কিশোরের কথামতই কাজ করল রবিন, জিনা আর মুসা। তার উদ্দেশ্য বুঝতে পারছে না। কি করতে চাইছে? প্রশ্ন করার সময় নেই। অনেক ঘুরে রাস্তা। পেরোল ওরা।
কোন বিষয় নিয়ে গভীর আলোচনায় মগ্ন লোকগুলো। কোন দিকেই তাকাচ্ছে না।
এবার ওই কোণায় যেতে হবে, দেখাল কিশোর। তারপর ওই গলিটা ধরে চলে যাব কাফের কাছে। গলি আর হাই স্ট্রীটের মোড়ে রয়েছে কাফেটা তখনি দেখেছি সেজন্যেই যেতে চাইছি ওখানে।
কোণের কাছে চলে এল ওরা। বাড়িটার কোণ ঘুরলেই এখন ডন আর অন্য লোকটাকে দেখা যাবে। তবে দেখার প্রয়োজন নেই, ওদের কথা শুনতে পেলেই হয়। শোনা যাচ্ছে।
ঠিক আছে বলছ? ঘোঁৎ-ঘোঁৎ করে বলল বেঁটে লোকটা রেগে গেছে মনে হয়। শুরুতেই সব গোলমাল করে না ফেললে…
আমার দোষ নয়, মারভিন। তীক্ষ্ণ শোনাল ডনের গলা। ঠিকই বলেছে টেড, ইঁদুরের মত চিচিই করে।
আস্তে! শুনে ফেলবে! এদিকে এসো। বেঁটে লোকটা বলল।
দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ফেলল গোয়েন্দারা। নিরাশ হয়েছে। এত কষ্ট করে এখানে এসেও লাভ হলো না। সরে যাচ্ছে লোকগুলো।
চলো, পিছু নিই, মুসা বলল। কি বলে শুনতে হবে।
ভাগ্য আরেকবার গোয়েন্দাদের পক্ষ নিল। এমন একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়াল লোক দুজন, ওদের কথা শুনতে পেল ওরা। তবে আগের জায়গা থেকে সরে যেতে হলো অবশ্যই। নির্জন এক টুকরো পতিত জায়গা। একপাশে বেড়া।
আরেক পাশে বাড়ি। কাজেই লুকাতে অসুবিধে হলো না ওদের। ডন সিগারেট ধরাল। তার সঙ্গী ধরাল পাইপ। আবার কথা বলতে শুরু করল।
বেড়ার আড়ালে ঘাপটি মেরে শুনতে লাগল গোয়েন্দারা। আগের জায়গা থেকে লোকগুলো সরে আসায় বরং ভালই হয়েছে। এখন ওদের কথা আরও স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। …এ সব বলেছি আমি, মারভিন, ডন বলছে। সুবিধে করতে পারিনি। আর তাতে আমার দোষটা কোথায়? কি করে জানব জিনিসগুলো আসতে এত দেরি হবে? ওগুলো আসার আগেই আমার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল ওখানে।
বেশ, ধরলাম সেটা ব্যাড লাক। তোমার কাজ শেষ হওয়ার আর সময় পেল না …যে কাজটা পানির মত সহজে সেরে ফেলা যেত, তার জন্যে ঝুঁকি নিতে হলো, তালা ভেঙে ঢুকতে হলো-সবই বুঝলাম, তারপরও…
যা-ই করে থাকি, কাজটা তো হলো। এটাই আসল কথা। নকশাটা দরকার। ছিল আপনার, পেয়েছেন। মালও পেয়ে যাব শীঘি, যদি নকশার নির্দেশমত এগোতে পারি। তারপর আমাদের কাজ হবে ওগুলো দেশ থেকে বের করে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেয়া। ভাল লাভ হবে।
হোরেসের ভাগ দিতে হবে, ভুলো না। জেল থেকে বেরোবেই। তখন তার পাওনা মিটিয়ে দিতে হবে আমাদের।
ফন্দিটা ভালই করেছিল। নকশাটা ইসের মধ্যে ভরে…
