দেখো, ফালতু কথা বলবে না আমার সঙ্গে! গোবেল বীচ থেকে গোবেল বীচে যায় কি ভাবে? আর এই রাতের বেলা, এত ঠাণ্ডায়, নিউ ইয়ারের পার্টি ফেলে কোন ছেলেমেয়ে বেরোয়? ব্যাপারটা সুবিধের লাগছে না আমার।
গোবেল বীচ থেকে গোবেল বীচে যাওয়া যায় না, ব্যাখ্যা করে বোঝাল কিশোর। কিন্তু গোবেল বীচ থেকে এসে তারপর তো আবার ফেরত যাওয়া যায়। মিডলটনে গিয়েছিলাম আমরা। ফিরে চলেছি গোবেল বীচে।
তার পরেও সুবিধের লাগছে না, কিছুতেই বিশ্বাস করতে রাজি নন ইন্সপেক্টর। নিশ্চয় বাড়ি থেকে পালিয়েছ তোমরা।
যদি ভবঘুরে কিংবা জিপসি না হয়ে থাকে, সার্জেন্ট বলল। বিদেশীই লাগছে। জিপসি হলে অবাক হব না। কাপড়-চোপড়ের অবস্থা দেখেছেন, স্যার? ছেঁড়া, ময়লা। হাতে মুখে এত মাটি লাগল কোত্থেকে!
সেলারে মাটিতে গড়াগড়ি করে এলে এর চেয়ে ভাল অবস্থা আশাও করা যায় না।
দেখুন, মুসা বলল। আপনারা ভুল করছেন।
সাইকেলগুলো কিন্তু একেবারে নতুন! সন্দিহান হয়ে উঠেছে ইন্সপেক্টর। চুরিটুরি করে আনেনি তো?
দেখুন, বাজে কথা বলবেন না! রেগে গেল জিনা। দেখে কি চোর মনে হয় আমাদের? গোবেল বীচে কোথায় যাচ্ছি, জানেন? থানায়। একটা খবর দিতে।
বেশ, বেশ, বেশ! ব্যঙ্গ করার ভঙ্গিতে বলল সার্জেন্ট।- তা জানতে পারি কি, খবরটা কী?
অফিসারদের এহেন আচরণে মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে কিশোরের। মাথা সোজা করে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল সে, খবরটা হলো, এক বছর আগে হোরেস ট্রিমেইনি যে ছবিগুলো চুরি করেছিল, সেগুলো খুঁজে পেয়েছি আমরা। মাল সহ চোরগুলোকে আটক করতে হলে এটাই সুযোগ!
তাই নাকি? টেনে টেনে বলল সার্জেন্ট। তারপর হো হো করে হেসে উঠল। গালগল্প তো বেশ ভালই বলতে পারো। বই লেখার চেষ্টা করো না কেন? ভাল পারবে। এ সব কাহিনী পুলিশকে বিশ্বাস করাতে পারবে ভেবেছ?
করা না করা সেটা পুলিশের ইচ্ছে!
কিন্তু সত্যি বলছি আমরা! প্রায় চিৎকার করে উঠল রবি।
বেশি ঠাণ্ডা, ইন্সপেক্টর বলল। এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলাই মুশকিল। সাইকেলগুলো রেখে গাড়িতে এসে ওঠো। ওগুলো পরে তুলে নিয়ে যেতে পারব। পেনড়ল সেইন্ট জনে নিয়ে যাব তোমাদের। সেখানে তোমাদের আইডেনটিটি চেক করব। তোমাদের কথা কতটা সত্যি থানায় বসেই খোঁজ নিতে পারব। নেয়া সহজও হবে। সময় অবশ্য লাগবে। তবে নিয়মের বাইরে তো আর যেতে পারি না।
মরিয়া হয়ে চেঁচিয়ে উঠল মুসা, কিন্তু তাইলে যে বেশি দেরি হয়ে যাবে। অনেক দূরে চলে যাবে চোরেরা। আর তখন ধরা যাবে না ওদের। ছবিগুলোও যাবে।
আমাদেরকে এ ভাবে আটকানোর কোন অধিকার আপনার নেই, কিশোরও রেগে গেল। আমরা কোন অন্যায় করিনি। বরং পুলিশকে সাহায্যই করতে চাইছি।
শোনো শোনো, কথা শোনো, হাসতে লাগল ইন্সপেক্টর। কি ভাবো নিজেকে? শার্লক হোমস?
