যাবার আগে কিশোর বলল, আজ বিকেলে মিডলটনে যাব আমরা। গোবেল বীচের কাছে হয়ে থাকলে বেশি সময় লাগবে না যেতে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি আসবে। ওতে কিছু হবে না। অল্পস্বল্প বৃষ্টিতে ভিজে অভ্যেস আছে আমাদের, কি বলো?
অল্পস্বল্প কেন, মুষলধারে নামলেও অ্যাডভেঞ্চারের এই পর্যায়ে গোয়েন্দাদেরকে থামাতে পারত না বৃষ্টি। সেটা বুঝেই যেন বিকেলের শুরুতেই থেমে গেল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ততক্ষণে মিডলটনের কাছাকাছি চলে এসেছে ওরা। রাফি খুশি হলো বৃষ্টি থেমে যাওয়ায়। শরীর ভেজাতে ভাল লাগে না তার, বিশেষ করে এই আবহাওয়ায়। সাঁতার কাটাটা অবশ্য আরেক রকম মজা, তাতে কিছু মনে করে না সে।
মিডলটনের বাইরে সাইকেল রেখে হেঁটে গাঁয়ের ভেতর ঢুকল ওরা। ঢোকার মুখেই বিশাল এক অ্যালসেশিয়ানের সঙ্গে দেখা, এদিকেই আসছে। কাছে এসে বেশ গুরুগম্ভীর চালে রাফির শরীর কল কুকুরটা। মুরুব্বিয়ানা দেখিয়ে বলল, গারররর!
রাফি বুঝতে পারল তার ভাষা। কুকুরটা বলেছে, এই আজব কুত্তাটা আমাদের গায়ে কি করছে? সে একই সুরে জবাব দিল, ঘাউ! ঘাউ! ঘাউ! অর্থাৎ, আমাকে পছন্দ না করতে পারলে শুনে রাখো, তোমাকেও আমি পারছি না!
গারর! খেঁকিয়ে উঠল অ্যালসেশিয়ান। শয়তান কোথাকার!
রাফিও কম যায় না। রেগে গিয়ে কুকুরের ভাষায় গালাগাল শুরু করে দিল। হাবভাবে মনে হলো চ্যালেঞ্জ করে বসেছে বড় অ্যালসেশিয়ানটাকে।
গাররর! ধাড়িটাও কি আর কম যায়।
কেউ বাধা দেয়ার আগেই বেধে গেল ঝগড়া। ঝাঁপিয়ে পড়ল একটা আরেকটার ওপর। রাস্তার কাদার ওপরই গড়াগড়ি শুরু করল দুটো কুকুর। কামড়াকামড়ি, চেঁচামেচি, খামচা-খামচি এবং এই জাতীয় যত রকম ব্যাপার আছে। কোনটাই বাদ রাখছে না।
শোরগোল শুনে বেশ কিছু গ্রামবাসী বেরিয়ে এল ঘরের দরজায়। জিনা লজ্জায় পড়ে গেছে। রাফিকে এখানে আনতে চাপাচাপি করায়। যতটা ভদ্রভাবে আর নীরবে সম্ভব গ্রামে ঢুকে খোঁজখবর করে বেরিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তা আর হলো না।
রাফিকে সরে আসার জন্যে চেঁচিয়ে গলা ফাটাচ্ছে কিশোর। কে শোনে কার। কথা। লড়াইয়ে মশগুল এখন দুই কুত্তা। কে কাকে পরাজিত করবে, সেই চেষ্টা। এখন কি আর শোনার সময় আছে নাকি। লোকে এগিয়ে আসতে শুরু করেছে। হাসাহাসি করছে। কথা বলছে জোরে জোরে। এ রকম একটা লড়াই দেখতে পেয়ে যেন খুশিই হয়েছে। বাজি ধরতে আরম্ভ করে দিয়েছে।
পঞ্চাশ পেন্স, বলল একজন। বড় কুত্তাটার ওপর। ওটা ভারী বেশি। জোরও বেশি।
ছোটটাও কম না, আরেকজন বলল। বয়েস আরেকটু বাড়লে বাঘের বাচ্চা হবে!
