নাহ্, মাথা নাড়ল মুসা। তবে তোমরা আসতে আরেকটু দেরি করলেই হগেছিলাম। বাপরে বাপ, এরকম সাংঘাতিক জানোয়ার আর দেখিনি! এমন ভাবে আটকে ফেলল আমাকে কিছু করতে পারলাম না। হাসল মুসা। বড্ড খিদে পেয়েছে। কি দিয়েছে টেবিলে, দেখেছ? ডাবল চিজ আর পেপারোনি পিজা হলে খুব ভাল হত।
পুরোপুরিই স্বাভাবিক হয়ে গেছে মুসা, কথাতেই বোঝা গেল। হাসল রবিন। মুসাকে হতাশ করার জন্যেই যেন বলল, না, ওই জিনিস এখানে পাবে না। খেতে হবে মোষের কাবাব আর কালো কফি, ওয়েস্টার্ন কাউবয়দের মত।
মুখ বাঁকাল মুসা। আরে না, কি যে বলো। তার চেয়ে ভাল জিনিস নিশ্চয় বানাবেন কেরোলিন আন্টি। মেহমানরা কি আর অত বাজে খাবার খেতে পারে নাকি।
কিশোরও হাসল। তোমার জন্যে একলা যদি বানায়। আন্টির সঙ্গে বেশ খাতির জমিয়ে ফেলেছ এসেই, খেয়াল করেছি।
ও, রান্নাঘরে কাজ করেছি দেখে? তা তো করতেই হবে। আমাদেরকে তো বলাই হয়েছে, যতদিন থাকব, র্যাঞ্চের কাজ করতে হবে। তাহলে থাকা-খাওয়া ফ্রি…তোমরা দুজন বেরিয়ে গেলে, আমিই তোমাদের হয়ে…
কেন যে রাজি হলাম, গুঙিয়ে উঠল রবিন। ওসব রান্না-ফান্না এখন ভাল লাগে না আমার…।
কেন রাজি হয়েছি, খুব ভাল করেই জান তুমি, বাধা দিয়ে বলল কিশোর। তুমিই তো অনুরোধ করলে আমাদেরকে আসতে…
করলাম তোমার কথায়। আমি কি আর জানি নাকি এতটা খারাপ অবস্থা। বেহমার বাল্যবন্ধুর অনুরোধ রাখতে এসে শেষে কোন্ হেনস্তা হতে হয়। কে জানে!
চোখ মিটমিট করল কিশোর। তা বোধহয় হব না। আর অবস্থা অতটা। খারাপও বোধহয় নয়, খালি রান্নাঘরেই বসে থাকতে হবে না।
ভুরু কুঁচকে তাকাল রবিন, কেন, রহস্য পেয়ে গেলে নাকি এরই মধ্যে?
প্রশ্নের জবাব না দিয়ে দুজনকে বলল কিশোর, এক কাজ করো, তোমরা চলে যাও। আমি আসছি।
কি করবে? মুসা জানতে চাইল।
কাজ আছে। তোমরা যাও। পরে বলব সব।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাড়ির দিকে রওনা হয়ে গেল রবিন আর মুসা।
কোরালের বেড়ার গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়াল কিশোর। তার দিকে কড়া চোখে তাকাল একবার লুক। কেয়ারই করল না কিশোর, তাকিয়েই রয়েছে। খেপা ঘোড়াটাকে কিভাবে সামলাচ্ছে লিলি, দেখছে। কিছুতেই দড়ির বাঁধনে আটকা পড়তে চাইছে না ইউনিকর্ন, লাথি মারছে মাটিতে, মাথা ঝাড়ছে, ফোঁস ফোঁস। করছে। মোলায়েম গলায় কথা বলছে লিলি।
অবশেষে ধরা দিতেই হলো ঘোড়াটাকে।
কিশোরের দিকে এগিয়ে এল লুক। সাংঘাতিক বোকামি করে ফেলেছিল তোমার বন্ধু। ওটা ঘোড়া তো না, একটা শয়তান। খুনী।
খুনী? মানে?
