পারবে? সত্যিই সাহায্য চান মহিলা। বার বার জানালা দিয়ে তাকাচ্ছেন। বাইরে। রাতের অন্ধকার নামছে। এভাবে এতক্ষণ তো দেরি করে না কখনও লিলি?
শহরে যায়নি তো? বড় একটা ট্রেতে চকলেট কেকের প্লেট সাজাতে সাজাতে বলল কিশোর।
না, গেলে বলে যেত। ঘণ্টা দুই আগে হারিকেনকে নিয়ে বেরিয়েছে। এক্সারসাইজ করাতে। বলেছে, খাওয়ার আগেই চলে আসবে। দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ল মহিলার মুখে। কি যে করবে বুঝতে পারছি না… থেমে গেলেন আচমকা। এ কি হয়েছে দেখার জন্যে ঘুরে তাকাল কিশোর। সাদা হয়ে গেছে কেরোলিনের মুখ। জানালার বাইরে তাকিয়ে রয়েছেন। কি দেখেছে দেখার জন্যে ছুটে এল সে জানালার কাছে। ধক করে উঠল বুক। ঠাণ্ডা হয়ে আসছে হাত-পা।
একটা গাড়ি আসছে। পেছনে আসছে কালো একটা ঘোড়া। পিঠে জিন বাঁধা, অথচ আরোহী নেই।
০৩.
একটানে পেছনের দরজাটা খুলেই লাফিয়ে বাইরে নামল কিশোর। ছুটল চতুর ধরে, ভয় খাওয়া ঘোড়াটার দিকে। ঘ্যাচ করে ব্রেক কষল গাড়িটা।
ঘোড়াটার কাছে চলে এল কিশোর। জিন আঁকড়ে ধরতে গেল। মাথা ঝাড়া দিয়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করল ওটা, চাবুকের মত শপাং করে এসে ওর মুখে বাড়ি লাগতে যাচ্ছিল ঘোড়ার মুখের লাগাম। সময়মত হাত বাড়িয়ে ধরে ফেলল ওটা। লুক বোলান। ধমকে উঠল কিশোরের উদ্দেশ্যে, সরো! সরে যাও!
তীক্ষ্ণ ডাক ছাড়ল হারিকেন। লাফিয়ে উঠল পিছনের পায়ে ভর দিয়ে। চোখে বন্য দৃষ্টি।
দৌড়ে আসছে ব্রড জেসন। লিলি কোথায়, লিলি? যেন ঘোড়াটাকেই জিজ্ঞেস করছে সে। কাছে এসে হারিকেনকে সামলাতে লুককে সাহায্য করল সে।
কে জানে, কোথায়! লুক বলল।
আরেকবার সাদা গাড়িটার দিকে তাকাল কিশোর। দুজন লোক বেরিয়ে এল। একজনকে চিনতে পারল, খাট ফিলিপ নিরেক। লম্বা অন্য লোকটাকে চিনল না।
দৌড়ে আসছেন কেরোলিন। এই, লিলিকে খুঁজতে যাও না কেউ! কিশোরের কাছে এসে দাঁড়ালেন। এমন ভঙ্গিতে তাকালেন, যেন চাইছেন কিশোরই যাক। অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। এরকম করে তো কখনও বাইরে থাকে না মেয়েটা! র্যাঞ্চে ইদানীং বড়ই গোলমাল চলছে। কিশোর, রবিনের আম্মা তোমাদের কথা সবই বলেছে আমাকে। সে জন্যেই তোমাদেরকে পাঠাতে বলে দিয়েছিলাম ওকে। প্লীজ, লিলিকে খুঁজে আন!
চেষ্টা করব। হারিকেনকে নিয়ে কোথায় গিয়েছিল লিলি, আন্দাজ করতে পারেন?
মাথা নাড়লেন কেরোলিন। জোরে জোরে হাত ডলতে লাগলেন। জানলে তো ভালই হত। অনেক জায়গা আছে এখানে যাওয়ার, ডজনখানেক পথ আছে। কোনটা দিয়ে কোথায় গেছে কে বলবে?
বেশ, তাহলে এক কাজ করি, ঝড়ের গতিতে চলছে কিশোরের মগজ। একটার পর একটা উপায় বের করার চেষ্টা করছে। টর্চ আর ঘোড়া নিয়ে কয়েকজন চলে যাই আমরা। বনের ভেতরে খুঁজব। কয়েকজন যাক গাড়ি নিয়ে। মাঠ আর অন্যান্য খোলা জায়গাগুলোতে খুঁজবে। কোথাও হয়তো পিঠ থেকে ফেলে দিয়ে এসেছে তাকে ঘোড়াটা। হাত-পা ভেঙে পড়ে আছে, আসতে পারছে না।
ওহ, গড! প্রায় কেঁদে ফেললেন কেরোলিন।
আস্তাবল থেকে বেরিয়ে এসে কিশোরের শেষ কথাগুলো শুনেছে লুক। বারান্দায় জমায়েত হওয়া মেহমানদের দিকে তাকাল একবার। কিশোরকে বলল, তোমরা মেহমান। এসব তোমাদের কাজ নয়। আমরাই যাচ্ছি খুঁজতে। ফিলিপ নিরেকের ওপর চোখ পড়তে উদ্বিগ্ন হল সে।
আমি সাহায্য করতে চাই, কিশোর বলল।
দেখো, শোনো আমার কথা! কর্কশ হয়ে উঠল লুকের কণ্ঠ। এদিককার পাহাড়গুলো ভীষণ খারাপ। তোমরা আমাদের দায়িত্বে রয়েছ। কিছু একটা হয়ে গেলে জবাব আমাদেরকেই দিতে হবে। এই রিস্ক নিতে পারি না। আমরা এখানে অনেক লোক, আমরাই পারব। মেহমানদের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে বলল, আপনারা সব ভেতরে যান। দাবা আছে, তাস আছে, খেলুনগে। ব্রড ভাল গিটার বাজাতে পারে। বাজিয়ে শোনাবে আপনাদের।
মেহমানদের যাবার ইচ্ছে নেই, তবু এক এক করে ঢুকে গেল ভেতরে।
কিশোর দাঁড়িয়েই রইল। আমি সত্যিই সাহায্য করতে পারব।
এগিয়ে আসছে নিরেক। তার সঙ্গের লম্বা লোকটার চেহারাটা রুক্ষ। মাথায় রুপালি চুল।
আরেকটু হলেই গাড়ির ওপরই এসে পড়েছিল ঘোড়াটা! এখনও গলা কাঁপছে নিরেকের। লুকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, লিলি কোথায়?
নেই।
ঝুলে পড়ল ব্যাংকারের চোয়াল। নেই মানে? আমি আর পাইক তো ওর সঙ্গেই দেখা করতে এলাম…
লম্বা, কঠিন চেহারার লোকটার দিকে আবার তাকাল কিশোর। এই তাহলে হারনি পাইক। লিলির সম্পত্তি যে কেড়ে নিতে চায়।
আজ বিকেলেও ফোন করেছি, নিরেক বলল। ওকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্যে।
বারান্দার রেলিঙে হেলান দিল লুক। অন্য সময় আসতে হবে তাহলে। খাট লোকটার ওপর থেকে লম্বাজনের ওপর সরে গেল তার নজর। লিলি নিখোঁজ।
নিখোঁজ! রেগে গেল নিরেক। আমাকে বিশ্বাস করতে বল একথা?
করলে করবেন না করলে নেই, আপনার ইচ্ছে।
আমাদের ফাঁকি দেয়ার জন্যেই লুকিয়েছে।
কেন করবে একাজ? কিশোর জিজ্ঞেস করল।
কিশোরের কথায় কানই দিল না নিরেক, তাকিয়ে রয়েছে লুকের দিকে। র্যাঞ্চটা যে শেষ, একথা আমার মতই তুমিও জানো৷ মিস্টার পাইক একটা লোভনীয় প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন।
পরেও লোভটা দেখাতে পারবেন তিনি, ভোঁতা গলায় বলল লুক। মেয়েটার সঙ্গে গণ্ডগোল করবেন না আপনারা, বলে দিলাম। ভাল হবে না।
রাগ ঝিলিক দিল পাইকের চোখে, দরজা দিয়ে আসা আলোয় সেটা দেখতে পেল কিশোর। ভ্রূকুটি করল। অস্বস্তিভরে আঙুল বোলাল তার ওয়েস্টার্ন টাইতে। বলল, চল, ফিলিপ। এখানে আর দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই।