জানালা নেই ট্যাক রুমের। বাতাসে চামড়া আর তেলের গন্ধ। ঝুলিয়ে রাখা। জিনিসগুলোর ওপর আলো ফেলল সে। কোন কিছু অস্বাভাবিক লাগছে না, কিছু খোয়া গেছে বলেও মনে হচ্ছে না। ব্রডের ঘোড়ায় চড়ার সরঞ্জামগুলো খুঁজে কিছু পেল না।
হতাশ হল কিশোর। ঘড়ি দেখল। আধ ঘন্টা হয়েছে বেরিয়েছে। আর বেশি দেরি করা যাবে না, তাহলে কেউ লক্ষ্য করে বসবে যে অনেকক্ষণ ধরে সে নেই ওদের মাঝে। খোঁজ পড়তে পারে।
ভাবতে ভাবতেই গিয়ে মেডিক্যাল কেবিনেট খুলল সে। প্রতিটি টিউব আর শিশি-বোতলের লেবেল পড়তে লাগল। যদি কিছু পেয়ে যায়, এই আশায়। কিন্তু এখানেও নিরাশ হতে হলো তাকে।
কিন্তু আছেই, নিজেকে বোঝাল সে, থাকতেই হবে। না থেকে পারে না। নইলে হারিকেন অস্বাভাবিক আচরণ করল কেন? আরেকবার ভাল করে দেখতে গিয়ে একটা শিশির গায়ে চোখ আটকে গেল। আগের বার খেয়াল করেনি। একটা পারঅক্সাইডের বোতলের ওপাশে রাখা হয়েছে। লেবেল দেখার জন্যে বের করতে গেল ওটা, এই সময় পেছনে শোনা গেল বুটের শব্দ।
আরেকটু হলেই হাত থেকে ফেলে দিয়েছিল শিশিটা। লেবেল দেখার সময় নেই। পকেটে রেখে দিল। সাথে করে নিয়ে যাবে। টর্চ নিভিয়ে দিল সে। দেয়ালের গায়ে সেঁটে গেল, চোখে না পড়ার জন্যে। নিঃশ্বাস ফেলতেও ভয় পাচ্ছে। আওয়াজটা কোথায় হলো? ট্যাক রুমের ভেতরে, না বাইরে?
ধক ধক করে লাফাচ্ছে হৃৎপিণ্ড। কি মনে হতে আস্তে করে ঘুরে তাকাল দরজার দিকে। বিশালদেহী একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে, ছায়ামূর্তির মত। হাত তুলল লোকটা।
দম আটকে গেল যেন কিশোরের। লোকটার হাতে একটা চাবুক। এগিয়ে আসতে শুরু করল, যেন জানে কোথায় লুকিয়ে আছে কিশোর।
ঝট করে বসে পড়ল সে। শপাং করে উঠল লোকটার হাতের চাবুক। বাতাস কেটে বেরিয়ে গেল কিশোরের মুখের কাছ দিয়ে।
.
১৩.
লোকটার মুখে টর্চের আলো ফেলল কিশোর। ব্রড জেসন।
কে তুমি? বলতে বলতেই হাত বাড়িয়ে সুইচ টিপে আলো জ্বেলে দিল ব্রড। কিশোর? সত্যি সত্যি অবাক মনে হলো তাকে। এখানে কি করছ?
হারিকেনের মেজাজ যে খারাপ করানো হয়েছে তার প্রমাণ খুঁজছি।
আবার? তা তো খুঁজবেই। গোয়েন্দা যে তুমি একথাটা ভুলেই যাই।
টিটকারিটা গায়ে মাখল না কিশোর। চাবুকটা দেখিয়ে জিজ্ঞেস কর, এটা নিয়ে এখানে কি কাজে এলেন?
রাগ কিছুটা গলে গেল ব্রডের। তুমি ঢুকেছ, বুঝতে পারিনি। ভাবলাম, ব্যানারদের চোরটা ঢুকেছে। চুপি চুপি ঢুকতে দেখলাম তো। তবে, বাড়ি লাগাতে চাইলে ঠিকই লাগাতে পারতাম। মিস করেছি ইচ্ছে করেই। সেটা প্রমাণ করার জন্যেই আলোটা নিভিয়ে দিল সে। আরেকবার হিসিয়ে উঠল চাবুক। বন্ধ হয়ে গেল মেডিসিন কেবিনেটের দরজা।
আবার আলো জ্বেলে বুকে আড়াআড়ি হাত রেখে দাঁড়াল মাইক। তুমি জানলে আসতাম না। কিন্তু অযথা খুঁতখুঁত করছ। ঘোড়াটা চুরি হয়নি।
হয়নি? লোকটার চোখে চোখে তাকিয়ে এক কদম আগে বাড়ল কিশোর, তাহলে ইউনিকর্নের কি হয়েছে বলে আপনার ধারণা?
