আরে, দারুণ তো! রবিন বলল। এগুলো অবশ্য উপহার দেয়া যায়। কেরিআন্টি সাজিয়ে রাখতে পারবেন।
ক্রিসমাস ট্রি ভালুক দিয়ে সাজাতে দেখিনি আর কখনও! অবাক হয়ে বলল কিশোর।
আসলে, ডিক বলল। ট্রি সাজানোর জন্যে নয় এগুলো। ম্যাসকট হিসেবে ব্যবহার হয়। গাড়ির মধ্যে ঝুলিয়ে রাখে না লোকে, ওরকম। এই কিছুদিন আগেও এ রকম খেলনা ঝোলানোর ধুম পড়ে গিয়েছিল। এখন একটু কমে এসেছে। তবে এ রকম ভালুক জনপ্রিয় হয়ে গেছে বেশ, বিশেষ করে এদিকটায়। তাই আমার বস্ মিস্টার ফোকসন বেশি করে অর্ডার দিয়েছেন এবার। মনে করছেন বড়দিনের সময় বেশি বিক্রি হবে। লোকের তো ঠিকঠিকানা নেই, হয়তো ট্রিতেও নিয়ে গিয়ে ঝুলিয়ে দিতে পারে।
কিন্তু দিল তো অনেক দেরি করে, জিনা বলল। লোকের কি আর কেনার সময় আছে? কেনাকাটা যা করার করে ফেলেছে। কালকের আগে বেচে শেষ করতে পারবেন বলে মনে হয় না। অনেক আছে।
তিন ডজন। একেক বাক্সে এক ডজন করে, জানাল ডিক। অত ভাবনা নেই। আগে না হলেও পরে হবে। সুন্দর জিনিস। লোকে কিনবেই। বারোটার অর্ডার ইতিমধ্যেই এসে গেছে, হাসল সে। মিস্টার মরিস দিয়েছেন। তার মানে বারোটা বিক্রি হয়ে গেছে ধরে রাখা যায়। তার মেয়ে পলি বন্ধুদের নিয়ে একটা পার্টি দেবে। সেজন্যেই কিনছে। ক্রিসমাস পার্টি। ক্রিসমাস ট্রিতে লাগাবে এই ভালুক। যাই, ফোন করিগে তাকে। এসেছে যে খবরটা দিই।
জিনা হাসল। হ্যাঁ, পলি যে পার্টি দিচ্ছে জানি। আমাদেরকেও দাওয়াত করেছে। যাই বলেন, ভালুকগুলো কিন্তু সুন্দর। ট্রিতে ঝোলালে ভালই লাগবে। অন্যান্য সাজ আর আলোতে একেবারে ঝলমল করবে, যা সুন্দর রঙ!
নীল রঙের একটা ভালুক হাতে নিয়ে দেখতে লাগল রবিন। বাদামী কাঁচের চোখ যেন জ্যান্ত হয়ে আছে ওটার। ঝিক করে উঠছে আলো লাগলেই। নরম মখমলের শরীর। আদর করে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, বাহ, খুব মিষ্টি!
তার দিকে তাকিয়ে হাসল কিশোর। বলল, নিয়ে নাও। কেরিআন্টির পছন্দ হবে।
ভালুকটার দাম মিটিয়ে দিচ্ছে রবিন, এই সময় দোকানের একধারে ডন নামে একজনকে ডাকল কেউ।
কমে গেল একটা, হাতের বাক্সটা নামিয়ে রাখতে রাখতে বলল ডিক। মিস্টার মরিসকে বারোটা পুরো করে দিতে হলে আরেকটা বাক্স খুলতে হবে। থাক এখন। খোলার সময় নেই। পরে।
আমরা খুলে দেব? সাহায্য করতে চাইল জিনা।
না, না, লাগবে না। থ্যাংক ইউ। অসুবিধে হবে না। কিছু জরুরী কাজ আছে, সেগুলো সেরে নিই আগে। কয়েকটা ভালুককে শো-কেসেও সাজাতে হবে, লোকের নজর কাড়ার জন্যে। অনেক সময় আছে। কাল বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখব। গুডবাই।
তার পরদিন বিকেল চারটে। জমজমাট হয়ে উঠেছে ডক্টর মরিসের বাড়ির পার্টি। তার মেয়ে পলি, জিনার বয়েসী, খুব খাতির যত্ন করছে মেহমানদের। ক্রিসমাস ট্রির। চারপাশে জড়ো হয়েছে তার বন্ধুরা। অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস দিয়ে সাজানো হয়েছে গাছটা। চকচকে রঙিন কাগজের মোড়ক, সিল্কের ফিতে, কাগজের ফুল, ঘোট ঘোট রঙিন বালব, আর সাজানোর আরও নানা জিনিস যা যা পেরেছে, সব লাগিয়েছে এতে। এমনকি বারোটা রঙিন ভালুকও ঝুলছে গাছের ডালে।
বিরাট ঘরের এককোণে বিশাল এক টেবিল বোঝাই নানা রকম লোভনীয় খাবার। কোন কিছুর কমতি রাখেনি পলি। বন্ধুদেরকে খুশি করার জন্যে সব রকম চেষ্টা করেছে সে।
প্লেটে করে হাতে হাতে খাবার দেয়া হলো। ভীষণ ব্যস্ত হয়ে উঠল পলি। চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরছে, তদারকি করছে। এটা সেটা বাড়িয়ে দিচ্ছে। আরও খাবার নেয়ার জন্যে চাপাচাপি করছে। কেউ নিতে না চাইলে জোর করে তুলে দিচ্ছে তার প্লেটে।
খাওয়া দাওয়া শেষ হলে খেলার আয়োজন করল পলি। চমৎকার জমল মিউজিক্যাল চেয়ার। হৈ-হুঁল্লোড় আর হাসাহাসি চলল একনাগাড়ে।
তুমি ঠকিয়েছ, বব!
কে বলে রে! তুমি যে রবিনকে ধাক্কা মারলে সেটা কি?
না, আমি মারিনি! সে-ই বসতে পারেনি ঠিকমত!
বাইরে রাত নামছে। দেখতে দেখতে অন্ধকার হয়ে গেল। পরীর রাজ্যের পরীরানীর বাগান থেকে যেন তুলে আনা হয়েছে ক্রিসমাস ট্রিটা। এতই সুন্দর, এতই ঝলমলে।
এবার পুরস্কার দেয়া হবে, ঘোষণা করল পলি। ক্রিসমাস ট্রিতে ঝোলানো রয়েছে উপহার সামগ্রী, সেগুলো খুলে আনল সে। আরও নানা রকম জিনিস রয়েছে বাক্সে, টেবিলে স্তূপ করে রাখা। এক এক করে নাম ধরে ডাকতে শুরু করল পলি, ডায়না, এসো। এই দেখো, কি সুন্দর একটা পোশাক। নার্সের ইউনিফর্মের মত লাগে দেখতে, না?
খুব সুন্দর! এ রকমই একটা জিনিস চাইছিলাম, খুশি হয়ে বলল ডায়না।
মুসা আর জিনা পেল রোলার-স্কেট।
গুড! হেসে বলল জিনা। দুজনে এক জিনিস পেয়ে ভাল হলো। পাল্লা দিয়ে স্কেট করতে পারব।
কিশোর পেল বহু ফলাওয়ালা একটা ছুরি। রবিনকে দেয়া হলো চামড়ার একটা চমৎকার নোটবুক। রাফিকে পর্যন্ত দেয়া হলো একটা পুরস্কার। রবারের একটা হাড়, গলায় ঝোলানোর জন্যে, দেখতে একেবারে আসল হাড়ের মতই লাগে। কামড় বসিয়ে দিল রাফি। যখন দেখল রবার, ফেলে দিল মুখ থেকে।
তারপর হঠাৎই দপ করে নিভে গেল সমস্ত বাতি। আলোয় ঝলমল ঘরটা অন্ধকার হয়ে গেল। চেঁচিয়ে উঠল একটা ছোট মেয়ে। তার পর পরই আরও কয়েকজন চেঁচাল।
ভয় পেও না, শান্ত কণ্ঠে বলল কিশোর। ভয়ের কিছু নেই নিশ্চয় ফিউজ কেটে গেছে। ছোটাছুটি কোরো না। গায়ের ওপর পড়বে জিনিসপত্র ফেলে দেবে। ফিউজটা লাগিয়ে দিলেই আলো জ্বলে যাবে আবার