বুঝতে পারছি না, মাথা নাড়ল মুসা। তবে দামী কোন কিছু। বলল না, দেশ থেকে বের করে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করলে ভাল টাকা পাবে। দামী জিনিসই।
তিন ভাগ করবে সেই টাকা, জিনা বলল। একটা ভাগ দেবে জেলের লোকটাকে। হোরেস।
আমার মনে হয় ও-ই নেতা। যদিও এখন জেলে রয়েছে। প্ল্যানট্যান সব সে-ই করেছে, শুনে সে-রকমই মনে হলো। নকশাটা সে এঁকেছে। আর সেটা পাচারের ব্যবস্থা করেছে …
খেলনা ভালুকের ভেতরে ভরে! বুঝে ফেলল রবিন।
হ্যাঁ। একটা ব্যাপার অবশ্য এখনও পরিষ্কার হয়নি। জেলে ওরকম একটা খেলনা কি ভাবে পেল হোরেস? সেটা আবার বাক্সে ভরে অন্য খেলনাগুলোর সঙ্গেই বা পাঠাল কিভাবে?
আমি জানি! বলে উঠল মুসা। কপালে টোকা দিয়ে বলল, এটা আজ ভালই খেলছে মনে হয়!
হাসল কিশোর। বলে ফেলো।
জেলে কাজ করতে হয় কয়েদীদের। অনেক রকম কাজ। শ্রমিকের কাজই বেশি। কাপড় সেলাই থেকে শুরু করে মেইল ব্যাগ বানানো পর্যন্ত সব করে। খেলনাও বানায়। শুনেছি, খেলনা বিক্রি করেও জেলখানার ভাল আয় হয়। জেলে হোরেসের কাজ খেলনা বানানো। কিংবা ইচ্ছে করেই কাজটা নিয়েছে সে, নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে। যাতে নকশা এঁকে সেটা একটা খেলনা ভালুকের ভেতর ভরে দিতে পারে সহজেই। কোন ভাবে খোঁজ নিয়ে জেনেছে, কোন দোকানে। জিনিসগুলো চালান যাবে। সেটা জেনে নেয়াটা কঠিন কাজ নয়। জেনে, খবর দিয়েছে তার বন্ধুদের, কোত্থেকে কিভাবে জোগাড় করতে হবে নকশাটা।
হ্যাঁ, ঠিক বলেছ! তুড়ি বাজাল কিশোর। এটাই একমাত্র ব্যাখ্যা। কি ভারে পাঠিয়েছে জানার জন্যে মনটা খুঁতখুঁত করছিল। যদিও সেটা এখন জেনে আর লাভ নেই, দরকারও নেই আমাদের। এখন যে কাজটা করতে হবে, তা হলো। নকশার মানে বের করে জিনিসগুলো খুঁজে বের করা! লোকগুলোকে ঠেকানো। মারভিন আর ডন কাল রাতে পিংক হাউসে দেখা করবে বলেছে। হয়তো ওখানেই রয়েছে জিনিসগুলো। পিংক হাউসটা কোথায়, খুঁজে বের করতে হবে আগে।
কোথায় যে জায়গাটা, কিছুই বলতে পারব না, জিনা বলল। নামই শুনিনি। এই এলাকায় না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে হলে ভাল হত, সুবিধে হত আমাদের জন্যে। সময়টা ভাল বেছেছে, তাই না? কাল নিউ ইয়ারস ইভ। রাত নটায় বাইরে বেশি লোক বেরোবে না। লোকে হয় বাড়িতে থাকবে, নয়তো পার্টিতে, নিউ ইয়ারের অপেক্ষায়।
আমরা বাদে! ঘোষণা করে দিল কিশোর। রাতের খাওয়া হয়ে গেলে, কেরিআন্টিকে বলব, আমরা স্টোররূমে খেলতে যাচ্ছি। ঘুমাতে দেরি হবে।
না বললেও কিছু এসে যায় না, জিনা বলল। আব্বা তো খেয়ে গিয়ে ঢুকবে স্টাডিতে। আম্মা টিভি দেখবে। আমরা সেই সুযোগে বেরিয়ে যাব। বলা যায় না, দাওয়াতও পেয়ে যেতে পারে, পার্টির। তাহলে তো কাজের কাজই হবে নিশ্চিন্তে বেরিয়ে পড়ব আমরা…
পিংক হাউস শিকারে, হেসে জিনার কথাটা শেষ করে দিল রবিন।
তা তো বেরোব, মুসা বলল। কিন্তু জানিই তো না ওটা কোথায়
তা জানা যাবে, বলল কিশোর। সময় আছে কালকের সারাটা দিনই পড়ে আছে। যেতে যেতে তো সেই রাত নটা!
