হয়েছে নাকি?
নিশ্চয়ই। ওর কয়েকটা বাচ্চার বয়েস তিন বছর হয়ে গেছে। ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে ওগুলোকে। ঘোড়া যারা চেনে তাদের ধারণা রোডিও খেলার জন্যে খুবই ভাল জানোয়ার হবে ওগুলো। আব্বার আশা ছিল, ইউনিকের বাচ্চা বিক্রি করেই র্যাঞ্চের ধার শোধ করে দেয়া যাবে। কিন্তু তার আশা পূরণ হওয়ার আগেই চলে গেল অন্য দুনিয়ায়। দীর্ঘশ্বাস ফেলল লিলি।
সরি, সহানুভূতি জানাল কিশোর।
র্যাঞ্চিং ব্যবসা খুব ভাল বুঝত আব্বা। তার কাছেই কাজ শিখেছে লুক। সে ও ভাল বোঝে। হঠাৎ কি মনে হতেই সোজা হয়ে দাঁড়াল, লিলি। চলো, তোমাকে। একটা জিনিস দেখাব। রেসের ঘোড়া
লিলির পিছু পিছু আস্তাবলে ঢুকল কিশোর। আলো জ্বালল লিলি। নাক দিয়ে শব্দ করল কয়েকটা ঘোড়া। স্টলের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় গলা বাড়িয়ে দিতে লাগল ওগুলো, ওদের নাম ধরে ডাকল সে, আদর করে হাত বুলিয়ে দিল। মাথায়। কিশোরও কোন কোনটাকে আদর করল, দেখল ওগুলোর টলটলে বাদামী চোখ।
স্টলের শেষ মাথায় এসে দাঁড়াল ওরা। খড়ের বিছানার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। অবিকল ইউনিকর্নের মত দেখতে আরেকটা ঘোড়া। শান্ত সুবোধ, চোখে আগুন নেই। ওর নাম হারিকেন, ঘোড়াটার গলায় হাত বোলাতে লাগল লিলি। ইনডিপেনডেন্স ডে রেডিওতে এটার পিঠেই চড়ব আমি। হারিকেন নামটা ওর জন্যে ঠিকই হয়েছে, ঝড়ের মতই গতি। ওকে ছাড়া জেতার আশা কমই আমার।
দেখতে তো একেবারে…
ইউনিকের মত।
যমজ।
রেয়ার, তবে হয়। মেজাজ একেবারে বিপরীত দুটোর। এমনিতে খুব চুপচাপ থাকে হারিকেন, কিন্তু খেলার সময়… ওরিব্বাপরে, না দেখলে বিশ্বাসই করবে না। পকেট থেকে একটা আপেল বের করে ঘোড়াটাকে খেতে দিল লিলি।
আলাদা করে চেনেন কি করে দুটোকে?
চেনা খুবই কঠিন, তবে আমি পারি। সামনের ডান পায়ের খুরটা দেখো। সামান্য ওপরে একটুখানি জায়গার নোম সাদা দেখতে পাচ্ছ না? শুধু এটারই আছে, ইউনিকের নেই।
গলা বাড়িয়ে দেখল কিশোর। খুব ভাল করে না তাকালে চোখেই পড়ে না, সাদা অংশটা। হারিকেন নিশ্চয় খুব দামি?
তা তো বটেই। কিন্তু আমার মতে ইউনিকের দাম আরও বেশি হওয়া উচিত। ওর একেকটা বাচ্চা যা হয় না, আগুন।
এক পা এগিয়ে এসে রেইলের ওপর দিয়ে মাথা বাড়িয়ে দিল হারিকেন। কুচকুচে কালো রঙ, অনেক উঁচু, একটা দেখার মত জানোয়ার। ওর মসৃণ গলায় হাত বোলাতে লাগল কিশোর। ঘোড়াটাও বাহুতে নাক ঠেকিয়ে দিয়ে আদর নিতে লাগল।
লিলি হাসল। ও তোমাকে পছন্দ করেছে।…চলো, আর দেরি করব না। আলো নিভিয়ে দিল সে।
চত্বর ধরে হাঁটতে হাঁটতে কিশোর জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা, গেটটা কে খুলে রাখল, বলুন তো?
