বাগানে ঢোকার গেটটার মত বাড়ির দরজা খোলা নয়। এখানে তালা দেয়া।
হলো না, নিরাশ হয়ে বলল মুসা। নিচতলার সমস্ত জানালা-দরজা ঠেলেঠুলে দেখল কোনটা খোলা আছে কিনা। মাথা নাড়ল, নাহ, আটকে রেখে গেছে! ঢোকা আর হলো না!
এক হিসেবে ভালই হলো, জিনা বলল। ঢুকতেও পারব না, ধরাও পড়ব না, তাতে কেউ বলতেও পারবে না বেআইনী ভাবে ঢুকেছি।
ওই আঙুর ফল টকের মত আর কি, ফোড়ন কাটল রবিন।
কিশোর কিছু বলছে না। নীরবে তাকিয়ে রয়েছে একেবারে মাটির কাছাকাছি। দুটো ভেনটিলেটরের গ্রিলের দিকে। লম্বা, সরু জানালার মত ফোকর, কাঁচটাচ নেই। এমন ভাবে তৈরি হয়েছে যাতে বাতাসের সাথে সাথে কিছু আলোও দিতে পারে মাটির তলার ঘরে।
আমি শিওর, ছবিগুলো থাকলে সেলারেই আছে, বলল সে। ইস, যদি কোনভাবে ঢুকতে পারতাম! নকশাটার সাহায্যে বের করতে পারতাম ছবিগুলো।
অনেক চেষ্টা করেও ঢোকা সম্ভব হলো না। আর কিছু করার নেই। বাড়ির পথ। ধরল ওরা।
তারপর সময় যেন আর কাটে না। সাংঘাতিক দীর্ঘ লাগছে। যেন সন্ধ্যা আর হবেই না সেদিন। আর যদি হয়ও, কেরিআন্টি কিংবা পারকার আংকেলের চোখ এড়িয়ে বাড়ি থেকে বেরোতে পারবে কিনা তাতেও সন্দেহ আছে না পারলে, এত চেষ্টা, এত পরিশ্রম, সব বিফল।
কয়েক বাড়ি থেকে দাওয়াত এসেছে, নিউ ইয়ার ইভের পার্টিতে যাওয়ার জন্যে। কিন্তু রাজি হলেন না জিনার আব্বা আম্মা। দুজন আত্মীয় বেড়াতে আসছেন সন্ধ্যায়। জিনার দূর সম্পর্কের চাচা-চাচী। তাদেরকে ফেলে দাওয়াতে যাওয়া যায় না।
সন্ধ্যা হলো। মেহমানরা এলেন। রাতের খাওয়া শেষ হলো। তার পরেও অনেক সময় বাকি। বড়রা সিটিং রূমে তাস খেলতে বসলেন।
ভালই হলো, কিশোর বলল। তাসে একবার ডুবে গেলে আর কোনদিকে খেয়াল থাকবে না। আর টেলিভিশন তো রয়েছেই। মাঝরাতের আগে আর উঠবে না কেউ। বাতাসের মত স্বাধীন আমরা। যেখানে খুশি চলে যেতে পারি, আনন্দে শিস দিতে শুরু করল সে।
এত খুশি হয়ো না, রবিন অতটা নিশ্চিন্ত হতে পারছে না। যদি কোন কারণে উঠে আসেন আন্টি? হাজারটা কারণ থাকতে পারে ওঠার। আমরা ঘুমিয়েছি কিনা সেটাই যদি দেখতে আসেন?
