কশটা দোলাল আরেকবার, ওদেরকে দেখিয়ে। হুমকি দিল। এ সম্পর্কে পুলিশকে কিংবা আর কাউকে যদি একটা বর্ণ বলল, ভাল হবে না মনে রেখো। আর নকশাটা না দিলেও খারাপ হবে। খুব খারাপ, শুধু এটুকুই বললাম, হ্যাঁ!
ওরকম করে সিনেমায় হুমকি দেয় খারাপ চরিত্রের লোকেরা দেখেছে ওরা। কেমন হাস্যকর লাগে ওখানে। তবে বাস্তবে সেটা মোটেও হাস্যকর লাগল না ওদের কাছে। যা বলছে, করবে লোকটা। মিথ্যে হুমকি দিচ্ছে না।
কি, বুঝেছ? জিজ্ঞেস করল লোকটা।
হ্যাঁ, মাথা দোলাল মুসা। পাবেন আপনার নকশা। নিচু স্বরে লোকটা যেন বুঝতে না পারে এমন ভাবে অভিশাপ দিল, সেটা তোমার গলায় ঢুকে গিয়ে যেন দম বন্ধ করে মারে!
কশটা পকেটে রেখে দিল লোকটা। কাল দুপুর বারোটা। মনে থাকে যেন।
ঘুরে ঢাল বেয়ে ওপরে উঠতে শুরু করল সে। উঠে গেল সৈকতের ওপরের রাস্তায়। নীরবে তাকিয়ে রয়েছে গোয়েন্দারা। তখনও রাফির পাশে হাটু গেড়ে বসে রয়েছে কিশোর। হুঁশ ফিরছে কুকুরটার।
হ্যাঁ, নকশা তুমি পাবে, রাস্তার দিকে তাকিয়ে বলল কিশোর, ঠিক সময়েই। তবে সেটা দিয়ে কোন লাভ হবে না তোমার।
অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল মুসা। কি বললে?
নকশা একটা দেব তাকে, তবে নকল। আসলটা দিয়ে দেব, এত বোকা নাকি আমি।
ওই, যাচ্ছে, রবিন বলল।
রাস্তায় মোটর সাইকেলের ইঞ্জিন স্টার্ট নিল।
খেলা আর জমবে না। রাফি দুর্বল হয়ে গেছে। তাকে নিয়ে গিয়ে এখন খেতে দেয়া দরকার। তারপর লম্বা একটা ঘুম।
ওঠ, রাফি, ওঠ, ডাকল কিশোর। লক্ষ্মী ছেলে, ওঠ। তোর আর কি দোষ? পেছন থেকে মেরে তো অনেক বাহাদুরকেও চিৎ করে ফেলা যায়। নইলে কি আর ছাড়তি? এতক্ষণে কামড়ে হয়তো কিমাই বানিয়ে ফেলতি।
তারপর সেই কিমাগুলো পেঁয়াজ মরিচ দিয়ে চুলায় চাপিয়ে দিত, হেসে বলল মুসা।
দুর্বল কণ্ঠে রাফি বলল, ঘাউ! কিমার চেয়ে হাড়ই তার বেশি পছন্দ।
*
বাড়ি ফিরে নিজের বিছানার পায়ের নিচে কার্পেটে রাফিকে আরাম করে শুইয়ে দিল জিনা। তারপর সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসল। উঠে চলে গেল মুসা। নকশাটা আনতে। কুকুরের ঘর থেকে ওটা খুলে এনে টেবিলে বিছাল।
তুমি তো বললে, একটা নকল নকশা দেবে, কিশোরকে বলল মুসা। পাবে কোথায়?