না, তা ভাবি না! আমার নাম কিশোর পাশা। বেড়াতে এসেছি গোবেল বীচের বিখ্যাত বিজ্ঞানী…
কঠোর কণ্ঠে নির্দেশ দিল সার্জেন্ট, যাও, গাড়িতে ওঠো!
প্রতিবাদ জানাল ছেলেমেয়েরা। আরও তর্ক করল। কোন কথাই শুনল না পুলিশ। কিছুতেই বোঝানো গেল না ওদের।
অনেক বকবকানি হয়েছে, ইন্সপেক্টর বলল। আর কিছু শুনতে চাই না আমি। ভাল চাইলে গাড়িতে ওঠো।
মুখ কালো করে গিয়ে গাড়িতে উঠল গোয়েন্দারা। তবে চুপ করে বসে থাকল না কিশোর। গাড়ি যখন চলছে, পকেট থেকে তার রুমালটা বের করে, কলম দিয়ে তাতে একটা চিঠি লিখল সে, অন্ধকারে কাপড়ের মধ্যে যতটা পারল। সেটা বাধল রাফির কলারে। সামনের সীটে বসে এ সবের কিছুই জানল না সার্জেন্ট কিংবা ইন্সপেক্টর।
পেনডল সেইন্ট জন থানার সামনে গাড়ি থামল। পেছনের দরজা খুলে অন্যদেরকে নামতে বলল কিশোর। রাফির কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, বাড়ি চলে যাবি! সোজা বাড়ি! জিনাদের বাড়ি! বলেই ঠেলে বাইরে বের করে দিল কুকুরটাকে। পেছনে আলতো চাপড় দিয়ে আবার বলল, যা! বাড়ি!
এই কয়েকটা কথাই রাফির জন্যে যথেষ্ট। একবার ফিরে তাকাল কিশোরের মুখের দিকে। বোঝার চেষ্টা করল, সত্যিই যেতে বলছে কিনা। তারপর লেজ নাড়তে নাড়তে চোখের পলকে অদৃশ্য হয়ে গেল রাতের অন্ধকারে। এত দ্রুত ঘটে গেল ঘটনাটা, দুই পুলিশ অফিসার থানায় ঢোকার আগে লক্ষই করল না যে কুকুরটা নেই।
আরে, সার্জেন্ট বললেন। কুকুরটা গেল কোথায়?
হাত নেড়ে ইন্সপেক্টর বললেন, যেখানে খুশি যাক। ছেলেমেয়েগুলোকে নিয়ে এসো।
.
১২.
পেনডল সেইন্ট জন থানায় মাত্র দুজন পুলিশ পাহারায় রয়েছে, একজন কনস্টেবল, আরেকজন সার্জেন্ট। ছেলে-মেয়েদেরকে তাদের হাতে সোপর্দ করল ইন্সপেক্টর। মনে হয় বাড়ি থেকে পালিয়েছে, বলল সে। রাস্তায় সাইকেল চালাচ্ছিল। ওরা বলেছে গোবেল বীচ যাচ্ছে, কিন্তু সেটা উল্টো দিক। আরও কিছু গল্প বলল, বিশ্বাস করতে পারলাম না।
মুখ কালো করে জিনা বলল, বার বার একই কথা! কত বার বলব, বাড়ি থেকে পালাইনি! আর দল বেঁধে পালাতে যাবই বা কেন?
তোমাদের বাবা-মায়ের সাথে আগে কথা বলি, জানা যাবে। ততক্ষণ এখানেই থাকতে হবে তোমাদের। গোলমাল করবে না। রিপোর্ট লিখতে বসব এখন।
চারজন লোক বসে চারটে ফর্ম পূরণ করতে লাগল। চুপ করে বেঞ্চে বসে। একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগল ছেলেমেয়েরা।
রাফি কোথায়? ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল রবিন।