- বইয়ের নামঃ তাসের খেলা
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ গোয়েন্দা কাহিনী
তাসের খেলা
০১.
মুসা আমান। দুষ্ট রাজা।
কি করে হলো?
তাসের খেলা খেলতে গিয়ে।
খেলাটা শুরু করার সময় ওরা জানত না কতটা বিপজ্জনক এই খেলা।
কিশোর জানলেও আঁচ করতে পারেনি। এতটা বিপদে পড়ে যাবে। কারণ জিপসিদের কাছ থেকে সে যেটা শিখে এসেছে, সেটা নিছকই খেলা। দাবা-লুডু-কেরমের মত। যাতে শুধুই মজা। মোটেও বিপজ্জনক নয়।
গোড়া থেকেই বলা যাক।
গরমের ছুটি শেষ হতে তখনও হপ্তা দুই বাকি। বিরক্ত। রীতিমত বিরক্ত লাগছে এখন মুসা ও রবিনের।
গ্রীষ্মের দীর্ঘ সব দিন কাটানোর কোন উপায় নেই।
ছুটিতে পড়ার জন্যে যত বই রেখেছিল, সব শেষ। কম্পিউটার গেমগুলো হাজার বার করে খেলেছে। পরিবারের সঙ্গে দূরে বেড়ানোও হয়ে গেছে। নিরাপদেই কাটিয়ে এসেছে এবার। বিপত্তি বলতে শুধু কয়েক ডজন মশার কামড়। সাঁতার কাটা, বেজবল খেলা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়া, হই-হুঁল্লোড়, বনের মধ্যে চিৎ হয়ে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে অলস সময় কাটানো, সব শেষ।
এখন আর কিছুই করার নেই। সময় এখন বড়ই একঘেয়ে। এ রকম থাকত না, যদি কোনমতে একটা রহস্য জোগাড় করা যেত।
কিন্তু রহস্যেরও যেন দুর্ভিক্ষ লেগেছে। পাওয়াই যায় না।
বাড়ির এক পাশের চত্বরে ভাঙা ম্যাপল গাছটার নিচে বসে আছে মুসা। রবিন। উঠে বসেছে গাছে। চেরা কাণ্ডের একটা ফালির ওপর।
কিছুদিন আগে বাজ পড়েছিল গাছটার মাথায়। ঠিক মাঝখান থেকে চিরে। দুভাগ করে দিয়েছে। দুটো দিক দুদিকে হেলে পড়ে ধনুকের মত বাকা হয়ে। আছে। দুটো ধনুক।
গোড়া থেকে খুঁড়ে তুলে ফেলে দিতে চেয়েছিলেন মুসার আম্মা মিসেস আমান। কিন্তু জিনিসটা দেখতে এতই অদ্ভুত, ফেলতে মন চায়নি মিস্টার আমানের। তাঁর কাছে জিনিসটাকে একটা চমৎকার ভাস্কর্য মনে হয়েছে। বললেন, থাক না, যতদিন ওভাবে থাকে।
শুরুতে কয়েকদিন ওগুলোতে আরাম করে পা দুলিয়ে চড়ে বসেছে মুসা।
তবে এ ধরনের আরামেরও একটা সীমা আছে। এখন আর ভাল লাগে না।
বরং মহা বিরক্ত।
গাছের গোড়ায় মাটিতে বসে আছে সে। ঘাস ছিঁড়ছে। একঘেয়েমি কাটানোর জন্যে মুঠো করে তুলে ছুঁড়ে মারছে রবিনের দিকে। বাগানের ঘাস ছেঁড়াটা ঠিক হচ্ছে না। জানে। কিন্তু চুপচাপ থাকতে ভাল লাগছে না। হাত দুটোকে ব্যস্ত রাখছে।
ঘাড়ের পেছনে সুড়সুড়ি লাগল মুসার। হাত দিয়ে টিপে ধরে একটা বড় কালো পিঁপড়ে তুলে আনল।
গাছের ডালে পা দোলাতে দোলাতে হাসল রবিন।
পিঁপড়েটা কোথা থেকে এসেছে বুঝতে অসুবিধে হলো না মুসার। ঘাস ছোঁড়ার প্রতিশোধ নিয়েছে রবিন। ডাল থেকে তুলে নিয়ে মুসার অগোচরে তার। ঘাড়ে ফেলেছে।
বিরক্ত কোরো না তো, ঘাড় ডলতে ডলতে বলল মুসা।
বরং বলো, এ সব করে বিরক্তি কাটাও তো, রবিন বলল।
এত একঘেয়েমীতে পেয়েছে, কথাবার্তাও দুজনের বিরক্তিকর লাগছে।
বাড়ি চলে যাই, রবিন বলল।
ওর দিকে আরেক মুঠো ঘাস ছুঁড়ে দিয়ে মুসা বলল, বাড়ি গিয়ে কি করবে?
