকার ছায়ায় হারিয়ে গেল তিনটে ছায়ামূর্তি।
গাড়ির ভেতরে কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকল গোয়েন্দারা। শেষে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল জিনা, আব্বটা যে কেন আমাদের নিল না!
তাতে কি? কিশোর-বলল। আমরা তো আর কথা দিয়ে ফেলিনি যে গাড়িতেই বসে থাকব। বেরিয়ে গেলেই পারি। চলো, আমরাও খোঁজাখুজি করি, অন্য ভাবে।
না না! রবিন গুরুজনের কথা অমান্য করতে রাজি নয়। আজ রাতে এমনিতেই অনেক অন্যায় করে ফেলেছি, না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে। আর করতে চাই না।
হঠাৎ এই সময় ঘাউ ঘাউ করে উঠল রাফি। সামনের পা জানালার ওপর তুলে দিয়ে নাক বের করে দিল। তার ঘাড়ে হাত দিল কিশোর। রোম দাঁড়িয়ে গেছে কুকুরটার। ব্যাপার কি!
এই, চুপ করো তোমরা! সঙ্গীদের হুঁশিয়ার করল সে। রাফি নিশ্চয় কিছু টের পেয়েছে!