ইসেটা যে কিসে তা আর শোনা গেল না। বাকি কথাগুলো উড়িয়ে নিয়ে গেল বাতাসে। কান খাড়া করে অনেক চেষ্টায় আরও কয়েকটা শব্দ শুনতে পেল গোয়েন্দারা। মারভিন বলছে, কাল রাত নটায়, পিংক হাউসে…
হাঁটতে শুরু করল দুজনে। আর ওদের কথা শোনা গেল না। শুনতে হলে আবার পিছু নিতে হবে। আর ঝুঁকি নিল না গোয়েন্দারা।
অন্ধকারও হতে শুরু করেছে। গোবেল বীচে ফিরে যাওয়া উচিত। ঘরে আরাম করে বসে বিকেলের এই অভিযান নিয়ে আলোচনা করা যাবে।
গোবেল ভিলায় ফিরে এল ওরা। ছেলেদের ঘরে এসে বসল সবাই।
আলোচনা শুরু করল কিশোর, তাহলে কি জানলাম আমরা? ডন হারভে চোরের দলের একজন। কথা শুনে মনে হলো অন্য লোকটা, অর্থাৎ মারভিন হলো তার বস।
কিংবা আরেকটা লোকের কথা যে বলল, সে-ও হতে পারে, জিনা মনে করিয়ে দিল। যার নাম হোরেস।
যে লোকটা জেলে রয়েছে, রবিন বলল।
সূত্র তো ভালই পেলাম, বলল মুসা। এখন এগুলো জোড়া দিয়ে খাপে খাপে মেলাতে পারলেই হয়। অনেক প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাব। মারভিন বেশ রেগে গেছে মনে হলো। কোন একটা ভুল নিশ্চয় করে চলেছিল ডন। সে বলল, তার কিছু করার ছিল না। কারণ মাল আসতে আসতে দেরি হয়ে গেছে। ততদিনে তার কাজের মেয়াদ শেষ। এখন প্রশ্ন হলো, কি কাজ? কোথায়? আর কি জিনিসের ডেলিভারি, যা আসতে দেরি হলো?
ভাবছে কিশোর। নাক কুঁচকে রেখেছে সামান্য। মনে হয় বুঝতে পারছি, বলল সে। ঝুঁকি নিতে হলো বলল মারভিন। তারপর বলল তালা ভেঙে ঢোকার কথা। আমার বিশ্বাস, পলির ক্রিসমাস ট্রি, আর গোবেল বীচ স্টোরে চুরি করার কথা বলেছে ও।
আর জিনিস নিশ্চয় সেই খেলনা ভালুকগুলো, উত্তেজিত হয়ে উঠেছে রবিন। ওগুলো আসতেই দেরি হয়েছে, জানি আমরা, ডিক বলেছিল। আর চুরিও হয়েছে শুধু ওগুলোই।
হ্যাঁ, জিনা বলল। বেশ মিলে যাচ্ছে। কিশোর, ডন মনে হয় গোবেল বীচ স্টোরে একটা টেমপোরারি কাজ নিয়েছিল। বড়দিনের সময় কাজ বেশি, বাড়তি লোকের দরকার হয় ওদের। ওই সময়ই তাকে গোপন খবর পাঠানো হয়েছিল, যে কোন একটা খেলনা ভালুকের ভেতরে থাকবে নকশাটা। এল খেলনাগুলো। কিন্তু দেরি করে। তখন তার চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। খেলনাগুলোর ভেতরটা দেখার আর কোন উপায় না পেয়ে শেষে চুরিই করে বসল সে। সময় পেলে অবশ্য দেখেটেখে যে ভালুকটার ভেতরে রয়েছে, সেটাই খুলত। তারপর আবার সেলাই করে রাখলেই কেউ ধরতে পারত না।
ঠিক! কথাগুলো যুক্তিসঙ্গত মনে হলো কিশোরের। আর এমনই কপাল ওদের, চুরি করে নিয়েও লাভ হলো না। রবিন যে একটা ভালুক কিনল, কাকতালীয় ভাবে তার মধ্যেই থেকে গেল নকশাটা। যা-ই হোক, চুরি রহস্যের সমাধান হয়েছে। এখন আমাদের জানতে হবে, নকশা দেখে কি জিনিস বের করতে চাইছে ওরা। কি হতে পারে, বলো তো?