দেখো। খুব শয়তান, বলে দিলাম। হ্যাটটা ঠেলে পেছনে সরিয়ে হাত দিয়ে। কপালের ঘাম মুছল শেপ।
ইউনিকর্নের বংশধর নাকি?
শক্ত হয়ে গেল শেপের চোয়াল। না।
ইউনিকর্ন তো এখানে বিখ্যাত, তাই না?
কুখ্যাত। হ্যাটটা আবার আগের জায়গায় নিয়ে এসে ঘোড়ার গলার রশি ধরে টান দিল। গোলাঘরের দিকে রওনা হয়ে গেল কিশোরকে অবাক করে দিয়ে। কয়েক পা এগিয়ে ফিরে তাকিয়ে বলল, পোষ মানান আরেক দিন শেখ। আজ আর এটাকে কষ্ট দিয়ে লাভ নেই। কাহিল হয়ে পড়েছে। খুব ভাল লাগল তোমার সঙ্গে কথা বলে।
তাকিয়ে রয়েছে রবিন। সে-ও কম অবাক হয়নি। লোকটা দূরে চলে গেলে বলল, ইউনিকর্নের কথা কেউই আলোচনা করতে চায় না এখানে।
ভাবছি, কেন? আস্তাবলের দিকে তাকিয়ে গাল চুলকাল কিশোর। বিনা অনুমতিতে মেহমানদের ওখানে ঢাকার নিয়ম নেই। গেট বন্ধ। হুট করে যাতে কেউ ভেতরে ঢুকে পড়তে না পারে সেই ব্যবস্থা করা আছে। ঘোড়াটাকে দেখার বড় লোভ হচ্ছে।
রবিনকে নিয়ে আবার র্যাঞ্চ হাউসে ফিরে চলল সে। পোশাক বদলে ডিনারের জন্যে তৈরি হতে হবে।
রহস্যের গন্ধ পাচ্ছ মনে হয়? হাঁটতে হাঁটতে বলল রবিন।
জবাব দিল না কিশোর। ভাবছে। ইউনিকনের ব্যাপারে ব্রড, কেরোলিন, এমনকি শেপের আচরণ কৌতূহল বাড়িয়ে দিয়েছে তার।
.
দ্রুত গোসল সেরে নিয়ে ধোয়া টি-শার্ট আর জিনস পরে নিচে রওনা হলো কিশোর। কয়েক ধাপ নেমেই থমকে দাঁড়িয়ে গেল।
নিচ থেকে শোনা যাচ্ছে একজন লোকের ভারি কণ্ঠ, রেগে গিয়ে বলছে, সময় শেষ হয়ে আসছে, লিলি, বোঝার চেষ্টা করো!
সিঁড়ির রেলিঙের কাছে এসে নিচে উঁকি দিল কিশোর। সামনের দরজায়। দাঁড়িয়ে আছে লিলি। কোমরে হাত, এদিকে পেছন করে আছে। যে লোকটা কথা বলছে সে রয়েছে বাইরে বারান্দায়, দেখা যাচ্ছে অবশ্য। বেঁটে, গোলগাল শরীর, লাল মুখ, পাতলা হয়ে এসেছে কালো চুল।
আপনার কাছ থেকে ওকথা শোনার কোন প্রয়োজন নেই আমার। লিলিও রেগে গেছে। গলা কাঁপছে ওর।
সেটা তোমার ইচ্ছে। তবে আর কোন উপায়ও নেই তোমার, লোকটার চোখজোড়ায় শীতল, কঠিন দৃষ্টি। কুকুর যেভাবে মাড়ির ওপর থেকে ঠোঁট সরিয়ে ভেঙচি কাটে, অনেকটা তেমনি করেই ভেঙচি কাটল লোকটা। বলল, দেখো, ডবসি কুপার আর হারনি পাইকের কাছে তুমি একটা মশা। টিপ দিলেই মরে যাবে। কি আছে তোমার? ছিলে রোডিও রাইডার, এখানে এসে হয়েছ একটা ধসে পড়া র্যাঞ্চের মালিক। সেটাও আবার বন্ধক দেয়া। তোমার ওই শয়তান ঘোড়াটারও কানা কড়ি দাম নেই। কেউ চড়তেই পারে না ওটার পিঠে, কে দাম দিতে যাবে? ভেবে দেখ আমার কথা। লিলিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই জুতোর গোড়ালিতে ভর দিয়ে পাক খেয়ে ঘুরল সে। গটমট করে নেমে চলে গেল বারান্দা থেকে।
এতক্ষণ সোজা করে রাখলেও লোকটা চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঁকা হয়ে গেল লিলির কাঁধ, যেন ভার বইতে পারছে না আর। ঘুরল। ঘুরতেই কিশোরের চোখে চোখ পড়ল।
