সত্যি কথা খানিকটা বলে দেয়া উচিত মনে করল মুসা। দেখবে কোত্থেকে? হাসল সে। এদিকে আমরা এলে তো। প্রথম এসেছি কাল। তখনই শুনেছি, একটা লোক বলছে পিংক হাউসের কথা। নামটা অদ্ভুত। সেজন্যেই কৌতূহল হচ্ছে আমাদের। ওই রঙের বাড়ি নিশ্চয় খুব একটা নেই। ওটার সম্পর্কে জানার খুব ইচ্ছে আমাদের।
বেশ বড় একটা বাড়ি, হ্যারি জানাল। পুরানো। লাল রঙের। সেজন্যেই ওরকম নাম হয়েছে। তবে বাড়িটার অনেক বদনাম। ওটার মালিক হোরেস ট্রিমেইনির গ্রেপ্তারের পর থেকেই।
উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে গোয়েন্দাদের মুখচোখ পরস্পরের দিকে তাকাতে লাগল ওরা। দ্রুত হয়ে গেছে হৃৎপিণ্ডের গতি। বুঝতে পারছে, তদন্তে অনেক এগিয়ে গেছে।
খাবারের অর্ডার দিল কিশোর।
ধূমায়িত কোকার মগ নিয়ে এল হ্যারি। আর বড় একটা কেকের অর্ধেকটা। সেগুলো টেবিলে নামিয়ে রেখে সাজিয়ে দিল।
আগের আলোচনাটা আবার চালিয়ে গেল কিশোর। জিজ্ঞেস করল, হোরেস ট্রিমেইনিকে গ্রেপ্তার করছে কেন?
সে এক মজার গল্প। শোনোনি? সত্যি? কেন, চোরাই ছবিগুলোর কথা শোনোনি?
পেইন্টিং?
হ্যাঁ, পেইন্টিং।
মাথা নাড়ল কিশোর। মুসা আর জিনাও নাড়ল। রবিন চুপ করে আছে। অবাক হয়েছে অন্য তিনজনের মতই।
ও। শোনো তাহলে, বলতে লাগল হ্যারি। বছরখানেক আগে লন্ডনের এক আর্ট গ্যালারি থেকে চুরি যায় ছবিগুলো। খুঁজতে খুঁজতে পুলিশ এসে ধর। হোরেসকে। চার বছরের জেল হয়ে যায়। তাকে দোষী প্রমাণ করতে পেরেছে বটে পুলিশ, তবে ছবিগুলো বের করতে পারেনি। কিছুতেই কথা বের করা যায়নি হোরেসের মুখ থেকে। তারপর থেকে ওই বাড়িটাতে আর কেউ বাস করে না।
বাড়িটা কোথায়? রবিন জিজ্ঞেস করল।
হ্যারি জানাল, বাড়িটা মিডলটন আর গোবেল বীচের মাঝে একটা সাধারণ রাস্তার ধারে। এটাই জানতে চেয়েছিল গোয়েন্দারা। কোকা শেষ করে উঠল ওরা। হ্যারিকে গুডবাই জানিয়ে বেরিয়ে এল কাফে থেকে।
দুপুরের খাওয়ার অনেক দেরি, কিশোর বলল। সময় আছে হাতে। ইচ্ছে করলে এখুনি ঘুরে দেখে যাওয়া যায়। এখন পেয়ে গেলে বিকেলে আর আসতে হবে না। মিডলটনে যত কম লোকে আমাদেরকে দেখে ততই ভাল। ডন কিংবা মারভিনের সামনে পড়তে চাই না কিছুতেই।
চলতে চলতে রবিন জিজ্ঞেস করল, কিশোর, এই হোরেস লোকটা ছবিগুলো কি তার বাড়িতেই লুকিয়ে রেখেছে? কি মনে হয় তোমার? নিশ্চয় গ্রেপ্তার যে হবে সেটা বুঝতে পেরেছিল। তাড়াতাড়ি লুকিয়ে ফেলেছে। এগুলোর কথাই বলছিল ডন আর মারভিন।
মুসাও রবিনের সঙ্গে একমত। কিশোর জবাব দেয়ার আগেই বলে উঠল, আমারও তাই মনে হয়। পুলিশ নিশ্চয় খোঁজা বাকি রাখেনি। আর সেটা ভাল করেই জানত হোরেস। কাজেই এমন জায়গায় লুকিয়েছে, যেখান থেকে খুঁজে বের করা কঠিন। কোথায় লুকিয়েছে সেটা বলে যেতে পারেনি সঙ্গীদের। তবে জেলে ঢুকে যোগাযোগ করেছে কোনভাবে। তারপর খেলনার ভেতরে নকশা ভরে সেটা পাচারের ব্যবস্থা করেছে।
আর জেল থেকে বেরিয়ে, জিনা যোগ করল। অবশ্যই তার ভাগটা চাইবে। ছবি বিক্রির টাকার। টাকা নিশ্চয় অনেক পাবে। বাকি জীবন আরামে কাটিয়ে দিতে পারবে।
সেটা আর হতে দিচ্ছি না আমরা, কিশোর বলল।
যেন তার কথার সমর্থনেই বলে উঠল রাফি, ঘাউ!
