আমি জানি, শান্তকণ্ঠে জবাব দিল কিশোর। কাল রাতে আমার স্লীপিং ব্যাগের ভেতরে পেয়েছি ওটাকে।
হাঁ হয়ে গেলেন কুপার। এই সময় কিশোরের নজরে পড়ল তার কোমরের বেল্টে রূপার বাকলস, হারিকেনের স্টলের বাইরে যে জিনিস দিয়ে বাড়ি মারা হয়েছিল তাকে, সে রকম। জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় পেয়েছ?
ক্যাম্পিঙে গিয়ে কিভাবে সাপটাকে পেয়েছে কিশোর, সব খুলে বলল, কেবল বাদ রাখল ব্রডের সঙ্গে বেনির গোপন সাক্ষাৎকারের কথাটা।
চুপ করে সব শুনলেন কুপার। সন্দেহ যাচ্ছে না। জিজ্ঞেস করলেন, সত্যিই পেয়েছ? রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছলেন তিনি।
পেয়েছি।
ঘাড় লাল হয়ে গেছে কুপারের। তোমার ব্যাগে গেল কি করে?
নিশ্চয় কেউ নিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এমন কেউ, সাপ নাড়াচাড়া করার অভ্যাস আছে যার।
দ্বিধায় পড়ে গেলেন কুপার। জবাব দিতে অস্বস্তি বোধ করছেন। তাহলে আর কে হবে? আমার র্যাঞ্চের অনেকেই সাপ নাড়াচাড়া করে। কিন্তু প্রতিটা লোককে চোখ বুজে বিশ্বাস করতে পারি আমি। ব্রড় যাওয়ার পর থেকে সামান্যতম গোলমালও হয়নি আর।
ব্রড জেসনের কথা বলছেন?
শক্ত হয়ে গেল কুপারের চোয়াল। ওটা একটা ক্রিমিন্যাল। চাকরি থেকে বের করে দিয়েছিলাম তো, প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ খুঁজছে। আমার যাতে দোষ হয়, সেজন্যে নিয়ে গিয়ে সাপ ঢুকিয়ে দিয়েছে ডাবল সির মেহমানের ব্যাগে।
অনেকেই তাহলে সাপ নাড়াচাড়া করে এখানে? কুপারের চোখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে রবিন।
করেই তো। সাপে কামড়ালে কি করতে হয় তা-ও জানে। জানতে হয়, কারণ র্যাটলের বিষ মারাত্মক।
কয়েক দিনের মধ্যে এখানে ঢুকেছিল ব্রড? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
মাথা খারাপ! কালো হয়ে গেল কুপারের মুখ। এখানে আর তাকে পা রাখতে দিই আমি। নিলে চুরি করে নিয়েছে।
শুনেছি আপনার মেয়ে বেনির সঙ্গে তার খাতির ছিল। এখনও আছে?
আরে দূর! যখনই বুঝে গেছে ব্যাটা একটা চোর, অমনি সরে এসেছে। ব্রডটা। তো ওর সঙ্গে খাতির করেছে সম্পত্তির লোভে, জানে তো, সবই একদিন বেনির হবে। লাভ হল না। ওরকম একটা চোরের জন্যে কোন দুর্বলতা থাকতে পারে না। বেনির। তাছাড়া এখন ওসব মন দেয়ানেয়ার সময়ও নেই ওর। রোডিও নিয়ে। ব্যস্ত। জিততে পারলে অনেক সুবিধে। বিজ্ঞাপন এমনকি ছবিতে অভিনয় করারও সুযোগ পাবে, একটা জাতীয় রোডিও সফরে যেতে পারবে।
তার মানে জেতাটা তার জন্যে খুব জরুরী, বিড়বিড় করল কিশোর।
খুবই। ওর জীবনই বদলে দেবে এটা, গর্বের সাথে বললেন কুপার। রবিন আর কিশোরকে নিয়ে চললেন বাইরে। পশ্চিমের পাহাড়ের ওপরে যেন ঝুলে রয়েছে সূর্যটা, তাকালেন সেদিকে। ভাবছি, এখনই যাব ডাবল সিতে। সাপের দাম চাইতে। দেখি, লুক বোলান কি বলে?
