দেখো দেখো! রবিন বলে উঠল। সেই মহিলা। যে ছেলের জন্যে ভালুকটা নিতে চেয়েছিল আমার কাছ থেকে।
তাই তো!
ভালমত খেয়াল করে দেখতেই বাকি তিনজনও চিনতে পারল মহিলাকে।
একটা শাবল নিয়ে কাজ করে চলেছে ডন। মেঝে থেকে উঠে আসছে তাল তাল মাটি।
ওখানেই তো থাকার কথা! ওই খানেই! মারভিন বলল। নকশার ওপর থেকে চোখই সরাচ্ছে না। ডন, চালিয়ে যাও।
কিছুক্ষণ পর মুখ মোছার জন্যে থামল ডন। দরদর করে ঘাম ঝরছে মুখ বেয়ে।
আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন? রেগে গেল উন। কথাই তো বলে চলেছেন খালি। এক-আধ বার খুঁড়লে হয়টা কি? টাকা তো আর কম নেবেন না! ইস, মাটি তো না, যেন সিমেন্ট!
মনে হলো রেগে যাবে মারভিন। কিন্তু রাগল না। মহিলার দিকে ফিরে বলল, দেখি, আলোটা আরেকটু এদিকে সরাও তো, ইসাবেল।
একটাতে হবে না, বলে হ্যারিকেনটা মাটিতে রেখে দিল ইসাবেল। আরেকটা হ্যারিকেন বের করে ধরাল। ততক্ষণে শাবল নিয়ে মাটি কোপাতে শুরু করেছে মারভিন। কিছুক্ষণ কাজ করে ফিরিয়ে দিল আবার ডনকে।
পালা করে দুজনে মিলে মাটি কুপিয়ে চলল। সেলারের পুরো পশ্চিম কোণটা যেন খুড়ে তুলে ফেলবে।
ওপরে, ভেনটিলেটরের কাছে দাঁড়িয়ে দেখছে গোয়েন্দারা। এতই মগ্ন হয়ে আছে, ঠাণ্ডার কথাও ভুলে গেল। কখন যে ঠাণ্ডা বাতাস ছাড়তে শুরু করেছে টের পেল না। কিছুই না পেয়ে বিরক্ত হয়ে ডন যখন শাবলটা ছুঁড়ে ফেলল, হাসি চাপতে কষ্ট হলো ওদের।
কোন চিহ্নই তো নেই! বলল সে। আমি আর পারছি না! হোরেস নাকি ট্রাঙ্কটা লুকানোর পর চিহ্ন দিয়ে রেখেছে। কই?
আরও খুঁড়তে হবে, মারভিন বলল। নকশায় লেখা রয়েছে এক ফুট। হাতের লেখা তো। সেভেনকেও ওয়ানের মত লাগে অনেক সময় লেখার দোষে।
তারমানে সাত ফুট খুঁড়তে হবে! ঘাবড়ে গেল ডন। এত নিচে রাখতে গেল কেন? পাগলামি, স্রেফ পাগলামি!
যা-ই হোক, খুঁড়তে তো হবে, ইসাবেল বলল। তাড়াহুড়ো নেই আমাদের। আস্তে আস্তে খোড়ো।
তা তো বলবেই! ফুঁসে উঠল ডন। তোমাকে তো আর পরিশ্রম করতে হচ্ছে না!
কথাটা এড়িয়ে গেল ইসাবেল। বলল, দুটো শাবল আছে। একজন এজন করে না খুঁড়ে দুজনে মিলে একবারেই খোড়ো। সহজও হবে, তাড়াতাড়িও।
বুদ্ধি-পরামর্শ ওরকম অনেকেই দিতে পারে। যে করে সে বোঝে ঠেলা! দুজনে যে খুঁড়ব, যদি কারও মাথায় লেগে যায়? একজন একজন করেই করতে হবে।
সোজা হলো কিশোর। সঙ্গীদের ইশারা করল। যেমন এসেছিল তেমনি নিঃশব্দে আবার ভেনটিলেটরের কাছ থেকে পিছাতে শুরু করল ওরা।
এখানে থাকলে বরফ হয়ে যাব, কিশোর বলল। যা ঠাণ্ডা পড়ছে! নকল নকশা দিয়ে ছবিগুলো ওরা খুঁজে পাবে না। চলো, কোথাও গিয়ে বসে থাকি। ওরা বেরোক। চলে গেলে তারপর ঢুকব আমরা। ছবিগুলো বের করার চেষ্টা করব।
ঠিক আছে, মুসা বলল। কিন্তু বসবটা কোথায়? বাইরে থাকলে সত্যিই মরে যাব!
