বাবার সঙ্গে বেনির সম্পর্ক খারাপ নয়, কিশোর অন্তত সে রকম কিছু দেখেনি, সে কথা ভেবেই বলল, টাকার কি দরকার? বাপের তো অনেক টাকা আছে। একমাত্র সন্তান হিসেবে বেনিই সব পাবে।
পাবে তো ঠিক, পুতুল হয়েও থাকতে হবে। যা করতে বলবে কুপার, তাই করতে হবে ওকে। নিজের কোন ইচ্ছে থাকবে না, ভালমন্দের বিচার থাকবে না। এভাবে কি গোলামি করা যায় নাকি?
আপনাকে নিয়েও নিশ্চয় বেনির নিজস্ব ইচ্ছে আছে?
অবশ্যই আছে।
বাপের থাবা থেকে বেরোতে নিশ্চয় সব করতে রাজি বেনি? রেসের ঘোড়া
সব নয়, কিশোর, ভুল করছ। নিজের এবং বাপের সুনাম নষ্ট হয় এরকম কিছুই করবে না সে। তুমি কি ইঙ্গিত করছ বুঝতে পারছি। বিশ্বাস না হলে বেনিকেই গিয়ে জিজ্ঞেস কর। এই তো, মিনিট দশেক আগেও আমার সাথে ছিল।
অবাক হলো কিশোর। উদ্বিগ্নও। যত বার বেনি ডাবল সিতে ঢুকেছে, একটা না একটা অঘটন ঘটেছে। কোথায়?
লেকের ধারে। চুরি করে আমার সাথে দেখা করতে আসে। আমার সাথে ওর মেলামেশা কুপারের পছন্দ নয়। অনেক বলা হয়েছে, আর বলার ইচ্ছে নেই, একথা ভেবেই যেন গটমট করে কিশোরের পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেল ব্রড। বাইরের খোয়ায় তার বুটের চাপে খচমচ শব্দ হলো।
আলো নিভিয়ে দিয়ে এল কিশোর। দরজা দিয়ে বাইরে তাকাতে চোখে পড়ল। আকাশ ঢেকে গেছে মেঘে। ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। জ্যাকেটের কলার তুলে দিয়ে দৌড় দিল সে, লেকের দিকে। ওখানে পৌঁছে বেনিকে পেল না।
ফিরে এল আবার। বাড়ির পেছনের সিঁড়ি বেয়ে উঠে এল ওপরে, লিলির ঘরে। বালিশে পিঠ দিয়ে বসে আছে লিলি। পকেট থেকে ছোট শিশিটা বের করল কিশোর। অর্ধেক ভরা। এটা হারিকেনকে খাওয়ালে কি ঘটবে বলুন তো?
লেবেল পড়ে লিলি বলল, ঘুমিয়ে পড়বে। এটা ডিপ্রেসেন্ট। খুব কমই। ব্যবহার করতে হয়। কোন কারণে ঘোড়া খেপে গেলে কিংবা ব্যথায় অস্থির হয়ে উঠলে খাইয়ে দেয়া হয়। শান্ত হয়ে যায় তখন।
বোধহয় কিশোরের সাড়া পেয়েই ঘরে ঢুকল মুসা। এত দেরি করলে। আমি আর রবিন তো ভাবনায়ই পড়ে গিয়েছিলাম। আর পাঁচ মিনিট দেখতাম, তারপর খুঁজতে বেরোতাম। ওর হাতে একটা আপেল। গেঞ্জিতে সেটা মুছে নিয়ে কামড় বসাল।
উজ্জ্বল হয়ে গেল কিশোরের চোখ। চিৎকার করে বলল, মুসা, এক্কেবারে ঠিক সময়ে আপেলটা নিয়ে হাজির হলে!
বোকা হয়ে গেল মুসা। মানে?
