তুমি খেতে থাকো, মুসা বলল। দরকার হলে আমরা বের করে নেব।
ক্যানের মুখটা খুলে খাওয়া শুরু করল কিশোর। পুরোটা শেষ করার আগে থামল না। খালি ক্যানটা নামিয়ে রাখল টেবিলে। মুসা আর রবিনের খাওয়া শেষ হওয়ার অপেক্ষায় রইল।
ওদেরও খাওয়া শেষ হলো।
এবার শুরু করা যাক। তাসগুলো টেনে নিয়ে সব এলোমেলো করে দিতে লাগল কিশোর।
মুসার মুখোমুখি জানালার দিকে পেছন করে বসেছে রবিন। জানালা দিয়ে শেষ বিকেলের রোদ আসছে ঘরে। কমলা আভা এসে পড়েছে দুজনের গায়ে। জ্বলছে যেন ওরা।
মুসা, লুডুর পাশা নিয়ে এসোগে তো কয়েকটা, কিশোর বলল। আছে? অন্তত চারটে পাশা দরকার।
থাকার তো কথা, উঠে দাঁড়াল মুসা। দেখি খুঁজে। পাই নাকি।
সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে ওপরতলায় উঠে গেল সে। ড্রয়ার, বাক্স ঘাটাঘাটি করে খুঁজে চারটে পাশা বের করে নিয়ে নিচে নেমে এল।
তাসগুলোকে চারটে সমান ভাগে ভাগ করল কিশোর। উপুড় করে রাখল সবগুলো।
পাশাগুলো কিশোরের সামনে টেবিলে ফেলে দিয়ে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসল মুসা।
এই দেখো, চারটে ভাগে ভাগ করলাম তাসগুলোকে। আঙুলের টোকা দিয়ে প্রতিটি ভাগকে দেখিয়ে কোনটার কি নাম বলতে লাগল কিশোর, চরিত্রতাস, শক্তিতাস, কর্মস এবং ভাগ্যতাস। কোন চরিত্রে খেলবে, চরিত্রতাস থেকে প্রথমে সেটা ঠিক করতে হবে তোমাকে।
টেবিলের ওপর দিয়ে তাসগুলো মুসার দিকে ঠেলে দিল সে। নাও, একটা তাস টেনে নাও। যেটা ইচ্ছে।
মাঝখান থেকে একটা তাস টেনে নিল মুসা। উল্টে দেখল। রাজা! দারুণ তো! আমি রাজা!
আমি আগে টানলে আমিই রাজা হতাম, রবিন বলল।
মাথা নাড়ল কিশোর। উঁহু। তুমি ওটা না-ও টানতে পারতে। দেখা যেত, রাজা না টেনে গোলাম টেনেছ।
হাসল রবিন। এমনি বললাম। রাজা হবার কোন ইচ্ছেই আমার নেই।
রাজা হলেই যে খুব সাংঘাতিক কিছু হয়ে যাবে, তা-ও না, কিশোর বলল। একেবারে দুর্বল রাজাও বনে যেতে পারে মুসা। শক্তিতাসের ওপর নির্ভর করে অনেক কিছু। মুসার দিকে তাকিয়ে হাসল সে। শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে শক্তি সামর্থ্য সব হারিয়ে আমাদের গোলামে পরিণত হয়েছ।
নামটা কি হবে সে-রাজার? ভুরু নাচিয়ে হাসল রবিন। গোলাম-রাজা। বাহ, সুন্দর একটা নাম আবিষ্কার করলাম তো। গোলাম-রাজা।
সেই স্বপ্নেই বিভোর থাকো, মুসা বলল। মনে রেখো, প্রথম সুযোগটা পাওয়া মাত্রই তোমাদের দুজনের মুণ্ডু কেটে ফেলার আদেশ দেব আমি।
ভ্রূকুটি করল রবিন। সামনে ঝুঁকে এল। তারমানে তুমি দুষ্ট রাজা?
