জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল কিশোর। সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য। এ রকম একটা জায়গাকে কিছু বানিয়ে নষ্ট করা উচিত না।
প্রাণ থাকতে দেবও না আমি! ফুঁসে উঠল লিলি।
কি করে বাধা দেবেন?
ঝিক করে উঠল লিলির সবুজ চোখ। আবার কাজ শুরু করব।
কাজ তো করছেন… থেমে গেল কিশোর। ও, আবার রোডিও?
কেন নয়? জুলাইয়ের চার তারিখে ইডাহোর বয়েসে একটা বিরাট রোডিওর আয়োজন করা হয়েছে। এতবড় আয়োজন এই এলাকায় আর হয়নি। পুরস্কারের টাকাও অনেক বেশি। জিততে পারলে ব্যাংকের ঋণ সহজেই শোধ করে দিতে পারব। শুধু তাই নয়, যে জিতবে তাকে বিজ্ঞাপনে এমনকি সিনেমায়ও অভিনয়ের সুযোগ দেয়া হবে। টাকার আর অসুবিধে হবে না তখন। র্যাঞ্চের খরচ সহজে জোগাতে পারব। এভাবে দুচারটা টুরিস্ট মৌসুম টিকিয়ে রাখতে পারলেই বেঁচে যাবে র্যাঞ্চটা। নিজের আয়েই চলতে পারবে তখন।
হ্যাঁ, ভালই হবে, কিশোর বলল। আইডিয়াটা মন্দ না।
ঘণ্টা শোনা গেল বাড়ির ভেতর থেকে।
ঘড়ি দেখল লিলি। খাবার সময় হয়েছে। লিলিকে দেরি করিয়ে লাভ নেই। ওকে কথা দিয়েছি, আজকে খাবার টেবিলে সাহায্য করব। কিশোরের দিকে তাকাল, তোমাকে এত কিছু বলে ফেললাম, কিছু মনে করনি তো?
লিলির সঙ্গে ডাইনিংরুমে এসে ঢুকল কিশোর। ঢোকার মুখেই দেখা হয়েছে ফোরম্যান লুক বোলানের সঙ্গে, পরিচয় করিয়ে দিয়েছে লিলি। কিশোরের হাসির জবাব দিয়েছে লোকটা সামান্য একটু মাথা নুইয়ে।
লম্বা একটা টেবিলে বসে পড়েছে রবিন।
আরি, তুমি আগে? কিশোর জিজ্ঞেস করল, মুসা কোথায়?
বলতে পারব না। আমি বাথরুমে থাকতেই ও ডেকে বলল, বাইরে ঘুরতে যাচ্ছে।
দেখি, খুঁজে নিয়ে আসিগে। দেরি করলে তো ডিনার মিস করবে।
দরজার দিকে ঘুরল কিশোর, বেরোনর জন্যে। আচমকা, বিকেলের শান্ত বাতাসকে চিরে দিল যেন তীব্র একটা আতঙ্কিত চিৎকার। রেসের ঘোড়া।
.
০২.
চত্ত্বর ধরে ছুটতে ছুটতে আরেকটা চিৎকার শুনতে পেল কিশোর। আস্তাবলের দিক থেকে আসছে।
বিপদে পড়েছে মুসা, ভীষণ বিপদ। কোণঠাসা করে ফেলা হয়েছে তাকে। কোরালের বেড়ায় পিঠ ঠেকিয়ে বাঁকা হয়ে আছে। আক্রমণের ভঙ্গিতে ওর দিকে এগিয়ে চলেছে বিরাট কালো একটা ঘোড়া। ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে কালো চোখের তারা, ঘামে ভেজা চামড়া চকচক করছে সিকিউরিটি ল্যাম্পের আলোয়, নীলচে দেখাচ্ছে।
ধড়াস করে এক লাফ মারল কিশোরের হৃৎপিণ্ড। ইউনিকর্ন।
পেছনের দুপায়ে ভর দিয়ে লাফিয়ে উঠল ঘোড়াটা। সামনের দুই পা গেঁথে ফেলতে চায় মুসার বুকে। কিছুই করার নেই তার। আত্মরক্ষার ভঙ্গিতে মাথার ওপর দুহাত তুলে তাকিয়ে রয়েছে আতঙ্কিত অসহায় দৃষ্টিতে।
কোন রকম দ্বিধা না করে লাফিয়ে কোরালের বেড়া ডিঙাল কিশোর।
সাবধান! পেছন থেকে চেঁচিয়ে হুশিয়ার করল লিলি।
মাথা ঝাড়া দিল ঘোড়াটা। পা চালাল। সামনের দুটো খুর অল্পের জন্যে লাগল না মুসার মুখে।
চিৎকার করে হাত নাড়তে নাড়তে ছুটল কিশোর। ঘোড়াটার নজর এদিকে ফেরাতে চাইছে, যাতে মুসাকে আর আক্রমণ না করে।
ফিরেও তাকাল না ঘোড়াটা। আরেকবার লাফিয়ে উঠল পেছনের পায়ে ভর দিয়ে। ততক্ষণে পৌঁছে গেছে কিশোর। মুসার এক হাত ধরে হ্যাঁচকা টান মারল। সরো, সরে যাও!
পেছনে এসে চিৎকার শুরু করল লিলি। ঘোড়াটার নাম ধরে ডাকতে লাগল। এই সুযোগে মুসাকে নিয়ে সরে এল কিশোর। গেটের দিকে দৌড় দিল দুজনে। ঘোড়াটা আবার এদিকে নজর দেয়ার আগেই দৌড়ে গেট পেরিয়ে এল।
লিলি লাগিয়ে দিল গেট।
থ্যা-থ্যাঙ্কস! গলা কাঁপছে মুসার।
কিছু হয়নি তো তোমার? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
ন-না! ভয়ে ভয়ে ঘোড়াটার দিকে তাকাল আবার মুসা, এখনও ফোঁস ফোঁস করছে ওটা। আরি পরে, কি জানোয়ার…
কি হয়েছে? খোয়া বিছান পথে বুটের শব্দ তুলে দৌড়ে আসছে লুক, বোলান। মুসার কাছে এসে ঝাঁজাল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, এখানে কি করছিলে?
কয়েকজন মেহমানও এসে ঘিরে দাঁড়াল ওদেরকে।
গেট খোলা দেখে ঢুকে পড়েছিলাম, মুসা বলল। ভাবলাম বাড়িতে যাওয়ার এটা শর্টকাট…
গেট খোলা ছিল? তুমি শিওর?
হ্যাঁ।
মুসার হয়ে কিশোর বলল, হয়তো হুড়কো লাগাতে ভুলে গিয়েছিল…
অসম্ভব! মানতে পারল না লুক। গেট ঠিকমত বন্ধ রাখার ব্যাপারে কড়া নির্দেশ রয়েছে এখানে। কিছুটা শান্ত হয়ে এসেছে ফোরম্যান। মুসাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি ঠিক আছ তো?
আছি।
গুড। মেহমানরা সব কৌতূহলী হয়ে তাকিয়ে আছে দেখে জোর করে হাসল লুক। আপনারা যান। ডিনারের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
অন্যান্য মেহমানদের নিয়ে সরে গেল ব্রড জেসন, তিন গোয়েন্দার দিকে তাকাল লুক, তোমরা দাঁড়িয়ে আছ কেন?
ঘোড়াটাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে লিলি। সেদিকে তাকিয়ে কিশোর জবাব দিল, দেখি, ঘোড়াটাকে।
আর কিছু না বলে লুকও কোরালে ঢুকল, লিলিকে সাহায্য করার জন্যে।
লিলির সঙ্গে কথা আছে, ফিসফিস করে দুই বন্ধুকে বলল কিশোর।
কি? রবিনের প্রশ্ন।
আমার কেন যেন মনে হচ্ছে গেটটা ইচ্ছে করেই খোলা রাখা হয়েছিল, কোন কারণে। ভাবছে কিশোর। ঘোড়াটার সম্পর্কে সবারই খুব খারাপ ধারণা। সেটাই যেন প্রমাণ করার চেষ্টা হয়েছে জানোয়ারটাকে দিয়ে মুসাকে আক্রমণ করিয়ে।
কে গেট খোলা রাখতে যাবে?
সেটাই জানার চেষ্টা করব। অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে মুসা, ওকে জিজ্ঞেস করল কিশোর, সত্যিই তোমার কোথাও লাগেনি তো?।