আসলেই ঘোড়াটা ভাল, জেনারেলের পিঠে আলতো চাপড় দিয়ে বলল কিশোর।
কোরালের ভেতরে একটা নড়াচড়া চোখে পড়ল তার। ভেতরে ছোটাছুটি করছে ইউনিকর্ন। পিঠে আরোহী নেই। এই দিনের আলোয়ও ভয়ঙ্কর লাগছে। ঘোড়াটাকে। ব্রডকে জিজ্ঞেস করল, কাল কে গেট খোলা রেখেছিল জানেন?
হাসি মলিন হয়ে গেল ব্রডের। আমি কি করে জানব? আমি তো ডিনারে বসেছিলাম।
সব মেহমানরাই বসেছিল।
নতুন কয়েকটা ছেলেকে আনা হয়েছে কাজ করতে, ওদের কেউ হতে পারে। কিংবা তোমার বন্ধুও খুলতে পারে।
পাশে এসে দাঁড়াল রবিনের ঘোড়া, স্যাণ্ডি। লাফিয়ে নামল রবিন। নাচতে লাগল চঞ্চল ঘোড়াটা, কিছুতেই যেন স্থির থাকতে পারে না।
মুসা কোথায়? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
থাবা দিয়ে কাপড় থেকে ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে রবিন বলল, পেছনে। মুসা আর ডক্টর, দুজনকেই পেছনে ফেলে এসেছে স্যাণ্ডি। ধুলো খাচ্ছে ওরা।
কপালে হাত রেখে শুকনো মাঠের ওপর দিয়ে তাকাল ব্রড। হলোটা কি? ওদের তো এতক্ষণে চলে আসার কথা। যাই, দেখি কি হলো? তোমরা তোমাদের ঘোড়াগুলোকে ঠাণ্ডা করতে পারবে?
তা পারব। আমরা আসব, দরকার হবে? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
না। লিলি জিজ্ঞেস করলে বল কোথায় গেছি। এখনই চলে আসব। ঘোড়া চালিয়ে রওনা হয়ে গেল ব্রড।
ঘোড়ার লাগাম ধরে টানতে টানতে ওগুলোকে গোলাঘরের কাছে নিয়ে চলল দুই গোয়েন্দা। কিশোর বলল, রবিন, বলো তো কাল কে কোরালের গেট খুলে রেখেছিল? এ ব্যাপারটা কি? কিশোরের দিকে তাকাল রবিন, সত্যিই রহস্য পেয়ে গেলে মনে হচ্ছে?
হচ্ছে, যদিও নিশ্চিত হতে পারছে না কিশোর। সোনালি চুল, লম্বা, বেনিরই বয়েসী একটা মেয়েকে আসতে দেখল। পরনে জিন্স, গায়ে সিলভার-ট্রিম ওয়েস্টার্ন শার্ট, গলায় লাল রুমাল, মাথায় সাদা হ্যাট।
হাই, আরেকটু কাছে এসে ঝকঝকে সাদা দাঁত বের করে হেসে বলল মেয়েটা, ব্রডকে দেখেছ? আমি বেনি কুপার, ওর বন্ধু।
নিজের আর রবিনের পরিচয় দিল কিশোর। তারপর বলল, এই একটু ওদিকে গেছে। এখুনি চলে আসবে।
গামলার কাছে এনে জেনারেলকে পানি খেতে দিল সে। খাওয়া হয়ে গেলে কোরালে ঢুকিয়ে দিয়ে এল অন্যান্য ঘোড়ার সঙ্গে।
অপেক্ষা করছে বেনি। ঘড়ি দেখল। সময় নেই আমার। আব্বাকে বলে এসেছি, শিগগিরই গিয়ে প্র্যাকটিস করব। মাঠের ওপাশে তাকাল ব্রডকে দেখার আশায়।
স্যাণ্ডিকে ঢোকানর জন্যে গেট খুলছে রবিন। ফিরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ইনডিপেনডেন্স ডে রোডিওতে আপনিও খেলবেন নাকি?
খেলব। কোমরের বেল্টের রূপার বাকলসের মতই চকচক করল বেনির হাসিটা। এই সময় লিলিকে আসতে দেখা গেল।
হাই, বেনিকে বলে কিশোর আর রবিনের দিকে ফিরল লিলি। আর সবাই কোথায়?