খেলা খেলাই, জানিয়ে দিল মুসা। এখানে একজন আরেকজনকে হারানোটাই মূল কথা।
তাই বলে মুণ্ডু কেটে…তোমার কাছ থেকে এটা আশা করিনি, মুসা।
ওদের ঝগড়াটা বাড়তে দিল না কিশোর। রবিনের দিকে চরিত্রতাসের গাদাটা ঠেলে দিয়ে বলল, নাও। তোমারটা তোলো।
চোখ বন্ধ করে একটা তাস টেনে নিল রবিন। উল্টে দেখেই আঁউক করে উঠল, দূর! গথ! হওয়ার আর কিছু পেলাম না যেন? হতাশা ঢাকতে পারল না সে।
রবিনের হাত থেকে তাসটা নিয়ে দেখতে দেখতে বলল কিশোর, এটাও কম শক্তিশালী নয়। এখানে গথ হলো একজন জাদুকর। যে ইচ্ছেমত তার দেহের রূপ পরিবর্তন করতে পারে।
কিছুটা উজ্জ্বল হলো রবিনের মুখ। জাদুকর? তারমানে আমার জাদু করার ক্ষমতা আছে?
আছেই, এ কথা বলার সময় হয়নি এখনও, জবাব দিল কিশোর। তবে ক্ষমতা তৈরি হতে পারে।
মুসার দিকে তাকাল রবিন। ক্ষমতা পেলে রাজাকে ব্যাঙ বানিয়ে ফেলব আমি।
ব্যাঙের মত ডেকে উঠল মুসা। এত জোরাল আর বাস্তব শোনাল ডাকটা, চমকে গেল রবিন।
হা-হা করে হেসে উঠল মুসা। আহা, কি আমার জাদুকররে। বানাও আমাকে ব্যাঙ। এমন হাঁক ছাড়ব, ভয়ে বাপ-বাপ করে আবার মানুষ বানিয়ে দিতে পথ পাবে না।
কিশোরও হাসল। হাত তুলল। আচ্ছা, থামো এখন। প্যাচাল বাদ। খেলাটাই তো শুরু করতে দিচ্ছ না। এমন করলে বাদ দিয়ে দেব কিন্তু।
না না না, আর করব না। তাড়াতাড়ি বলে উঠল মুসা। অনেক দিন পর তোমাকে পেয়েছি তো। খুশিতে বাঁচাল হয়ে গেছি। কি করতে হবে বলো এখন?
চরিত্রতাসগুলোকে আবার শাফল করে নিজেরটা টেনে নিল কিশোর। উল্টে দেখে জানাল, আমি হলাম ক্রেল।
বুড়ো আঙুল আর মধ্যমার সাহায্যে তাসটা তুলে ধরে দেখাল সে। মুসা আর রবিন দুজনেই দেখতে পেল তাসের গায়ে আঁকা ছবিটা। অদ্ভুত এক বামন-জীব। মানুষের মত দেহ। মুখটাও মানুষের মত। কিন্তু নাকটা লম্বা। সামনের দিকে ঠেলে দেয়া। সরু একটা পাইপের মত। গোলাপী কানের ওপরের দিকটা চোখা। মাথায় একটা রোমশ লাল হ্যাট। হাতে ইয়া বড় ছুরি। ফলাটা বাকানো।
এই ক্রেল জিনিসটা কি? জানতে চাইল মুসা। ভাল না মন্দ?
সেটা নির্ভর করে অনেক কিছুর ওপর, জবাব দিল কিশোর।
ক্রেলের চেয়ে কি গথেরা বেশি শক্তিশালী? রবিনের প্রশ্ন।
সেটাও নির্ভর করে।
কিসের ওপর নির্ভর করে? জানতে চাইল রবিন।
বুঝতে পারবে একটু পরেই, শান্তকণ্ঠে জবাব দিল কিশোর। চরিত্র নির্বাচন হলো। এখন আমাদের শক্তি অর্জন করতে হবে। পাশা চালতে হবে! মুসা, চারটে পাশা একই সঙ্গে চালো। দেখা যাক কি ওঠে তোমার ভাগ্যে। পাশার এক ফোঁটা সমান একশো পয়েন্ট শক্তি।
আগের বারের কথা মনে আছে। রবিনকে অভিযোগ করার সুযোগ দিল না মুসা। তুমি আগে চালো।
কেন, ভয় পাচ্ছ? পয়েন্ট কম পেয়ে গোলাম হয়ে যাওয়ার?