ওটার ব্যাপারেই খচখচ করছে মনে।
রবিনও তাকাল বইটার দিকে।
র্যাটল স্নেক খুঁজে বের করল কিশোর। অনেক জাতের রয়েছে, বিড়বিড় করে পড়ল সে, ডায়মণ্ড ব্যাক, টিম্বার স্নেক, সাইডউইণ্ডার। একই প্রজাতির সাপের মধ্যেও আবার পুব অঞ্চল আর পশ্চিম অঞ্চলের সাপে তফাত রয়েছে।
যাই হোক, রবিন বলল, আমাদের ইনি এসেছিলেন একটা রাজ পরিবার থেকে।
চকচক করছে কিশোরের চোখের তারা। দুদিকে চাপ দিয়ে ঝটাৎ করে বন্ধ করল বইটা। বুঝলাম!
বলে ফেলো, শুনি?
আমাদের সাপটা এই অঞ্চলের নয়, রবিন। মনে পড়ে, কিভাবে পাশে লাফ দিয়ে দিয়ে চলছিল? ওটা মরুভূমির সাপ! রবিনের চোখে চোখে তাকাল কিশোর, মিস্টি ক্যানিয়নে মরুভূমি নেই।
ভুরু ওপরে উঠে গেল রবিনের। বেশ, ধরলাম এটা একটা সূত্র। কিন্তু তাতে কি?
এখুনি কিছু বলতে পারছি না। তবে জবাবটা বের করতে হবে। লাইব্রেরির শীতল পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসতেই গায়ে ঝাঁপটা মারল যেন গরম। গাড়িতে উঠল ওরা। ঠিক মিলছে না, বুঝলে। ঘোড়ার ওপর যথেষ্ট মায়া ব্রডের। সে জেনেশুনে ইউনিকর্ন কিংবা হারিকেনের ক্ষতি করবে, এটা বিশ্বাস হয় না।
ফিরে চলল দুজনে। একটা মোড়ের কাছে এসে ডাবল সির দিকে না গিয়ে আরেক দিকে ঘুরল কিশোর।
এই, কোথায় যাচ্ছ? রবিনের প্রশ্ন।
বেনি কুপারের সঙ্গে কথা বলতে।
বলবে?
দেখাই যাক না। না গেলে জানব কি করে?
ডাবল সির সঙ্গে কুপার র্যাঞ্চের অনেক পার্থক্য। প্রথমটা রাত হলে এটা দিন, এতটাই অন্য রকম। সমস্ত বাড়ি নতুন রঙ করা। মূল বাড়িটা ধবধবে সাদা, অন্যগুলো রেডউড কাঠের রঙ। বিকেলের রোদে ঝলমল করছে। থাম আর জানালার খড়খড়ি সব সবুজ রঙের।
জায়গা বটে, মৃদু শিস দিতে লাগল রবিন।
চত্বরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক গাছ। ওগুলোর ছায়ায় কাজ করছে। শ্রমিকেরা। মেহমানরা ঘোরাফেরা করছে। বাচ্চারা খেলছে, হাসছে। মুরগীর রোস্টের গন্ধে খিদের কথা মনে পড়ে গেল কিশোরের।
বাপরে বাপ! গাড়ি থেকে নামতে নামতে রবিন বলল, এরকম জায়গা ছেড়ে লিলির ফকিরা র্যাঞ্চে কেন থাকতে যাবে লোকে?
মূল বাড়ির সদর দরজায় গিয়ে বেল বাজাল কিশোর। খুলে দিল রুক্ষ হচেহারার ধূসরচুল এক পঞ্চাশ বছর বয়েসী মহিলা। নিজের পরিচয় দিল এলিনা কুপার বলে, বেনির ফুফু। দরজা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে। জিজ্ঞেস করল, কি চাই?
বেনির সঙ্গে কথা বলব, কিশোর বলল।
ওর বন্ধু, নাকি ভক্ত?
আসলে, আমরা ডাবল সির মেহমান। ইউনিকর্নকে খুঁজে বের করতে আমাদের অনুরোধ করেছে লিলি।
ঘোড়াটা পালিয়েছে শুনছি, ঠোঁট বাঁকাল মহিলা। হবেই এরকম। ওরকম একটা পাগলা ঘোড়া কি আর আটকে থাকে বেশিদিন। কিন্তু বেনিকে কেন? ও তো কিছু জানে না। ঘড়ি দেখল এলিনা। চলে আসবে।
কোথায় গেছে?