সরি, আড়ি পেতে শুনতে চাইনি, কৈফিয়ত দেয়ার ভঙ্গিতে বলল কিশোর। তাড়াতাড়ি নেমে গেল নিচতলায়। কানে এল ইঞ্জিন স্টার্ট নেয়ার শব্দ। যেন বিশেষ কারও ওপর ঝাল দেখার জন্যেই টায়ারের শব্দ তুলে, গর্জন করে ছুটতে শুরু করল। জানালা দিয়ে লম্বা একটা সাদা গাড়ি দেখতে পেল সে।
কিছুই হয়নি এরকম একটা ভঙ্গি করল লিলি। কিন্তু চেহারার ফেকাসে ভাব দূর করতে পারল না। ওর নাম ফিলিপ নিরেক। গলা কাঁপছে মেয়েটার। ঢোক গিলল। আমার সর্বনাশ করতে চায়।
কেন? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
এই র্যাঞ্চটা চায় ও। কয়েক বছর আগে অনেক টাকা ঋণ নিয়েছিল আব্বা। ঘোড়ার খেলা দেখিয়ে আমিও কিছু কামিয়েছিলাম। দুজনের টাকা দিয়ে কিছু গরুঘোড়া কিনলাম, ব্যবসার জন্যে। এই র্যাঞ্চটা কিনলাম। অনেক বেশি খরচ করে ফেললাম আমরা। ভাবলাম, কি আর হবে, আস্তে আস্তে তুলে নেব টাকাটা। জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলল লিলি। কিন্তু অ্যাক্সিডেন্ট করে বসল আব্বা। কাজ করার ক্ষমতা রইল না। রোডিও খেলা বাদ দিয়ে চলে আসতে হলো আমাকে। তবু সামাল আর দিতে পারলাম না। একের পর এক গোলমাল হতেই থাকল।
এই ফিলিপ নিরেক লোকটা কে?
ব্যাংকের লোন অফিসার। ঋণ শোধ করার সময় শেষ হতে আরও কিছুদিন। বাকি, অথচ এখনই এসে হুমকিধামকি শুরু করেছে। বলছে কোনদিনই পারব না। র্যাঞ্চ বন্ধ করে দিতে।
লিলির উদ্বিগ্ন মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। লিভিং রুমের দিকে চলল মেয়েটা। ওর পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বলল কিশোর, আরও দুজন। লোকের নাম বলল শুনলাম?
হ্যাঁ। ডবসি কুপার আর হারনি পাইক। দুজনেই র্যাঞ্চার, ডাবল সির সব চেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী।
ডবসি কুপার? নামটা পরিচিত লাগল কিশোরের। বেনি কুপারের কিছু হয় না তো? রোডিও স্টার?
বেনির বাবা। কাচের বাক্সে রাখা ট্রফিগুলোর দিকে তাকাল লিলি। আমি সরে আসতেই ও ওপরে উঠে গেল। নাম করে ফেলল। আমি থাকতে ট্রিক রাইডার আর বেয়ারব্যাক রেসার হিসেবে আমার পর পরই ছিল ও।
রোডিও খেলা দেখেছে কিশোর। রিঙের ভেতরে জিন ছাড়াই ঘোড়ার খালি। পিঠে বসে বেদম গতিতে ছুটতে থাকে খেলোয়াড়েরা। আরও নানারকম বিপজ্জনক খেলা দেখায়, প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
এগিয়ে গিয়ে একটা ট্রফিতে হাত বোলাল লিলি। ফিলিপের বক্তব্য, ওই দুজন র্যাঞ্চারের সঙ্গে কোনমতেই এঁটে উঠতে পারবে না ডাবল সি। বিক্রি করে। দিতে বলছে হারনি পাইকের কাছে। অনেক জায়গাজমি কিনছে পাইক, মিস্টি ক্যানিয়নে হোটেল পাইকের কাছে। অনেতে পারবে না ডাবল সি বক্তব্য, ওই