কিশোরকে সেদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কেরোলিন জানালেন, ওটা দিয়ে রান্নাঘরে যাওয়া যায়। আর এই যে দরজাগুলো দেখছ, এগুলো বেডরুম। মেহমানদের থাকার। সিঁড়ির ডানের একটা দরজা খুলে বললেন, এটা তোমাদের ঘর।
একটা জানালা খুললেন কেরোলিন। হুড়মুড়িয়ে যেন ঘরে ঢুকল গরম বাতাস, তাজা খড়ের গন্ধে ভারি হয়ে আছে। মুসা বলল, বাহু, গন্ধটা তো চমৎকার।
হ্যাঁ, কেরোলিন বললেন। ভালই ছিল সব কিছু। নষ্ট করে দিল ওই শয়তান ঘোড়াটা।
শয়তান ঘোড়া? ইউনিকর্নের কথা বলছেন? ভুরু কোঁচকাল কিশোর।
ওটাকে যে এখনও কেন রেখেছে লিলি বুঝি না। ঠোঁট কামড়ে ধরলেন। কেরোলিন। কাঁধ দিয়ে ঠেলে আরেকটা দরজা খুললেন। এখানে আরেকটা ঘর আছে। দুটো ঘরে থাকতে পারবে তো তিনজনে?,
নিশ্চয়ই, রবিন বলল। একটা হলেও পারতাম।
প্রথম ঘরটা ছোট, একটা সিঙ্গল বেড, পুরানো কার্পেট, একটা রকিং চেয়ার, আর একটা আলমারি আছে। পরের ঘরটা বড়, সবই একটা করে আছে, কেবল বিছানা দুটো। যে কোন একজনকে থাকতে হবে ছোট ঘরটায়। ওয়েস্টার্ন প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি ঝোলানো রয়েছে দেয়ালে। জানালায় লাগানো হয়েছে ভারি কাপড়ের পর্দা।
ঘর দেখিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন কেরোলিন।
এখন কে কোনটাতে থাকবে ঠিক করতে বসল তিনজনে। মুসা প্রস্তাব দিল, টস করা হোক। কিশোর টসে জিতল। সে থাকবে ছোট ঘরটায়, একা। বড়টায় অন্য দুজন।
রবিন বলল, আমি থাকব জানালার কাছে। বলতে বলতে গিয়ে যেন নিজের জায়গা দখলের জন্যেই উঠে পড়ল দেবে যাওয়া ম্যাট্রেসে। রাতে ঝিঁঝি আর কয়োটের ডাক শুনতে পাব এখান থেকে। আমার খুব ভাল লাগে।
থাকো, আমার আপত্তি নেই, মুসা বলল।
জানালা দিয়ে মুখ বের করল রবিন। তোমরা যাই বলো, আমার কাছে। এটাকে লাগছে গোস্ট টাউনের মত। ওই যে, ওয়েস্টার্ন শহরে ভূতুড়ে শহরের কথা শোনা যায় না, সে রকম।
ঠিকই বলেছ, একমত হলো কিশোর, ও রকমই। কেমন যেন পোড়ো পোড়ো লাগে। বিছানায় উঠে এসে রবিনের পাশে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল সে। কাজ করছে কয়েকজন র্যাঞ্চ হ্যাণ্ড, র্যাঞ্চের শ্রমিক ওরা। ঘোড়াকে ব্যায়াম করাচ্ছে কেউ, কেউ জিন আর লাগাম পরিষ্কার করছে, কেউ বা বেড়া পরিষ্কারে ব্যস্ত। তবে এতবড় একটা র্যাঞ্চে যত লোক থাকার কথা, যতটা সরগরম থাকার কথা, সে রকম নেই। হলোটা কি এখানে, বলো তো?