কিছু বলল না রবিন কিংবা কিশোর। সাপের দাম চাইবেন কি চাইবেন না সেটা কুপারের সমস্যা। ওরা এগোল পিকআপের দিকে।
তাহলে বোঝা যাচ্ছে ব্রডই আমাদের লোক, নিচু স্বরে বলল রবিন।
হয়তো।
গাড়িতে উঠে ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে রওনা হলো কিশোর। খোয়া বিছানো পথ থেকে বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, এক বোতল কোক খেলে কেমন হয়?
চমৎকার।
গলা শুকিয়ে গেছে দুজনেরই। কাজেই ডেরিক লংম্যানের দোকানে এসে দুই বোতল কোক কিনল। গলা ভিজিয়ে নিয়ে ফিরে চলল ডাবল সিতে।
কিশোর বলল, ব্রড যদি সত্যিই বেনিকে চায়, তাহলে জিততে সাহায্য করবে। কেন? জিতলে তো চলে যাবে বেনি, হারাবে তাকে ব্রড।
তাতে কি? মনের মিল থাকলেই হয়। ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে পড়বে ব্রডও, চলে যাবে বেনির সাথে। ভালই হবে। কুপারের আওতা থেকে সরে যেতে পারবে। এমনও হতে পারে, বেনি গিয়ে তার সাহায্য চেয়েছে। ব্যস, সাহায্য করছে সে। কিশোরের দিকে তাকাল রবিন, হয় না এরকম?
হাসল কিশোর, হয়।
ডাবল সিতে ঢোকার মুখে কুপারের গাড়িটা বেরোতে দেখল ওরা। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হাত নাড়লেন তিনি। তবে হাসি নেই, মুখ কাল করে রেখেছেন।
নিশ্চয় ভাল কিছু হয়নি? রবিনের প্রশ্ন।
মনে তো হচ্ছে না, সামনের রাস্তার দিকে তাকিয়ে জবাব দিল কিশোর। সে ও গাড়িটা পার্ক করল, ডিনারের ঘন্টাও বাজল।
উফ, খিদে যে পেয়েছে বুঝতেই পারিনি, রবিন বলল।
আমিও না। র্যাঞ্চ হাউসের দিকে এগোল দুজনে। সিঁড়ি দিয়ে উঠছে এই সময় দরজা খুলে ছুটে বেরোল মুসা। রক্ত সরে গেছে মুখ থেকে। চেঁচিয়ে উঠল, তোমরা এলে! ইউনিকর্ন! ইউনিকর্ন!
১২.
ইউনিকর্ন? জিজ্ঞেস করল কিশোর, কি হয়েছে ওর?
রান্নাঘরের দরজার নিচে একটা নোট পেয়েছে লিলি। তাতে লেখা হয়েছে…
লিলি কোথায়?
ওপরে। ঘরে।
একটা মুহর্ত আর দেরি করল না কিশোর। দৌড় দিল। একেক লাফে দুতিনটে করে সিঁড়ি ডিঙিয়ে উঠতে লাগল। পেছনে রয়েছে রবিন আর মুসা। জানালার চৌকাঠে লিলিকে বসে থাকতে দেখল ওরা। তাকিয়ে রয়েছে মাঠের দিকে। কাঁধ ঝুলে পড়েছে। হাতে একটুকরো সাদা কাগজ।
তিন গোয়েন্দার সাড়া পেয়ে মুখ ফেরাল সে। কিশোরের চোখে পড়তে বলল, তুমি ঠিকই অনুমান করেছ। চুরিই করেছে। হাতের কাগজটা দলামোচড়া করে ফেলল। কিন্তু আমার এত বড় সর্বনাশ করলটা কে?
কিছুটা আন্দাজ করতে পারি আমি, জবাব দিল কিশোর।
কাগজটা কিশোরের হাতে দিল লিলি।
খুলল কিশোর। টাইপ করে লেখা রয়েছে, লিলি, ইনডিপেনডেন্স ডে রোডিওতে তুমি যোগ দিতে গেলে মারা যাবে ইউনিকর্ন। তোমার ঘোড়া আমিই চুরি করেছি, গাড়িতে বাজি রেখে পুড়িয়ে দিয়েছি। তারমানে ঘোড়াটাকে মারতে যে আমার হাত কাঁপবে না বুঝতেই পারছ।