আপেলে করেই ওষুধ খাওয়ান হয়েছে ইউনিকর্নকে। আধ খাওয়া একটা আপেল দেখেছি ওর স্টলে। পরদিন গিয়ে দেখি ওটা নেই।
আরে বুঝিয়ে বল না! হাত তুলল মুসা। চোখের কোণ দিয়ে দেখল রবিনও ঢুকছে। বলছ তো উল্টো কথা। ইউনিকনের মেজাজ খারাপ হয়নি, হয়েছে। হারিকেনের। ইউনিকর্ন চুরি হয়েছে।
প্রচণ্ড উত্তেজনায় কাঁপছে তখন কিশোর। একটা ভুল করেছি আমি। ইউনিকর্ন চুরি হয়নি, হয়েছে হারিকেন। কেউ একজন বেরোতে সাহায্য করেছে। ঘোড়াটাকে। তারপর তার পিঠে চেপে চালিয়ে নিয়ে গেছে। ইউনিকর্নের পিঠে কেউ চাপতে পারে না, কিন্তু হারিকেনের পারে। সে রাতে এই ওষুধ খাওয়ানো। হয়েছিল ইউনিকর্নকে, শিশিটা দুই সহকারীকে দেখাল কিশোর।
কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে যেন লিলির চোখ। তারমানে আমি সে রাতে। ইউনিকর্নের পিঠে চড়েছিলাম! এই জন্যেই ফেলে দিয়েছিল ঝাড়া মেরে!
হ্যাঁ, হঠাৎ করে হারিকেনের মেজাজ খারাপ দেখা যাওয়ার জবাবও এটাই, মাথা দুলিয়ে বলল রবিন।
কিশোর বলল, আমার বিশ্বাস বেনিই একাজ করেছে, লিলির দিকে তাকাল সে, আপনাকে থামানোর জন্যে অদলবদল করে রেখেছিল ঘোড়াদুটোকে, একটার স্টলে আরেকটাকে ঢুকিয়ে রেখেছিল।
বেনি? বিড়বিড় করল লিলি, বিশ্বাস করতে পারছি না!
ওর মোটিভ আছে, সুযোগও ছিল। ক্যাম্পিং করেছি যে রাতে সে রাতে বনের মধ্যে ব্রডের সঙ্গে দেখেছি ওকে। সাপটা নিশ্চয় সে-ই এনে ছেড়ে দিয়েছিল আমার। ব্যাগে। ব্যানারদের জিনিস যেদিন চুরি হয় সেদিনও বেনি এখানে এসেছিল।
বারবিকিউতেও ছিল, মুসা বলল।
আজও ব্রডের সাথে দেখা করতে এসেছিল। দরজার নিচে নোটটা ফেলে রেখে যেতে পারে সে, রবিন বলল।
কিন্তু বাজি রেখে গাড়ি পোড়াতে পারে না, প্রশ্ন তুলল লিলি।
ব্রড তাকে সাহায্য করে থাকতে পারে, মুসা বলল। আর বেনিরও না পারার কোন কারণ তো দেখি না।
তোমরা তাহলে এখনও সন্দেহ করো তাকে?
না করার কোন কারণ নেই, কিশোর বলল। বরং করার পক্ষেই যথেষ্ট কারণ আছে।
ঠিক, রবিন বলল। কিশোর, একটা ব্যাপার বুঝলাম না। তুমি বলছ, হারিকেন আর ইউনিকর্নকে বদল করে ফেলা হয়েছে। তাহলে তফাতটা বুঝলাম না কেন আমরা? হারিকেনের খুরের কাছে না সাদা লোম আছে?
ওরকম সাদা সহজেই করে দেয়া যায়, হাসল কিশোর। পারঅক্সাইড ওষুধ। খাইয়ে ইউনিকর্নকে শান্ত করেছে বেনি, তারপর তার পায়ের লোম সাদা করেছে। সেজন্যেই ঘোড়াটার স্টলের কিছু কিছু খড় সাদাটে লেগেছে। ঘোড়ার পায়ে ঢালতে গিয়ে খড়ে পড়ে গিয়েছিল পারঅক্সাইড।
তার পর, কিশোরের মনের কথাগুলোই যেন পড়ছে রবিন, হারিকেনকে বের করে নিয়ে গিয়ে ওর স্টলে ঢোকানো হয়েছে ইউনিকর্নকে।
এবং সবাই মনে করেছে, যোগ করল কিশোর, হারিকেনেরই মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে।
বেশ, চলো, বালিশ সরিয়ে বিছানা থেকে নামল লিলি। আমি দেখলেই বুঝব, সত্যিই আসল সাদা, না পারঅক্সাইড দিয়ে করা হয়েছে।