পালিয়েছে।
আপনি কিছু করেননি?
শক্ত হয়ে গেল ব্রডের চোয়াল। তার মানে আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ না তুমি। ভাবছ, যেহেতু একসময় চুরি করতাম, স্বভাবটা এখনও ভাল হয়নি। অকাজ। কুকাজ এখনও করে বেড়াই। ভুল করছ। আর দশজন সৎ কর্মীর মতই কাজ করি। আমি এখানে। ইউনিককেও চুরি করিনি, হারিকেনকেও ওষুধ খাওয়াইনি। কেনই বা করব এসব কাজ?
লিলি যাতে রোডিও জিততে না পারে, সেজন্যে।
কিসের জন্যে? ভুরু কুঁচকে গেল ব্রডের। তোমার কথা বুঝতে পারলাম না। আমি তো চাই লিলি জিতুক।
তাতে যদি বেনি হেরে যায় তাহলেও?
জ্বলে উঠল ব্রডের চোখ। আঙুল শক্ত হলো চাবুকের হাতলে। তুমি ভাবছ লিলিকে স্যাবটাজ করছি আমি?
করছেন না? বেনির জন্যে?
দেখো, অনেক ভুল করেছি জীবনে, আর করতে চাই না। বেনির জন্যে দুর্বলতা আছে আমার, অস্বীকার করছি না। কিন্তু জিততে হলে বেনিকে নিজের ক্ষমতায় জিততে হবে। নিজের বুকে থাবা দিয়ে বলল ব্রড, আমিও রোডিও রাইডার। আমি বিশ্বাস করি, ষড়যন্ত্র করে এসব খেলায় কিছু হয় না। যদি ক্ষমতা থাকে, লিলিকে হারাতে পারবেই বেনি।
বেনিও কি তাই মনে করে?
ওকে নিয়ে আলোচনা করতে চাই না আমি। আরেক দিকে তাকিয়ে বলল ব্রড।
দরজার কাছে চলে এল কিশোর। বেনির জন্যে ইনডিপেনডেন্স ডের রোডিও কতটা জরুরী?
ঢোক গিলল ব্রড। অনেক।
কেন?
সেটা তোমার জানার দরকার নেই।
আছে। একটা নোট এসেছে লিলির কাছে। তাতে লেখা হয়েছে সে ওই দিন। রোডিওতে যোগ দিলে ইউনিকর্ন মারা যাবে।
নিরেকের কাজ হতে পারে। কিংবা পাইকের। দুটো শয়তানই তো মেয়েটাকে জ্বালিয়ে মারছে, বলতে সামান্যতম দ্বিধা করল না ব্রড।
মাথা নাড়ল কিশোর। ওরা আমার ব্যাগে সাপ রাখতে যায়নি। সাপ। নাড়াচাড়া করতে পারে কিনা ওরা সে ব্যাপারেও আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। গাড়ির নিচে বাজি রাখার সুযোগও ওরা পায়নি।
কিন্তু বেনিই বা কি ভাবে…? থেমে গেল ব্রড। কাঁধ ঝুলে পড়ল। তুমি হভাবছ আমি করেছি? তোমাকে খুন করার চেষ্টা করেছি?
বেনিকে সাহায্য করার চেষ্টা করছেন।
অবাক কথা শোনালে।
তাহলে বোঝান, বেনির জন্যে এই রোডিও কেন এত জরুরী?
বড় বড় হয়ে গেল ব্রডের নাকের ফুটো। বেশ। তাহলে বাপের থাবা থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে, মুক্তি পাবে। বিজ্ঞাপনে, সিনেমায় অভিনয় করতে পারবে। রোডিও পুরস্কার হিসেবেই পাবে অনেক টাকা। কেন জরুরী, সেটা বোঝা কি এতই শক্ত?