অনেক কায়দা-কসরৎ করে তারপর লাগাতে হলো। সময় লেগে গেল বেশি।
আসল কাজের সুযোগ মিলল এতক্ষণে, যা করতে এসেছিল ওরা। তদন্তটা ওবাড়ি থেকেই শুরু করল। নব পরিচিত বন্ধুদের জিজ্ঞেস করল মোটর সাইকেলওয়ালা লোকটার কথা। প্রশ্ন করল বেশ চালাকির সঙ্গে, যাতে ছেলে দুটো কিছু সন্দেহ করতে না পারে।
গ্রামটা কিন্তু খুব সুন্দর, মুসা বলল। লোকজনও ভালই মনে হচ্ছে।
ঠিক, তার সঙ্গে সুর মেলাল কিশোর। মনটন বেশ ভাল। ডেভি রাগ করল না। নিজের কুকুরটাকে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে গেল।
এখানকার একটা লোককে অবশ্য পছন্দ হয়নি আমার, জিনা বলল। ছেলে দুটোর দিকে তাকাল। চেনো নাকি তাকে? মোটর সাইকেল আছে। আরেকটু হলেই চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছিল আমাকে। অল্প বয়েসী। এই তেইশ-চব্বিশ হবে। ওর মুখ দেখতে পাইনি। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটা প্যাকেট পড়ে গেল। নাম-ঠিকানা লেখা। ভাবছি ওটা ফিরিয়ে দেব। নামটা হলো কি যেন…ও, ইয়ে, ডন হারভে।
ডন হারভে! চেঁচিয়ে উঠল টেড। ঠিকই আছে। তাকে তোমাদের ভাল লাগেনি, লাগার কথাও নয়। তোমাদের আর দোষ দেব কি, আমরাও দেখতে পারি না! ভীষণ পাজি লোক!
০৮.
চেনো নাকি তাকে? রবিন জিজ্ঞেস করল। ডন হারভেই তো নাম?
মিডলটনের সবাই চেনে ওকে, জবাব দিল রবি। এ গাঁয়ের সে কুলাংগার, বড়রা তাই বলে। দেখো বাড়ি গিয়ে, পাবে বলে মনে হয় না। বেশির ভাগ সময়ই বাইরে বাইরে থাকে। কি করে আল্লাই জানে! ভাল কিছু করে বলে তো মনে হয় না। বড় ভাইয়ের সঙ্গে থাকে। ওই লোকটা ভাল। ডনের এ সব কাণ্ডকারখানায় সাংঘাতিক বিরক্ত।
ডনকে তাহলে কোথায় পাওয়া যাবে? জানতে চাইল কিশোর।
কে জানে! রবি বলল। মোটর সাইকেল নিয়েই ঘোরে সারাক্ষণ। তা নাহলে হাই স্ট্রীটের গ্র্যান্ড কাফেতে বসে থাকে। থাকার কোন ঠিকঠিকানা নেই তার।
নামেই গ্র্যান্ড, টেড বলল। আর কিছু নেই। আহামরি কিছু নয়। মিডলটনের সমস্ত শয়তান লোকগুলো গিয়ে বসে ওখানে, আড্ডা মারে। ডন প্রায়ই বলে, তার একটা কাজ দরকার। সেজন্যেই নাকি গ্র্যান্ড কাফেতে যায়, কাজ জোগাড়ের জন্যে। নানা ধরনের লোক আসে ওখানে, কে যে কখন কাজ দিয়ে ফেলবে বলা যায় না। কাজ অবশ্য একটা না একটা পেয়েই যায় সে। তবে ধরে রাখতে পারে না। অল্পদিনও টেকে না। কাজটা ভাল না বলে ছেড়ে দিয়ে চলে আসে। আব্বা বলে অন্য কথা। কাজের লোকই নাকি নয় ও।
চিনব কি করে তাকে? গ্র্যান্ড কাফেতে যদি পাই? জিজ্ঞেস করল জিনা। মোটর সাইকেলের পোশাকে দেখেছি তাকে। হেলমেট পরা। চেহারা দেখিনি।