পুরোপুরি সব জানি না, রবিন বলল। মার কাছে যতটা শুনেছি। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে মারাত্মক জখম হয়েছিলেন লিলির বাবা। অকর্মণ্য হয়ে যান। র্যাঞ্চের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায় তদারকির অভাবে। শেষে মারাই গেলেন। বাধ্য হয়ে রোডিও খেলা বাদ দিয়ে সাহায্য করতে আসতে হয় লিলিকে। চিন্তিত ভঙ্গিতে ভ্রূকুটি করল রবিন। তবে তখন দেরি হয়ে গেছে। আরেকটা র্যাঞ্চে চলে যেতে শুরু করেছে তখন মেহমানরা, টুরিস্ট, যারা এখানে বেড়াতে এলে থাকে।
বিড়বিড় করে কি বলল কিশোর বোঝা গেল না।
আমাদের পরে যে ভ্যানটা এল, দেখেছ? মুসা বলল, অনেক বড়, অনেক লোক ধরবে। অথচ নামল পাঁচজন, তা-ও একজন ড্রাইভার। ব্রশিয়ারে পড়লাম এই র্যাঞ্চে মেহমানই থাকতে পারে ষাটজন…আছে কজন এখন? আমাদেরকে নিয়ে বড় জোর দশ-এগারো?
কাছাকাছি হয়ে এল কিশোরের ভুরু। ভাঁজ পড়ল কপালে। এই কথাটা সে-ও ভেবেছে। বলল, হয়তো আসবে, পরে। ডিনারের এখনও দুই ঘণ্টা বাকি।
হয়তো, মাথা ঝাঁকাল রবিন। তবে বিশ্বাস করতে পারছে না কথাটা।
ওদের মালপত্র নিয়ে দরজায় দেখা দিল ব্রড।
দেখি, দিন ওটা আমার হাতে, নিজের ব্যাগটা নিয়ে লোকটাকে সাহায্য করার জন্যে নেমে গেল কিশোর।
রবিন আর মুসাও এগোল।
বাপরে বাপ, কি ভারি, অল্প অল্প হাঁপাচ্ছে ব্রড। সারা গরমটাই কাটাতে চলে এসেছ মনে হয়।
না, কিছু কাপড়চোপড় তো লাগেই, মুসা বলল, লাগে না?
রবিন বলল, তাছাড়া আরও কিছু টুকিটাকি জিনিস দরকার হয়। অল্প অল্প নিতে গেলেও ভারি হয়ে যায়।
বেরিয়ে গেল ব্রড।
ব্যাগ খুলে তোয়ালে বের করল মুসা। তোমরা কি করবে জানি না, আমি গোসল করতে চললাম।
করগে, কিশোর বলল। আমি যাচ্ছি জায়গাটা ঘুরে দেখতে।
রবিন বলল, আমিও যাব।
ব্যাগটা তুলে নিয়ে নিজের ঘরে এনে রাখল কিশোর। তারপর রবিনকে নিয়ে রওনা হলো নিচতলায়।
রান্নাঘরে ঢুকতেই ওদেরকে লেমোনেড দিলেন কেরোলিন।
খেতে খেতে র্যাঞ্চটার ব্যাপারে নানা খবর নিতে লাগল কিশোর। কেরোলিনও সব প্রশ্নের জবাব দিলেন। জানালেন, কোথায় কোথায় রয়েছে। আস্তাবল, বাঙ্কহাউস, ট্যাকরুম আর ঘোড়ার বাচ্চা রাখার ছাউনি। বিশ্রাম নিয়েছে, লেমোনেড খেয়েছে। অনেকটা তাজা হয়ে বাইরে বেরোল দুই গোয়েন্দা, র্যাঞ্চ দেখার জন্যে।
ঘুরেটুরে দেখে এসে দাঁড়াল কাত হয়ে থাকা একটা বেড়ার কাছে। খুঁটিতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল একজন শ্রমিক কি করে ধূসর রঙের একটা ঘোড়ার বাচ্চাকে ট্রেনিং দিচ্ছে।
অনেক অবাধ্যতা করল বাচ্চাটা। লাফালাফি করল, ঘাড় বেঁকিয়ে এদিক ওদিক সরে যাওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পিঠে জিন বাধতে দিতেই হলো।
কি দেখছ? ওদেরকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল লোকটা। এটাকে এখন পোষ মানান হচ্ছে। পিঠে চড়ব। চেষ্টা করে দেখতে চাও? ও, আমি শেপ
আপত্তি নেই, এগিয়ে গেল কিশোর। হেসে বলল, দেখিই না পারি কিনা।