বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি! জবাব দিল কিশোর। পথে গলা থেকে রুমালটা খুলে পড়ে না গেলেই হয়। মেসেজ লিখে দিয়েছি পারকার আংকেলের কাছে, চুলে হাত বোলাল সে। অনেক দেরি হয়ে গেল!
হ্যাঁ, মাঝরাত, ঘড়ি দেখল মুসা। আংকেল কি ভাববেন কে জানে! তবে মেসেজ পাঠিয়ে ঠিক কাজই করেছ। আর কিছু করার ছিল না। এ রকম জরুরী একটা ব্যাপার…
কাছে এসে ওদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করল পুলিশ। গোবেল ভিলায় ফোন করার পরামর্শটা জিনাই দিল। কিন্তু করা হলে দেখা গেল, লাইন ডেড। কি করে যে হলো, কিছুই বোঝা গেল না। অনেক সময় হয় এ রকম। সবচেয়ে কাজের জিনিসটা বিকল হয়ে যায় প্রয়োজনের সময়ে। নিউ ইয়ারের ছুটি শেষ না হলে আর মেরামত হবে না।
উত্তেজনা অসহ্য হয়ে উঠছে ওদের কাছে। প্রতিটি মিনিট যাচ্ছে, আর অস্বস্তি বাড়ছে ওদের। কারণ যতই সময় যাচ্ছে, দূরে সরে যাচ্ছে চোরেরা। কমে যাচ্ছে ধরা পড়ার সম্ভাবনা।
দূরে গির্জায় ঘন্টা বাজিয়ে সময় ঘোষণা করা হলো। এই সময় বাইরে একটা গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ হলো। তারপর শোনা গেল দৃঢ় গমগমে কণ্ঠ।
আব্বা এসে গেছে! বলে উঠল জিনা।
ঘরে ঢুকলেন পারকার আংকেল। সাথে রাফি। নিজের পরিচয় দিলেন পুলিশের কাছে। তারপর ফিরলেন ছেলে-মেয়েদের দিকে।
মুখ লাল হয়ে গেছে ইন্সপেক্টরের, লজ্জায়, যখন বুঝল সত্যি কথাই বলেছে ছেলেমেয়েগুলো।
কড়া চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন আংকেল, ব্যাপারটা কি, অ্যাঁ? স্টোররূম থেকে বেরোলে কখন? আমরা ভাবছি তোমরা খেলছ, আর এদিকে…রাফি ঠিকমত না গেলে তো…কিশোর, ব্যাপারটা কি, বলো তো?
বলার সুযোগ পেয়েছে, আর কি ছাড়ে সে। পরে আংকেল বাড়ি নিয়ে গিয়ে বকাবকি করুন আর যাই করুন, তখন চুপ করে থাকা যাবে না হয়। বলল, আংকেল, আরেকটা রহস্য সমাধানের চেষ্টা করছিলাম আমরা। দোকানের খেলনা চুরি আর পলিদের নীল ভালুক চুরির রহস্য…
শুরু থেকে গল্পটা বলে যেতে লাগল কিশোর। মাঝে মাঝে কথা জোগান দিল রবিন, জিনা আর মুসা। শুনে তো থ হয়ে গেল পুলিশেরা।
অসম্ভব! এক সময় আর থাকতে না পেরে চেঁচিয়ে উঠল ইন্সপেক্টর। সব বানিয়ে বলছে ওরা!