তাহলে আর কি, লক্ষটা কৈফিয়ত দিতে হবে। তবে এ ছাড়া আর কোন উপায় নেই। ঝুঁকি নিতেই হবে। এতখানি এগোনোর পর শুধু কৈফিয়তের ভয়ে তো আর ঘরে আটকে থাকতে পারি না।
বেরিয়ে পড়ল ওরা। ক্যারিয়ারে অনেক বড় একটা ঝুড়ি বাধল জিনা, রাফিকে বয়ে নেয়ার জন্যে। কাদার মধ্যে দৌড়ালে অনেক কষ্ট করতে হবে বেচারাকে।
ঝুড়িতে তোলা হলো রাফিকে। এ ভাবে চলার অভ্যাস আছে তার। কাজেই গোলমাল করল না, যে ভাবে রাখা হলো, চুপ করে গুটিসুটি হয়ে রইল ঝুড়ির মধ্যে।
রওনা হলো গোয়েন্দারা। যত দ্রুত সম্ভব প্যাড়াল করতে লাগল, সময় মত ওখানে পৌঁছানোর জন্যে। আত্মবিশ্বাসের অভাব নেই কিশোরের। ভয় তেমন করছে না। তবে পিংক হাউসে পৌঁছে কি দেখবে, আন্দাজও করতে পারছে না।
যে কাজে চলেছে, তাতে সফল হবে কিনা, এ ব্যাপারে সবারই সন্দেহ আছে। লুকিয়ে শোনা কয়েকটা কথার ওপর নির্ভর করে চলে এসেছে ওরা। লোকগুলো আদৌ পিংক হাউসে আসবে কিনা, তাই বা কে জানে? আগের দিন কথা বলার পর অনেক সময় পেরিয়েছে, ইতিমধ্যে অনেক সময় পেয়েছে ওরা মত বদলানোর।
আসবে কিনা কে জানে? ভাবনাটা প্রকাশই করে ফেলল রবিন।
জিনারও একই প্রশ্ন, তবে সেটা বলল না। আরেকটা ব্যাপারে সন্দেহ আছে। তার। নকশাটা সত্যিই ছবিগুলোর কাছে নিয়ে যাবে তো?
মাঝে মাঝেই পকেটে চাপড় দিচ্ছে কিশোর। নিশ্চিত হয়ে নিচ্ছে, নকশাটা আছে কিনা। তার ভয়, কোন ভাবে খোয়া না যায়। পকেট থেকে পড়েও যেতে পারে। হারানোর ভয়ে কুকুরের ঘর থেকে বের করেছে ওটা বেরোনোর ঠিক আগের মুহূর্তে। নকল নকশা একে দেয়ার বুদ্ধিটা করেছিল বলে খুশি এখন সে। ঠিক কাজটাই করেছে।
পিংক হাউস থেকে একটু দূরে সাইকেল রেখে হেঁটে চলল ওরা। খুব সাবধান রইল। কোন রকম শব্দ করল না।
গেটের কাছে পৌঁছেই থমকে দাঁড়াল কিশোর। আগে আগে হাঁটছিল সে। তাহলে তার অনুমানই ঠিক! গেট খোলা। অথচ দুপুরে নিজের হাতে লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছিল পাল্লাটা। লোকগুলো যে এসেছে, তার আরও প্রমাণ আছে। ম্লান আলো দেখা যাচ্ছে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে। একটা ভেনটিলেটরের ভেতর থেকে আসছে।
দেখলে তো! ফিসফিস করে বলল কিশোর, খুশি খুশি গলায়। আমার কথাই ঠিক!
.
১০.
অন্ধকারে গা ঢেকে রয়েছে গোয়েন্দারা।
ভাল করে তাকালেই শুধু চোখে পড়বে পাঁচটা ছায়ামূর্তি-চারটে মানুষের, আর একটা কুকুরের।
নিঃশব্দে ভেলটিলেটরের কাছে এসে থামল ওরা। ফাঁক দিয়ে নিচে তাকাল। গ্রিলের মাঝে যথেষ্ট ফাঁক। মুখ ঢুকিয়ে দেখতে তেমন অসুবিধে হয় না। সেলার, অর্থাৎ মাটির নিচের ঘরের বেশ অনেকখানিই চোখে পড়ে। ডনও আছে, তার সঙ্গী মারভিনও আছে। সেলারের মেঝেটা কাঁচা। পশ্চিমের কোণে মাটি খুঁড়ছে ডন, আর নকশা দেখে দেখে নির্দেশ দিচ্ছে মারভিন। নকল নকশা, যেটা এঁকে দিয়েছে কিশোর। তৃতীয় আরও একজন রয়েছে সেখানে, হাতে একটা বড় হ্যারিকেন। হোরেস ট্রিমেইনি জেলে যাওয়ার পর নিশ্চয় বাড়ির বৈদ্যুতিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে, অনুমান করল কিশোর।
গলা বাড়িয়ে দিল মুসা।