এখন তো ছোট। পারবে না, বলল তৃতীয় আরেকজন। আর ওটা টাইগার। ডেভির কুকুর। ছোটটাকে খুনই করে ফেলবে।
না না! চিৎকার করে উঠল জিনা। লোকগুলোর কথা শুনে ভয় পেয়ে গেছে।
আমি ছোটটার ওপর পঞ্চাশ পেন্স! বলল অন্য আরেকজন লোক। করছে কি। দেখো! এত মার খেয়েও গলার কামড় ছাড়ছে না! এ রকম কিছুক্ষণ থাকতে পারলেই টাইগারের বারোটা বাজবে!
ওই যে, ডেভি আসছে, একটা ছেলে বলল।
লম্বা, শক্তিশালী একজন মানুষ এগিয়ে এল। করছেটা কি দেখো! চিৎকার করে বলল সে। এ রকম কাণ্ড তো করেনি কখনও! এই টাইগার! টাইগার! ছাড়, ছাড় বলছি! সামান্যতম দ্বিধা করল না লোকটা। উন্মত্ত, লড়াইয়ের একেবারে মধ্যিখানে গিয়ে দাঁড়াল। দুহাতে দুটো কুকুরের ঘাড় চেপে ধরে জোর করে টেনে ছাড়াল।
ঝাঁকি দিয়ে তার হাত থেকে ছোটার চেষ্টা করছে কুকুর দুটো। আবার গিয়ে পরস্পরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্যে। ছাড়ল না লোকটা। রেগে উঠে বলল, রক্ত বেশি গরম হয়েছে? পিটিয়ে লাশ বানিয়ে ফেলব। সর, যা!
তাড়াতাড়ি এগিয়ে এল জিনা। রাফির কলার ধরে টেনে সরিয়ে নিল। বড় কুকুরটাকে নিয়ে চলে যেতে লাগল ডেভি। টাইগারের যাবার ইচ্ছে নেই। বার বার পেছন ফিরে তাকাচ্ছে, আর রাফিকে ধমক মারছে।
রাফির কতটা ক্ষতি হয়েছে দেখতে বসল জিনা। যতটা ভয় পেয়েছিল ততটা জখম হয়নি। একটা কান থেকে রক্ত পড়ছে। গলার কাছে কিছু আঁচড়, বোম উঠে গেছে। আরও কয়েক জায়গায় নখের আর দাঁতের দাগ রয়েছে। কোন কোনটা থেকে রক্ত বেরোচ্ছে।
ভেবো না, মুসা বলল জিনাকে। ঠিক হয়ে যাবে। কিছু হয়নি।
কানটা তো ছিঁড়েছে! দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে জিনা। মুসার মত কিছু হয়নি বলে উড়িয়ে দিতে পারছে না।
ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে, কিশোরও চিন্তিত। অষুধ-টষুধ লাগানো দরকার। এ গায়ে ওষুধের দোকান আছে? জিনার দিকে তাকাল সে।
কুকুরের লড়াই দেখার জন্যে দুটো ছেলে বেরিয়ে এসেছিল। তারা এগিয়ে এল। গোয়েন্দাদের দিকে। আন্তরিক হাসি হেসে দুজনের মাঝে বড়টা জিজ্ঞেস করল, কিছু দরকার? দারুণ একটা কুত্তা তোমাদের! এত বড় অ্যালসেশিয়ানটাকে যে মার মারল! বয়েসকালে সত্যিই বাঘের বাচ্চা হবে! অ, আমার নাম রবি। এ আমার ভাই টেড। কাছেই আমাদের বাড়ি। রাফির ছেঁড়া কানের দিকে তাকিয়ে বলল, এক কাজ করো না। চলে এসো আমাদের বাড়িতে। স্পিরিট-টিরিট দিয়ে মুছে ওষুধ লাগিয়ে দেব।
কথাটা মন্দ না। ভেবে দেখল কিশোর। রাজি হয়ে গেল সে।
রবি আর টেডের বাবা-মা বাড়িতে নেই। তবে যা দরকার সেগুলো পেতে বাবা-মাকে দরকার হলো না। বাথরূমের ওষুধ রাখার বাক্সেই পাওয়া গেল সব। লড়াইয়ের সময় যে রাফি এতটা সাহসের পরিচয় দিয়েছে, ওষুধ লাগানোর সময় সে-ই একেবারে ভীতুর ডিম হয়ে গেল। কিছুতেই জখমে স্পিরিট লাগাতে দেয় না।