কপাল আমাদের ভালই বলতে হবে, জিনা বলল সব কিছুই কেবল পক্ষে যাচ্ছে। যেন আমাদের ইচ্ছেমতই ঘটছে সব আশা করি পিংক হাউসটাও পেয়ে যাব। কি বলিস, রাফি?
গররর! বিজ্ঞের ভঙ্গিতে জবাব দিল রাফি
.
০৯.
পরদিন সকালে আবার মিডলটনে এল গোয়েন্দারা। কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। সাইকেল চালানোটা মোটেও আরামদায়ক হলো না। গায়ে পৌঁছে খেয়াল হলো, তদন্তটা কি করে চালাবে, আলোচনা করে ঠিক করে আসেনি। খোঁজ করতে গেলে যদি কোনভাবে টের পেয়ে যায় ডন? তাহলে এত দিনকার সব পরিশ্রম শেষ।
তবে বুদ্ধি একটা বের করে ফেলল কিশোর। চলো, ওই কাফেটায় ঢুকি। গ্র্যান্ড কাফে বাদে আরেকটা যেটা আছে সেটার কথা বলল সে। ওটার নাম ব্ল্যাক। ক্যাট, দেখতে পাচ্ছে। ঠাণ্ডা লাগছে। গরম গরম কোকা কিনে খেতে চাইলে কেউ সন্দেহ করবে না। তখন কায়দা করে জেনে নেয়ার চেষ্টা করব, পিংক হাউসটা কোথায়।
কাফেতে এসে ঢুকল গোয়েন্দারা। একটা টেবিল বেছে বসে পড়ল। সকালের এই সময়টায় খরিদ্দারের ভিড় নেই। সুন্দর চুলওয়ালা একটা ছেলে ওয়েইটারের কাজ করছে। হাসি হাসি মুখ। তার নাম হ্যারি। ব্ল্যাক ক্যাটের মালিক ছেলেটার বাবা।
অর্ডার নিতে এগিয়ে এল হ্যারি। আদর করে রাফির মাথা চাপড়ে দিয়ে বলল, বাহ, বেশ সুন্দর কুকুর তো।
খুশি হলো রাফি। সেই সাথে জিনা। হ্যাঁ, বলল সে। আর খুব সাহস! বুদ্ধিও আছে। ঘরে বসে থাকার বান্দাই সে নয়। ওই যে কিছু কিছু কুকুর থাকে না, খালি ড্রইং রুমে বসে থাকে।
তা যে নয়, সে তো দেখতেই পাচ্ছি, হেসে বলল ছেলেটা। কথায় কথায় হাসে। ওর চেহারাই বলে, গলায় লাল ফিতে বেঁধে কোলে বসে থাকতে রাজি নয়।
সুযোগ পেয়ে গেল কিশোর। পিংক শব্দটা বলার এইই উপযুক্ত সময়, রঙের কথা যখন উঠলই। না, সহ্যই করতে পারে না অলস হয়ে বসে থাকা, বলল সে। তবে ফিতে পছন্দ করে রাফি। একবার পিংক একটা রিবন বেঁধে দিয়েছিলাম গলায়। সেটা পরে সৈকতে তার সে-কি নাচানাচি। রবিন, তোমার মনে আছে? পিংক রিবন। পিংক, বুঝলে তো? ওই পিংক হাউসের মত।
আন্দাজে ঢিল ছুঁড়েছে কিশোর। লাগবেই, আশা করেনি। তবে লাগল।
ভুরু কুঁচকে হ্যারি বলল, পিংক হাউসের নামও জানো! অবাক হয়েছে। কি করে জানলে? এই এলাকায় থাকো না তোমরা, বুঝতে পারছি। আগে কখনও দেখিনি।