আসছে। কিশোর তাকিয়ে রয়েছে বেনির দিকে, লক্ষ্য করল, কি করে দ্রুত মিলিয়ে গেল মেয়েটার হাসি। ব্রড চলে এসেছিল আমার সঙ্গে। আবার গেছে দেখতে কোন গোলমাল হলো কিনা।
তাই নাকি?
কি শুনছি, লিলি? বেনি জিজ্ঞেস করল, আবার নাকি ব্লেডিওতে ঢুকবে?
আর কোন উপায় নেই, উদ্বিগ্ন হয়ে দিগন্তের দিকে তাকাচ্ছে লিলি। বয়েসের ইনডিপেনডেন্স ডে রোডিও দিয়েই শুরু করব আবার। বিকেলের উজ্জ্বল রোদ থেকে চোখ বাঁচাতে চোখের পাতা মিটমিট করছে সে। যাই। দেখা দরকার, কি হলো।
আবার ঘড়ি দেখল বেনি। ওকে বল আমি এসে খুঁজে গেছি। গুডবাই না বলেই ঘুরে দাঁড়াল বেনি, গটগট করে হাঁটতে লাগল তার পিকআপের দিকে।
আপনি আবার খেলবেন শুনে খুশি হতে পারেনি ও, কিশোর বলল।
হবে কি করে? আমার কাছে হেরে যাওয়ার ভয় আছে না। ছোটবেলা থেকেই আমরা প্রতিদ্বন্দ্বী। নাকের ডগা চুলকাল লিলি। ব্রডের সাথে বেশ ভাব মনে হয়! ও আসার পর থেকে প্রায়ই আসে আমাদের এখানে।
ওই যে, আসছে, চিৎকার করে বলল রবিন।
মাথা ঘুরিয়ে কিশোরও দেখতে পেল। আসছে দলটা।
এগিয়ে এল মুসা। চোখ বড় বড়। মুখ দিয়ে বাতাস ছাড়ছে। উত্তেজিত লাগছে তাকে।
কি ব্যাপার? জানতে চাইল রবিন।
ডক্টরের জিন ঢিল হয়ে গিয়েছিল, কাছে এসে বলল মুসা। ক্যাকটাসের পিঠ থেকে নেমে ডলে দিতে শুরু করল ওর চামড়া। তার জন্যে থামতেই হলো আমাদের।
চড়লে কেমন? জিজ্ঞেস করল।
দারুণ! ক্যাকটাসের জিন খোলায় ব্যস্ত হল মুসা। ঘোড়াটাও খুব ভাল। জিন খুলে নিয়ে ওটার পেছনে চাপড় দিয়ে বলল সে, যা, যা। কোরালের দিকে দুলকি চালে এগিয়ে গেল প্যালেমিনো।
.
আগের দিনের চেয়ে আধঘন্টা পরে ডিনারের ঘন্টা পরল এদিন। টেবিলে রবিন আর মুসার পাশে বসল কিশোর। দেখল, লিলির চেয়ারটা খালি। নিচু গলায় নিজেদের মধ্যে কথা বলছে কয়েকজন শ্রমিক। স্পষ্ট শোনা যায় না সব। কান। খাড়া করে শোনার চেষ্টা করল কিশোর।
এখনও আসছে না কেন? ফোরম্যান লুক বোলান বলল।
আসবে, বলল ব্রড। ও তো আর শিশু নয়, ঠিকই চলে আসবে। কাজেটাজে গেছে হয়তো কোথাও।
বড় বেশি উল্টোপাল্টা ব্যাপার ঘটছে ইদানীং র্যাঞ্চে, বলল আরেকজন র্যাঞ্চ হ্যাণ্ড। আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিশোরের চোখে চোখ পড়তেই থেমে গেল।
গোলমাল হয়েছে, ফিসফিস করে বন্ধুদেরকে বলল কিশোর। দেখতে যাচ্ছি।
বেশি চিন্তা করছ, মুসা বলল। দেখগে, কোথায় কি কাজ করছে।
ডিনারের পরও করতে পারত। কেরোলিনকে জিজ্ঞেস করব। তোমরা এখানে থাক, আর কিছু বলে কিনা ওরা শোন।
রান্নাঘরে চলে এল কিশোর। অস্থির লাগছে কেরোলিনকে। কিছু করতে হবে নাকি? জিজ্ঞেস করল কিশোর।