চোরের গাড়িতে বসব, নির্দ্বিধায় বলে দিল কিশোর। আর তো কোন জায়গা। দেখছি না। বাগানের গেটের কাছে গাছের নিচে গাড়িটা দেখেছি। দরজায় তালা না থাকলেই বাঁচি…।
তালা লাগানো নেই। প্রয়োজন বোধ করেনি চোরেরা। ওরা কি আর ভাবতে পেরেছে এই রাতের বেলা এসে কয়েকটা ছেলেমেয়ে ওগুলোতে ঠাই নেবে ঠাণ্ডার কবল থেকে বাঁচার জন্যে?
গাড়িতে উঠে বসল সবাই, রাফি সহ। ঠাণ্ডা থেকে রেহাই মিলল। চোরের ওপর বাটপাড়ি করতে পেরে খুশি লাগছে ওদের।
ঘুমাতে চাও? আরাম করে সীটে হেলান দিয়ে বলল জিনা। ঘুমিয়ে নিতে পারো। আমি পাহারায় থাকি।
রবিনের আপত্তি নেই। ঢুলতে শুরু করল। কিশোর আর মুসাও ঘুমিয়ে পড়ল। কিন্তু মনে হলো, চোখ বোজার সঙ্গে সঙ্গেই ওদেরকে জাগিয়ে দিল জিনা। কিশোরের কাঁধ ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল, এই, জলদি ওঠো! ওরা আসছে!
চোখের পলকে গাড়ি থেকে বেরিয়ে গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল ওরা। ডন তার দুই সঙ্গীকে আসতে দেখল। মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে আছে তিনজনেরই। গরম গরম কথা বলছে।
হোরেস আমাদেরকে ফাঁকি দিয়েছে! ডন বলল।
না, তা হতে পারে না, মানতে পারল না মারভিন। কেন ফাঁকি দিতে যাবে? কাল রাতে আবার আসব। দরকার হলে পুরো সেলারটাই খুঁড়ে ফেলব।
ইস, কি শীতরে বাবা! ইসাবেল বলল।
গাড়িতে উঠে চলে গেল লোকগুলো।
যাক, গেল, কিশোর বলল। খেয়াল করেছ, শাবল-টাবলগুলো আনেনি। খালি হাতে বেরিয়ে এসেছে। তারমানে ওগুলো রয়ে গেছে সেলারে। আমাদের কাজ সহজ করে দিয়ে গেল।
সহজ? জিনা প্রশ্ন করল, ঢুকতে পারলে সহজ। ঢোকাটাই তো আসল সমস্যা।
পথ একটা ঠিকই বের করে ফেলব, হাল ছাড়তে রাজি নয় মুসা।
কিন্তু সেই একই ব্যাপার, দিনের মতই। দরজা জানালা সব বন্ধ। ঢোকার কোন পথ নেই। ভেনটিলেটর দিয়ে ঢাকা যেত, যদি শক্ত গ্রিল না থাকত। আর মাঝে যে ফাঁক রয়েছে, তা দিয়ে ঢোকা অসম্ভব।
দূর! হতাশ হয়ে গেল মুসা। হবে না! ফিরে যেতে হবে দেখছি!
ঠিক এই সময় একটা জিনিসের ওপর চোখ পড়ল রবিনের। চাঁদের আলোয় চকচক করছে। খোয়া বিছানো পথের ওপর পড়ে রয়েছে। নিচু হয়ে তুলে নিল জিনিসটা। একটা চাবি!
আরি! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল মুসা। চাবি! মনে হয় সামনের দরজার!
এটা এখানে এল কিভাবে? জিনার প্রশ্ন।
বড়ই কাকতালীয় ব্যাপার! চোরগুলো এনেছিল হয়তো, কিশোর বলল। পড়ে গেছে কোনভাবে। যাক, ভালই হলো। ঢোকাটা হয়ে গেল আমাদের।