আমার তা মনে হয় না, গম্ভীর মুখে বললেন পারকার আংকেল। ওরা মিথ্যুক নয়। মাঝেসাঝে এ রকম রহস্যে জড়িয়ে পড়ে। বেশ কিছু রহস্যের সমাধানও করেছে। ওদের কথা বিশ্বাস করা উচিত। যা বলছে করা উচিত। অবিশ্বাস করে চুপ। করে থাকতে পারেন অবশ্য, পরে পস্তাবেন।
এই শেষ কথাটা ম্যাজিকের মত কাজ করল। হঠাৎ যেন সাড়া পড়ে গেল। পুলিশদের মাঝে। ফোন তুলে নিল একজন সার্জেন্ট। রেডিওতে পেট্রোল কারগুলোকে হুঁশিয়ার করতে ছুটল ইন্সপেক্টর আর আরেকজন সার্জেন্ট। মিনিট কয়েক পরেই ফিরে এল ইষ্ণপক্টর।
সাহায্য আসছে, জানাল সে। ফোর্স পাঠাতে বলেছি। বসে থাকলে চলবে না। বেরোতে হবে আমাদের। পারকার আংকেল আর ছেলেমেয়েদের দিকে ফিরে বলল, ডন হারভের বাড়ি চেনো কেউ? তাকে ধরতে পারলে বাকিগুলোকে ধরার ব্যবস্থা হতে পারে। কোথায় পাওয়া যাবে অন্যদেরকে হয়তো বলতে পারবে সে।
বেরিয়ে গেলেই মুশকিল, গম্ভীর হয়ে আছে সার্জেন্ট। ছেলেমেয়েদের কথা অবিশ্বাস করে সময় নষ্ট করেছে বলে এখনই অনুশোচনা আরম্ভ হয়েছে।
সেটা ভেবে বসে থাকলে তো আর চলবে না। চেষ্টা করতে হবে। আবার ছেলেমেয়েদের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করল, চেনো?
না, বাড়িটা চিনি না, জবাব দিল কিশোর। তবে মিডলটনে থাকে, জানি। ওখানকার কাউকে জিজ্ঞেস করলেই চিনিয়ে দেবে। আমরা আসব আপনাদের সঙ্গে?
মানা করে দিল ইন্সপেক্টর।
তবে তাকে বোঝাতে পারল কিশোর, ওদেরকে সঙ্গে নিলে অনেক সুবিধে হবে। কারণ চোরগুলোকে ওরা চেনে, দেখেছে। চিনিয়ে দিতে পারবে।
আপনারা আপনাদের গাড়িতে যান, পারকার আংকেল বললেন। আমি ওদেরকে নিয়ে আসছি আমার গাড়িতে করে।
হেডকোয়ার্টারে আরেকটা মেসেজ পাঠাল ইন্সপেক্টর। মিডলটনে যাচ্ছে সে কথা জানাল। অনুরোধ করল ফোর্স যেন তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয় পেনড় সেইন্ট জনে।
রওনা হয়ে গেল দলটা। আগে আগে পুলিশের গাড়ি। পেছনে পারকার আংকেলের। তার সঙ্গে রয়েছে কিশোররা চারজন আর রাফি।
ব্ল্যাক ক্যাট কাফেতেও চলছে নিউ ইয়ারের পার্টি। বাইরে থামল দুটো গাড়ি। পুলিশের আগেই নেমে পড়ল কিশোর, ছুটে গেল সামনের গাড়িটার কাছে। ইন্সপেক্টরকে বলল, মালিকের ছেলে হ্যারিকে চিনি আমরা। যদি বলেন, আমি একাই গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসতে পারি ডনের বাড়িটা কোথায়। তাতে কেউ কিছু ভাববেও না, কারও নজরে পড়ার সম্ভাবনাও কম।
ঠিক আছে, রাজি হলো ইন্সপেক্টর। বুদ্ধিটা ভাল। ডনের পেছনে যে পুলিশ লেগেছে, এ কথা লোকে এখন না জানলেই ভাল। তাহলে সতর্ক করে দেয়া হবে তাকে।
মুসা বলল, কিশোর, আমার সঙ্গে হ্যারির খাতির বেশি। আমি যাই?
বেশ, যাও।
কাফেতে ঢুকে পড়ল মুসা। অনেক লোক। হ্যারিকে দেখা গেল ব্যস্ত হয়ে এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ছোটাছুটি করছে। অনেক কষ্টে তাকে থামিয়ে কথা বলতে পারল মুসা! হ্যারি, চিনতে পারছ? আমি, মুসা। একটা কথা জানতে। এলাম। আচ্ছা, ডন হারভের বাড়িটা চেনো?
ডন হারভে? তার সঙ্গে তোমার কি সম্পর্ক? সে তো লোক ভাল নয়!
জানি। তবু তার সঙ্গে দেখা করা খুব দরকার।