হেসে উঠল মুসা। শুনলে তো রাফির কথা। ও বলতে চাইছে, হোরেস মিয়া, ওই টাকা জিন্দেগিতেও তুমি পাবে না। আর পায়ের ওপর পা তুলে দিয়ে পোলাও কোরমা খাওয়াও চলবে না। তোমাকে আবার জেলেই ঢুকতে হবে, শুকনো রুটি খাওয়ার জন্যে।
অতটা জোর দিও না, জিনা বলল। বলা যায় না কি হয়। যে লোকের পেট থেকে পুলিশ কথা আদায় করতে পারেনি সে নিশ্চয় সাধারণ লোক নয়। তাকে এত ছোট করে দেখা উচিত না। আরেকটা কথা হয়তো জানো, জেলে কোন কয়েদী যদি ভাল ভাবে থাকে, ভাল আচরণ করে, তাকে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মুক্তি দেয়া হয়। বলা যায় না, হোরেসকেও তেমনি ভাবে ছেড়ে দেয়া হতে পারে।
দিক না। আবার ঢোকাবে।
যদি চোরাই মাল সহ ধরতে পারে।
পারবে…
মুসা আর জিনার তর্কাতর্কিতে বাধা দিল কিশোর, ওই যে পিংক হাউস!
থেমে গেল পাঁচজনেই, রাফি পর্যন্ত। মুখ তুলে তাকিয়ে রয়েছে লাল বাড়িটার দিকে। সত্যিই লাল! দুই-আড়াইশো বছরের পুরানো। অর্ধেক কাঠ, অর্ধেক ইট সুরকি দিয়ে তৈরি। লাল রঙ করা হয়েছে। জানালার কাঠের শাটারগুলোও লাল। খড়-পাতা দিয়ে বানানো চালা। সামনের দরজায় উঠতে হয় সিঁড়ি বেয়ে। নির্জন, নিঃসঙ্গ। আশপাশে আর কোন বাড়িঘর নেই। বিশাল বাগান রয়েছে চারপাশ ঘিরে। তবে সেটাকে এখন আর বাগান বলা যাবে না। অযত্ন অবহেলায় জঙ্গল হয়ে গেছে।
চলো, ঢুকে দেখি, প্রস্তাব দিল মুসা। ধারে কাছে কেউ আছে বলে মনে হয় না। ভেতরে কি আছে দেখতে চাইলে এটাই সুযোগ। এখন দেখে রাখলে রাতে। এলে সুবিধে হবে।
কথাটা মন্দ বলেনি মুসা। কিশোরের পছন্দ হলো। গেটে ঠেলা দিল সে। কজায় এমন ভাবে জং পড়েছে, খুলতে জোর লাগল। কিচকিচ করে আর্তনাদ করে উঠল। তবে খুলল।
খুশি হয়ে উঠল কিশোর। তালা নেই। বাচলাম।
পথের পাশের খাদে সাইকেলগুলো লুকাল ওরা। তারপর সারি বেঁধে গেট দিয়ে ঢুকে পড়ল ভেতরে। খোয়া বিছানো পথ ধরে এগোল বাড়ির দিকে। আগে আগে হাটছে রাফি। নাক উঁচু করে বাতাস শুঁকছে। সন্দেহজনক কিছুর গন্ধ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেবে।