কিন্তু এটা তোমার পকেটে এল কি করে? চোখের পাতা সরু করে মুসার দিকে তাকাল রবিন। চুরি করলে নাকি?
.
০২.
তাসের বাক্সর ওপরের লেখাটা জোরে জোরে পড়ল মুসা, ভয়াল তাস!
অবাক হয়ে মুসার দিকে তাকিয়ে আছে রবিন। কি বললে? খাওয়ার টেবিলের সামনে সাজানো চেয়ারে বসেছে দুজনে।
মুখ তুলে ওর দিকে তাকাল মুসা। ভয়াল তাস। বাক্সের গায়ে লেখা রয়েছে। এই দেখো।
ও এমনি লিখেছে। একটা নাম দেয়া দরকার তো। বিড়বিড় করল রবিন। কিন্তু চুরি করলে কেন?
চুরি করিনি।
কাকু-কাকুর বাড়ি থেকে আনোনি?
আগে যখন ছিল না পকেটে, মনে তো হচ্ছে ওখান থেকেই এনেছি, নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরল মুসা।
চুরি করোনি! অথচ বলছ, ওখান থেকেই এনেছ… আচমকা চোখ বড় বড় হয়ে যেতে লাগল তার। তুড়ি বাজাল। ঠিক! বুঝে ফেলেছি!
ভুরু কুঁচকাল মুসা। কি বুঝলে?
লীলা রেডরোজ! ইচ্ছে করে পড়েছিল তোমার গায়ের ওপর। কেন?
ধীরে ধীরে হাঁ হয়ে যেতে লাগল মুসার মুখ। তারমানে….তারমানে…
হ্যাঁ, মাথা ঝকাল রবিন। চুরিটা সে-ই করেছে। আর পাচার করার বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছে তোমাকে।
তাতে ওর লাভটা কি?
বুঝতে পারছি না।
একটা মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে রইল মুসা। তারপর বাক্সটা খুলল। কাত করে টেবিলের ওপর ঢালল তাসগুলো। ঘাটতে শুরু করল।
সাধারণত বাক্সের সব তাসের পিঠে এক রকম ছবি আঁকা থাকে। এ তাসগুলোর সে-রকম নয়। একেকটার পিঠে একেক ছবি। সেগুলো বিচিত্রও বটে। কোনটাতে মুখোশ পরা নাইট, কোনটাতে শয়তান-চেহারার কল্পিত বামন-মানব, কোনটা ড্রাগন, কোনটা বা শুয়োরমুখো মানুষ। আরও নানা রকম অদ্ভুত সব ছবি আঁকা রয়েছে তাসগুলোয়। কোনটা কোন জীব, কি নাম, ওপরে লেখা রয়েছে।
ভয়ঙ্কর সব ছবি, দেখতে দেখতে বলল মুসা।
ভালমত দেখার জন্যে কাত হয়ে এল রবিন। মুসা, তাসগুলো দেখে মনে হচ্ছে অতি প্রাচীন। নিশ্চয় অ্যান্টিক ভ্যালু আছে। কাকু-কাকু দাম নিশ্চয় অনেক বেশি চাইত। সেজন্যে চুরি করেছে জিপসি বুড়ি। তোমাকে দিয়ে পাচার করিয়েছে। তোমার কাছ থেকে নিতে আসবে, আমি শিওর। চোরাই মাল রাখা উচিত না। চলো, কাকু-কাকুকে ফেরত দিয়ে আসি।
হু। যাই। আর চোর ভেবে ক্যাক করে কলার চেপে ধরুক আমাদের। পুলিশে খবর দিক। গলা কেটে ফেললেও বিশ্বাস করবে না আমরা চুরি করিনি। লীলা রেডরোজও স্বীকার করবে না তখন। সব দোষ হবে আমাদের। কে যায়। ঝামেলায়…।
আচমকা গমগমে ভারী একটা কণ্ঠস্বর শোনা গেল পেছন থেকে, মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত হও!
অস্ফুট চিৎকার করে উঠল রবিন। চমকে গেল মুসা। হাত থেকে তাসগুলো ছড়িয়ে পড়ল মেঝেতে।
অট্টহাসি ফেটে পড়ল কানের কাছে। কি, মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত?
আরি, তুমি! চেঁচিয়ে উঠল রবিন। কখন এলে?
এই তো, ঘণ্টাখানেক হলো। তোমাদের বাড়িতে ফোন করে জানলাম তুমি এখানে। মুসাকে আর ফোন না করে চলেই এলাম।…তা কেমন চমকে দিলাম? মুখ থেকে একটা বড় সামুদ্রিক শামুকের খোসা সরাল কিশোর। মিনি লাউডস্পীকার। স্যুভনির। জিপসিদের কাছ থেকে কিনেছি।
স্বস্তির হাসি ছড়িয়ে পড়ল মুসার মুখে। একেবারে সময়মত এসেছ। মনে মনে তোমাকেই চাইছিলাম আমি।
রহস্য নাকি?
রহস্য ঠিক বলা যাবে না। ঘটনাটা বেশ মজার। তবে ভেজালেও পড়তে পারি, বলা যায় না।
কি হয়েছে? ভুরু জোড়া কাছাকাছি হলো কিশোরের। তাসগুলোর ওপর। চোখ পড়তে জিজ্ঞেস করল, তাস নিয়ে বসেছ কেন?
এগুলোর কথাই তো বলছি, মুসা বলল।
চুরি করে এনেছে ও, মিটিমিটি হাসছে রবিন।
ভুরু জোড়া আরও কুঁচকে গেল কিশোরের। চুরি করেছে? তাস চুরি করতে গেল কেন?
ও নিজে করেনি। করানো হয়েছে।
এতক্ষণে আগ্রহ দেখা গেল কিশোরের চোখে। কি ভাবে করাল?
হাত তুলল মুসা। বসো। সব বলছি।
একটা তাস টেনে নিল কিশোর। বিস্ময় ফুটল চোখে। এ জিনিস পেলৈ কোথায়?
চেনো মনে হচ্ছে? কিশোরের অবাক হওয়া দেখে মুসাও অবাক।
বিমূঢ় ভঙ্গিতে মাথা আঁকাল কিশোর। হ্যাঁ, এবারই তো দেখে এলাম জিপসিদের কাছে। ওদের ছেলেমেয়েরা সংগ্রহ করে। সাধারণ তাসের মত খেলাও যায় না এ দিয়ে। খেলাটা ভিন্ন রকম। তবে মজার।
আগ্রহ বাড়ছে রবিনের। জানো নাকি কি ভাবে খেলতে হয়?
মাথা কাত করল কিশোর। শিখে এসেছি। আমাদের বয়েসী একটা জিপসি ছেলের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তার কাছ থেকে এক প্যাকেট তাস নিয়েও আসতে চেয়েছিলাম। আসার সময় আর মনে ছিল না।
চোখ চকচক করছে মুসার। কিছুক্ষণ আগের বিরক্তির ছিটেফোঁটাও নেই আর এখন চেহারায়।
দুষ্ট রাজা, পিশাচ নাইট, মানুষখেকো ড্রাগন এ সব নিয়ে খেলতে হয় খেলাটা, কিশোর বলল আবার। প্রচুর যুদ্ধটুদ্ধ করা লাগে। জাদু আছে। ব্ল্যাক ম্যাজিক আছে। কম্পিউটার গেমের চেয়ে কোন অংশে উত্তেজনা কম না। বরং কয়েকজনে মিলে খেলা যায় বলে মজা অনেক বেশি।
হাত বাড়াল কিশোর। দেখি?
মুসার হাত থেকে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখতে লাগল সে।
কি ভাবে খেলতে হয় বলো তো? জিজ্ঞেস করল মুসা।
বলে নয়, খেলেই দেখাব। কিন্তু আগে বলো, কোথায় পেলে এ জিনিস?
.
০৩.
মুসা আর রবিনের খিদে পেয়েছে। কিশোরও বাড়ি থেকে সামান্য কিছু মুখে দিয়ে চলে এসেছে। খিদে রয়েছে তার পেটেও।
খেতে খেতে কথা হলো তিনজনের। তাসগুলো কি ভাবে পেয়েছে মুসা, সব জানানো হলো কিশোরকে।
উঠে গিয়ে রেফ্রিজারেটরের ডালা খুলল কিশোর। একটা কোকের ক্যান বের করে নিয়ে এসে বসল আবার আগের জায়গায়। রবিন আর মুসাকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল, তোমরা?