আঁকব, জবাব দিল কিশোর। বানিয়ে বানিয়ে দেব একটা এঁকে। দেখতে যাতে এটার মতই লাগে। তাহলে প্রথমে ধোকা খাবে মোটর সাইকেলওয়ালা লোকটা। নিয়ে চলে যাবে। বুঝবে, আসল নয়। আবার লাগবে তখন আমাদের পেছনে।
তাহলে কাগজও একই ধরনের ব্যবহার করতে হবে, রবিন বলল।
আগেই ভেবেছি সেটা, হেসে বলল কিশোর। সাধারণ কাগজ। সাদা খাতা থেকে ছিঁড়ে নিয়েছে ওরা। ইস্কুলে যেগুলো ব্যবহার করি আমরা। আমরাও ওরকমই একটা পাতা নেব…
খুব সাবধানে আঁকতে হবে, মুসা বলল। দেখতে যেন একেবারে আসলের মত লাগে।
তা লাগবে। শোনো, আরও সহজেই কাজটা করা যায়। এটার ওপরেই ছাপ দিয়ে আঁকতে পারি। কিছু কিছু জায়গা সামান্য বদলে দিলেই হবে।
প্রশংসার দৃষ্টিতে কিশোরের দিকে তাকাল মুসা। ভাল বুদ্ধি বের করেছ।
নকশাটার দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকাল কিশোর। নিজেকেই যেন বলল, হ্যাঁ, হবে। জিনার কাছ থেকে একটা খাতা চেয়ে নিয়ে একটা পাতা ছিঁড়ে নিল। তারপর গিয়ে বসল জানালার কাছে, আলো বেশি পাওয়ার জন্যে। ছাপ দিয়ে আঁকতে সুবিধে হবে। একটা ট্রেসিং পেপার আর বলপেন নিয়ে কাজ শুরু করল। আঁকাটা খুব সহজ। কঠিন হলেগে আসল নকশাটার মানে বোঝ। ঘোড়ার ডিম কিছুই বোঝা যায় না।
কয়েক মিনিট পর ট্রেসিং পেপারে আঁকা হয়ে গেল। সেটাকে তখন সাদা কাগজের ওপর রেখে জোরে চাপ দিয়ে রেখাগুলোর ওপর কলম বোলাতে লাগল কিশোর। নিচের কাগজে দাগ পড়ে যাবে। তখন তার ওপর কলম বুলিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে নকশা। বদলাতে হলে ট্রেসিং পেপারেই বদলাতে হবে। যাতে নিচে। ভুল চাপ পড়ে। তা-ই করতে লাগল সে।
হয়েছে। কিছুক্ষণ পর সন্তুষ্ট হয়ে মুখ তুলল কিশোর। চমৎকার! সামনে রেখে দুটো মিলিয়ে দেখেও সহজে ধরা যায় না।
হ্যাঁ, খুব ভাল, উত্তেজিত হয়ে বলল মুসা। দারুণ এঁকেছ। চোরেরা বুঝতেই পারবে না কিছু। আর যখন বুঝবে, দেরি হয়ে যাবে তখন। আমরা সময় পেয়ে যাব। কিছু করার।
সংখ্যা আর লেখাগুলোর ব্যাপারে কি হবে? রবিনের প্রশ্ন।
সংখ্যা আর লেখা? ভুরু কোঁচকাল মুসা।
দেখছ না, লেখা রয়েছে এন এস ই ডব্লিউ। এর মানে নিশ্চয় নর্থ সাউথ ঈস্ট ওয়েস্ট বোঝাতে চেয়েছে। তারপর রয়েছে সংখ্যা।
লেখাও লিখব, কিশোর বলল। কিছু নকশা দেখে, কিছু বানিয়ে বানিয়ে লিখতে শুরু করল সে। যা মাথায় এল।
অবশেষে শেষ হলো কাজ।
ব্যস, বলল সে। এখন শুধু এটা তুলে নেয়ার অপেক্ষা। কাল গিয়ে বসে থাকব। মোটর সাইকেলওলা নিতে এলে সাইকেল নিয়ে অবশ্যই তার পিছু নিতে পারব না। তবে ভাল একটা সূত্র পেয়ে যাব। মোটর সাইকেলের নম্বর। কে জানে, ওই একটা সূত্রই হয়তো ওর দোস্তদের কাছে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে আমাদের। হয়তো দলবল সহ ধরিয়ে দিতেও। সমাধান হবে নীল ভালুক রহস্যের।
.
০৭.
পরদিন সকাল দশটায়ই সৈকতে চলে এল গোয়েন্দারা। লোকটা বলে গেছে বারোটায় আসবে। এর আগে ওর আসার আশা করেও লাভ নেই। কিন্তু বলা যায়। অতি উত্তেজনায় চলেও আসতে পারে। তাই আগেভাগেই চলে এসেছে ওরা।