নাক দিয়ে শব্দ করলেন ফোর্ড। ওটা এমন কোন ব্যাপার নয়। মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে পালায় ঘোড়ারা।
কিশোর বলল, আমার ধারণা ওটা চুরি হয়েছে।
ভোতা গলায় ব্রড বলল, সেটা প্রমাণ করতে পারবে না।
পারব। মিলির দিকে তাকাল কিশোর। এখন থেকে খুব সাবধানে। থাকবেন। ভয়ানক শত্রু আছে এখানে আপনার। ওরা আপনাকে মেরে ফেলতেও দ্বিধা করবে না।
না, কি যে বলো? আমাকে কেউ মারবে না।
সব কথা লিখে নিচ্ছেন ডেপুটি। নোটবুকের দিকে তাকিয়ে বললেন, একজন। মেহমানের কাছে শুনলাম, একটু আগে ব্যাংকের একজন লোক এসে হুমকি দিয়ে গেছে তোমাকে?
ফিলিপ নিরেক আর হারনি পাইকের কথা বলল লিলি। লিখে নিলেন ডেপুটি। কয়েক মিনিট পর চলে গেলেন অন্যদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে। আরেকজন ডেপুটি গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে আস্তাবল আর বাড়িতে।
তিন গোয়েন্দার দিকে ফিরে লিলি বলল, তোমাদেরকে এতে জড়িত করে ভাল করিনি আমি। তোমরা আমার মেহমান। মেহমানের মতই থাকো এখন। থেকে। ওসব তদন্ত-ফদন্ত বাদ দাও।
অসম্ভব! জোর গলায় বলল কিশোর। এত কিছুর পর আর চুপ থাকতে পারব না আমি। এর একটা সুরাহা করেই ছাড়ব। বুঝতে পারছেন না কেন মরিয়া হয়ে উঠেছে শয়তানটা? আমরা অনেক এগিয়ে গেছি, বুঝে ফেলেছে সে। তার। জারিজুরি ফাঁস হওয়ার পথে।
কিন্তু ভয়ঙ্কর লোক ও, জোরে নিঃশ্বাস ফেলল লিলি। আমার জন্যে তোমরা কেন মরতে যাবে? সমস্যাটা আমার, তোমাদের নয়। তোমরা ছুটি কাটাতে এসেছ, ছুটি কাটাও।
বললামই তো, এর পর আর থেমে থাকতে পারব না আমি। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ইউনিকর্নের চোর। যেভাবেই হোক ঠেকাতে চাইছে এখন, যাতে ধরা না, পড়তে হয়। আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব।
পোড়া গাড়িটার কাছে গিয়ে উঁকিঝুঁকি মারছে একজন ডেপুটি। সেদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে লিলি বলল, বেশ। বাধা দেব না। তবে খুব সাবধান। দয়া করে আর বদনাম করো না আমার!
***
পরদিন সকালে এসে ভাল করে পোড়া গাড়িটাকে দেখল কিশোর, যদি কোন সূত্রটুত্র পেয়ে যায় এই আশায়। পেল না। সেরাতে মেহমানদের ক্যাম্পিঙে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কাজেই সারাটা দিন জিনিসপত্র গোছগাছ আর পশ্চিমের পাহাড়ে ইউনিকর্নকে খুঁজে বেড়াল তিন গোয়েন্দা।
কোন চিহ্ন পেল না।
বিকেলে বাড়ি ফিরে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিয়ে আবার বেরোনোর জন্যে তৈরি হলো ওরা।
দল বেঁধে বেরিয়ে পড়ল মেহমানেরা। পাহাড়ের ভেতরে নদীর ধারে ছোট এক চিলতে খোলা জায়গায় ক্যাম্পিঙের ব্যবস্থা হয়েছে।
উফ, এক্কেবারে ব্যথা হয়ে গেছে শরীর, ঘোড়ার পিঠ থেকে বেডরোল নামাতে নামাতে বলল রবিন। টেনে নামাল জিনটা। সারাটা দিন ঘোড়ার পিঠে থেকে থেকে একেবারে শেষ হয়ে গেছি।
হাসল মুসা। বাড়ি গিয়ে একবারে ঘুমিও। এখানে মজার জন্যে এসেছ মজা। লোট। রাতে পাহাড়ে কাটানর মজাই আলাদা। আগুনের ধারে বসে সাওয়ারডো বিস্কুট খাওয়া, গল্প করা, তারপর কম্বলের তলায় গুটিসুটি হয়ে পড়ে থেকে নানারকম শব্দ শোনা, নিশাচর পাখি আর জন্তু জানোয়ারের ডাক, বাতাসের। ফিসফিসানি, নদীর কূলকুল….