পাতলা, লম্বাটে মুখ, যেন একটা ইঁদুর। কথা বলে ক্যাচক্যাচ করে, দরজার কজায় তেল না থাকলে যে রকম শব্দ হয়।
টেডের মুখে লোকটার চেহারার বর্ণনা শুনে না হেসে পারল না গোয়েন্দারা। তারপর দুই ভাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে এল। আবার বেরোল পথে।
চলো, এ্যান্ড কাফেটা ঘুরেই আসি একবার, কিশোর বলল। হয়তো পেয়েও যেতে পারি আমাদের চিড়িয়াকে।
যা শুনলাম, মুসা বলল। আজব চিড়িয়াই মনে হলো। একের পর এক কাজ বদলায়। মোটর সাইকেল নিয়ে ঘোরে। বাকি সময় কাফেতে বসে থাকে। চুরিদারিগুলোতে সে জড়িত থাকলে মোটেও অবাক হব না।
মিডলটন জায়গাটা বড় না। মাত্র দুটো কাফে আছে। তার মধ্যে একটা হলো গ্র্যান্ড কাফে। নোংরা, মলিন একটা বাড়ি। ভেতরে কান ঝালাপালা করে দিয়ে ভীষণ জোরে মিউজিক বাজছে। ডনের মোটর সাইকেলটা দেখা গেল কাফের বাইরে। থমকে গেল গোয়েন্দারা। কি করবে ঠিক করতে পারছে না।
জানালা দিয়ে উঁকি দেয়া উচিত হবে না, চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল কিশোর। আমাদের ওপর ডনের চোখ পড়লে সব শেষ। আর এগোতে দেবে না। হুঁশিয়ার হয়ে যাবে। কিছু খুঁজে বের করতে পারব না তখন।
রাস্তার অন্য পাশে কয়েকটা গাড়ি দেখিয়ে মুসা বলল, ওগুলোর পাশে লুকালে কেমন হয়? ও কোথায় আছে, জানি। এক সময় না এক সময় বেরোবেই সে। সাথে কেউ থাকলে…
শশশ! ঠোঁটে আঙুল রেখে হুঁশিয়ার করল রবিন। ওই, আসছে!
কাফে থেকে বেরিয়ে আসছে লোকটা। দেখেই তাকে চিনতে পারল। এই সেই লোক, কোন সন্দেহ নেই। উঁচু বুট পায়ে। নকশা যখন নিতে এসেছিল তখন হেলমেটটা মাথায় ছিল, এখন খুলে হাতে নিয়েছে। টেড আর রবির দেয়া বর্ণনার সাথে মিলে যাচ্ছে তার চেহারা। ইঁদুরমুখো। সঙ্গে আরেকজন লোক রয়েছে। বেঁটে, গাট্টাগোট্টা, বয়েস চল্লিশ মত হবে। রাস্তায় নেমে এল দুজনে।
দ্বিতীয় লোকটাকেও চিনল মুসা। ফিসফিসিয়ে বলল, এই সেই লোক, গোবেল বীচ স্টোরে কালো চশমা পরা ছিল। সাংবাদিক বলে পরিচয় দিয়েছিল নিজেকে।
কিশোর, রবিন আর জিনাও চিনল তাকে।
দুজনে জোট বেঁধেছে, কিশোর বলল একই সঙ্গে কাজ করে মনে হয়।
কি বলছে শুনতে পারলে হত, আফসোস করে বলল রবিন।
একটা বুদ্ধি এসেছে মাথায়! ফিসফিস করে বলল কিশোর। লোকগুলোকে বেরোতে দেখে গাড়ির আড়ালে এসে লুকিয়েছে সবাই ওরা। ওই দেখো, মোটর সাইকেলটার কাছে দাঁড়িয়েছে। ওখানে যতক্ষণ থাকবে, ওদের কথা শুনতে পাব আমরা।
কি ভাবে? জিনার প্রশ্ন।
এসো আমার সঙ্গে।
মাথা নিচু করে রেখে এগোল কিশোর। গাড়ির জন্যে মোটর সাইকেলের কাছ থেকে ওকে দেখতে পাবে না লোকগুলো। চত্বরের একধারে রাস্তার কাছে চলে। এল সে। রাস্তা পেরোতে হবে এখন খুব সাবধান! দেখে না ফেলে!