কি জানি, মাথা নাড়ল লিলি।
এরকম আর হয়েছে?
হয়েছে, দুএকবার। নিষেধ থাকা সত্ত্বেও মেহমানরা ঢোকে, তারপর লাগাতে ভুলে যায়। ব্যাপারটা নিছকই অ্যাক্সিডেন্ট। বলল বটে লিলি, কিন্তু তার কণ্ঠস্বরে মনে হল না একথা বিশ্বাস করে সে। যত যাই বলো, আমার ভাই সাহস হচ্ছে না, ভয়ে ভয়ে ঘোড়াটার দিকে তাকিয়ে। রয়েছে মুসা। আগের সন্ধ্যার কথা ভুলতে পারছে না।
ভয় নেই, হেসে বলল কিশোর। ভাল ঘোড়াই দেয়া হবে তোমাকে। শয়তানী করবে না।
পরদিন সকালে আস্তাবলের কাছের বড় কোরালের বেড়ায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে ওরা। অন্য মেহমানরাও রয়েছে কাছাকাছি।
যার যার দায়িত্বে চড়বেন, ব্রড বলল। কি করে জিন পরাতে হয়, লাগাম লাগাতে হয় শিখিয়ে দেব। কারও চড়ার অভ্যেস আছে?
চড়েছে, জানাল তিন গোয়েন্দা। ওদেরকে সরিয়ে দেয়া হল বোসটনের ডক্টর কাপলিঙের পাশে। ডক্টরের স্ত্রী এবং কন্যাকে সরিয়ে আনা হলো কানসাসের একটা পরিবার আর শিকাগোর দম্পতি মাইক ও জেনি এজটারের পাশে, এরা কেউই চড়তে জানে না।
সবাইকেই একটা করে ঘোড়া আর জিন দিল ব্রড। কিশোরকে দেয়া হলো। একটা জেলডিং ঘোড়া। হরিণের চামড়ার মত ফুটফুটে চামড়া। নামটা বিচিত্র, জেনারেল উইলি। সবচেয়ে ভাল ঘোড়াগুলোর একটা দিলাম তোমাকে, ব্রড বলল। দেখো চড়ে, মজা পাবে। লিলি বলছিল ঘোড়ারা নাকি তোমাকে পছন্দ করে।
ব্রডকে ধন্যবাদ দিয়ে ঘোড়াটার মণ চামড়ায় হাত বোলাতে লাগল কিশোর।
জিন পরাতে শুরু করল সে। রবিন, মুসা আর ডক্টর কাপলিংও যার যার ঘোড়ায় জিন পরাতে লাগলেন।
রবিনকে দেয়া হয়েছে একটা মাদী ঘোড়া, কিছুটা চঞ্চল স্বভাবের, জিন। পরাতে গেলে কেবলই পাশে সরে যেতে চায়। নাম, স্যাণ্ডি। মুসার ঘোড়াটাও একটা প্যালোমিনো মাদী ঘোড়া, শান্ত, নাম ক্যাকটাস।
নিজের ঘোড়ায় পিঠ সোজা করে বসল ব্রড। পথ দেখিয়ে সবাইকে নিয়ে চলল ধুলোঢাকা একটা আঁকাবাঁকা পথ ধরে। দুধারে পাইনের ঘন জঙ্গল। কিছুদূর। এগিয়ে একপাশে দেখা গেল একটা পাহাড়ী নালা বয়ে চলেছে। পানি বেশি না। পরিচিত পথ ধরে সহজ ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছে ঘোড়ার মিছিল।
ফেরার পথে যার যেভাবে ইচ্ছে ঘোড়া চালানর অনুমতি দিল ব্রড।
লাফ দিয়ে আগে বাড়ল কিশোরের জেনারেল উইলি। মসৃণ গতি। সামনের দিকে ঝুঁকে রইল কিশোর। বাতাসে উড়ছে ঘোড়ার ঘাড়ের লালচে চুল। অন্যদের, এমনকি ব্রডেরও অনেক আগেই কোরালের কাছে পৌঁছে গেল ঘোড়াটা। গর্ব হতে লাগল কিশোরের।
ভাল চালাতে পার তো তুমি, পাশে এসে ওর প্রশংসা করল ব্রড।