বাপরে! একেবারে কবি হয়ে গেলে দেখি?
মালপত্রগুলো নিয়ে গিয়ে মাটিতে ছড়িয়ে থাকা পাইন নীডলের ওপর রাখল দুজনে। কিশোরও তারটা নিয়ে গিয়ে রাখল ওদেরগুলোর পাশে। আশেপাশে জটলা করে রয়েছে পাইন গাছ।
এজটার পরিবার আর কয়েকজন মেহমানকে নিয়ে ক্যাম্প সাজায় লাগল ব্রড। কাপলিংকে নিয়ে তিন গোয়েন্দা আগুন জ্বালানোর জন্যে শুকনো কাঠ জড় করতে লাগল।
মিসেস ব্যানার সাফ মানা করে দিল, কোন কাজ করতে পারবে না। একটা গাছের গুঁড়িতে গিয়ে বসে বলল, আমি এখানে এসেছি আরাম করতে, কাজ করতে নয়।
এটা কাজ নয়, ঘোড়া বাধতে বাঁধতে বলল লুক, মজা।
থাকো, হাত উল্টে জবাব দিল মিসেস ব্যানার, ওরকম মজার আমার দরকার নেই।
মুচকি হাসল রবিন। নিচু গলায় বলল, স্বামী বেচারাকে নিশ্চয় জ্বালিয়ে খায় মহিলা।
মাথা থেকে চাপড় মেরে একটা মাছি তাড়াল মুসা। বলল, মহিলা ঠিকই। করছে। কে যায় অত কাজ করতে?
তাহলে গিয়ে বসে থাক মহিলার সঙ্গে..
মিসেস ব্যানার বলছে, জঙ্গলের মধ্যে রাত কাটান! দূর! ভাল লাগবে বলে মনে হয় না। আছে তো যত হতচ্ছাড়া জিনিস, বোলতা, মাছি, মশা, কয়োট! ঈশ্বরই জানে, আরও কি কি আছে!
মুখ তুলে রবিন বলল, অনেক কিছু আছে। কুগার, ভালুক, নেকড়ে।
মুসা বলল, যা খুশি থাকুক। হাতি-গুণ্ডার থাকলেও আপত্তি নেই আমার, ভূত না থাকলেই হল…
বলে কি! আঁতকে উঠল মহিলা, ভূতও আছে নাকি! বাপরে! তাহলে বাপু আমি এখানে নেই! সারারাত চোখের পাতা এক করতে পারব না!
হেসে আবার নিচু গলায় মুসাকে বলল রবিন, যাও, একজন দোসর পেলে।
তাড়াতাড়ি কিশোর বলল, আরে না না, ভূত বলে কিছু নেই। অহেতুক ভয় পাচ্ছেন…
তুমি কিচ্ছু জান না, রেগে গেল মহিলা। কিশোর যে ওদের মানিব্যাগ চুরি করেছে, কথাটা ভুলতে পারেনি মিসেস ব্যানার। সেই যে সেবার, গিয়েছিলাম আমাদের বাড়ির কাছের এক বনে, রাতে থাকতে। তারপর…
হয়েছে কাজ! বলল কিশোর, শুরু হল এবার ভূতের গল্প। চলো, পালাই।
সবাই মিলে কাজ করল, মিসেস ব্যানার ছাড়া। ক্যাম্প করল, আগুন জ্বালল, রান্না করল। ডিনারের পর বাসনপেয়ালা কে ধোবে এটা নিয়ে কথা উঠল। সমাধান করে দিলেন মিস্টার এজটার। টস করা হোক। টসে তাঁরই ওপর দায়িত্ব পড়ল ধোয়ার। কিছুই মনে করলেন না তিনি। শার্টের হাতা গুটিয়ে কাজে লেগে গেলেন। নিজের ইচ্ছেতেই স্বামীকে সাহায্য করতে গেলেন জেনি এজটার।