চলুন, কিশোর বলল। শিওর হয়ে নিয়ে বেনির সঙ্গে গিয়ে কথা বলব। আমার ধারণা, ডাবল সির আশেপাশেই কোথাও আছে সে।
চলো। এসব সত্যি হলে বেনিকে আমি ছাড়ব না। জ্বলে উঠল লিলির সবুজ চোখ।
পেছনের সিঁড়ি দিয়ে নেমে চত্বরে বেরোল চারজনে। বাতাস বেড়েছে। ফোঁটা, ফোঁটা বৃষ্টিও পড়ছে।
আকাশের এক প্রান্ত চিরে দিয়ে গেল বিদ্যুতের শিখা। বিকট শব্দে বাজ পড়ল। পাহাড়ের মাথায়। আস্তাবলের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল লিলি। সুইচ টিপে আলো জ্বালল। হারিকেনের স্টলের দিকে তাকিয়েই থমকে গেল। অস্ফুট একটা শব্দ বেরোল মুখ থেকে।
স্টলটা খালি!
পাক দিয়ে উঠল কিশোরের পেট।
এবার? রবিনের জিজ্ঞাসা।
স্টলের কাছে দৌড়ে গেল কিশোর। তার ওপাশের আস্তাবল থেকে বেরোনোর দরজাটা খোলা। জোর বাতাসে দড়াম করে বাড়ি খেল পাল্লা। ঝটকা দিয়ে খুলে গেল আবার। বাইরে ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির ছিটে এসে ভিজিয়ে দিতে লাগল কংক্রীটের মেঝে।
এই দরজা দিয়েই ইউনিকর্নকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বুঝতে অসুবিধে হলো না কারও।
.
১৪.
এটাও গেল? বিড়বিড় করতে করতে দেয়ালে হেলান দিল লিলি। দাঁড়িয়ে থাকার জোর পাচ্ছে না যেন।
বেশিক্ষণ হয়নি, কিশোর বলল। দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে ফিরে তাকিয়ে দেখল আরেকটা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে ব্রড় জেসন। ওকে বলল সে, ইউনিকর্ন আর হারিকেন দুটোকেই চুরি করেছে বেনি।
হারিকেনের খালি স্টলটার দিকে তাকাল ব্রড়। কি বলছ?
লিলি বলল, কিশোরের ধারণা, ঘোড়াদুটোকে অদলবদল করা হয়েছিল। হারিকেনকে নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল, বেনি, ইউনিকর্নকে হারিকেনের স্টলে ঢুকিয়ে রেখে। যেটাকে হারিকেন ভাবা হয়েছে আসলে সেটা ছিল ইউনিকর্ন।
অসম্ভব! দুটো ঘোড়ার স্বভাবই আলাদা!
কিশোর যা বলেছে সব ব্রডকে খুলে বলল লিলি। শেষে বলল, কিশোর বলছে, এসবে তুমিও জড়িত আছ।
ওকে আগেই বলেছি আমি এসবে নেই, জোর গলায় বলল ব্রড়। বেনিও নেই।
বেশ, তাহলে প্রমাণ করুন, এগিয়ে এল কিশোর। কোথায় ঘোড়া লুকিয়ে রেখেছে বেনি, আন্দাজ করার চেষ্টা করছে সে। চলুন, ঘোড়াগুলোকে বের করে আনি।
বলতে দ্বিধা করল না ব্ৰড়, চলো।
গুড। এবার বলুন তো, বেনির প্রাইভেট কোরালটা কোথায়? যেখানে সে প্র্যাকটিস করে?
কিশোরের চোখের দিকে তাকিয়ে এই বার দ্বিধা করল ব্ৰভ। বেনি রাগ করবে। আমি ওকে ঘোড়ার কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম, ও বলেছে দেখেনি।
প্র্যাকটিস কোথায় করে? ব্রডের কথার গুরুত্বই দিল না কিশোর।
আবার দ্বিধা করল ব্রড। মিস্টি ক্যানিয়নের পশ্চিম ধারে। পাহাড়ের ভেতরে। একটা প্রাকৃতিক ঘের রয়েছে, একেবারে বেড়া দেয়া কোরালের মতই।
ওদিকটায় তো গিয়ে খুঁজে এসেছে লুক, কিশোরকে জানাল লিলি, পায়নি। বেনির সাথেও কথা বলেছে…
শুনল না কিশোর। ব্রডকে জিজ্ঞেস করল, ঘোড়া রাখার কোন জায়গা আছে ওখানে? ঘরটর?