লুক জবাব দেয়ার আগেই ঘোড়ার দড়ি ধরে ফিরে তাকিয়ে লিলি বলল, অহেতুক দোষ দিচ্ছ কেন? ইউনিক কাউকে খুন করেনি।
নাকি সুরে ডেকে উঠল ঘোড়াটা।
সরু হয়ে এল লুকের চোখের পাতা। কিশোরকে বলল, একটা কথা বিশ্বাস, করতে পারো, ভয়ানক বদমেজাজী জানোয়ার ওটা। একটু আগে নিজের চোখেই। তো দেখলে। ওটার কাছ থেকে দূরে থাকবে। লিলির দিকে এগিয়ে গেল সে। ওর হাত থেকে দড়িটা নিয়ে বলল, এই শয়তানটাকে আমি সামলাচ্ছি। তুমি যাও। কিশোর তোমার সঙ্গে কথা বলার জন্যে দাঁড়িয়ে আছে।
দড়ি হাতবদল হতেই দ্বিধায় পড়ে গেল ইউনিকর্ন। নেচে উঠল। দড়ি ধরে জোরে ঝাঁকি দিয়ে ওকে শান্ত হওয়ার ইঙ্গিত করল লুক। টেনে নিয়ে চলল।
বেড়ার বাইরে এসে কিশোরের কাছে দাঁড়াল লিলি। মুসার কিছু হয়নি তো?
না। ভয় পেয়েছিল, সেরে গেছে।
পাবেই। বড় বড় র্যাঞ্চ হ্যাণ্ডদের ভয় পাইয়ে দেয় ইউনিক, আর মুসা তো… কথা শেষ না করেই কিশোরের দিকে তাকিয়ে হাসল লিলি। তবে খুনী নয়। ঘোড়াটা, একথা বিশ্বাস করতে পার। লুক বাড়িয়ে বলেছে। এটা ওর স্বভাব। কিছু গড়বড় হয়ে গেলেই ওর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়, অযথা দোষ দিতে থাকে একে ওকে। তাছাড়া ইউনিককে ও দেখতে পারে না।
দেখতে পারে না কেন?
আব্বার মৃত্যুর জন্যে ও ইউনিককে দায়ী করে। কিশোরের মতই লিলিও বেড়ায় হেলান দিয়ে তাকাল লুকের দিকে, জোর করে টেনে টেনে ঘোড়াটাকে আস্তাবলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
কেন? আবার প্রশ্ন করল কিশোর।
সে অনেক কথা। ভীষণ বদমেজাজ ঘোড়াটার। কয়েক বছর আগে, রোডিও খেলার জন্যে নেয়া হয়েছিল ওটাকে। প্রচুর বদনাম কামিয়ে বিদেয় হতে হয়েছে। কারোরই চড়ার সাধ্য হয় না ওটার পিঠে। আব্বা তো ঘোষণা করে দিয়েছিল, যে। এক মিনিট ইউনিকনের পিঠে চেপে থাকতে পারবে, তাকে মোটা টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। অনেক কাউবয় চেষ্টা করেছে, কেউ পারেনি। উড়তে শুরু করে ঘোড়াটা। ধোয়াটে হয়ে এল লিলির চেহারা। শেষে আব্বা নিজেই একদিন চেষ্টা করল। ছুঁড়ে ফেলে দিল ওকে ইউনিক। জন্মের মত পঙ্গু হয়ে গেল আব্বা।
তাই? বিড়বিড় করল কিশোর। তারপরই বুঝি আপনাকে রোডিও ছাড়তে হল?
মাথা ঝাঁকাল লিলি। আমাকে আসতে বাধ্য করেছে আসলে লুক। ওকে এমনি দেখে যাই মনে হয়, মনটা ওর খুবই ভাল।
এ ব্যাপারে একমত হতে পারল না কিশোর। তাহলে অ্যাক্সিডেন্টের জন্যে ইউনিককেই দায়ী করে লুক?
হ্যাঁ। কিন্তু ঘোড়াটাকেও দোষ দেয়া যায় না পুরোপুরি। আব্বা তো জানতই ওটা বদমেজাজী, কাউকে পিঠে চড়তে দেয় না, তারপরেও বোকামি করতে গেল কেন? লুকের তো একেবারেই ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু আব্বা শুনল না ওর কথা। অ্যাক্সিডেন্টের পর লুক চেয়েছিল ওরকম একটা বাজে জানোয়ারকে মেরেই ফেলা হোক। খামাখা বিপদ পুষে রেখে লাভ কি। যুক্তি আছে অবশ্য ওর কথায়। এই যেমন আজ আরেকটু হলেই মারা পড়েছিল মুসা। বাতাসে উড়ে এসে পড়া চুল। মুখের ওপর থেকে সরিয়ে দিল লিলি। আব্বা লুকের কথায় কানই দেয়নি। তার ধারণা ছিল, ইউনিক এই র্যাঞ্চের জন্যে একটা অ্যাসেট। চড়তে না দিলে না দিল, প্রজনন তো করতে পারবে। ওর যেসব বাচ্চা হবে, একেকটা সোনার টুকরো।