তা করতে পারে, ক্লার্ক বলল। এই লোকটার বয়েস চল্লিশ হবে। আমাদের কোন বেয়ারাই এত না। দাঁড়াও, হাউস ডিটেকটিভকে বলছি।
ডিটেকটিভের সঙ্গে দুই গোয়েন্দাও লেগে রইল। কোনখান থেকে পোশাক চুরি করে কোথায় বদলেছে, বের করা হলো। সিঁড়ি, চিলেকোঠা, এবং মানুষ লুকিয়ে থাকা যায় এ রকম সবখানে খুঁজে দেখা হলো। কিন্তু পাওয়া গেল না লোকটাকে।
হতাশ হয়ে নিজেদের ঘরে ফিরে এল দুই গোয়েন্দা। সঙ্গে সঙ্গে এল ডিটেকটিভ। জিজ্ঞেস করল, লোকটা দেখতে কেমন?
আনমনে বিড়বিড় করল কিশোর, বা-বা, আসল কথাটা জিজ্ঞেস করছে এতক্ষণে। এই লোক আর কি ডিটেকটিভগিরি করবে! নীরবে ছবিটা বাড়িয়ে দিল সে।
দেখল ডিটেকটিভ। এই চেহারার কাউকে দেখতে পেলে গোয়েন্দাদের। জানাবে, কথা দিয়ে বেরিয়ে গেল সে।
পালাল কি করে ব্যাটা? কিশোরের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল রবিন।
হয়তো কোন ঘরের ফায়ার-এসকেপ দিয়ে।
হাতমুখ ধুয়ে, খানিক বিশ্রাম নিয়ে, নাস্তা খেয়ে আবার বেরোল দুই গোয়েন্দা। পলার দেয়া ঠিকানা মোতাবেক লুক ব্রাউনের বাড়িতে যাবে।
নিজের বাড়ি নয়, একটা বোর্ডিং হাউসে ভাড়া থাকত ব্রাউন। হাউসের মালিক এক মহিলা, দরজা খুলে দিল। কথা বলে অতিরিক্ত। ভীষণ মোটা, বয়েস পঞ্চাশ পেরিয়েছে, পাক ধরতে শুরু করেছে চুলে। নাম মিসেস টোবারগট।
কিশোরদেরকে বসার ঘরে নিয়ে এল মহিলা। রান্নাঘর থেকে আসছে। খাবারের সুগন্ধ। নিশ্চয় রান্না করছিল মিসেস টোবারগট।
লুক ব্রাউনের ব্যাপারে জানতে চাইল কিশোর।
মিস্টার ব্রাউন? মহিলা বলল, ওর ব্যাপারে তো কত কথাই জানি। ভাল বোর্ডার ছিল। আমার রান্না খুব পছন্দ করত। তা শুধূমুখে তোমাদের সঙ্গে কথা বলছি কেন? এক কাপ চা অন্তত দেয়া উচিত।
বিনয়ের সঙ্গে চা খাওয়াটা এড়াতে চাইল কিশোর। কিন্তু কোনমতেই শুনল না মিসেস টোবারগট। চা তো আনলই, তার সঙ্গে নিজের তৈরি বিস্কুটও নিয়ে এল।
মানুষকে খাওয়াতে আমার খুব ভাল লাগে, মিসেস টোবারগট বলল। খাওয়ার জন্যে কত চাপাচাপি করেছি ব্রাউনকে, মোটা বানাতে চেয়েছি। কিন্তু যে হাড্ডি সেই হাড়ি। আমার দেয়া সব খাবার খেত, কিচ্ছু ফেলে রাখত না। কিন্তু তালপাতার সেপাই থেকে বিন্দুমাত্র উন্নতি হয়নি তার। অবাক কাণ্ড! আরি, খাচ্ছ না কেন? একটা বিস্কুটও ফেলে রাখা চলবে না। তোমাদের বয়েসী ছেলেদের অনেক বেশি খেতে হয়। নইলে শরীর টেকে না।
খাচ্ছি তো, আরেকটা বিস্কুট নিতে নিতে বলল কিশোর। খুব ভাল বানিয়েছেন। হ্যাঁ, ব্রাউনের কথা বলুন।
কি আর বলব, এক আজব লোক ছিল! সারাক্ষণই বাইরে যেত। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বেরোত। আসত আর যেত, যেত আর আসত, একেবারে যেন চড়ুই পাখি। এত ঘোরাফেরা করত বলেই বোধহয় স্বাস্থ্য ভাল হত না। চুলও পাতলা হয়ে যাচ্ছিল।
কাজ করত কখন? জানতে চাইল রবিন। কিছু তো একটা নিশ্চয় করত। নইলে আপনার ঘর ভাড়া দিত কি করে?
কি জানি কি করে! সেটা আরেক আশ্চর্য! ভাড়াটেদের ব্যক্তিগত ব্যাপারে কখনও তাদের কাছে জানতে চাই না আমি। আরি, চুপ করে আছ কেন? বিস্কুটগুলো শেষ করো। খাও, খাও, লজ্জা নেই, আরও এনে দেব।
মূসাকে দরকার ছিল, তাহলে খাইয়ে শান্তি পেত মিসেস টোবারগট ভাবল রবিন।
কিশোর বলল, তাহলে বলছেন খুব ভাল বোর্ডার ছিল ব্রাউন?
ছিল। একটা পয়সা বাকি রাখেনি আমার। আর রাখবে কি, ছয় মাসের খাবারের খরচ সহ ভাড়া অগ্রিম দিয়ে দিয়েছিল। সে-ই বরং আমার কাছে পায়। টাকার বোধহয় কোন মায়া ছিল না তার।
বিস্কুটগুলো আপনার দারুণ! আরেকবার প্রশংসা করল কিশোর। হু, তা বাইরে যে যাচ্ছে, আপনাকে বলেছিল ব্রাউন?
হয়তো বলেছিল, আমার মনে নেই। থাকবে কি? এত বেরোয় যে লোক, সে বাইরে যাওয়ার কথা বললে কারও খেয়াল থাকে নাকি? মাঝে মাঝেই দীর্ঘদিনের জন্যে বেরিয়ে যেত।
হঠাৎ দু-জনকে অবাক করে দিয়ে সামনে ঝুঁকল মিসেস টোবারগট। স্বর। নামিয়ে বলল, মনে হয় রাজনীতি বা কোন বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত ছিল সে! ওই যে ল্যাটিন-আমেরিকান দেশগুলো আছে না, ওসব দেশে তো সব সময়ই গণ্ডগোল লেগে থাকে। আমার ধারণা, ওখানকার কোন দলের সঙ্গে জড়িত। ছিল। আমি যে বললাম কাউকে বলে দিয়ো না আবার!
না, না, বলব না! সতর্ক হলো কিশোর। কি করে বুঝলেন?
তার ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে এমন সব ছবি দেখেছি, তাতেই মনে হয়েছে। প্লেনের মধ্যে তোলা তার ছবি, ওই প্লেনগুলো আবার ব্যবহার হয়। যুদ্ধের সময়। মাথায় ইয়াবড় হ্যাট তার, হ্যাঁটের কানা তো না, যেন গরুর গাড়ির চাকা। তার সঙ্গে আরও লোক আছে। সবার কোমরেই গুলির বেল্ট, খাপে ঝোলানো পিস্তল। আরি, বিস্কুট খাও না কেন?
কই, খাচ্ছি তো! মহিলার কথা শুনতে শুনতে কৌতূহলে চিবানো থামিয়ে দিয়েছিল কিশোর, আবার কামড় বসাল হাতের বিস্কুটে।
হু, বোঝা গেছে। এই জন্যেই লফার বলত তার দুঃসাহসী বন্ধু, রবিন বলল।
নামটা চিনতে পারল মিসেস টোবারগট। বলল, হ্যাঁ, ওই ভদ্রলোককেও এখানে নিয়ে আসত ব্রাউন। মহিলার মুখ দেখে মনে হচ্ছে এ সব খবর বলতে পারায় তার খুশিই লাগছে। মিস্টার লফারই আমাকে বলেছে কি সাংঘাতিক যোদ্ধা তার বন্ধু লুক ব্রাউন, কি ভাবে বিদেশীদের হয়ে লড়াই করেছে। ব্রাউনের কাছে এ সব কাজ নাকি রোমাঞ্চকর অ্যাডভেঞ্চারের মত। বন্ধুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে যেত ভদ্রলোক।