খড়ের একটা ছাউনি শুধু, ব্রড জবাব দিল। তবে দুটো ঘোড়া সহজেই জায়গা হয়ে যাবে।
রবিন বলল, হয়তো ভেতরে লুকিয়ে রেখেছিল হারিকেনকে বেনি। লুকের লোকেরা খেয়াল করেনি। কিংবা কল্পনাই করতে পারেনি বেনি নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রাখবে। অনুমতি ছাড়া প্রাইভেট এলাকায় ঢুকে বিপদে পড়তে চায়নি।
শোনো… বলতে গিয়ে বাধা পেল ব্রড।
কিশোর তাকে থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, সেখানে কি করে যেতে হয়?
তুমি পারবে না। রাস্তা নেই। ঝড়বাদলার রাত। খুঁজেই পাবে না।
ও ঠিকই বলেছে, লিলি বলল কিশোরকে। পাহাড়গুলো তো আমি চিনি। এমন রাতে যাওয়াই মুশকিল। বনের ভেতর দিয়ে, পাহাড়ের ঢাল বেয়ে, নদীর ধার দিয়ে যেতে হয়।
কোন নদী? জানতে চাইল কিশোর, যেটার কাছে গিয়ে হারিকেনকে হারিয়ে যেতে দেখেছি?
হ্যাঁ। ওটার কাছ থেকে মাইল দুয়েক দূরে একটা খড়িমত আছে, ওখানেই।
আর কিছু জানার নেই আমার। বলেই রবিনের দিকে ঘুরল কিশোর, শেরিফের অফিসে ফোন করো। বলবে এখানে আর কুপার র্যাঞ্চে যেন অফিসার পাঠান।
তুমি কি করবে? জিজ্ঞেস করল ব্রড।
আমি যাচ্ছি বমাল চোর ধরতে। মুসার দিকে তাকিয়ে বলল কিশোর, মুসা, চলো জলদি।
ওদের পিছে পিছে এল লিলি। কিশোর, দাঁড়াও। এখন যাওয়াটা ঠিক হচ্ছে না। ওই পাহাড়গুলোকে তোমরা চেনো না। সাংঘাতিক বিপদে পড়বে।
বিপদকে ভয় করলে চোর ধরতে পারব না। তাছাড়া এরকম কাজ করে অভ্যাস আছে আমাদের। আকাশ চিরে দিল বিদ্যুৎ শিখা। সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে কিশোর বলল, এমনিতেই হয়ত দেরি হয়ে গেছে। ঘোড়াসহ চোর ধরতে না পারলে আর তাকে ধরা যাবে না। প্রমাণও করতে পারব না কিছু। এই একটাই সুযোগ আমাদের।
আস্তাবলে ঢুকল কিশোর আর মুসা। যার যার ঘোড়ায় জিন পরাতে লাগল। আগেরগুলোই নিল, কিশোরের জেনারেল উইলি, মুসার ক্যাকটাস। বেল্টের বাকলস আঁটতে আঁটতে কিশোর বলল, তাড়াতাড়ি করতে হবে আমাদের। একটাই ভরসা, ইউনিকনের পিঠে চড়তে পারবে না চোর। যতই ওষুধ খাওয়ানো হোক।
ইউনিকর্নকে মেরেটেরে ফেলবে না তো?
কিছুই বলা যায় না। রাশ ধরে টেনে জেনারেলকে বাইরে নিয়ে এল। কিশোর। পিঠে চেপে বসল।
প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে ছুটল দুই ঘোড়সওয়ার। আগে আগে চলেছে কিশোর, হাতে টর্চ। মুসার কাছেও টর্চ আছে, কিন্তু জ্বালছে না। তেমন প্রয়োজন না পড়লে জ্বালবে না। অহেতুক ব্যাটারি খরচ করতে চায় না।