জবাব দিতে পারল না রবিন।
ইস, কিশোরটাও সেই যে গেল, আসার আর নাম নেই, আফসোস করে বলল মুসা। ও থাকলে এত একঘেয়ে লাগত না। কোন না কোন উপায় একটা বের করেই ফেলত।
হ্যাঁ, ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল মবিন। ছুটি শেষ না করে বোধহয় আর আসবেই না এবার।
আমাদেরও ওর সঙ্গে মনটানায় চলে যাওয়া উচিত ছিল। রকি পর্বতটা দেখে আসা যেত আরেকবার।
ভুল যা করার করে ফেলেছি। এখন আর ভেবে লাভ নেই।
কিছু একটা করা দরকার। উঠে দাঁড়াল মুসা। ওদের ব্লকের শেষ মাথার দিকে তাকিয়েই স্থির হয়ে গেল। একটা বাড়ির কোণে লোক জড় হয়েছে।
খাইছে! পুরানো জিনিস বিক্রি করছে মনে হয়, অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে রবিনের কাঁধ থেকে একটা কুটো তুলে নিয়ে ফেলে দিল মুসা।
মিস্টার কাকু-কাকুর বাড়িতে! অবাক হলো রবিন। জিনিসপত্র সব বেচে দিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে নাকি ও?।
জানি না তো। এইমাত্র দেখলাম।
প্রতিবেশী হিসেবে অতি জঘন্য কাকু-কাকু। কারও সঙ্গেই সদ্ভাব নেই। আর ছোটরা তো ওর দুচোখের বিষ।
গত শীতে মুসা গিয়েছিল কাকু-কাকুর বাড়িতে। পুরানো বাড়ি। কি যেন এক রহস্য লুকিয়ে রাখে বাড়িটা। দেখলেই গা ছমছম করে তার। পারতপক্ষে ওদিকে ঘেঁষতে চায় না। সেবার গিয়েছিল বিশেষ একটা কাজে। ক্যান্ডি বিক্রি করতে। লাভের টাকায় শীতে কষ্ট পাওয়া মানুষকে সাহায্য করার জন্যে।
দরজায় থাবা দিতেই কুত্তা লেলিয়ে দিল কাকু-কাকু। ভয়ঙ্কর একটা জার্মান শেফার্ড কুকুর আছে তার। বিশাল।
দৌড়ের অলিম্পিক রেকর্ড ভঙ্গ করল সেদিন মুসা। নইলে কুকুরের কামড়ে ক্ষতবিক্ষত হওয়া লাগত।
এ হেন কাকু-কাকু কি বিক্রি করছে ভেবে অবাকই লাগল তার। কৌতূহলটা দমাতে পারল না।
চলো তো দেখে আসি, বলেই লাফাতে লাফাতে ছুটল ড্রাইভওয়ে ধরে।
পেছন থেকে ডাকল রবিন। আরে দাঁড়াও দাঁড়াও। লোকটা ভীষণ পাজি…
কি বিক্রি করছে ও দেখতেই হবে আমাকে, পেছনে তাকিয়ে বলল মুসা। নির্যাতনের অস্ত্রশস্ত্র বিক্রি করলেও অবাক হব না। এই যেমন পিটিয়ে চামড়া ভোলার চাবুক, হাড় কাটার করাত, মাথায় পেঁচানোর কাঁটাতার। বিকৃত রুচির খুনী তো লোকটা। হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর লোকও হতে পারে।