তীক্ষ দৃষ্টিতে কিশোরের মুখের দিকে তাকাল মহিলা। প্র্যাকটিস করতে। আলাদা নিরালা জায়গায় গিয়ে করে সে। র্যাঞ্চের গণ্ডগোল পছন্দ করে না। ইচ্ছে নেই তবু যেন জোর করেই বলল, চাইলে ভেতরে বসতে পারো?
বেনির আব্বার সঙ্গে কথা বলা যাবে?
ভ্রূকুটি করল এলিনা। শহরে গিয়েছিল, এল কিনা বলতে পারছি না। এক কাজ কর। অনেক হ্যাণ্ড আছে, ওদের কারও কাছে খোঁজ নাও।
থ্যাংকস, বলে কিশোর সরে আসার আগেই তার মুখের ওপর দরজাটা লাগিয়ে দিল মহিলা।
অল্প বয়েসী একটা স্ট্যাবল বয়কে ধরল দুই গোয়েন্দা। বেড়া মেরামত করছে। বেনির আব্বার কথা কিশোর জিজ্ঞেস করলে সে হাত তুলে লম্বা, নিচু চালাওয়ালা। একটা বাড়ি দেখিয়ে বলল, চিড়িয়াখানায় আছে।
চিড়িয়াখানা? রবিনের প্রশ্ন।
হ্যাঁ, সাপখোপ পোষে তো, ছেলেটা বলল। তোমরা শোনোনি? যেতে চাইলে যাও, তবে বাইরে থাকবে। আজ যেন কেউ না ঢোকে মানা করে দিয়েছেন। মিস্টার কুপার।
চট করে রবিনের দিকে তাকাল কিশোর। আবার ছেলেটার দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করল, কেন?
হাত ওল্টাল ছেলেটা, জানি না। ফোরম্যান আমাদেরকে জানিয়ে দিল, শুনলাম, ব্যস। তোমরা ঘরে গিয়ে বস। মিস্টার কুপার বেরোলে আমি বলব।
আচ্ছা।
রবিনকে নিয়ে র্যাঞ্চ হাউসে ফিরে যাওয়ার ভান করল কিশোর। যেই ছেলেটা আরেক দিকে ফিরল অমনি লুকিয়ে পড়ল একটা বাড়ির আড়ালে। তারপর বেড়ার আড়ালে আড়ালে দুজনে এগিয়ে চলল চিড়িয়াখানার দিকে।
মরুভূমির র্যাটলম্নেক নিশ্চয় রাখে না এখানে, কি বলো? রবিনের দিকে তাকিয়ে বলল বটে কিশোর, কিন্তু প্রশ্নটা করেছে নিজেকেই।
চলো, গেলেই দেখতে পাব।
আস্তে করে ঠেলা দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ল কিশোর। পেছনে রবিন। এগিয়ে চলল কাচের বাক্সগুলোর পাশ দিয়ে। বিচিত্র সব প্রাণী ওগুলোর ভেতরে। সাপ, শিংওয়ালা ব্যাঙ, গিরগিটি, কচ্ছপ আর মরুভূমির কয়েক ধরনের ইঁদুর জাতীয় জীব। পেছনে আচমকা হিসহিস শব্দ হতেই থমকে দাঁড়িয়ে গেল কিশোর। দেখল, ছোট একটা গিলা মনস্টার তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে।
এই, দেখে যাও, হাত তুলে ডাকল রবিন। একটা কাচের বাক্স দেখাল। খালি। ভেতরে কে বাস করত নেমপ্লেট দেখেই বোঝা যায়। মরুভূমির একটা র্যাটলম্নেক।
খুলে গেল দরজা। দড়াম করে গিয়ে বাড়ি লাগল দেয়ালে। রেগে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন কুপার, যাও, ভাগ! লাল হয়ে গেছে মুখ। কে ঢুকতে বলেছে? একটা সাপ ছুটে গেছে, কখন কামড়ে দেয়…